আমার নাম রানী,আমি হিন্দু পরিবারের মেয়ে। আমাদের ধর্মে কাকাতো, জেঠাতো, মামাতো পিসাতো, সব নিজের আপন ভাইয়ের মতোই। ছোট থেকেই সবাইকে নিজের ভাইয়ের মতোই মানতে হয়, আর আমাদের ধর্মে তা মানে কিন্তু আমি একটা চরম ভূল করে ফেলেছি যেটা করার কথা ছিলো না।
আমি ছোট বেলা থেকেই গ্রামে থাকি। ওখানেই বড় হই আমাদের আশে পাশে যে আত্নীয়রা থাকতো সবাইকে আমি চিনি,একসাথে বড় হইছি। হঠাৎ আমার বড় ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়,শহর থেকে অনেক মানুষ আসে। বিয়ের জন্য আমার এক জেঠাও আসে তার সাথে আমার বাবার কি নিয়ে ঝগরা ছিলো এতো বছর আসেনি,বিয়ের দাওয়াত দেওয়াতে আসতেছে। আমি তাদের বাড়ির কাওকেই চিনিনা,জেঠার বড় ছেলে বিদেশ থেকে আসছে সেও আসবে।
বিয়ের দুদিন আগেই তারা আসলো অনেকেই,আমাদের ভিতর বিয়ের অনুষ্ঠান প্রায় ১সপ্তাহ থাকে। জেঠাতো ভাই এর নাম ছিলো রাজন! দেখতে খুব সুদর্শন ছিলো। যেমন লম্বা চওরা তেমনই সুন্দর শিক্ষিত, বিদেশ থেকে অনেক কিছুই আনছে। আগে তো পরিচয় ছিলো না তাই কিছু দেয়নি,এবার বাসায় আসছে তাই অনেক কিছুই আনছে। আমাকে একটা মোবাইল দিয়েছে,আমি ২ ভাইয়ের একবোন ছিলাম হয়তো খুজ খবর নিয়েই আসছে যে বাসায় কে কে আছে।
বাবার জন্য ঘড়ি,মার জন্য শাড়ি, ভাইদের জন্য সেন্ট আরো অনেক কিছুই। অনেক দিন পর আসছে তাই অতিথি আপায়নের জন্য বাবা পরে লেগেছে বড় ভাই বলে কথা। বিয়ের আগের দিন রাতে গায়ে হলুদ,আমি একটা গানে নাচ শিখছিলাম, এতো মানুষ আসবে জানলে শিখতাম না । খুব লজ্জা করছে কি করবো বুঝতে পারছি না।
সবার জোরাজুরির কারনে নাচলাম,রাজন ভাই কখন ভিডিও করলো দেখলাম না। অনুষ্ঠান শেষে আমাকে বলল খুব সুন্দর নাচো কিন্তু,আমি ভাই ভেবেই বললাম ধন্যবাদ দাদা। দাদা বলাতে রাজন ভাই মুখটা ছোট করে ফেলল মনে হয়। আমি ভাইয়ের মতোই দেখতাম আচরণ করতাম। কিন্তু সে আমাকে মনে মনে পছন্দ করতো আরো আগে থেকে। বিদেশ থাকা কালিন এলাকার কার ফেসবুকে আমার ছবি দেখছিল,তার মাধ্যমে জানতে পারে আমি তার কাকাতো বোন,তাই হয়তো ফুন টা আনছে।
পরের দিন বিয়ে! বর যাত্রী যাবে অনেকেই আমিও রেডি,বিয়েটা একটু দুরেই হচ্ছে, তাই সবাই ঠিক করলো লঞ্চস দিয়ে যাবে। সবাই মিলে বক্স বাজিয়ে নাচানাচি করতে করতে গেলাম। বেশ আনন্দ হচ্ছিলো। আমাকে আর নিলয় ভাইয়ে একসাথে দেখলেও কিছু বলেনা কেও ভাবে ভাই বোন।
বিয়ে বাড়িতে যাই সারা রাত বিয়ে হয়,আমাদের নিয়ম বাসি বিয়ে পরের দিন। ভোর চারটাই সবাই ঘুমিয়ে পরে, কিন্তু নিলয় ভাই বলে চলো আমরা একটু গ্রাম ঘুরি। আমি বলি এতো রাতে মানুষ কি বলবে। আবারো বলল আমি ভাবলাম বিদেশ থাকে ঘুরিয়ে আনি। আমিও গেলাম আকাশ ভরা তারা এখনো আলো হয়নি,আমরা হাটছি অনেক দুরেই চলে আসি বিয়ে বাড়ি থেকে।
