হার্টবিট (পর্ব ৪)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মস্তফা কামাল চায়ের দোকানে বসে,পনু কে ফোন করলো। একটুখানি পড়ে পনু এসে বলল- ন্যাভাই মোরে ডাকছেন ক্যা?
মস্তফা সাহেব একটু আড়ালে গিয়ে বলল-
তুই সব সময় লামিয়া কে চোখে চোখে রাখবি। কেউ যেন বুঝতে না পারে।আর ঘরে যা তোর ভাবী কে ঔষুধ এনে দিস।
পনু:- আচ্ছা।
মস্তফা:- আর শোন,লামিয়া যদি কারো সাথে কথা বলে, গোপনে তার পরিচয় জানতে হবে।
পনু:-আচ্ছা ন্যাভাই

ভোরে রাজু ঘুম থেকে উঠে লামিয়া কে ম্যাসেজ দিল।কোন উত্তর আসলো না। মিমের পরিক্ষা শুরু হয়েছে। তাই ওকে কিছু অংক ইংলিশ দেখিয়ে দিচ্ছে। রাফি এসে বলল- ভাই কাজ আছে তারাতাড়ি চল?
রাজু:- কি কাজ? মিম কে একটুখানি পড়িয়ে যাই?
রাফি:- আরে পাগল সময় নাই তারাতাড়ি আয়।
রাজু:-ঠিক আছে, বলে চলে গেল মিম কে বললো তুই পড়তে থাকে।

দুজনে তিন রাস্তার মোড়ে বিলের পাশে এসে দেখলো রেজা, সাকিব, রনি দাঁড়িয়ে আছে। চল পানি তাল/তালশাঁস খেতে হবে। দুই জনে তাল কেটে ফেলছে আর তিন জনে জঙ্গলে লুকিয়ে রাখছে।চুড়ি করে তাল খেলেও যে দেখবে সেই ভাগ বসাতে আসবে তাই লুকিয়ে রাখতে হয়।
জঙ্গলে বসে পাঁচ জনে তাল খেয়ে ঘাসের উপর শুয়ে পড়লো। রাজু বলল- আমি পাঁচটা নিয়ে গেলাম কিন্তু।
সবাই বলল- কার জন্য নিয়ে যাও?
রাজু:-মিম কে দিব
সবাই হেসে উঠল সাকিব বলল- এই শালা ওকি তোর প্রেমিকা লাগে যে নিয়ে যেতে হবে?
রাজু:-দেখ ভাই এভাবে বলিশ না। ওকে রেখে কখনো কিছু খাইনি তো তাই।
রাফি:- ভাই তোরা দেখিস এক দিন ওই মেয়ের প্রেমে পড়ে।
রাজু:-দুর আমি ওকে বোনের মতো দেখি,আমি গেলাম।

রাজু মিম কে তাল দিয়ে পুকুরে পড়ে গিয়ে, লামিয়া কে কল দিল।কিন্তু ফোন ধরছে না, অনেক কল দেয়ার পড় একটি মহিলা বলল-
কে আপনি?
রাজু:- আমি রাজু লামিয়ার ক্লাসমেট ওর সাথে একটু কথা বলতে চাই।
লামিয়া তোর ক্লাসের একটা ছেলে কল দিয়েছে।
লামিয়া:- কি? কল দিসো কেন?
রাজু:- আরে পাগলী আমি রাজু
লামিয়া:- ও আচ্ছা ব‌ই টা পরিক্ষার শেষে নিয়ে যাইস।
রাজু:-রাজু কিসের ব‌ই? কি বলছো?
লামিয়া:-ঠিক আছে ভাই এখন পড়তে হবে, যা বলার ক্লাসে এসে বলিস বায়।
ফোন টা কেটে দিল রাজু ভাবছে,কোন সমস্যা নিশ্চয়ই হয়েছে। কালকে আমাদের কেউ দেখে নিছে নাকি? রাজু কিছু বুঝতে পারছে না লামিয়া এমন করলো কেন কি হয়েছে?

রাজু ইমা কে ফোন দিল..
ইমা:-কি আমাকে মনে পড়লো তাহলে?
রাজু:- কি যে বলনা তুমি, তোমাকে তো দিবা নিশি সরণ করি।
ইমা:- তাহলে আমাকে মনে রাখার মত কেউ আছে বুঝি?
রাজু:- দূর আজাইরা কথা বাদ দিয়ে লামিয়া কে একটা কল দাও তো
ইমা:-তুমি কল দাও
রাজু:-ভাই আমি কল দিলাম কিন্তু কথা বলছে না
ইমা:-আচ্ছা আমি দেখছি তুমি চিন্তা করো না
রাজু:- ঠিক আছে।

একটু পড়ে কল দিল ইমা বলল- বেয়াই তুমি কি করছো?
রাজু:- আমি তো কিছু করিনি,কি হয়েছে?
ইমা:-তোমাদের সম্পর্কের কথা সবাই জেনে গেছে।
লামিয়া কে এবং খালামণি কে খালু অনেক মেরে'ছে। লামিয়া তোমাকে কল দিতে নিষেধ করছে।বলছে ইস্কুলে গিয়ে কথা বলবো।
রাজু:-ঠিক আছে রাখছি।
ইমা:-এতো তারাতাড়ি?
রাজু:- বেয়াইন মনটা ভালো নাই রে
ইমা:-ঠিক আছে চিন্তা করো না।

রাজুর কিছু ভাল লাগছে না, কি করবে এখন? যদি লামিয়া কথা না বলে? তাকে ছাড়া তো এক মুহুর্ত আমি থাকতে পারবো না। অনেক কষ্ট হচ্ছে বুকে। বলল- হে আল্লাহ তুমি লামিয়া কে কখনো আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না।
একা বসে আছে কিছু ভাল লাগে না। কখনো লামিয়ার সাথে দেখা হবে সেই চিন্তা করছে। বিকেলে মিম দেখলো রাজু কি নিয়ে যেন খুব চিন্তিত।
মিম বলল- ভাইয়া তুই কি কিছু নিয়ে চিন্তা করছো।
রাজু:- আরে না, কিছু না।
মিম:- আমাকে মিথ্যা বলছো তুমি,বলো কি হয়েছে?
রাজু:- দুর পাগলী কোন সমস্যা নেই, সমস্যা হলে তোকে বলবো।
মিম:- ঠিক আছে।

ভোরে রাজু লামিয়া ইস্কুলে চলে গেল।
অনেক পড়ে লামিয়া আসলো। রাজু বলল- কেমন আছো তুমি
লামি:- ভালো, তুমি কেমন আছো?
রাজু:-কি হয়ছে বলো?
লামি:-তোমার বিষয়ে মা বাবা জেনে গেছে।
আমার বাবা খুব রাগী মানুষ তাই ভয় হয়।
রাজু:-তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
লামি:- হুম বাসি।
রাজু:- যদি বলি সব কিছু ছেড়ে আমার সাথে পালিয়ে যেতে পারবে?
লামি:-তোমার জন্য আমি সব কিছু করতে পারবো।
রাজু:-ঠিক আছে ভয় পেওনা
লামি:- পরিক্ষা শেষ হলে কথা বলবো এখন কেউ দেখলে সমস্যা আছে যাই।
রাজু -ঠিক আছে আমি অপেক্ষা করবো কিন্তু।

লামিয়া চলে গেল হঠাৎ পনু এসে বলল- তোমার নাম কি ক‌ও?
রাজু :-আমার নাম রাজু
পনু- বাড়ি কোন হ্যানে? বাহের নাম কি?
রাজু:- কাশিপুর গ্রামে চৌধুরী বাড়ি, রহিম মাস্টার আমার বাবা
পুন:- একটুহানে আগে যে কথা ক‌ইছো মেয়েডা কেডা?
রাজু বিরক্ত হয়ে বলল- আপনার সমস্যা কি? কে আপনি?
পনু:- না বাবা কিছু না। বলে হাঁটা শুরু করলো
একটু আড়ালে এসে মস্তফা কে ফোন করে বলল-
ন্যাভাই সব্বোনাশ হ‌ইয়া গ্যাছে
মস্তফা:- কি হ‌ইছে বল?
পনু:-আমনের শত্রুর পোলায় আমনের মেয়ের সাথে পেরেম হরে।
মস্তফা:-কার ছেলে? কোন শত্রু?
পনু:-আমনের মামাতো ভাই রহিম, যে আমনেরে মামলা দেছে হ্যার পোলা।
মস্তফা:‍-ঠিক আছে। আমি পড়ে কথা বলবো।

