তুমি আছো তাই ( পর্ব ৪ )

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
ফাহাদের থাপ্পড় খেয়ে পায়েল নিচে ছিটকে পড়লো‌ ।

ফাহাদ ইচ্ছে করে পায়েলকে মারতে চাইনি হঠাৎ করে রাগের মাথায় মেরে ফেলছে ‌।

ফাহাদ ‌ : আমাকে‌ মাপ‌ করে দাও পায়েল আমি তোমাকে ইচ্ছে করে মারতে চাইনি ‌। আমাকে মাফ করে দাও আমার রাগ উঠে গিয়েছিল। এটা বলে ফাহাদ পায়েলকে ধরে ওঠাতে লাগলো।

পায়েল ‌ : একদম তুমি আমাকে স্পর্শ করবে না । আর তুমি আমার সাথে কথাও বলবে না আজ থেকে ‌। এটা বলে পায়েল কান্না করতে করতে গেস্ট রুমে যেয়ে দরজাটা বন্ধ করে ফেলল ।

ফাহাদ ‌ : চুপচাপ ছেলের পাশে যেয়ে বসে রইল ‌। ফাহাদ যেন‌ চুপচাপ হয়ে পড়ছে ।

আর এদিকে অন্তরা আর মাহিম সমুদ্র সৈকত থেকে বাড়ি ফিরছে বাড়ি ফেরার সাথে সাথে ,, রনিকে দেখার জন্য ফাহাদের ঘরে আসলো ।

মাহিম ‌ : বাবা তুই আসছিস দেখ না রনির পায়ে অনেকটা ব্যথা পেয়েছে ।

অন্তরা‌ ‌ : ফাহাদ এখন রনি কেমন আছে ‌। ঘুম থেকে ওঠেনি। জানিস বাবা ‌ রনির পা দিয়ে অনেক রক্ত পরছে ‌।

ফাহাদ ‌ : আমার ছেলে এতটা ব্যথা পেয়েছে তো তোমরা কোথায় গিয়েছিলে ‌ এতক্ষণ ‌।

অন্তরা আর মাহিম চুপচাপ আছে দাঁড়িয়ে ‌।

ফাহাদ ‌ : বাবা মা আমি তোমাদের সাথে রাগারাগি করতে চাই না, এখন তোমরা তোমাদের রুমে যাও আমাকে একা থাকতে দাও ‌।  আমার ভালো লাগছে না ‌ কিছু ‌।

অন্তরা ‌ : ফাহাদ আমরা একটু বাহিরে গিয়েছিলাম বাবা ।

ফাহাদ ‌ : বাহিরে গিয়েছিলে‌ নাকি বেড়াতে গিয়েছিলে, আমি এত কিছু শুনতে চাই না ,যাও তোমরা রেষ্ট করো ‌এখন‌ , তোমাদের রোমে‌ যাও‌ । আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে‌ এখন ।

অন্তরা আর মাহিম চলে আসলো তাদের রুমে ‌।

অন্তরা‌ ‌ : ওগো ছেলেটা কি আমাদের ভুল বুঝল ‌ । আমরা তো বারবার রনির কাছে থাকতে চেয়েছি কিন্তু বৌমা তো আমাদের ওই ঘর থেকে চলে আসতে বললো ‌। আমরা কি করবো বলো  । আমার অনেক খারাপ লাগছে হয়তো সমুদ্রপাড়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি আজকে আমাদের।

মাহিম ‌ : এত চিন্তা করতে হবে না শুয়ে থাকো আমরা তাদের বাবা-মা, আমাদেরকে যথেষ্ট সম্মান দেওয়া তাদের দায়িত্ব ‌ কর্তব্য ‌।

তারা গল্প করছে তখনই তাদের বড় নাতি রাকিব তাদের রুমে আসলো ‌।

রাকিব ‌ : দাদু তোমরা কি করো‌ এখন ‌একা একা বসে বসে । ‌ তোমরা কোথায় গিয়েছিলে এতক্ষন আমি খুজলাম তোমাদের ‌।

মাহিম ‌ : এইতো দাদু একটু সমুদ্রপাড়ে গিয়েছিলাম তোমার দাদিকে নিয়ে ।

রাকিব ‌ : তোমরা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে  গিয়েছিলে আর এদিকে ছোট আম্মু আর চাচ্চুর সাথে ঝগড়া  লেগে গিয়েছিল ‌।

অন্তরা‌ ‌ : কেন দাদু কি নিয়ে ঝগড়া করছে তারা ‌?