রাজন আমার হাত ধরে বলে রানী আমি তোমায় ভালবাসি। আমি চমকে গেলাম! কি বলেন এসব আমি আপনার বোন হই জানেন না। বলে বিদেশ এসব মানে না আর আমি তো তোমাকে কখনোই দেখিনি বাস্তবে,তাই বোন বলা প্রোসিবল না। আমি যাই আপনি আসেন, রাজন হাত ছারছে না কি হলো ছারেন মানুষ দেখলে কি বলবে।
ছেরে দিলো আমি এক দৌরে চলে এলাম বিয়ে বাড়ি, এখন রাজনের থেকে দূরে দূরে থাকছি।
আর ভয় পাচ্ছি বাবা জানলে কি হবে। বার বার রাজন আসে পাশে ঘুর ঘুর করছে কাওকে কিছু বলতেও পারছিনা। ফুনে মেসেজ দিচ্ছে। সরি প্লিজ এসব বলছে। বাসি বিয়ে শেষ, বউ নিয়ে বাসায় যাবো আমাকে আর রাজনকেই বউয়ের সাথে বসাইছে এক কেবিনে লঞ্চে সাথে বভ ভাইও ছিলো।
তারা রাতে ঘুমাইনি তাই ঘুমিয়ে গেছে। ওই সুযোগে রাজন আবার আমাকে বুঝাচ্ছে কেও না মানলে পালিয়ে যাব। তোমায় নিয়ে বিদেশ চলে যাবো আরো কতো কি? মেয়ে মানুষের মন কতোক্ষন আর চুপ থাকা যায়,একসময় গলে গেলাম তাদের রুমে রেখেই দুজন বের হলাম হাতে হাত রেখে গল্প করলাম সারাক্ষন।।
বাসায় ফিরলাম সবাই বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত আর আমরা আমাদের নিয়ে। সারাক্ষণ চ্যাট করি ফুনে। এতোটা ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম হঠাৎ করে! ফাক পেলেই ঢলাঢলি,হয়তো অনেকের চোখেই পরেছে চোখ লজ্জায় কেও কিছুই বলেনা। নতুন প্রেম কি করবো দিশা পাইনা। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ নিলয় বলল আমাদের সাথে ঢাকা চলো আমি বললাম যেতে দিবে না।
আমার বাবাকে বলে রাজি করালো,বাবা ভাবলো এতো দিন পর সব ঠিক হইছে ঘুরে আসুক। আমি তো খুব খুশি। চলে গেলাম ঢাকা আমি জেঠির সাথে ঘুমাইতাম রাজন ফুন দিয়ে তার রুমে আসতে বলতো না না করেও দুইদিন গিয়েছি। একদিন কাজের মেয়ে দেখে ফেলে,আমি ভয়ে রাজনকে বলি। পরের দিনই আমরা মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি। রাজনদের বাসায় উঠি সবাই খারাপ ব্যবহার করে।
পরে দুজনকে বের করে দেয়,তেজ্য পুত্র করে দেয় রাজনকে আর আমার বাবাও জানতে পেরে তেজ্য কন্যা করে দেয় আমায়। দুজন একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি ঢাকা। কিন্তু কোনো সুখ শান্তি কিছুই নেই। কারন সমাজ, পরিবার, আত্নীয় সজন, কেও আমাদের পাশে নেই। নেই তাদের আর্শীবাদ।
বন্ধুরা বড়দের কষ্ট দিয়ে সুখি হওয়া যায়না। হাজারো সম্পদ থাকলেও আসল সম্পদ হলো পরিবার আর তাদের আর্শীবাদ ধন্যবাদ 👏
Chowdhury Tamanna
very nice.