রাজু সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইস্কুলের সামনে দোকানে বসে আছে। দুপুরে আজান দিল তখন লামিয়া আসলো। রাজু বলল- পরিক্ষা কেমন হয়েছে?
লামি:- ভালো। ওই দিকে আড়ালে চলো বলে ইস্কুলের পিছনে রাস্তায় চললো।
রাজু:- এখন কি হবে ফোন দিলে তুমি কথা বলো না।
লামি:- তুমি ফোন দিবা না। আমি সুযোগ পেলেই কল দিল।
রাজু:- আমি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারি না।
লামি:- আমি জানি তুমি একদম চিন্তা করো না।
তুমি জানো না আমার বাবা খুব রাগী মানুষ। ছোট খালা কে দেখিয়ে, আমার মায়ের সাথে বিয়ে দিছে নানায়। তাই মা কে পছন্দ করে না। খুব মা'রে, কখনো নানা বাড়িত যায় নি।
রাজু:- তোমার কোন সমস্যা হলে ইমার কাছে বলিও। আমি ওর থেকে জেনে নিব।
লামি:- ঠিক আছে।

হঠাৎ পাঁচ ছয় জন লোক এসে রাজু কে মারতে শুরু করলো। পনু, মস্তফা কামাল এসে লামিয়া কে ধরে নিয়ে আসলো। লামিয়া রাজু, রাজু বলে চিৎকার করলো। বলল- বাবা তোমার পায়ে পড়ি রাজু কে মেরো না।
মস্তফা:-চুপ, একদম চুপ, আমার শত্রুর সাথে প্রেম করো । বলে লামিয়া কে নিয়ে আসলো। রাজু মাটিতে পড়ে আছে। ঘরে এসে স্ত্রী কে মারতে শুরু করলো। লামিয়া বলল- বাবা মা কে মেরো না,সব দোষ আমার আমাকে মারো । লামিয়া চিৎকার দিয়ে কাঁদছে।
মস্তফা কামাল মেয়ের কাছে এসে বলল- তুই যদি এই ছেলের সাথে কথা বলো, তাহলে এই ছেলে কে খুন করে ফেলবো।আর যদি ওই ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখো তাহলে তোর মা কে তালাক দিব।
এখন তুই ভেবে দেখ কি করবি।বলে চলে গেল.

সদর হসপিটালে রাজু ভর্তি শরীরে অনেক আঘাত হয়েছে। সবাই ভিড় করে আছে অনামিকা,রাজুর মা,মিম সবাই কান্না করছে। রাজু বলল- মা তুমি কান্না করো না। আমি ঠিক আছি
মা:- তোকে কে মেরেছে বল? কেন মার ছে?
রাজু:- জানি না
মা:-সত্যি করে বল কোন মেয়ের কথা শুনছি?কে সে?
মিম:- লামিয়া
শব্দটা শুনে অনুর গলা শুকিয়ে গেল বলল-
আমি জানতাম এমন কিছু হবে। ভাই কেন তুই এমন করলি?
রাজু কোন কথা বললো না শুধু ভাবছে সবাই কি জেনে গেছে। তাহলে কে মিম বলছে বুঝি, মিমের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিম:- আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন আমি কিছু বলিনি। লামিয়ার ইস্কুলের সবাই বলেছে এবং ইমাও সব কিছু বলেছে।

রাজু মা ইমা কে ফোন করলো ,
হ্যালো.. ইমা
ইমা:- মাওয়‌ই কেমন আছেন?
মাওয়াই:- তুমি একটু আসতে পারো
ইমা:-আচ্ছা বিকেলে আসবো।
অনামিকা:-মা, ইমা এসে কি হবে?
মা:-ইমা কে নিয়ে লামিয়ার বাড়িতে যাবো। আমার ছেলেকে এভাবে মারবে কেন? অন্যায় করলে আমরা বিচার করবো।

