অবহেলা না ভালোবাসা (পর্ব ৩)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
এদিকে চিঠিটা পড়তে পড়তে ঝাপসা হয়ে গেলো রিয়ার চোখ। দু'ফোঁটা অশ্রু টুপ করে ঝরে পড়লো। চিঠির ভাজে। খুব কান্না পাচ্ছে ওর। আজ খুব কাঁদবে সে। কারণ ওর তো খুশি হওয়ার কথা, কিন্তু একটা কীসের শূন্যতা অনুভব করছে হৃদয়ের গহীন। ওর মনে হচ্ছে কি জেনো একটা ওর কাছ থেকে চিরোতরে

হারিয়ে যাচ্ছে। যেটা সে আর কখনোই ফিরে পাবেনা।



এভাবেই কেটে যায় আমার ৪ টা বছর। আজ আমি

আমার অস্ট্রেলিয়া থেকে স্টাডি শেষ করে দেশে ফিরলাম।

দেশে এসেই আমার মনে পড়ে গেলো সেই পুরোনো কষ্ট গুলো। মনে পড়ে গেলো সেই সব কথা। যার কারণে

আমি দেশ থেকে কাঁদতে কাঁদতে অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিলাম। আবারো আমার ওর কথা গুলো মনে পড়তে শুরু করলো। মনে পড়তে লাগলো রিয়ার দেওয়া সেই কষ্ট গুলোর কথা।

আমি যে রিয়াকে ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ওর কথা আমার আর মনে পড়েনি তা কিন্তু না। আমার ওর কথা সেখানে গিয়েও সারাক্ষণ মনে পড়তো। আর আমি ওর কথা ভেবে সারাক্ষণ সেখানে নীরবে কাঁদতাম।

তারপর আমি এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজের বাসায় চলে আসলাম। ও হ্যাঁ আর একটা কথা আমি যে দেশে আসবো সে কথাটা কিন্তু বাসার কাউকে জানাই নি। কারন সবাইকে সারপ্রাইজ দেবো বলে।

তারপর বাসায় এসে আমি আগে দরজার কলিঙ্গ বেলটা চাপলাম। আর আমার বেলটা চাপার কিছুক্ষণ পরেই আম্মু এসে দরজাটা খুললেন। দরজাটা খোলার সাথে সাথে আম্মু আমায় দেখে একদম কিছুক্ষণ শব্দহীন স্তব্ধ হয়ে গেলেন।

তারপর হঠাৎ দৌড়ে এসে কাঁদতে কাঁদতে আমায় জড়িয়ে ধরলেন। আর আম্মুর কান্না দেখে আমিও সাথে সাথে কাঁদতে লাগলাম। তারপরে আম্মু আমায় কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন:-

----কাব্য তুই "বাবা' তুই কেমন আছিস হ্যাঁ ...!!

এতোদিন পড়ে কি তোর আমাদের কথা মনে পড়লো বল? জানিস আমি'আর তোর আব্বু প্রতিটা দিন তোর আশায় এই দরজার পথ চেয়ে বসে থাকি শুধু মাত্র তোর আশায়। শুধুমাত্র এইভেবে যে এই বুঝি তুই আজকে বাসায় আসবি। আর আসবি তো আসবি.

আসার আগে আমাদের একটা ফোন করে আসবি না।তাহলে আমি ও তোর আব্বু দুইজন মিলেই এয়ারপোর্টে তোকে আনতে যেতাম।

এই বলেই আবারো আম্মু কাঁদতে শুরু করলেন।

---আরে আরে আম্মু তোমাদের কথা সেখানে সারাক্ষণ মনে পড়তো। ইচ্ছে করতো সেখান থেকে ছুটে চলে আসি তোমার কাছে। কিন্তু আমি চাইলেই তো আর তোমাদের কাছে ছুটে আসতে পারবো না!!

আচ্ছা তুমি কেমন আচ্ছো আম্মু!! আর আব্বু কেমন আছে?

---আমরা সবাই এতোদিন তোকে ছেড়ে ভালো ছিলাম না। কিন্তু এখন সবাই ভালো থাকবো।

কেন না তুই এসে গেছিস না। তাহলে কি আর আমরা সবাই খারাপ থাকতে পারি। তুই তো আমাদের সবার ভালো থাকার ঔষুধ বাবা। আচ্ছা তুই কি বাসার বাইরেই দাড়িয়ে আমার সাথে কথা বলবি!!

নাকি বাসার ভিতরেও আসবি.!!! (আম্মু)

---আমি কোথায় বাইরে দাড়িয়ে থাকার জন্য বসে আছি.! তুমিই তো আমায় বাসার ভিতরে ডুকতে দিচ্ছো না। আর তুমি ডুকতে না দিলে আমি কি করে ভিতরে যাবো বলো.?(আমি)

এই বলেই আমি বাসার ভিতরে ডুকে গেলাম। তারপর নিজের রুমে ঢুকে আবারও নিজের রুমটা কে দেখতে

লাগলাম। পুরো রুমটাই যেমন রেখে গিয়েছিলাম রুমটা ঠিক তেমন টাই আছে। তবে একটা দিকে লক্ষ করে দেখলাম যে আমার রুমের সব কিছু একদম ঠিক-ঠাক ভাবে গোছানো আছে.। কিন্তু কিভাবে আমি তো আমার রুমটা কখনোই এমন গুছিয়ে রাখতাম না.! তাহলে আমার রুমটা কে গুছিয়ে রেখেছে! পরে আবার ভাবলাম 'হয়তো আম্মুই আমার রুমটা গুছিয়ে রেখেছিলেন আমি যাবার পরে। তাই আমি আর বেশি কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায়

নিজের শরীর টাকে এলিয়ে দিলাম।

কেন না আমি ফ্লাইটে জার্নি করে এসে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি। তারপর হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে



বিকেলে আম্মুর ডাকেই আমার ঘুম ভাঙ্গলো। তারপর উঠে আবারও ফ্রেশ হয়ে আমার রুম থেকে বাইরে বের হয়ে এলাম। বাইরে বের হয়ে এসে দেখি বাসায় অনেক মানুষ। পরে আম্মুর কাছে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন যে আমার ফিরে অাসায় তিনি আমাদের সকল কাজীন দেরকে দাওয়াদ করেছেন। তাই বাসায় এতো মানুষ আর সব আত্মীয় স্বজন।

তাই আমি আর কিছু না বলে নিচে চলে এলাম আমার কাজীন দের সাথে কথা বলার জন্য। আর নিচে এসেই তাদের সাথে হ্যানসেক করতে লাগলাম। আর তারাও আমার সাথে পরিচিতো হতে লাগলো। আর আমার ভালো মন্দ জিজ্ঞাস করতে লাগলো। আর অস্ট্রেলিয়া পড়াশুনো কেমন হয়েছে এবং ইত্যাদি.........



সন্ধ্যায় এবং রাতে অনেক মানুষ জন এবং আরো আত্মীয় স্বজন এলেন। আর এরমধ্যে আব্বুও আমি আসার খবর পেয়ে অফিস থেকে নিয়ে ছুটে চলে আসেন। তারপর আমাকে দেখতে পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে আমার সাথে অনেক গুলো কথা বলেন।

তারপর আব্বুর সাথে কথা বলার পরে আমিও রেডি হয়ে নিচে চলে এলাম সবার সাথে দেখা করার জন্য।

(ও হ্যাঁ আপনাদেরকে এটা জানিয়ে রাখি যে এখন আমি আর আগের মতো সেই বকা খ্যাতমার্কা স্টাইলে থাকি না। সেখানে গিয়ে নিজেকে অনেক চেন্জ করেছি। এবং চেন্জ করে ফেলেছি নিজের সব কিছু

এখন আর কেউ আমাকে বকা খ্যাত বলতে পারেনা। এখন আমাকে যেই দেখে তারা সবাই আমার সাথে

নিজে থেকে কথা বলতে আসে। তবে বিশেষ করে মেয়েরা। তারা এখন আমাকে দেখলেই নিজে থেকে আমার সাথে কথা বলতে আসে।)

তো আমি নিচে এসে দেখি যে আমার সব কাজীনরা সবাই চলে এসেছে। আর তাদের মাঝে হঠাৎ দেখলাম যে আম্মুর বান্ধবী মানে রিয়ার আম্মু "আঙ্কেল-আন্টিরাও চলে এসেছেন আর তাদের সাথে রিয়াও আছে।

তবে ওকে দেখে মনে হচ্ছিলো ওর মনটা অনেক খুশী।

যাক আমার এতো বেশী কিছু ভেবে এত কাজ নেই।

তাই আমি এত কিছু না ভেবে তাদের সাথে দেখা

করতে চলে গেলাম। আমি সোজা তাদের সামনে গিয়ে বললাম :-

---আঙ্কেল-আন্টি!!

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। কেমন আছেন আপনারা?

আমাকে তো ভুলেই গেলেন। আসার পর একটি বারো আমার সাথে দেখাও করলেন না।

---ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ "বাবা। আমরা সবাই ভালো আছি।

আর আমরা তোমায় ভুলে গেছি নাকি তুমি আমাদের

সবাই কে ভুলে গেছো হ্যাঁ।

সেই যে ৪বছর আগে গেলে আর আমাদের তো তেমন ফোনই করতে না। আমাদের কথা এত তাড়াতাড়ি করে ভুলে গেলে। আর সেখানে গিয়ে তো দেখছি মাশ্আল্লাহ্ অনেক সুন্দর হয়েছো। (আন্টি)

---আন্টি''

আপনাদের সবার কথাই আমার সেখানে সারাক্ষণ মনে পড়তো। কিন্তু আমি চাইলেও যে আর তখন আপনাদের সবার কাছে ছুটে আসতে পারতাম না। আর হ্যাঁ কতোদিন আর ক্ষ্যাতমার্কা হয়ে থাকবো বলুন! তাই সেখানে গিয়ে সময়ের সাথে সাথে নিজেকেও একটু বদলে ফেলেছি আরকি।

এই বলেই আমি এবার রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম। আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি সে এক নজড়ে আমার

দিকে চেয়ে আছে। হয়তো বা সে আমাকে এভাবে এই রকম ভাবে আশা করেনি। আমি ওর এমন চেয়ে থাকা দেখে ওকে আর কিছু না বলে সেখান থেকে সরে এলাম। সেখান থেকে সরে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম যে রিয়া আমার দিকে আমার সাথে কথা বলার জন্য আমার কাছে মাথা নিচু করে আসছে।

তাই আমিও সেখানেই ওর জন্য দাড়িয়ে রইলাম ওর সাথে কথা বলার জন্য।

রিয়া আমার কাছে আসতেই আমি:-

---হ্যালো মিস রিয়া চৌধুরী। আপনি ভালো আছেন তো।

রিয়া আমার মুখে আপনি কথাটি শুনে আমার দিকে কিছুক্ষণ করুন দৃষ্টিতে তাকালো তারপর বললো:-

---হুম ভালোই আছি। তুমি কেমন আছো।?

তারপর আমি শুরু ওকে কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনি আমার কিছু মেয়ে কাজিন রা আমার সাথে কথা বলতে চলে আসে সেখানে।

আর আমি তখন রিয়ার দিকে চেয়ে দেখি সে অনেক রাগি লুক নিয়ে তাদের দিকে তাকাচ্ছে 'আর রাগে ফুলছে। তাই আমিও ওকে আরো বেশি করে রাগানোর জন্য তাদের সাথে আরো বেশী করে হেসে হেসে কথা বলে ওদের সাথে ওদের মোবাইলে সেলফি তুলতে লাগলাম। আর কথা বলতে লাগলাম। এবং এক সময় রিয়াকে আরো রাগানোর জন্য তাদের সাথে রিয়ার ওখান থেকেভরিয়াকে আসছি বলে তাদের সাথে সেখান থেকে চলে এলাম।

আর হঠাৎ আমার এমন ব্যাবহারে রিয়ার কেমন লেগেছে তা জানার জন্য পিছনে তাকাতেই দেখি রিয়ার দুইচক্ষু দিয়েই তখন নিরবে পানি ঝরছে।

সে সেখানেই আমার এমন ব্যাবহারে মনে কষ্ট পেয়ে দাঁড়িযে দাঁড়িয়ে নীরবে কাঁদছে।

হয়তো বা আমার কাছে সে এমন কিছু আশা করেনি।

ধুর আমি এত কিছু না ভেবে আবারও তাদের সাথে মিশতে শুরু করলাম।

কেন না এখন আর আমার রিয়ার চোখের পানির জন্য তেমন মনের মাঝে খুব বেশী একটা কষ্ট হয়না।

এভাবে কিছুক্ষণ চলার পড় রিয়া সেখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো। আর আমিও তখন তাদের সেখান থেকে এটা ওটা বাহানা দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম।



তারপর রাতে অনুষ্ঠান শেষ হলে সবাই এক এক করে বাসায় চলে যেতে থাকে। আর এদিকে আমি আমার রুমে একা একা বসে আছি। হঠাৎ একটু পরেই খেলার করলাম কে যেন আমার রুমের দরজার কাছে এসে দাড়িয়ে রইলো।

আমি তার ছায়াটা রুমের ভিতর থেকেই দেখতে পেলাম।

তাই আমি সাথে সাথেই বললাম:-

--কে ওখানে।

আমার কথাটা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে রিয়া বেরিয়ে এলো আমার সামনে। আমি ওকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যাই। তারপর:-

--আরে রিয়া ম্যাম আপনি। তাও আবার আমার রুমে।

আপনারা এখনো বাসায় যান নি।

---নাহ্ আসলে আম্মু-আব্বু ওরা সবাই নিচেই বসে আছে আমার জন্য। আমি নিচে গেলেই ওরা আমাকে নিয়ে বাসায় চলে যাবে। কিন্তু আসলে আমি তোমাদের এখানে আসলাম তোমার সাথেবকিছু কথা বলার জন্য।

তোমার কি এখন আমার কথা গুলো শুনার একটু সময় হবে কাব্য? (রিয়া বললো)

--নাহ্ আসলে আমার একটু হালকা কাজ আছে।

তাই আমার হাতে তেমন বেশী সময়ও নেই।

আচ্ছা ঠিক আছে আপনার আমায় কি বলার আছে বলেন। কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি করে বলবেন প্লিজ।

আমার কথায় রিয়া আমার দিকে কেমন যেনো একটা করুন দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।

হয়তো মনে হয় আমার কাছে সে এমন কিছু একটা আশা করেনি।

তারপর আমি লক্ষ করলাম যে ওর চোখের কোণ দিয়ে নীরবে পানি ঝরছে।

তার পর হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে। তারপর কাঁদতে কাঁদতে আমায় জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থায় বলতে থাকে:-

চলবে.................

[সবাই মন্তব্য করে জানাবেন গল্পের , প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব কেমন হয়েছে ]
348 Views
6 Likes
2 Comments
5.0 Rating
Rate this: