সিজন_২
পর্ব_৫
বৃষ্টিতে ভিজে আরিয়ানের খুব মাথা ধরেছিল আরিয়ান বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিল আর তখন বৃষ্টিতে ছাদে ঘটে যাওয়া স্মৃতিগুলো মনে করছিল আর মিটিমিটি হাসছিল। তখন মাইশাকে এত কাছে পেয়ে আরিয়ানের বুকের ভেতরটা যেন ধুক ধুক করছিল। ইচ্ছে করছিল মাইশাকে নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে জড়িয়ে নিতে। তার পুরো শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছিল তখন। মাইশাকে কাছে পাবার জন্য খুব ইচ্ছে করছিল আরিয়ানের কিন্তু নিজেকে খুব কষ্টে তখন সামাল দিয়েছিল সে। কিন্তু এইভাবে আর মাইশার কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না আরিয়ানের। তাই যত দ্রুত সম্ভব মাইশাকে নিজের করে নিতেই হবে।
পরদিন সকালবেলা মাইশা অফিসে রেডি হবার জন্য তার আলমারি খুলল ড্রেস বের করার জন্য। তখনই তার চোখ পরল একটা শাড়ির দিকে।মাইশা তার আলমারি থেকে শাড়ি টা বের করল। শাড়ি টাতে কিছুক্ষণ হাত বুলালো। এই শাড়ি প্রতিটা ভাঁজে ভাঁজে যেন কোন এক অজানা স্মৃতি লুকিয়ে আছে।সেই স্মৃতি টাকে যেন বারবার খোঁজার চেষ্টা করছে মাইশা।
মাইশা আজ অফিসে যাবার জন্য শাড়ি টাই সিলেক্ট করল।অনেকক্ষণ যাবত শাড়ি পড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু শাড়িটা অবাধ্যের মতো মাইশা কে যেন পেঁচিয়ে ধরছে। কিছুতেই শাড়ি টাকে নিজের মন মতো করে গুছিয়ে পড়তে পারছে না মাইশা।
এদিকে দরজার এক পাশে হেলান দিয়ে এক পায়ের উপর আর এক পা ক্রস করে দিয়ে দাঁড়িয়ে মাইশার এই শাড়ি পরার দৃশ্য দেখে মিটি মিটি হাসছে আরিয়ান।
আর মনে মনে ভাবছে,
"" কি এক মেয়ে হয়েছে শাড়ি টা পর্যন্ত পড়তে পারে না। বিয়ের পর না এই মেয়েকেই আমার রান্না করে খাওয়াতে হয়। না বিয়ের আগে দেখছি ওকে সব ট্রেনিং দিতে হবে।
মাইশা কোনো রকম এই শাড়িটা পেচিয়ে কুচি গুলো গুঁজে দিল। মাইশা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল। যেই না মাইশা রুম থেকে বের হতে যাবে তখনই ওর পায়ের নিচে কুচি গুলো পাড়া লেগে শাড়ির কুচি গুলো সমস্ত খুলে গেল। এই দৃশ্য দেখে আরিয়ান আর থাকতে না পেরে হো হো শব্দে হেসে দিল। মাইশা এতক্ষণ খেয়ালই করে নি আরিয়ান তার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। মাইশা আরিয়ানকে দেখা মাত্রই শাড়িটা শরীরে পেঁচিয়ে নিল।
ভ্রু যুগল কুঁচকে কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বলল,
-------- এটা কিন্তু একদম ঠিক হচ্ছেন আরিয়ান ভাইয়া।
আরিয়ান এখনো হেসেই যাচ্ছে। ওর হাসি যেন থামতে চাইছে না।মাইশা কে যেন একদম একটা পিচ্চি পুতুলের মত লাগছিল। মনে হচ্ছিল যেন কোন একটা পিচ্চি মেয়ে পুতুলের শাড়ি পড়াচ্ছে কিন্তু পারছে না।
আরিয়ান এখনো হাসছে দেখে মাইশার কিছুটা রাগ হল। মাইশা আরিয়ানের কাছে কিছুটা তেড়ে গিয়ে বলল,
------- তুমি এই ভাবে হাসছো কেন আমি হাসির মতো কি করেছি।
আরিয়ান এইবার হাসি থামিয়ে বলল,
-------- এত বড় ডিঙ্গি মেয়ে এখন পর্যন্ত শাড়ি পরতে পারিস না।
-------- এইজন্য হাসতে হবে বুঝি। শোনো মেয়েরা পারে না এমন কোন কাজ নেই আমি অবশ্যই একদিন না একদিন ঠিক শাড়ি পড়তে পারব।
আরিয়ান মাইশার মাথায় হালকা করে একটা গাট্টা মেরে বলল,
-------- এই হাতে পায়ে তো কম বড় হস নি এখনো শাড়ি পড়া শিখিস নি তো আর কবে শিখবি বুড়ি হয়ে গেলে।
--------- সেটা পরের টা পরে দেখা যাবে তুমি এখন যাও। আমি শাড়ি পরবো।
--------- এতক্ষণ চেষ্টা করেও তো করতে পারলি না।
-------- শোনো কবি বলেছি একবার না পারিলে দেখো শতবার।
আরিয়ান তার হাত ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে মাইশা কে বলল,
--------- কটা বাজে সেটার খেয়াল আছে। কবির না হয় কোন অফিস ছিল না আমাদের তো অফিস আছ। কবি না হয় শতবার দেখতে পারে কিন্তু তোর শতবার দেখার কোন প্রয়োজন নেই।তোর আর শাড়ি পড়তে হবে না যে কোন একটা ড্রেস পড়ে দ্রুত রেডি হয়ে নাস্তা করতে আয়।
--------- তুমি যাও আমি আসছি।
আরিয়ান মাইশার দিকে তাকিয়ে দেখলো মাইশা মুখটা মলিন করে ফেলেছে। আরিয়ান বুঝতে পারল মাইশার আজকে সত্যিই খুব শাড়ি পড়তে ইচ্ছে করছিল কিন্তু পড়তে পারে না বিধায় পড়তে পারছে না।
আরিয়ান মাইশার দিকে তার হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-------- দেখি শাড়িটা আমার কাছে দে তো।
-------- এ মা কেন তুমি কি শাড়ি পরবে নাকি।ছি ছি তুমি তুমি কি আরিয়ান থেকে আরিয়ানা হতে চাও।এই কাজটা ভুলেও করো না আরিয়ান ভাইয়া তাহলে কিন্তু মামা আর মামীর সম্মান একদম শেষ হয়ে যাবে।
-------- মারবো টেনে এক চড়। এত বেশি বুঝিস কেন তুই। শোন এত কথা না বলে শাড়িটা দিতে বলেছি শাড়িটা দে।
মাইশা তার গায়ে একটা ওড়না পিছিয়ে আরিয়ানের দিকে শাড়িটা এগিয়ে দিল। আরিয়ান শাড়ি টার এক কোনা ধরে মাইশার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
-------- এদিকে আয় আমি তোকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা মাত্রই মাইশা লাফ দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেল। মাইশা কিছুটা তোতলিয়ে বললো,
-------- ত----তুমি শাড়ি পড়াবে মানে।
------- হ্যাঁ, এতে এতো অবাক হবার কি আছে।
------- কেউ দেখে ফেললে কি হবে ভাবতে পারছ।
-------- কেউ দেখে ফেললে দেখবে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।
--------- দেখো আরিয়ান ভাইয়া তোমার কিছু যায় আর না আসলেও আমার অনেক কিছু যায় আসে।
আরিয়ান মাইশার কিছুটা কাছে গিয়ে মাইশার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
-------- শোন তুই শুধুমাত্র আমার সম্পত্তি সুতরাং কে কি বলল আর না বলল তাতে জাস্ট আই ডোন্ট কেয়ার ওকে।
--------- তোমার সম্পত্তি মানে তুমি এসব কি বলছো আরিয়ান ভাইয়া।
--------- এই এত ভাইয়া ভাইয়া করিস কেন বলতো।
--------- তুমি তো আমার ভাইয়াই ভাইয়া ভাইয়া করবো না তো কি করব।
--------- উফ তোকে নিয়ে আমি আর পারিনা।
--------- কেন কি করলাম আমি।
-------- তুই না একটা কাজ কর আমার মাথার মধ্যে একটা বাড়ি মার।
-------- এ্যাঁ।
আরিয়ান মাইশার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল,
--------- তুই কি কিছুই বুঝিস না।
-------- কি বুঝবো।
-------- দাঁড়া দেখাচ্ছি কি বুঝবি।
সেটা বলে আরিয়ার মাইশার দিকে আস্তে আস্তে আগাতে লাগলো। আর মাইশা পিছিয়ে যেতে লাগলো। আরিয়ান খপ করে মাইশার হাত ধরে ফেলল। আতঙ্কে মাইশার মুখ চুপসে গেল।
আরিয়ান মাইশা কে আস্তে করে বলল,
------- আর একটা ও কথা বলবি না আমাকে ঠিকমতো শাড়িটা পড়াতে দে। তা না হলে কিন্তু বুঝতে পারছিস না আমি কি করবো।
কথাটা বলে আরিয়ান মাইশার ঠোঁটের দিকে তাকালো। মাইশা সঙ্গে সঙ্গে জোরে বলে উঠলো,
-------- এই না না প্রাক্টিক্যালি কিছু করতে হবে না আমি বুঝে ফেলেছি। তুমি শাড়ি পড়াও। কিন্তু চোখ বন্ধ করে পড়াবে আমার দিকে একদম তাকাবে না।
--------- এই তুই কি আমাকে টিভি সিরিয়ালের নায়ক পেয়েছিস। আমি চোখ বন্ধ করে থাকলে তোকে শাড়ি পরাবো কি করে।
মাইশা কিছু বলতে যাবে তখনই মাইশার দিকে চোখ গরম করে তাকালো আরিয়ান। মাইশা আর কিছু বলল না চুপ করে গেল।আরিয়ান মাইশাকে শাড়ি পরাতে লাগলো। আরিয়ানের প্রত্যেকটা ছোঁয়ায় মাইশা কেঁপে কেঁপে উঠছিল। মাইশার সাড়া শরীরে যেন এক তরঙ্গ লীলা খেলে যাচ্ছে। মাইশা তার এক হাত দিয়ে তার শাড়ির একটা কোনা খামচে ধরে আছে।
আরিয়ান সমস্ত শাড়িটা ঠিকমত পড়িয়ে দিয়ে কুচি টা মাইশার হাতে দিয়ে বলল,
-------- নে এবার কুচি গুলো গুজে দে।
মাইশা নিজের অজান্তেই আরিয়ানকে বলে ফেলল,
-------- সবটা যখন করেছ এটাও করো।
মাইশার কথা শুনে আরিয়ান তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরিয়ান বুঝতে পারছে এখান থেকে তার বের হতে হবে তা না হলে ভুলভাল কিছু হয়ে যেতে পারে।
আরিয়ান মাইশা কে জোরে একটা ডাক দিয়ে বলল,
-------- কিরে কি বললাম তোকে শুনিস নি।
আরিয়ানের ডাকে মাইশা ভাবনা থেকে বের হল।
-------- হ্যাঁ কিছু বলছিলে।
আরিয়ান মাইশার হাতে কুচি গুলো ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-------- কুচি গুলো সুন্দর করে গুঁজে দে আর দ্রুত রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি নাস্তার টেবিলে আয় আমার যেন তোর জন্য বেশিক্ষণ ওয়েট করতে না হয় এমনিতেই কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে।
কথাগুলো বলে আরিয়ান মাসের হাতে কুচি গুলো দিয়ে চলে গেল। মাইশা আরিয়ানের যাবার পানে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
--------- আমার যে মাঝেমধ্যে কি হয়ে যায় তা আমি নিজেও জানিনা। যত চাই ওর কাছ থেকে দূরে থাকবো ততই যেন ওর অনেক কাছে চলে যাই। আমি কেন নিজের মনকে বোঝাতে পারিনা মন তুই যেটা চাইছিস সেটা তোর না। তুই শুধু একজন অতিথি মাত্র।
কথাগুলো বলে মাইশা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
সীমা অনেকক্ষণ যাবৎ রিয়াদের জন্য ওর কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। কারণ সীমার কাছে রিয়াদের রেইনকোট টা রয়ে গিয়েছে। যেটা ফেরত দেওয়ার উসিলায় সীমার সাথে রিয়াদের দেখাও হবে রিয়াদের সঙ্গে কথা ও বলতে পারবে। সেই আশাতেই অনেকক্ষণ যাবৎ রিয়াদের কেবিনের একটা পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সীমা। কিছুক্ষণ পর রিয়াদ অফিসে ঢুকে দেখলো সীমা তার কেবিনের দরজার বাহিরে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। সীমা রিয়াদের ভাবনায় এতই বিভোর ছিল যে রিয়াদ যে কখন এসেছে তা একদমই খেয়াল করেনি সীমা।
সিমা কে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে রিয়াদ বলল,
--------- কি ব্যাপার সীমা তুমি আমার কেবিনের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন।
রিয়াদের কথায় সীমার ভাবনার ছেদ ঘটলো। রিয়াদ যে কখন এসেছিল তার টেরই পায় নি সীমা। সীমা তার হাতে থাকার রেইন কোটা রিয়াদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
--------- আসলে স্যার আপনার রেইনকোট টা ফেরত দিতে এসেছিলাম এসে দেখলাম আপনি এখনো আসেননি। তাই ভাবলাম আপনি আসলে আপনার রেইনকোট টা ফেরত দিয়ে নিজের কেবিনে যাব তাই দাঁড়িয়ে ছিলাম।
রিয়াদ রেইন কোটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
-------- এটা আমার আপাতত লাগবে না সীমা। আমার কাছে এক্সট্রা রেইনকোট আছে। তুমি এটা তোমার কাছেই রেখে দাও। কারণ তোমাকে তো অনেক সময় লেটে বাসায় ফিরতে হয় যদি আবার বৃষ্টির কবলে পড়ো এটা তোমার কাজে লাগবে।
কথাটা বলে রিয়ার তার কেবিনে চলে গেল। সীমা প্রচন্ড পরিমাণে খুশি হলো রিয়াদ তাকে তার রেইনকোট টা সীমাকে দিয়ে দিয়েছে বলে। এটা যেন সীমার কাছে সামান্য একটা রেইনকোট না তার কাছে অমূল্য একটা সম্পদ। সে এটাকে খুব যত্ন করে রেখে দেবে রিয়াদে দেয়া প্রথম গিফট হিসাবে। সীমার রেনকোট টা নিয়ে হাসিমুখে ওখান থেকে চলে গেল।
মাইশা কিছুক্ষণ পর সুন্দর করে রেডি হয়ে ডাইনিং এ নাস্তা করতে আসলো। আরিয়ান যেন মাইশাকে দেখে ওর দিক থেকে চোখ সরাতে পারছে না। আরিয়ান মাসে কি দেখতে দেখতে জুসের গ্লাসের বদলের সসের বোতল নিলো হাতে খাবার জন্য।
আলিয়া বিষয়টা লক্ষ্য করে সঙ্গে সঙ্গে আরিয়ান কে বাঁধা দিয়ে বলে উঠলো,
-------- এই ভাইয়া এই ওইটা জুসের গ্লাস না ওইটা সসের বোতল ভালো করে দেখ।
আলিয়ার কথায় আরিয়ানের ঘোর ভাঙলো। আরিয়ান তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে জুসের গ্লাসের জায়গায় সসের বোতল নিয়েছে।
আরিয়ান আলিয়া কে কিছু বুঝতে না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো,
--------- হ্যাঁ হ্যাঁ আমি দেখেছি দেখেছি এটা যে সসের বোতল তোকে বলতে হবে না আমি চোখে দেখি বুঝেছিস।
আলিয়া বিড়বিড় করে বলল,
------- কত যে চোখে দেখিস তা তো নিজের চোখেই দেখলাম।
আরিয়ান কথাটা ঠিক মতো শুনতে না পেয়ে আলিয়া কে বলল,
-------- তুই কি কিছু বললি।
-------- কই না তো, আমি আবার কি বললাম।
আজও ঠিক গত কয়েক দিনের মতো একই ঘটনা ঘটলো। রেহেনা বেগম সবাইকে নাস্তা দিলেও মাইশা কে দিচ্ছে না মাইশা নিজেই নাস্তা বেড়ে নিচ্ছে।আরিয়ানের আর সহ্য হচ্ছে না মাইশার প্রতি তার মায়ের এই বিদ্রুপ আচরণ। না এইবার আরিয়ানকে একটা পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে মাইশার একটা অধিকার থাকে এই বারের ওপর যাতে করে ওকে কেউ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে না পারে।
আরিয়ান নাস্তা করার একপর্যায়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,
--------- বাবা-মা তোমাদের সাথে আমার খুব দরকারি একটা কথা আছে। আমি সন্ধ্যার দিকে অফিস থেকে ফিরে সেই বিষয়ে তোমাদের সাথে কথা বলতে চাই। আমি আশা করি আমার এ কথা তোমরা সবাই প্রাধান্য দেবে এবং মেনে নেবে।
আরিয়ানের কথা শুনে আরিয়ানের মা আর বাবা একজন একজনের দিকে তাকিয়ে আছে।আরিয়ান এমন কি কথা বলবে যেটা খুব ইম্পরট্যান্ট কিছু। আরিয়ানের বাবা ভাবলো হয়তো অফিসের বিষয়ে তার সাথে কোন আলাপ করতে পারে। তাই এই ব্যাপারে আরিয়ান কে আর তেমন কিছু জিজ্ঞেস করল না আমজাদ সাহেব। তবে আলিয়া আরিয়ানের কথা শুনে মনে মনে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো আরিয়ান ঠিক কি বলতে চায়। মনে মনে কিছুটা খুশি হলো আবার চিন্তা তে ও পড়ে গেল তার মা বিষয়টা ঠিক কিভাবে নেবে তা নিয়ে খুব চিন্তিত আলিয়া। তবে তার মা মানুক আর না মানুক আরিয়ান ভাইয়াকে কিছু তেই আটকে রাখতে পারবে না এই সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে সেটা ভালো করে আলিয়া জানে।
আরিয়ান এন্ড মাইশা নাস্তা শেষ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।
সাব্বির অফিসে বসে কিছু পুরাতন ফাইল ঘাটাঘাটি করছিল যদি কোন পাওয়া যায় এই খুনগুলোর পিছনে কি রহস্য থাকতে পারে এই বিষয়ে।
সেই মুহূর্তে কনস্টেবল মিলন সাব্বিরকে সে বলল,
---------- স্যার দ্রুত চলুন লেকের পারে আরো একটা পুরা লাশ পাওয়া গেছে।আর ওখান থেকে আহত অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।একটু আগে থানায় একজন ফোন দিয়ে বলল।
কথাটা শোনা মাত্রই সাব্বিরের রাগে পুরো গাঁ টা হির হির করে উঠলো। ইচ্ছে করছিল চাকরি ছেড়ে দিয়ে বনবাসে চলে যেতে। আর ভালো লাগছে না এই চোর পুলিশ খেলা। কি শত্রুতা এদের সাথে কেন একের পর এক এইভাবে এদের কে খুন করছে সেই অজ্ঞাত লোকটা।সাব্বির আর বিলম্ব না করে দ্রুত মিলনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর মাইশা আর আরিয়ান অফিসে এসে পৌঁছালো।মাইশা নিজের কেবিনে ঢুকতে যাবে তখনই আরিয়ান মাইশা কে ডেকে বলল,
-------- এই দাঁড়া।
মাইশা ঘুরে দাঁড়ালো। আরিয়ান মাইশার কাছে এগিয়ে এসে বলল,
-------- শাড়ি টা কি করে ঠিক করে রাখতে হয় সেটাও জানিস না।
-------- মানে!
আরিয়ান মাইশাকে ওখানে থাকা একটা লুকিং গ্লাসের সামনে দাঁড় করিয়ে বলল,
-------- মানে টা তুই নিজেই দেখে নে।
মাইশা তাকিয়ে দেখলো বু** কাছ থেকে শাড়িটা একটু সরে গেছে। মাইশা সঙ্গে সঙ্গে শাড়িটা ঠিক করে নিলো।
আরিয়ান মাইশা কে কিছুটা কাছে টেনে নিয়ে বলল,
--------- তুই শুধুমাত্র আমার অধিকার আমার সম্পত্তি তাই তোর সবকিছুর উপর অধিকার শুধুমাত্র আমার। ভুলেও যেন আর কোনোভাবেই শাড়ি এদিক সেদিক না হয়। যা এবার কেবিনে যা।
কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সব কিছুই দেখল রিয়াদ। রিয়াদ সব কিছু দেখে যারা নিজেকে আর সংযত রাখতে পারছে না। প্রচন্ড রাগে ওয়ালে জোরে একটা ঘুষি মেরে বলল,
------- মাইশা তোর নয় মাইশা আমার। মাইশা শুধুমাত্র আমার সম্পত্তি আর কারো নয়। খুব তাড়াতাড়ি মাইশাকে আমি আমার নিজের সম্পত্তি করে নেব। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।
সাব্বির ঘটনাস্থলে অনেককে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করল কিন্তু কেউ কিছুই বলতে পারল না। একজন লোক এগিয়ে এসে বলল,
-------- স্যার আমি থানায় ফোন দিয়েছিলাম। আমি সকালের দিকে এদিকে হাটতে এসে পড়া একটা গন্ধ পেয়ে এখানে এসে দেখি একটা পড়া লাশ পড়ে আছে আর তার পাশে আহত অবস্থায় একটা ছেলে পড়ে আছে। আমার চিৎকারে আশেপাশে লোকজন জড়ো হয় এবং তারপরে আমি থানায় ফোন দেই।
সাব্বির তার একজন জুনিয়র কে বলল,
-------- লাশটা কে মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা কর আর পুরো জায়গাটাকে সিল করে দাও।
সাব্বির ঐ ছেলে টা যে হসপিটালে ভর্তি আছে ওখানে গেল। গিয়ে ডক্টরের সাথে কথা বলে জানতে পারলো ছেলেটার নাম সিয়াম। সিয়াম এখন মোটামুটি এখন সুস্থ আছে। সাব্বির সিয়ামের কেবিনে যেতে চাইলো সিয়ামের সাথে কথা বলার জন্য। একজন নারীর সাব্বিরকে সিয়ামের কেবিনে নিয়ে গেল।
সাব্বির সিয়ামের কেবিনে গিয়ে সিয়াম কে বলল,
-------- তোমার এখন কি অবস্থা সিয়াম।
সিয়াম আস্তে করে উত্তর দিল,
-------- এইতো স্যার এখন একটু ভালো।
-------- আচ্ছা রাত্রের বেলা ঠিক কি কি হয়েছিল আমাকে সবটা খুলে বলতো।
সিয়াম সাব্বিরকে বলতে শুরু করল,
--------- স্যার গতকালকে আমি আর আমার বন্ধুর রনক বারে গিয়েছিলাম একটা পার্টিতে অ্যাটেন্ড করতে। তখন একটা মেয়ে আমাকে আর রনককে দু গ্লাস ড্রিংকস খেতে দেয়। ড্রিঙ্কস টা খাবার পরেই আমাদের যেন কেমন লাগছিল। তাই আমি আর রনক পার্টি শেষ হবার আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম। লেকের পাড় দিয়ে শর্টকার্ট রাস্তা দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম। হঠাৎ কেউ আমার মাথায় প্রচন্ড জোরে বাড়ি মারে। আরনককে ছুরি দিয়ে পরপর কয়েকটা আঘাত করে। প্রচন্ড নেশায় আর হঠাৎ মাথায় বারি মারাতে আমার শরীর অসাড় আসছিল তারপরও আমি রনক কে বাঁচাতে তাকে জাপটে ধরি। সে আমার মাথায় আরো একটা আঘাত করে।তারপর আমার আর কিছু মনে নেই পরে যখন আমার জ্ঞান ফিরলো নিজেকে হসপিটালে দেখলাম।
-------- তুমি কি তার মুখ দেখেছিলে।
------- না না স্যার সে একটা কালো হুড্ডি পড়া ছিল তার মুখটা মাস্ক দিয়ে ঢাকা ছিল। তবে স্যার আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি সে কোন ছেলে ছিল না সে একটা মেয়ে ছিল।
সিয়ামের মুখে শেষ কথাটা শুনে রীতিমতো ভড়কে গেল সাব্বির। একটা মেয়ের পক্ষে এত বড় একটা মিশন সাকসেসফুল করা কি করে সম্ভব হল।
সাব্বির আরও কিছুটা শিওর হওয়ার জন্য সিয়াম কে বলল,
-------- সিয়াম তোমরা তো সবাই ঐদিন মোটামুটি ভালো ড্রিঙ্কস করেছিলে তো ড্রিংকস করা অবস্থায় তুমি কি করে বুঝলে যে সেটা কোন ছেলে ছিল না একটা মেয়ে ছিল।
-------- এটা কি বলেন স্যার একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝবো না এত টাও বেসামাল হয়ে যায় নি স্যার।আর সব থেকে বড় কথা হলো স্যার ওর চোখ দুটো আমি দেখেছিলাম চোখ দুটো অবিকল মেয়েদের চোখের মতই।
সাব্বিরের মাথা যেন গোল গোল করে ঘুরছে। একটা মেয়ে একাই একটা ছেলেকে কুপোকাত করে দিল আর ছেলেটা কিছুই করতে পারল না। আর সিয়াম কে মেরে হসপিটাল পর্যন্ত পাঠিয়ে দিল। সাব্বিরের সিক্স সেন্স বলছে মেয়েটা খুব সাধারণ কোন মেয়ে নয়।
সাব্বির সিয়াম কে আবার জিজ্ঞেস করল,
-------- আচ্ছা ঐ মেয়েটা যদি কখনো তোমার সামনে আসে তাহলে তুমি কি ওর চোখ দেখে ওকে আইডেন্টিফাই করতে পারবে।
-------- স্যার ওখানে পর্যাপ্ত আলো ছিল না তবে যতটুকু আলোতে আমি ওর চোখ দুটো দেখেছি আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করব জানিনা কতটুকু পারবো।
সাব্বির কিছু সময়ের জন্য একটা আশার আলো খুঁজে পেয়েছিল। ভেবেছিল এই ছেলের মাধ্যমে সেই খুনি পর্যন্ত কোনো না ভাবে ঠিক পৌঁছাতে পারবে। কিন্তু সিয়ামের শেষ কথাটা শুনে সাব্বিরের সমস্ত আশার আলো নিভে গেল। তারপরে সাব্বির কিছুটা আশার আলো মনের ভিতর নিয়ে সিয়াম কে জিজ্ঞেস করল,
--------- আচ্ছা তোমাকে যদি একজন স্কেচ আর্টিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তুমি কি তার চোখের বর্ণনা দিতে পারবে।
--------- হ্যাঁ স্যার আমার যতটুকু মনে আছে আমি সবটা বলে আপনাদেরকে সাহায্য করতে পারবো।
---------that's good.
সাব্বির তোর ফোনটা বের করে একজনকে ফোন দিয়ে বলল,
--------- দ্রুত হসপিটালে একজন স্কেচ আর্টিস্টকে নিয়ে এসো।
কথা শেষে সাব্বির ফোনটা রেখে মনে মনে বললো,
"" কেন একটা মেয়ে এইভাবে দিনের পর দিন খুন করছে। উদ্দেশ্য আছে এই সবগুলো খুন করার পেছনে তার। এ পর্যন্ত যারা খুন হয়েছে তাদের সাথে মেয়েটার কি কানেকশন থাকতে পারে। আর যারা খুন হয়েছে তাদের একজনের সাথে আরেকজনের কোন যোগ সূত্র নেই তো। থাকাটা অসম্ভব এর কিছু নয় ভাল করে একটু খোঁজ লাগাতে হবে।
চলবে
nxt part🙄
porer part chai plz plz
এত দেরি করেন কেন গল্প লিখতে। পরের পার্ট তাড়াতাড়ি দিবেন
BTS army
আপু গল্প তাড়াতাড়ি আপলোড দিও। প্লিজ। দেরী ভালো লাগে না। 🥺🥺🥺🥺🥺🥺🥺🤲🤲🤲🤲🤲😇😇😇😇🧕