-আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমার পরীক্ষা শুরু হবে। তাই আমি চাইনা তুমি আমার আম্মু বা আমাকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব কর.!!
আমি রিয়ার কথায় শুধু মাথা নাড়লাম। এমনিতেও রিয়ার বলা কথাগগুলো শুনে আমার চোখে অশ্রু ভীড় করছে। আমি মাথা নিচু করে আছি। কারন ওকে বুঝতে দিব না তাই।
তারপর রিয়া আমার মাথা নাড়ানো দেখে আবার বললো।
(তবে এবার একটু রেগে গিয়ে বললো,)
--কাব্য তোমার কী কিছুই বলার নেই?
;-হুম। আছে...
(খুব ছোট্ট করে ভাঙ্গা গলায় বললাম....)
--হ্যাঁ তাহলে বলো কী বলবে?
--ভালো ভাবে পরীক্ষা দিয়ো। টিক মতো খেয়ো। সময় মতো ঘুমিয়ো। আর নিজের যত্ন নিয়ো।
আমার কথাগুলো শুনে রিয়া খুব রেগে গিয়ে আমাকে বললো:-
--এই তোর কী এসব ছাড়া কোনো কথা নেই। আমি আমার মতো থাকবো তাতে তোর কী.? আর তুই আমার খোঁজ করবি না। তোর কেয়ার গুলো
আজ আমার বিরক্ত লাগছে। আমাকে মুক্তি দে তুই এসব থেকে.। (রিয়া)
এই বলেই রিয়া আমার কাছ থেকে হনহনিয়ে চলে গেলো। আর এদিকে আমি কান্না ভেঁজা চোখ নিয়ে ওর গমন পথের দিকে তাঁকিয়ে থাকলাম। ও আমার চক্ষের আঁড়াল হয়ে যাবার সাথে সাথেই আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম। হয়তো অনেকেই হাঁসছে। কিন্তু তারা তো আমার কষ্ট বুঝবে না। তারা তো আর এটা জানে না যে আমি এখানে কেনো কাঁদছি। তারপর হঠাৎ কেউ একজন এসে আমার পিঠে হাত দিয়ে মাথায় হাত
দিলো। আমি চোখগুলা বাম হাত দিয়ে মুছে তার দিকে তাকালাম। দেখলাম একটা ছেলে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে। আমি চোখ তুলে তাকানোতে বললো...
--ভাইয়া এভাবে কেঁদোনা, একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে...??(ছেলেটা)
--সত্যিই কী ঠিক হবে ভাইয়া.। চাইলেই কী সব ঠিক হয়...(ভাঙ্গা কণ্ঠে বললাম আমি)
--এখন বাসায় যান আর কাঁদবেন না.। সবাই তাকাচ্ছে আপনার দিকে...!!!
--হুম....।
এই বলেই সেখান থেকে সোজা বাসায় চলে আসলাম।
আর বাসায় এসেই আমি আম্মু আর আব্বুকে ধরে খুব কাঁদলাম.। তারপর বললাম :-
--আম্মু তোমার ছেলেতো কাউকে কষ্ট দেয় নি জেনে-শুনে.? তাহলে সবাই আমাকে কেন কষ্ট দেয়?
আমার কথা শুনে আম্মুও আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন :-
--কী হয়েছে তোর বাবা? তুই এভাবে কাঁদছিস কেন? আমাকে বল.! এই বলেই আমার সাথে আম্মুও কেঁদে দিলো...।
--আম্মু তুমি তোমার পাগল ছেলেটাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তোমায় হয়তো না বলে কষ্ট দিয়েছি কতো?
--কী বলছিস তুই যাতা কথা। তুই এরকম তো করিস না কখনো হঠাৎ আজ কি হলো?
( আম্মু কান্নাভেঁজা কণ্ঠে খুব কষ্টে বললো..)
তারপর কাঁদতে কাঁদতে বাবাকেও বললাম...
--বাবা আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো. আমি হয়তো তোমায়
কতো কষ্ট দিয়েছি...???