লামিয়ার মা স্বামী কে অনেক গালাগালি করে। লামিয়া কে বলল- কে ছেলেটি? পরিচয় কি তার?
লামিয়া বলল- ওর নাম রাজু, কাশিপুর রহিম মাস্টারের ছেলে।ওর বাবা মাদ্রাসায় শিক্ষক।
নামটা শুনে উর্মি চমকে উঠলো মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে, কেঁদে ওঠে বলছে - এটা তুই কি করলি?
তোর বাবা সবাই কে খুন করে ফেলবে।
লামি:- কেন মা কি হয়েছে বলো?
মা:-তুই রাজুকে ভুলে যা তোর বাবাকে চিনো না খুন হয়ে যাবি।
লামি:- কেন? আমাকে খুলে বলো?
মা:- এই বাড়ি,বাগান,ধানক্ষেত সব কিছু রহিম মাস্টারের। সে তোর বাবার আপন মামা তো ভাই।তার মামা কে বালিশ দিয়ে মুখ চেপে মেরে ফেলছে আমার সামনে।সব জায়গায়-জমির নকল দলিল বের করে। চেয়ারম্যান কে ঘুষ দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এই জমিতে এখনো 16 বছর ধরে মামলা চলছে।
হঠাৎ মস্তফা কামাল এসে স্ত্রীর গলা-মুখ চেপে ধরলো। আর গালি দিচ্ছে বলে তোর এত বড় সাহস। আজকে আমি তোকে খুন করবো। আমি জমি টাকা দিয়ে কিনছি, তুই কি জানো। লামিয়া দেখলো তার মা চোখ তারিয়ে শেষ হয়ে যায়। চিৎকার দিয়ে বাবার হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। বলল- বাবা মরে যাবে তুমি একটু শান্ত হ‌ও
বাবা:- ও মরলে ঝামেলা কমবে,ওর মরার সময় হ‌ইছে। রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে চলে গেল।

বিকেলে রাজুকে নিয়ে বাসায় আসলো, রাজুর মা,ইমা আর অনামিকা মস্তফা কামাল এর বাড়িতে গিয়ে অবাক হলো। এটা তো আমাদের বাড়ি তাহলে লামিয়া কি ওই পশুটার মেয়ে?
ঘরে ঢোকার সাথে সাথে উর্মি বললো ভাবী কেমন আছেন?
রাহিমা বেগম বলল- লামিয়া কি তোর মেয়ে?
উর্মি:-হুম, ভাবী ও অনেক ভালো ওর বাবার মতো না।
রাহিমা বেগম:- রাগে উত্তেজিত হয়ে বললো আমার ছেলের গায়ে হাত দিসো। এতো বড় সাহস আমি তোদের হাত ভেঙে দিব মনে রাখিস। বলে চলে আসলো উর্মি অনেক ডাকলো কিন্তু তিনি কানে তুললো না।লামিয়া সব কিছু জেনে আর কিছু বলার সাহস হলো না, শুধু কান্না করছে।

রাজুর সাথে লামিয়ার কোন যোগাযোগ নেই।
রাজুর বাবা বললো, ওই শত্রুর মেয়ে কে ভুলে যা। আমি বেঁচে থাকতে ওই মেয়ে এই বাড়িতে আসতে পারবে না।
রাজু বলল- আমি ওই মেয়ে কেই বিয়ে করতে চাই।
রহিম মাস্টার অনেক রেগে রাজু কে মারতে গেল। সবাই ধরলো বলছে - ও অসুস্থ ওকে মারবেন না
রহিম মাস্টার:-ও যদি ওই মেয়ে কে বিয়ে করে। তাহলে বাড়ি থেকে বের করে দিব। শুধু তাই নয় আমি ওরে ত্যাজ্য পুত্র করবো,বলে চলে গেল।
রাহিমা তার ছেলেকে সব কিছু বললো।আর বলল-শত্রুর মেয়ে তোর বাবা কখনো মেনে নিবে না।
রাজু বলল- মা লামিয়ার তো কোন দোষ নেই। ওর বাবা অন্যায় করলে তাতে লামিয়া তো দোষী না
কারো কথায় রাজু থামলো না।

লামিয়া অনেক ভেবে দেখলো ,তার উচিত রাজু থেকে দূরে থাকা।তার সাথে কথা বললে বাবা রাজুর ক্ষতি করতে পারে।তা ছাড়া এই বয়সে মায়ের সংসার ভাঙ্গতে পারি না।যেই মা দশ মাস পেটে রাখছে, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে দুনিয়ার মুখ দেখিয়েছে। আমি কি করে তাকে কষ্ট দিব। আমি রাজু কে ছাড়া বাঁচতে পারবে না। কিন্তু রাজুর কোন ক্ষতি বা মায়ের সংসার তো ভাঙ্গতে পারবো না। দু'জন কে ভাল রাখতে হলে আমাকে রাজুর থেকে দূরে থাকতে হবে। লামিয়া রাজুর কথা ভেবে অনেক কাঁদল। জানি না রাজু কতটা ভেঙ্গে পড়ে,কতটা কষ্ট হবে তার। কিন্তু আমি কি করবো? এর সমাধান কোথায়? কে বলবে আমাকে?