রাকিব ‌ : আমি জানিনা দাদু মা তোমাদেরকে খেতে ডাকছে চলো খেয়ে আসবে । তোমাদের জন্য খাবার বেড়ে রাখছে মা‌  ।

মাহিম ‌ : তুমি যাও রাকিব দাদু আমরা আসছি এক্ষুনি ‌।
এই কথা বলাতে রাকিব চলে গেল ‌। অন্তরা‌ আর মাহিম ডাইনিং টেবিলের কাছে আসলো খাওয়ার জন্য ‌।

রাহাত: বাবা তোমাদের এতক্ষণ লাগল কেন আসতে, তোমাদের খিদে পায়নি এখনো, দুপুর তিনটে বেজে গিয়েছে ‌। বসো‌ এখানে খাওয়া-দাওয়া করে নাও ‌। 

রেসমি‌ : বসেন মা আপনারা খেয়ে নিন ‌ ।

অন্তরা‌ : বৌমা ছোট বৌমা খেতে আসলো না ‌। আর ফাহাদ কোথায় ফাহাদ খাবে না এখন ‌। ফাহাদতো অফিস থেকে এসেও খাইনি যাও বৌমা ওদেরকে ডেকে নিয়ে আসো ‌। আর রনি দাদু এখন কেমন আছে ?

রেসমি‌ : আপনারা খেয়ে নেন মা, ওরা এখন খাবে না বললো পরে খাবে । ওরা পরে খেয়ে  নিবনি‌ । রনি এখন অনেকটা সুস্থ আছে টেনশন করার কিছু নেই ।

অন্তরা‌ ‌ : আমার খিদে লাগে নি বৌমা ,,আমি পরে খাব । তোমরা খেয়ে নাও এখন । 

রাহাত অনেকবার খাওয়ার জন্য জোর করল তার মা-বাবাকে কিন্তু কোনভাবেই অন্তরা ভাত খেলো না । আর অন্তররা‌ না খেলে মাহিম ও খায় না এটা সবাই জানে, তাই আর তাদের বাবা কেউ জোর করল না কেও‌ । অন্তরা বারবার মাহিম কে বলল তুমি খেয়ে নাও । কিন্তু মাহিম ঘুরিয়ে পিছিয়ে অনেক মিথ্যা কথা বলল ‌। মাহিম বলল আমিতো বাহির থেকে খেয়ে আসলাম তুমি তো দেখলেই এখন আমি কিভাবে খাব ।

আর কোন মা কি‌  কখনো পারে তার সন্তান না খেয়ে আছে এটা জেনে খেয়ে নিতে ।  সন্তান ভালো নেই জেনেও কি কোন মা-বাবা ভালো থাকতে পারে ।

আর এদিকে ফাহাদ পায়েলের রাগ ভাঙ্গানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছে‌ । বারবার মাপ‌ চেয়েই  যাচ্ছে । কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না । পায়েলের রাগ যেন কোনভাবেই কমছে না।

ফাহাদ এভাবে অনেক চেষ্টা করার পর পায়েলের রাগ ভাঙ্গাতে পারল ‌। আর পায়েলকে কথা দিল তাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে যেখানে যেতে চাইবে সেখানেই‌ । এভাবেই‌ তাদের মন ভালো হয়ে গেল ‌। ফাহাদ আর পায়েল খাওয়ার জন্য ডাইনিং টেবিলে আসলো ‌ ।

আর এদিকে অন্তরা আর মাহিম বসে আছে এটা‌ ভেবে, তাদের ছেলে কখন খেতে ডাকবে‌ তাদের তখন তারা‌ এক‌ সাথে‌ মিলে খাবে ।