বাবা এবার আমার কথা শুনে কেঁদে ফেললো তারপর।
--কী বলছিস বাবা তুই এসব। আর তুই এমন করছিস কেন? তোর কি হয়েছে রে বাবা....!!! (বাবা)
--না বাবা।
আমি জানি যে আমি তোমাকে আর মাকে খুব জ্বালাই, আর তোমরাও আমার দেয়া কষ্ট গুলো মুখ বুঝে সহ্য করো। তাই তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো প্লিজ। (কথা গুলো অনেক কেঁদে কেঁদে বললাম )
:- আর জানো বাবা এখন আমার না নিজেকে খুব একা একা লাগছে। নিজেকে যেন হাঁরিয়ে ফেলেছি আমি বাবা। হঠাৎ আমার এমন কথা শুনে এবার আব্বু-আম্মু দুজন ই এক সাথে কেঁদে উঠলেন। তারপর বললো।
--না বাবা। না। কী উল্টাপাল্টা বকছিস তুই এসব? তুই আমাদের ছেলে... আর কিছুই বলতে পারলেন না আব্বু-আম্মু। দু'জনেই সমানে কাঁদছেন। সাথে আমিও কাঁদছি.....।
একটু পর তাদেরকে ছেড়ে সেখান থেকে রুমে চলে
আসলাম। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম। আম্মু এসে ডাকতে শুরু করলো। আব্বু দরজা খুলতে বললো। আমি দরজা খুলে দেখি। আব্বু
ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুমে ঢুকে বেডে বসলো, আমাকে তার পাশে বসিয়ে নিজ হাতে খাঁইয়ে দিলো আব্বু। আম্মু পানির গ্লাস নিয়ে আব্বুর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো চলে যাবো বলেই আম্মুর আর আব্বুর একটু কষ্ট হচ্ছে। কেনোনা তারা আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝেন না। তারা দুইজনিই আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসেন।
এদিকে এরমধ্যে আমার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সময় চলে
এসেছে। সামনের সপ্তাহে চলে যাবো। নিজেকে একটু গোছাতে ব্যস্ত ছিলাম তাই আমার আর রিয়ার খোঁজ
নেওয়া হয় নি।
তবে ওর অনেক গুলো পরীক্ষাই শেষ হয়েছে। তবে পরীক্ষা গুলো কেন জানি ভালো হয় নি। তাই চলে যাওয়ার আগে যদি একটু দেখা করা যেতো। কিন্তু ওর পরীক্ষা তাই ওকে ডিস্টার্ব করিনি।
আর তাছাড়া ও তো আর আমার সাথে দেখা করতে না করেছিলো তাই আর আমিও ওর সাথে দেখা করিনি.
এভাবে সময় চলার পথে। আস্তে আস্তে আমার অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়ার দিন চলে এসেছে। নিজেকে খুব একা একা লাগছে। আম্মু-আব্বু আর রিয়ার আম্মু-আব্বুও এসেছেন। আমার যাওয়ার সময় চলে এসেছে দেখে আমি আম্মু কে জড়িয়ে ধরে বললাম :-
--আম্মু আমার জন্য দোয়া করো। আমি যেনো তোমাদের সবাই ইচ্ছে পূরণ করতে পারি। এই বলে কেঁদে দিলাম। আর এদিকে আম্মুও আমাকে
জড়িয়ে ধরে ঢুকরে কেঁদে দিলেন। তারপর বাবা আমাকে বললেন :-
--বাবা টিক মতো খাওয়া-দাওয়া করিস। নিজের
খেয়াল নিস। (আব্বু)
--হুম আব্বু।
এই বলে চোখ মুছে বাবা বলে জড়িয়ে কেঁদে দিলাম। পৃথিবীতে বাবা মানুষটাই হয়তো এমন যাকে
খুব কমই কাঁদতে কম দেখা যায়।
--বাবা আমার জন্য দোয়া করো। আম্মুর আর তোমার
নিজের খেঁয়াল রেখো। (আমি)
--আরে কাঁদছিস কেন বাবা? কাঁদিস না। আমরা
ভালো থাকবো। তুই নিজের যত্ন নিস। আর আমাদের জন্য দূর্চিন্তা করিস না। (আব্বু)
--আচ্ছা বাবা। সময় মতো নিজের ঔষূধ গুলো খেয়ো। তারপর আমি আন্টি আর আঙ্কেল কে বললাম....
--আপনাদের অনেক মিস করবো। আম্মু-আব্বুকে একটু দেখে রাখবেন.?
--আরে বাবক তুমি সে নিয়ে ভেবো না। তুমি ভালো থাকলেই আমাদের ভালোথাকা.। (আঙ্কেল-আন্টি)
--জ্বী আঙ্কেল-আন্টি আমার জন্য দোয়া করবেন? আর রিয়াকে এই জিনিসটা দিবেন।
আন্টির হাতে একটা চিঠি দিলাম রিয়ার কাছ থেকে শেষ বিদায় নিতে। তারপর আব্বু-আম্মুকে নিচু হয়ে
সালাম করে বিদায় নিলাম। পিঁছু ফিরে আঁকাশের
দিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলাম। আজ আঁকাশ টা খুব
মেঘলা। হয়তো আমার মনের মতো ওর মনটাও খারাপ....।।
এদিকে রিয়ার আম্মু বাসায় গিয়ে দেখে যে রিয়া কলেজ থেকে ফিরে এসেছে। তাই তিনি রিয়াকে ডেকে আমার দেয়া চিঠিটা রিয়ার হাতে দিলেন। চিঠিটা পেয়ে তারপর রিয়া হাতে চিঠিটা নিয়ে পড়তে শুরু করলো.......
রিয়া……………
হয়তো ভাববে প্রিয় বলে ডাকিনি কেন?
কারণ তুমি আমার কাছে প্রিয় হলেও। আমি যে তোমার কাছে প্রিয় শব্দটা আর নেই।
রিয়া তুমি হয়তো ভালোই আছো আমায় ছাড়া।
আর আমিও ভালো থাকবো যেমন তোমায় ছাড়া থাকার কথা।
ও হ্যাঁ তোমার জন্য আমার একটা খুশির সংবাদ আছে।
খুশীর সংবাদ এই যে আজ আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে গেলাম। অনেক দূরে। তোমাকে আর ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করবো না। তোমায় আর আমি জ্বালাবো না। তোমায় অার আমার মতো কারো উপরে বিরক্ত হতে হবে না।
হ্যাঁ আগের মতো আর নিজের কেয়ার করবে কী না জানি না। তবে খুব মিস করবো তোমার বকা গুলো। কিন্তু চাইলেও তো আর শুনতে পারবো না।
কেনোনা আজকে আমি চলে যাচ্ছি তোমার থেকে অনেক দুরে। তুমি তোমার নিজের মতো করে কাউকে খুঁজে নিয়ো।
যে তোমার মনের মতো হবে। আমি হয়তো ছিলাম ভুল ছিলাম আর খুব বাঁজে ছিলাম।
কিন্তু আমার ভালােবাসাটা সত্যি ছিলো। যা তুমি দেখোনি। আমি তোমাকে হয়তো নিজের করে পাই নি। তবে তোমার স্মৃতিগুলো আমার নিজের।
যা দিয়ে আমি আমার সারাটাজীবন কাটিয়ে দিবো। আর কোনদিন আমার এই বিরক্ত কর কণ্ঠটা শুনতে পাবে না তুমি। দোয়া করি তুমি যেন আমার চাইতে ভালো কাউকে পাও।
যে তোমাকে খুব ভালোবাসবে তোমার মতো করে। আমার ভালোবাসাটা না হয় না পাওয়ায় থাক, তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু তোমার কষ্টে যে আমার বুক ফেঁটে যাবে। আমার দেয়া কষ্টগুলোকে জীবনের খারাপ মুহূর্ত
মনে করে ভুলে যেও আমি দূর থেকেই তোমাকে ভালোবাসবো।
তুমি নিজেকে সুখী করো। আর কিছু বললাম না। কেনোনা তুমি আবার আমার উপরে বিরক্ত হবে।
তাই আর বিরক্ত করবো না তোমায়। পারলে ক্ষমা করে দিয়ো এই পাগলটাকে। যে তোমাকে তোমার মতো করে ভালোবাসতে পারে নি। ভালো থেকো। নতুন কাউকে নিয়ে খুশী থেকো।
আর পারলে এই পাগলটাকে শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দিয়ো। আমি হারিয়ে গেলাম আজ থেকে চিরতরে। ভালো থেকো তুমি। খুব ভালো থেকো।
আমার কাছ থেকে দুরে গিয়ে। কেনোনা আমি তো তোমায় ভালোবাসতে পারলাম না। যাক সে সব কথা।
Bye........
ইতি.........পাগল এবং বিরক্তিকর মানুষটা...হয়তো তোমার/হয়তো বা না.......
এদিকে চিঠিটা পড়তে পড়তে ঝাপসা হয়ে গেলো রিয়ার চোখ। দু'ফোঁটা অশ্রু টুপ করে ঝরে পড়লো। চিঠির ভাজে। খুব কান্না পাচ্ছে ওর। আজ খুব কাঁদবে সে। কারণ ওর তো খুশি হওয়ার কথা, কিন্তু একটা কীসের শূন্যতা অনুভব করছে হৃদয়ের গহীন। ওর মনে হচ্ছে কি জেনো একটা ওর কাছ থেকে চিরোতরে
হারিয়ে যাচ্ছে। যেটা সে আর কখনোই ফিরে পাবেনা ।
(পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন এবং গল্প টি পড়ে অবশ্যই জানাবেন কেমন লাগলো)
অবহেলা না ভালোবাসা (পর্ব ২)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
424
Views
7
Likes
1
Comments
4.3
Rating