পায়েল আর রেশমি রুটি বানাচ্ছে তাদের শাশুড়ির জন্য । আর দুই জা মিলে,,, পরিকল্পনা করছে কিভাবে তাদের শ্বশুর-শাশুড়িকে আলাদা করা যায় । কারণ এদের এতো বয়সকালের ভালোবাসা ছেলের বউরা সহ্য করতে পারছে না । শাশুড়িকে কিছু বললে শ্বশুর এগিয়ে আসে প্রতিবাদ করার জন্য ,, আর শ্বশুর কে কিছু বললে শাশুড়ি এগিয়ে আসে । এগুলো পায়েল আর রেশমির একদম পছন্দ না ।
পায়েল : ভাবি আপনি কি তাদেরকে তখন খেতে বলছিলেন না । এখন যে এদের এতো খিদে পেয়েছে । আমি এই টাইমে ঘুম আসি প্রতিদিন আজকে আমার অনেক মাথা ব্যাথা করছে ।
রেশমি : বলছি তো অনেকবার খেতে বলছি । কিন্তু তখন খেলো না । তখন খেলে তো এখন আর এত ঝামেলা করতে পারত না । এগুলো ছেলেদের কে দেখায় আর কিছু না । ছেলেদের সামনে আমাদেরকে খারাপ বানায় । আর শশুর শাশুড়ি তারা ঠিকই ভালো হয়ে থাকে । কেন বলতো এদের এখন না খেলে হতো না । পাকনামি করে রান্না করার জন্য আসছে ।
পায়েল : ভাবি রুটি বানানো হয়েছে ,, আমি দিয়ে আসবো নাকি তুমি যেয়ে দিয়ে আসবে ।
রেসমি : যা তুই যেয়ে দিয়ে আস । আমি রান্নাঘর গুছিয়ে রাখি ।
পায়েল অন্তরাদেরকে রুটি আর আলু ভাজি দিয়ে আসতে তাদের রুমে গেল ।
পায়েল : আম্মা ধরেন খেয়ে নেন । আর একটা কথা বলে যাই আপনাদেরকে । নিজেরা ভালো থেকে আমাদেরকে আর বকা শোনায়েন না আপনাদের ছেলেদের মুখে ।
অন্তরা এই কথা শুনে নীরব হয়ে আছে । আর নিরব হওয়ারি তো কথা । ছেলের বউ যখন এভাবে কথা বলে ভালো শাশুড়িরা তো নিরব হয়েই থাকে ।
মাহিম : কষ্ট পেয়নাতো এখন আর । আগে খেয়ে নাও এখানে বসো আমি তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবো । হা করো বুড়ি ।
অন্তরা : অন্তরা মাহিমের হাতে খেয়ে নিল ।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর অন্তরা মাহিম একটু আরাম করছে । আধা ঘণ্টার মতো হবে ঘুম আসছিলো তারা তখনই পায়ের ডাক দিল তাদেরকে । ছেলের বউয়ের ডাক শুনে বাহিরে বের হলো । বাহিরে এসে দেখল তাদের নাতি রনিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
পায়েল : ধরেন রনিকে রাখেন । আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে আমি একটু ঘুমাবো । আমার ছেলে যেন আবার ব্যথা না পায় । ভালোভাবে দেখে রাখবেন ।
অন্তরা : আচ্ছা বৌমা একদম চিন্তা করবে না । আমি আমার দাদু ভাইকে খুব যত্ন করে রাখবো । যাও বৌমা তুমি ঘুম আসো । এই কথা শুনে পায়েল ঘুমানোর জন্য তাদের রুমে চলে গেল । আর এদিকে অন্তরা রনিকে নিয়ে তাদের রুমে গেল । অন্তরা তার নাতিকে নিয়ে ফেলছে মাহিম ঘুমিয়েই আছে ।
কিছুক্ষণ পর মাহিম ঘুম থেকে উঠে পড়লো দাদি নাতির হাউকাউ শুনে । মাহিম উঠে দেখল অন্তরা আর রনি খুব মজা করে ফেলছে । যেন রনির মত বাচ্চা হয়ে গিয়েছে অন্তরাও ।
মাহিম : বুড়ি তুমি ঘুম আসনি ?
অন্তরা : দেখো না আমি আমার দাদুকে নিয়ে খেলছি । না আমি ঘুম আসিনি । তোমার যদি খেলতে ইচ্ছে করে তাহলে আসো আমরা বল দিয়ে খেলছি ।
মাহিম বলল হ্যা আমিও খেলবো । তিনজনে আপন মনে ফুটবল ছুরাছুরি করছে । তখনই রাহাত আসলো মাহিমের কাছে কোম্পানির কাজে মাহিমের ছাইন লাগবে , এই কারণে ।
রাহাত : বাবা তুমি এখানে একটি ছাইন করে দাও । তোমার ছাইন ছাড়া কিছু হয় না । বাবা একটা কথা বলি কিছু মনে করবে নাতো
মাহিম : না কিছু মনে করব না বল ।
রাহাত : বাবা তোমার তো অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে এখন।
মাহিম : হ্যাঁ হয়েছে কি বলবি সেটা বল ।
রাহাত : বাবা তোমার যত সম্পত্তি আছে ,, তোমার কোম্পানি , এগুলো আমাদের নামে লিখে দাও । তোমার তো এখন আর কাজ করতে হয় না । তুমি আর মা রাজা রানীর মতো বসে বসে খাবে ,তোমাদের এখন এগুলো নিয়ে টেনশন করার সময় না । বাবা তুমি আর মা মিলে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদেরকে জানিও ফাহাদের সাথে আমার কথা হয়েছে । এইগুলো বলে রাহাত চলে গেল তার ঘরে ।
রাহাত : আচ্ছা রেশমি এই কথা বাবাকে বলা কি ঠিক হয়েছে ।
রেসমি : একদম ঠিক হয়েছে ,, তুমি ঠিকই করছো । এখন তাদের বয়স হয়েছে । এখন তারা সম্পত্তি property এগুলো দিয়ে তাদের কোন দরকার নেই । তোমাদের দুই ভাইয়ের নামে সব লিখে দেখ,, আর ওনারা আরাম আয়েশে থাকুক ,, শুধু শুধু আব্বাকে এখানে ওখানে যেতে হয় । তাদের তো বয়স হয়েছে এখন কি তাদের ভালো লাগে কাজকাম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে । তুমি যা করেছো ভালোই করেছ ।
রাহাত : জানিনা রেশমি আমি ঠিক করেছি কিনা । মনে হচ্ছে বাবা-মা কষ্ট পেয়েছে আমার কথায় । মনটা একদম ভালো লাগছে না ।
রেসমি : শুধু শুধু কেন টেনশন করো ,, তুমি তোমার বাবা মাকে যথেষ্ট পরিমাণ ভালোবাসো । তাদের এখন প্রয়োজন ভালোবাসা হলেই হয় । আর টাকা-পয়সা সম্পত্তি এই রকমই তো একজনের কাছ থেকে আরেক জনের কাছে যাবে ।
এই বিষয়গুলো নিয়ে রেশমি আর রাহাত আলোচনা করতে লাগলো ।
আর এদিকে মাহিম ছেলের কথায় অনেক কষ্ট পেয়েছে ,, এখনই তারা সম্পত্তির ভাগাভাগি করতে চাচ্ছে । এই বিষয়গুলো নিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছে মাহিমের ।
অন্তরা : ওগো কি ভাবছো এতো । মন খারাপ করিও না ছেলেরা যা সিদ্ধান্ত নেয় এটাই শুনিও । ছেলে মেয়েরা এখন আর ছোট নেই ,, তারা যথেষ্ট পরিমাণ বড় হয়ে গিয়েছে নিজের ভালোটা নিজেরা ঠিকই বুঝে । তাদের মন মতো তারা থাকুক আমরা বুড়াবুড়ি হয়ে গিয়েছি । আমাদের আবার কিসের সিদ্ধান্ত ,, এইগুলা নিয়ে আর বারাবাড়ি করিও না ।
মাহিম : হয়তো তুমি ঠিকই বলছো অন্তরা , কিন্তু আমার মনটা যেন কেমন লাগছে , ছেলের কথা শুনে । তুমি বলো আমি কি করবো ? তুমি যেটা বলবে আমি সেটাই শুনবো ।
অন্তরা : আমার ভালো বুড়াটা । তোমার সিদ্ধান্ত তুমি নেবে ,, এতে আমার কোন কথা নেই । এই সম্পত্তি এতো বড় কোম্পানি এগুলো সব তোমার নিজের একা পরিশ্রম । তিলে তিলে অনেক কষ্ট করে তুমি এতো বড় পর্যায়ে গিয়েছো । বিপদ আসলেও কখনো ভেঙ্গে পড়োনি , সব সময় শক্ত হয়ে সবকিছু আগলে রাখছো । এখন তোমার সন্তানেরা সবকিছু ভাগাভাগি করে নিতে চাচ্ছে । এখন তোমার ইচ্ছে ,তোমার সবকিছু তাদেরকে লিখে দিয়ে দেবে, নাকি দেবে না সেইটা ।
মাহিম : হ্যাঁ আমি একটু ভেবে দেখি ,, কিছুদিন যাক । আমাদের মেয়েও তো ওয়ারিশ পাবে । এখনই আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না চিন্তা ভাবনা করে দেখব কি করা যায় ।
আচ্ছা আপনাদের কাছে প্রশ্ন মাহিমের সম্পত্তি ছেলে মেয়েদের নামে লিখে দিলে ভালো হবে ? নাকি সব কিছু লিখে দেওয়া ঠিক হবে না মাহীমের ?
সবকিছু জানার জন্য পাশে থাকার অনুরোধ রইলো
তুমি আছো তাই ( পর্ব 8 )
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
156
Views
2
Likes
0
Comments
5.0
Rating