অন্তরা‌ : আচ্ছা তুমি কেন আমার জন্য না খেয়ে রইলে বলো। তুমি তো আজকে বারোটার সময় বললে তোমার অনেক খিদে পেয়েছে ‌।  এখন তোমার তো আরো অনেক বেশি খিদে পেয়েছে ।‌ তাহলে তুমি কেন এমন করে থাকতে গেলে বলো ‌। আমি পরে খেয়ে নিতাম তুমি তখন ভাত‌ খেয়ে ফেলতে । তুমি যে কেমন মানুষ আমি বুঝি‌ না‌ । তুমি বোঝনা আমার থেকে টেনশন তোমার জন্য বেশি হয়‌ আমার ‌। ছেলে ছেলের বউ না খেয়ে আছে আমি কিভাবে খেয়ে বসে থাকি বল ‌। তুমি তো অসুস্থ হয়ে যাবে এভাবে ‌না‌ খেয়ে‌ । আর কোনদিন এমন পাগলামি করবে না ‌।

মাহিম‌ : ছেলে ছেলের‌ বউ কি তোমার একাই নাকি ,, আমার ছেলে ছেলের বউ না খেয়ে আছে আমি খেয়ে বসে থাকব ‌।
আর আমার টুনটুনি বুড়িটা না খেয়ে থাকবে ‌। আমার খিদে পেয়েছে থাক সমস্যা নেই । আমরা সবাই আজকে একসাথে বসে খাব‌ অনেক ভালো লাগবে‌ ।  আমাদের জন্য হয়তো এইসব হয়েছে তাই না ‌। এখন থেকে বয়স যেমন হয়েছে‌ আমার তেমনভাবেই থাকবো ।

আর‌  এদিকে ফাহাদ আর পায়েল খাওয়ার জন্য বসলো ডাইনিং টেবিলে,, অনেক হাসাহাসি মজা করছে তারা ডাইনিং টেবিলে বসে‌ ।

ডাইনিং টেবিলের পাশের‌ রোম‌ অন্তরা আর মাহিমের ‌ ।

অন্তরা‌ : ওগো ওদেরকে হাসিখুশি দেখলে অনেক ভালো লাগে তাইনা ‌ । দেখো ওদের রাগ ভাঙছে ওরা হাসিখুশিতে আছে ‌ ।  আমাদের অনেক ভালো লাগছে এগুলো দেখে ‌ ।

মাহিম ‌ : হ্যাঁ গো, আমারও অনেক ভালো লাগছে ‌। বিশেষ করে ‌ আমার বুড়ির মুখের এই‌ মিষ্টি হাসিটি দেখে‌ । এখন তাহলে আমাদের কে খেতে ডাকবে‌ । যানো আমার অনেক খিদে পেয়েছে । খিদেতে একদম পেট চূচু করছে । এখন ছেলের ডাক দেওয়ার আশায় বসে রইলাম ‌।

অন্তরা‌ ‌ : আমার পাগল বুড়াটা একদম বাচ্চাদের মত করে কথা বল । তুমি একদম পাল্টালে না ৫৫ বছরেও‌। সেই ৫৫ বছর আগের আমার নতুন বরটা যেন তেমনই আছে‌ এখনো।

অন্তরা আর মাহিম এই আশায় বসে আছে তাদের ছেলে ছেলের বউ তাদেরকে খেতে ডাকবে,, কিন্তু ২০ মিনিট হয়ে গেল তারা কেউ খেতে ডাকলো না‌ তাদেরকে‌ ‌। মা বাবা খেয়েছে নাকি একবারও জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনেও করল না। পায়েল আর ফাহাদ আনন্দ করে খেয়েদেয়ে চলে গেল তাদের রুমে‌।

এবার কি অন্তরা আর মাহিম আরো কষ্ট পেয়ে না খেয়েই থাকবে আজকে? নাকি ওরা দুজনেই যেয়ে খাবার বেরে‌ একাই‌ খাবার খাবে ?

সবকিছু জানার জন্য সবাইকে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো ❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️

চলবে‌ ,,,,,,,,

137 Views
4 Likes
3 Comments
5.0 Rating
Rate this: