...

জ্বীন ও কালো বিড়াল

...
ফজলুল হক রাফি
...
...
15-Sep-2023, 10:15 PM
...

3263

...

133

...

4.0(111)

ক্যাটাগরি : ভুতের গল্প

সময়টা ছিল ১৯৯২ সাল
আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। একটা বিশেষ কারনে আমাকে খুলনা শহর ছেড়ে যেতে হয়। এক আত্নীয়র মাধ্যমে খুলনার কয়রা থানার চালনা এলাকার একটা ইস্কুলে ভর্তি হলাম।

স্কুলটি একদম নদীর পাশে। লন্চ গেলে ঠেউ এসে লাগতো স্কুললের দালানে। স্কুলটিতে মেসে থাকার ব্যবস্থা ছিল। বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রী ই ছিল হিন্দু।আমি শহর থেকে এসেছি তাই সবাই আমাকে খুব আদর করতো। শিক্ষকরা ও আমাকে অনেক টেককেয়ার করতেন।

ইস্কুলের পাশেই টিন সেড মেস। আমাকে একদম নদীর কিনারের ঘরটা দিলেন। প্রতি ঘরে দুই-তিন জন ছাত্র থাকে। কিন্তু আমি ওঠার পর দেখি ও ঘরে কেউ নেই। স্যার বললেন তোমার কি ভয় লাগবে এটাতে থাকতে?আসলে আমি একা থাকতেই ভালবাসি। নিজের ইচ্ছামত থাকা যায়। তাই স্যারকে বললাম না স্যার কোন সমস্যা হবেনা। আমি ভয় পেতে পারি এটা তো বলাই যাবেনা। তাহলে আমার থেকে শহরেরই মান সন্মান যাবে। স্যার বললেন দু মাস পর তোমার রুমে নতূন ছাত্ররা আসবে।

জানালা খুলে দিলেই নদী। আহা কি যে দারূন ভাল লাগতে শুরু করলো। গ্রামটিতে তখন ও বিদ্যুৎ যায়নি। হারিকেনের আলোয় পড়াশুনা। পুরো অন্ধকার ঘরে আমি কখনোই ঘুমাতে পারিনা। তাই রাতে মিট মিট করে আলো জ্বালিয়ে রাখি। রাতে জানালা খুলে দিই। হুহু করে বাতাস আসে।প্রচন্ড গরমের দিনেও পাতলা কাঁথা গায়ে দিতে হতো নদী থেকে উঠে আসা ঠান্ডা বাতাসে। যাই হোক ছোট বেলা থেকেই আমি বিড়াল খুব পছন্দ করি। এই মেসে ওঠার ঠিক তিন দিনের মাথায় মেসে প্রথম একটা বিড়াল দেখতে পেলাম। কুচকুচে কালো চোখ টা হলদেটে। লেজের দিকে শুধু একটু সাদা রং।বিড়াল টিকে দেখে আমার খুব পছন্দ হলো।

সারাদিন ওকে আমি দেখতাম না। কিন্তু বিশ্বাস করেন আমার ঠিক রাত্রের খাবারের সময় ও চলে আসতো। আমি ইচ্ছে করেই আমার অনেক মাছ মাংস ওকে দিতাম।ও মাথা নিচু করে খেত আর মাঝে মাঝে আমার দিকে আড় চোখে তাকাতো।আমার ইচ্ছে হতো ওকে কোলে নিয়ে আদর করি কিংবা ও আমার রুমেই থাকুক সারাদিন। কিন্তূ ওকে ধরতে গেলেই লম্বা দৌড় দিত।কোন দিন ওকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। মাঝে মাঝে অনেক রাত জেগে পড়াশুনা করতাম। হয়তো খেতে দেরি হয়েছে বিড়ালটি ই আমাকে মনে করিয়ে দিত খাওয়ার জন্য। ও এসে ঘরের দরজা জানালা আর বেড়াতে শব্দ করতো।আমি বুঝে নিতাম ও এসেছে । তাড়াতাড়ি খেতে বসতাম।দরজা খুলে দিতাম।ও দূরে চুপচাপ বসে থাকতো। আমি বেশী বেশী করে খেতে দিতাম। ও চুপচাপ খেয়ে আমার দিকে আড়চোখে তাকাতে তাকাতে বের হয়ে যেত।

মাঝে মাঝে ওর চাহনিতে ভয় পেতাম। কেমন যেন একটা ভয়ংকর ভয়ংকর দৃস্টিতে তাকাতো। আমি ভাবতাম ওটা হয়তো এ গ্রামের ই কারো বিড়াল। কিন্তু আমাদের ইস্কুল টা গ্রাম থেকে বেশ দূরে নদীর পাড়ে। তাই আমার একদিন কৌতুহল হলো যে ও কোথায় যায় সেটা দেখতে।

একদিন রাতে ও আসলো। আমি ও অনেক ভাত মাছ খেতে দিলাম। ও খেয়ে বের হয়ে গেল। আবছা আলোর রাত আমি ও টর্চ হাতে ওর পিছু পিছু গোপনে বের হলাম। টর্চ জ্বালাচ্ছিনা পাছে ও বুঝে ফেলবে। হালকা আলোতে ওকে স্পস্ট ফলো করছি আমি। দেখি ইস্কুলের গেট পেরিয়ে নদীর দিকে যাচ্ছে আমি ও গা ঠাকা দিয়ে দিয়ে ওকে অনুসরন করছি।বিড়ালটা সোজা নদীর পানির কাছে যেয়ে হারিয়ে গেল। আমি অবাক হলাম কোথাও দেখছিনা। হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া এসে লাগলো আমার গায়ে।ঠান্ডা বাতাস কিন্তু চোখ দুটি যেন জ্বলে যাচ্ছে।কয়েকবার চোখ মুছলাম। এর ই মধ্যে দেখি নদীতে কি একটা লাফ দিয়ে পড়ার শব্দ। আমি ভেবেছি হয়তো বিড়ালটা নদীতে লাফ দিয়েছে। চোখ জ্বালা অবস্থায় এক ঝলক দেখতে পাই নদীর উপর দিয়ে কি যেন দ্রুত গতিতে নদীর ওপারের দিকে চলে যাচ্ছে। আমি দ্রুত ইস্কুলের দিকে দৌড় দিলাম। ভয়ে গা কাপছে। অন্য সব ছাত্ররা সবাই ঘুম। তাই কাউকে ডাকলাম না। দরজা জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।

ঐ রাতেই প্রচন্ড জ্বর চলে এলো গায়ে।আর চোখ দুটি ফুলে গেছে প্রচন্ড ব্যাথা ও শুরু হলো। সকালে স্যাররা সবাই এলেন আমার রুমে। আমি রাতের ঘটনা সব বললাম স্যারদের। বাড়ীতে চিঠি দিলেন স্যার। তাড়াতাড়ি সবাই আমাকে দূরের একটা মসজিদের ইমামের কাছে নিয়ে গেলেন। হুজুর চোখ পড়ে দিলেন আর পানি পড়ে দিলেন।

তিনি বললেন এটা বিড়াল ছিল না। এটা একটা জ্বীন। জ্বীনেরা আমাদের মতোই খাবার খায়। বিশেষ করে মানুষের উচ্ছিষ্ট ফেলে দেওয়া মাছের কাঁটা হাড় এ সব ই তাদের প্রিয় খাবার। কত জ্বীন যে কুকুর বিড়াল রূপ নিয়ে আমাদের সামনে দিয়ে খাবার খেয়ে যায় তা আমরা বুঝতে ও পারিনা। হুজুর বললেন যদিও এই জ্বীন আমার কোন ক্ষতি করবে না। আমার অতি উৎসাহর কারনে তার পিছন পিছন গিয়ে ছিলাম এজন্য একটা খারাপ বাতাস সে আমার চোখে দিয়ে যায়। তবুও একা একা ও ঘরে আমার থাকা ঠিক হবেনা। পরে অন্য একটা রুমে তিন হিন্দু ছাত্রদের সাথে থাকতে শুরু করলাম।

অবাক ব্যাপার এ বিড়াল টা আর আসে না। তাই আমার ভয় বেড়ে গেল অনেকগুন। সিদ্ধান্ত নিলাম এখানে আর থাকবো না। চিঠি পেয়ে বাড়ী থেকে আব্বা এলেন মামা এলেন। তারা আমাকে লঞ্চে সাথে করে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন খুলনার বাড়ীতে।


মন্তব্য

রেটিং দিন

সকল মন্তব্যগুলো (14)
user
Nidhi

Golpoti akdomi vhalo lage ni

ফজলুল হক রাফি ...

ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি জানানোর জন্য, আমি চেষ্টা করবো সামনে থেকে আরো ভালোভাবে লিখার। 🩵😊

user
ayesha

আহা শরীর কি ঠান্ডা লাগে

user
পাগলা

খুব ভালো গল্প শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেল

ফজলুল হক রাফি ...

😅

user
mim

sondar

ফজলুল হক রাফি ...

tnkuu 🩵😊

user
mukta

mutamuti

ফজলুল হক রাফি ...

ধন্যবাদ, সামনে থেকে আরো চেষ্টা করব 😊

user
সারা

ভাইয়া গল্প টি খুবই সুন্দর আমাদেরকে এরকম একটা গল্প দেওয়ার জন্য আপনাকে খুবই ধন্যবাদ

ফজলুল হক রাফি ...

আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যটি করার জন্য , আপনি চাইলে আমার অন্যান্য গল্পগুলোও করতে পারেন ভাল লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন ।আপনাদের এত সুন্দর সুন্দর কমেন্ট পড়ে আমরা অনেক উৎসাহিত হই । আশা করি এভাবেই আমাদের সাথে থাকবেন সবসময় 🩵😊

user
Amar name masud rana

golpo ta amar posondho hoice ami ki ata amar youtube chanel a dite pari

ফজলুল হক রাফি ...

ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য 🩵 আপনি চাইলে এটা আপনার ইউটিউব চ্যানেলে দিতে পারেন কিন্তু গল্পসমাহার App এবং আমাকে ক্রেডিট দিতে হবে ।

user
কাবাতুল্লা সেখ

আরো ভালো হতে পারতো গল্প টা।

ফজলুল হক রাফি ...

ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য, আগামীতে আমি চেষ্টা করব আরো ভালো করে গল্প লিখতে ।

user
Saba

খুব ভালো

ফজলুল হক রাফি ...

ধন্যবাদ 🩵

user
sara

অসাদারুন

user
রুপা

গলপো টা খুব সুন্দর ছিলো তানহা কে নিয়ে একটা গলপো লিখবেন

ফজলুল হক রাফি ...

😑 তানহা কে !

user
Md Saber

Ami khob boi paise

user
আমার নাম সানি

শারমিনকে নিয়ে একটা গল্প লিখবেন

user
রনি

আরো ভালো ভালো গল্প উপহার দিন। এগিয়ে যান ভাই।