রাজু লামিয়ার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে। কিছু বুঝতে পারছে না ফোন তাও বন্ধ আছে,ইমা কিছু বলতে পারছে না। রাজুর শরীর তেমন ভালো না যে সাইকেল নিয়ে লামিয়ার ইস্কুলে যাবে।
রাজু একা একা ভাবছে নিরবে চোখের জল ফেলছে।কি করবে কোথায় গেলে লামিয়া কে পাবে? যাকে না দেখে একটা মুহূর্ত থাকতে কষ্ট হয়। তাকে ছাড়া আজ তিন দিন কষ্টে বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। পাগলের মত ছটফট করছে মিম দেখে দেখে একা অনেক কেঁদেছে। মিম শুধু একটা কথাই আল্লাহ কে বলে তুমি রাজুর সমস্ত কষ্ট আমাকে দাও। তাকে আর কষ্ট দিও না,আমি সহ্য করতে পারছি না। রাফি মাঝে মাঝে এসে শান্তনা দিয়ে যায়। রাজু রাফির পা ধরে বললো- ভাই আমি একটা বার লামিয়ার সাথে কথা বলতে চাই। দয়া করে আমাকে নিয়ে যা।
রাফি- কালকে নিয়ে যাবো কাউকে বলিস না।

হঠাৎ লামিয়ার ফোনে ইমার কল গেল..
ইমা -লামিয়া?
ওপাশ থেকে:- না আমি ওর মা
ইমা:-খালামণি আমি ইমা। লামিয়া কে একটু দিতে পারেন?
খালা:- ঠিক আছে।
লামিয়া:- হ্যালো! ইমা দিদি কেমন আছো তুমি?
ইমা:-ভাল।তোর খবর কি?
লামি:-ভালো আছি
ইমা:-খালা তোর পাশে আছে? তাহলে দুরে গিয়ে কথা বল
লামি:- ঠিক আছে, বলে একটুখানি দূরে গেল আর বলল-পরিক্ষা ভালই চলছে।এই তো কালকে শেষ হবে। তখন বেরাতে আসবো।
ইমা:-রাজু তোর সাথে দেখা করতে চায়। একটু কথা বলতে চায়।
লামি:-আমি চাই না এটাই দুজনের জন্য ভালো।
ইমা:- প্লিজ তুই এমন করিস না, একবার কথা না হলে ও কিছু করে ফেলবে
লামি:- ঠিক আছে পরিক্ষা শেষ হলেই কথা বলবো সাথে তুমিও থাকিও।
ইমা:-ঠিক আছে ভালো থাক।

রাজু আর রাফি কথা বলছে হঠাৎ ইমা কল দিল
রাজু:-কোন খবর পাইছো?
ইমা:-হুম কথা বলছি,কালকে পরিক্ষা শেষ হলে দেখা করবে। রাজু কিছুটা শান্তি পেলো কালকে দেখা হবে। কতো কথা বলবো দুজনে, তাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো অনেক দূরে।
ইমা বলল-এখন রাখছি
রাজু:-আর কিছু বলেনি?
ইমা:-না, কালকে কথা হবে।
দুপুরে রাজু আর রাফি একটা রিকশা নিয়ে গেল।লামিয়া ইস্কুল থেকে অনেক দূরে ,দুজনে বসে আছে। পরিক্ষা শেষ হলে ইমা ফোন করে বলল-
কোথায় আছো তোমরা?
রাজু:- ইস্কুল থেকে পশ্চিম দিকের রাস্তায় পাঁচ মিনিট হাঁটলেই আমাদের পাইবা ।
ইমা -ঠিক আছে এদিকে আসতে হবে না।
ইমা আর লামিয়া দুজনে আসলো।দুর থেকে লামিয়া কে দেখে রাজু দৌড়ে কাছে গেল। ইচ্ছে করছে লামিয়া কে জড়িয়ে ধরতে , চিৎকার করে বলতে কেন আমাকে কষ্ট দাও তুমি?লামিয়া কোন কথা বললো না।

রাজু বলল- কেমন আছো তুমি?
লামিয়া:- ভালো আছি।
আমি ব্রেকআপ করতে চাই। তোমার সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবো না।
রাফি,ইমা দুজনেই বলল-
কি বলছো তোর মাথা ঠিক আছে?
লামিয়া:- আমার মাথা ঠিক আছে। রাজু কে তোমরা বুঝাও
ইমা:-রাজু কি হবে? তুই কি ভালো থাকতে পারবি?
রাফি:- দয়া করে এমন কথা বলিস না।ভাই টা বাঁচতে পারবে না।
রাজু পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে গেছে। মনে হচ্ছে ও কোন কষ্টের মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে।

শুধু বলল- লামু তোমাকে ছাড়া আমি কি করে বাঁচবো বলো?
তুমি ছাড়া একটা নিঃশ্বাসো নিতে পারছি না। মনে হয় হসপিটালে মুমূর্ষু রোগীর মতো আমি ফটাফট করি।
লামিয়া:- এটা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। এতে দুজনেরই ভালো হবে। বলে চোখের জল মুছলো
রাজু:-চলো আমরা পালিয়ে যাই দুরে কোথাও? তুমি তো জানো আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।
লামিয়া:-আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
রাজু চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে।
দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাই আস্তে আস্তে বসে পড়লো।
রাফি ধরতে গেলে বলে আমি ঠিক আছি।
রাফি বলল- তুই কখনো শান্তি পাবি না ছলনাময়ী।
এর চেয়ে বেশি কষ্ট তুই পাবি মনে রাখিস।

রাজু:- রাফি ওকে কিছু বলার সাহস কে দিয়েছে তোকে।
আমি থাকতে কেউ কিছু বলতে পারবে না।
ওকে আমি ভালোবাসি। ও কষ্ট পেলে আমি আরো বেশি কষ্ট পাই।
ইমা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে রাজুর জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে।
লামিয়া:-বললো আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করো না।
আমি তোমার থেকে দূরে থাকতে চাই।
রাজু:- তুমি এটাই চাও ঠিক আছে আমি তোমার কাছে আসবো না।
লামিয়া ইমা কে বললো চলো যেতে হবে, বলে হাঁটতে শুরু করলো।
রাজু লামিয়া বলে দৌড়ে কাছে এসে পায়ের কাছে বসে পড়লো।
পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে বললো তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।
আমাকে ফেলে যাইস না। বিশ্বাস কর তুই আমার কলিজা। কলিজা ছাড়া কি মানুষ বাঁচে বল?
তুই আমার হৃদয়ের স্পন্দন। আমার দেহের প্রতিটা শিড়া উপশিরায় তোর নাম প্রবাহিত হচ্ছে।
তুই আমার দেহের অস্কিজেন, তুই ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।
রাফি রাজু কে ধরে উঠালো।লামিয়া চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেল। রাজু মাটিতে বসে আছে রাফি গাছের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আর ভাবছে রাজুর কি হবে?
ইমা আর লামিয়া চলে যাচ্ছে,ইমা বলল- তুই ঠিক করলি না,খারাপ কাজ করলি।
লামিয়া:- ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেঁদে বলল-
ওর সাথে কথা বললে বাবা ওকে মেরে ফেলবে।
শুধু তাই নয় মা কে তালাক দিবে।
বল আমি কি করবো? মায়ের সংসার ভাঙবো? রাজু কে মারতে দেখবো বল?
ইমা:- রাজু যদি কিছু করে ফেলে?
লামিয়া:- ও সব কষ্ট স‌ইতে পারবে।ওর সাথে পরিবার আছে মিম আছে রাফি আছে তুমি আছো।
কিন্তু আমাকে শান্তনা দেয়ার মতো কেউ নেই পরিবারো নেই।
ইমা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না, শুধু লামিয়া কে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাজু মাটিতে বসে আছে, অনেক ছেলে মেয়ে পাগল ভেবে দেখছে।
রাফি বলল- চল ভাই বাড়িতে যাই।
রাজু উঠতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে রাফি ধরলো।
একটা রিকশা নিয়ে আসলো। এসে রুমে বসে ভাবছে লামিয়ার কথা। রাজু কখনো ঘর থেকে বের হয় না। মাঝে মাঝে পুকুর পাড়ে গিয়ে একা বসে কাঁদে। কারো সাথে কথা বলে না, কারো সাথে মিশে না। ঠিক মতো খায় না, গোসল করে না।
শুধু একা একা লামিয়ার কথাগুলো ভাবছে।
নিরবে নির্জনে বসে চোখের জল ফেলছে।
সবাই চিন্তা অস্থির হয়ে আছে,এভাবে চললে মানসিক সমস্যা হতে পারে।

লামিয়া সেও স্বাভাবিক নেই, নাওয়া খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিছে। শুধু ভাবছে রাজু কি হবে যদি কিছু করে ফেলে।
উর্মি তার মেয়েকে অনেক বুঝালো কিন্তু লাভ হলো না।
উপায় না দেখে বাবার বাড়িতে নিয়ে গেল।
রকি তার বোন অনেক খুশি হলো লামিয়া কে দেখে।
বিকেলে রকি তার বোন রিমা কে বললো- রিমা আমি লামিয়া কে ভালোবাসি।
রিমা:-ও কিন্তু একটা ছেলেকে ভালবাসে।
রকি:-আমি সব কিছু জানি, তাইতো তোর সাহায্য চাই?
রিমা:-আমি কি করবো।
রকি-আমি এতো কিছু জানি না ওকে আমার চাই।
রিমা:- দেখি কি করা যায়।

রাজু কে স্বাভাবিক করার জন্য রাফি মিম সব সময় কাছে থাকে।
ঘুরতে নিয়ে যায় এক সাথে সবাই আনন্দ করে।
মিমের পরিক্ষা শেষ হলেই এক দৌড়ে রাজুর কাছে আসলো।
মিম:- ভাইয়া আমার পরিক্ষা অনেক ভালো হয়েছে।
রাজু একটা কলমের দিকে তাকিয়ে আছে।
মনে হয় মিমের কাথা শুনতে পারছে না।
তাই চিৎকার দিয়ে বললো ভাইয়া পরিক্ষা ভালো হয়েছে।
রাজু:- কিছুটা লাফিয়ে উঠলো বললো- কার পরিক্ষা?
মিম: আমার পরিক্ষা?
রাজু:- ঠিক আছে তাহলে যা।
মিম কিছু না বলে চুপ করে তাকিয়ে আছে।
আগে কতো দুষ্টুমি করতে, মজা করতো সবার সাথে। আজকে কেমন হয়েছে গেছে।
চুলগুলো পাখির বাসার মত,নখ বড় হয়ে গেছে। মিমের কষ্ট বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মনে মনে বললো তুই আমার ভাইকে এতো কষ্ট দিছো। আমি কখনো তোকে ক্ষমা করবো না। চোখের জল মুছে নেইল কাঁটার দিয়ে রাজুর নখ সুন্দর করে কেটে দিচ্ছে। রাজু শুধু তাকিয়ে আছে বলল- তুই আমাকে খুব ভালবাসো তাই না?
মিম রাজুর মুখের দিকে তাকালো,চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অনেকক্ষণ পর ঢোক গিলে বলল-
তুই আমার ভাই তোকে ভালো বাসবো না তো কাকে ভালো বাসবো। ছোট বেলা থেকেই তোমার সাথে বড় হয়েছি।যতো আবদার তোমার কাছে করেছি। কখনো আমাকে না দিয়ে কিছু খাওনি।কি করে বলো তোমার কষ্ট সহ্য করবো।
রাজু:- চোখের জল ছেড়ে বললো আমাকে মাফ করে দিস।
মিম:- ইচ্ছা করছে তোমাকে যে কাঁদিয়েছে তাকে খুন করে ফেলতে। কিন্তু সে তো তোমার প্রাণ, তোমার দেহের অস্কিজেন।
রাজু:- মিমের চোখ মুছে বললো আজকে একটু ঘুরতে যাবো নিয়ে যাবি।
মিম অনেক খুশি হয়ে বলল- কোথায় যাইবা বলো?
রাজু:- বিলের মাঝে উঁচু টিলায় যেখানে সবাই গেছিলাম। ঠিক আছে বিকেলে নিয়ে যাবো।

লামিয়া মামাতো ভাই বোনের সাথে মিশে মোটামুটি স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। মাঝে মাঝে রাজু কথা ভেবে কান্না করছে। আজকে রাজুর কথা খুব বেশি মনে পড়ছে।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। লামিয়া রকির ফোন দিয়ে ইমা কে একটা কল দিলো
ইমা:- কে বলছেন?
লামিয়া:- দিদি আমি।
কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারছে - কে লামিয়া বুঝি ?
লামি:-হুম, তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
তোমার কথা ভেবে অনেক কেঁদেছি
ইমা:- তাহলে চলে আয় তোকে দেখিনা অনেক দিন হয়েছে।
লামি:-পড়ে আসবো এখন নানা বাড়িতে।
রাজু কেমন আছে?
ইমা:- বেশি ভাল নাই, আমার সাথে কথা বলে নি। শুনছি ঠিক মতো গোসল করে না,খায় না,ঘুমায় না।
লামিয়ার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। দুই হাতে মুছে বললো ও আমাকে খুব ঘৃণা করে বুঝি?
ইমা:- ও কখনো তোকে ঘৃণা করতে পারবে না।
লামি:-ঠিক আছে রাখছি।
বলেই ফোন কেটে দিল রকি বললো , তুমি এখন বাচ্চা নয় যে এভাবে কান্না করবে।
লামিয়া কিছু না বলেই চলে গেল।

বিকেলে রাজু, রাফি,মিম তিন জনে সে পুরানো টিলায় ঘুরতে গেল।
আগের মত রাজু বসে পড়লো ।আর বলল- রাফি আমি লামিয়া কে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলাম। তুমি কি আমাকে পছন্দ করো? আমাকে ভালোবাসে? এই কথাটা শোনার জন্য পাগলের মত পিছু পিছু ঘুরতাম। কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে ও চিৎকার দিয়ে বলেছিল। আমি নাকি ওর জীবন। ও আমাকে ওর থেকেও বেশি ভালোবাসে। সে দিন মনে হয়েছিল কি জানো আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।
আজকে মনে হয় এই পৃথিবীতে আমি সব চেয়ে বড় হতভাগা।
রাফি কষ্ট হলেও বলল- সব একদিন ঠিক হয়ে যাবে।
মিম শুধু তাকিয়ে আছে চোখের জলে তার বুক ভেসে যায়। রাজু ঘাসের উপর শুয়ে পড়লো।আহত পাখির মতো অসহায় চোখে মিমের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিম:- শান্ত হয়ে বললো ভাইয়া তুমি দেখো একদিন ও চলে আসবে।

তিন জনে চুপ হয়ে বসে আছে, রাজু ভাবছে সেদিনের কথাগুলো কি মিথ্যা ছিল নাকি সত্যি?
ও বলে ছিল আমি নাকি তার জীবন।
আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না।
তাহলে কেন ছেড়ে চলে গেল? তাহলে কি মিথ্যা বলেছে? কিন্তু লামিয়া তো কখনো মিথ্যা কথা বলে না।
রাজু বলল-
আচ্ছা শোন লামিয়া কি মিথ্যা কথা বলছে?
রাফি,মিম বলল-কি মিথ্যা কথা? কোন কথা?
রাজু:-লামিয়া আমাকে ছুঁয়ে শপথ করেছিল কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। তাহলে কেন ছেড়ে চলে গেল? তাহলে কি ও মিথ্যা বলেছে?
রাফি বলল-হয়তো কোন বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে
মিম:- আমারো তাই মনে হয়

রাজু আচ্ছা ফোন আছে কারো কাছে? রাফি ফোনটা দিল। রাজু মিম কে দিয়ে বললো লামিয়া কে কল দে, রিং হলো..
হ্যালো লামিয়া?
ওপাশ থেকে - না, আমি ওর মা
মিম:-আংন্টি আমি ওর বান্ধবী। ওকে একটু ফোনটা দিবেন।
আন্টি:- লামিয়া তো কাছে নাই। আসলে বলবো
মিম:-ঠিক আছে রাখছি।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে চল সবাই বাড়িতে যাই।
রাজু বলল- আর একটু থাকি না? এখানে থাকলে মনে হয় লামিয়া এখনো এখানেই আছে।
রাফি:-সময় নাই,অন্য একদিন আসবো।
527 Views
5 Likes
3 Comments
5.0 Rating
Rate this: