তোমার কি বুড়া বয়সেও একটু লজ্জা হবে নাগো ,,, ছেলেদের সামনে ছেলের বউয়ের সামনে খাওয়ে দিতে হয় তোমাকে প্রতিদিন,,।কিসের লজ্জা তুমি কি চুপ করবে অন্তরা এখন এসব কথা বাদ দিয়ে আমাকে খাওয়ে দাও ,, তোমার হাতে ভাত না খেলে আমার পেট ভরেনা তুমি বুঝোনা অন্তরা । হ্যা গো বুঝছি তাই বলে ছেলে মেয়েদের,,নাতিদের সামনে খাওয়ে দিবো সবাই কি ভাববে বলো তুমি।
আমি এতো কিছু বুঝি না আমি যখন একদম বুড়া হয়ে যাব তখনও তুমি আমাকে এভাবেই খাওয়ে দিবে প্রতিদিন,,,। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি গো আমার টুকটুকি বুড়ি ।
আরে আস্তে কথা বলো মাহিম বাবু , তোমার ছেলে মেয়েরা এসে পড়বে ,,এতো ভালোবাসা আমি কোথাই রাখবো গো । তা খুঁজে পাচ্ছো না বুড়ি , আমি বলি এত ভালবাসা তুমি কোথায় রাখবে ,, তোমার পাকা পাকা সাদা চুলের ভেতর রাখো ,, একথা বলে দুজনেরই হাসতে লাগলো ।
ডাইরিন টেবিলে অন্তরা তার হাজবেন্ড মাহিমকে খাইয়ে দিচ্ছে,,,।
তখনই তাদের বড় ছেলে রাহাত এসে বলল মা কি করছো তোমরা ,, বাবাকে খাওয়ে দিচ্ছ এখন ,, তাহলে তুমি খাবে কখন মা ? দেখ না রাহাত তোর বাবা হাত দিয়ে খেতেই চাচ্ছে না । ভালো তো মা তুমি খাওয়ে দাও ,, তোমাদের ভালোবাসা দেখে আমাদের অনেক ভালো লাগে কিরে ফাহাদ তাইনা ।
হ্যাঁ ভাই তাইতো আমাদের মা-বাবা সারা জীবন এভাবেই থাকুক আমরা দোয়া করি ।
মা বাবা আমি চলে যাচ্ছি শ্বশুরবাড়িতে তোমাদের জামাই নাকি এখন অসুস্থ জ্বর আসছে ,, আমাকে এখনই তাড়াতাড়ি চলে যেতে বলল । আমি এখন খাব না বাড়ি যেয়েই খাবো ।
রাহাত : কি হয়েছে রাই ,, কামাল কি অনেকটা অসুস্থ । চল আমিও সাথে যাই তোর ।
রাই : না ভাই তেমন কিছু না এইতো একটু অসুস্থ জ্বর আসছে ওষুধ খাওয়ালে একটু সেবা যত্ন করলে ঠিক হয়ে যাবে ,, তোমরা অযথা টেনশন করো না ।
অন্তরা : খেয়ে তো যাবি সকালে কিছু , সকাল আটটা বেজে গিয়েছে এখন না খেয়েই চলে যাবি ।
রাই : মা আমার অনেক তারা আছে,,, খেলে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে আমি বাসায় যেয়ে খেয়ে নেব । আজকে কামাল অফিসে যেতে পারিনি । কামাল বাসায় একাই আছে চিন্তা করিও না তোমরা আমি এখন আসলাম । এই বলে রায় চলে যেতে লাগলো ।
রাই হলো এই চৌধুরী বাড়ির ছোট মেয়ে । বিয়ে হয়েছে মাত্র এক বছর হলো । ফাহাদরা এক বোন দুই ভাই । রাহাত এই চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে, ফাহাদ হলো চৌধুরী বাড়ির ছোট ছেলে ।
ফাহাদ আর রাহাতের দুজনের একটি একটি ছেলে আছে ।
মাহিম : যা মা রাই জামাইয়ের সেবা কর বাসায় যেয়ে ,, দেরি করিস না ।
রাই : আচ্ছা বাবা আমি আসলাম তোমরা সাবধানে থেকো।
ফাহাদ : মা তুমিকি শুধু বাবাকে খাওইয়ে দেবে ।আমাকে এবার খাওয়ে দাও ,তোমার ছেলেকি অনেক বড় হয়ে গেছে নাকি এখন । তোমার ছেলে এখনো ছুটো আছে হা আমাকে খাওয়ে দাও ।
অন্তরা : আমার পাগল ছেলেরা , মায়ের কাছে সন্তানেরা কখনো বড় হয় না ,, মায়ের কাছে সন্তানেরা সব সময় ছোটই থাকে । তোরা আমার ছোট ছেলে মেয়ে ছোট ছেলে মেয়ে হয়ে থাকবি সারা জীবন আমার কাছে । চিয়ারে বসে পর তোরা ,আমি তোদের দুজনকেই খাইয়ে দিব । ডাইরিং টেবিলে রাহাত আর ফাহাদ বসে পড়ল ,, অন্তরা ছোট বাচ্চাদের মত করে দুজনকে খাইয়ে দিল ।
পায়েল রুটি বানানো হয়ছে কি ? এইতো ভাবি অনেকটা হয়ে গেছে । ভাবি তোমার কি আলু ভাজি করা হয়েছে তাহলে রুটিটি ভেজে দাও,, মাকে তো আবার খেতে দিতে হবে তাড়াতাড়ি । মা তো সকালে আর রাতে রুটি খায় ডাইবেটিসের কারণে ।
পায়েল হলো চৌধুরী বাড়ির ছোট ছেলে ফাহাদের বউ ,, বাড়ির বড় ছেলে রাহাতের বউয়ের নাম রেশমি ।
রেসমি : পায়েল আমার রুটি ভাজা হয়ছে মাকে নিয়ে খেতে দিয়ে আসো ,, আটটা বেজে গেছে আর একটু দেরি হলে তো আবার তাদের ছেলেরা বকাবকি শুরু করবে ,,।
পায়েল : হে ভাবি আমি দিয়ে আসি ,, আমাদের তো সকাল সকাল চাকরি আছেই । সকালে বাপ ছেলেদের জন্য ভাত রান্না করো । তাদের মায়ের জন্য রুটি বানাও । আবার আমাদের ছেলেদের জন্য ব্রেকফাস্ট বানাও । আবার এদিকে কাজের লোকের রান্নাও খায় না এরা । আমাদের হয়ছে মহাজ্বালা । আবার এদিকে বুড়াবুড়ির আদিখ্যেতা দেখে আর বাচিনা ।
রেশমি : বাদ দে তো এগুলো কথা এখন ,,তাড়াতাড়ি মাকে খেতে দিয়ে আস । পায়েল রুটি আর আলু ভাজি দিয়ে মাকে খেতে দেওয়ার জন্য ডাইরিং টেবিলের কাছে গেল ,, ফাহাদ পায়েলকে বলল এত দেরি কেন হয় মাকে খেতে দিতে ? সকাল আটটা বেজে গেছে কাল থেকে যেন এতো দেরি না হয় ।
পায়েল : সেই সকাল থেকে কাজ করছি ,এখন আমার সাথে একদম উঠে পড়ে ঝগড়া করবে না ।
অন্তরা : থাম তোরা ,,,আমি কি একবার বলছি আমার খিদে পেয়েছে । বৌমারা সকাল সকাল কত কাজ করে , আমাদের জন্য । আর কোনদিন তাদের সাথে এমন ভাবে কথা বলবি না তোরা । আমি কতবার বলছি আমার জন্য সকাল সকাল রুটি বানাতে হবে না আমি তোদের মত ভাতই খাব ,, আমার কিছু হবে না আমি যথেষ্ট সুস্থ আছি তোরা কেউ শুনিস না আমার কথা ।
এগুলো শুনে পায়েল মনে মনে বলল আপনাদের জন্য আমাকে কথা শোনায় ফাহাদ,,এখন ঢং করে কথা বলেন । জানি তো ইচ্ছে করে আমাদেরকে বোকা শোনান । এই কথা মনে মনে ভেবে রুঠির থালা আর আলু ভাজির থালা ডাইনিং টেবিলে রেখে চলে গেল আবার কিচেন রুমে ।
ফাহাদ : মা তোমরা খাও আমার তো খাওয়া হয়ে গেল তোমার হাতে । আমি এখন অফিসে চলে যাব । ফাহাদ আর রাহাত দুজনে অফিসে চলে গেল ।
এখন মাহিম অন্তরাকে বলল আমার লক্ষী বুড়িটাকে আমি নিজের হাতে খাওয়াই দেবো । আচ্ছা শোনো তোমার কি এই বুড়া বয়সেও ভীমরতি গেল না ,,, আমাকে এতো বুড়া বয়সেও এত ভালবাসতে হবে না তোমাকে । আরে বুড়ি চুপ করো হা করতো আমি খাইয়ে দেই ,, এই বলে মাহিম রুটির ভেতর আলু ভাজি ভরে অন্তরার মুখে তুলে দিল ,, অন্তরাও খেতে লাগলো । খাচ্ছে আর অন্তরার চোখ দিয়ে টলটল করে পানি গড়িয়ে পড়ছে ,,, জানো বুড়া আমি হয়তো এই দুনিয়াতে একজন সুখী নারী ,,যার স্বামী ৭০ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও তার স্ত্রীকে অনেকটা ভালবাসে । জানো সেই বিয়ের আগের কথাগুলো আমার খুব মনে পড়ে গেল ,,
অন্তরা আর মাহিমের প্রেমের কাহিনী যদি আপনারা জানতে চান আমার পাশে থাকার অনুরোধ রইলো , 🙏🙏🙏🙏
আশা করছি আমার গল্পটা আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লাগবে ❤️❤️❤️❤️
আমার গল্পের কোন জায়গায় ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ।
চলবে ,,,,,
তুমি আছো তাই
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
575
Views
8
Likes
1
Comments
5.0
Rating