রাজু রিয়া কে অনেক খুঁজেও কোথাও পেল না। বুঝতে পারছে না কি যাদু করছে।যখন দেখতে ইচ্ছে করে, তখন খুঁজে না পেলে মনে হয় দেহ থেকে প্রাণপাখি হারিয়ে গেছে।মন খারাপ হয়ে গেল।ইমা উঠানে বসে আছে,রাজু বলল- লামিয়া কোথায় বলতে পারো?
ইমা তাকিয়ে দেখে রাজু কে অস্থির লাগছে। বলল- পুকুর পাড়ে গেছে। দুরুত পুকুর পাড়ে গেল। লামিয়া নিরবে বসে আছে।
রাজু বলল- লামু কেমন আছো তুমি?
লামিয়া:- তাকিয়ে বলল,বসেন! একটু পড়ে বাড়িতে যাবো তাই আপনার সাথে কথা বলতে আসলাম।
রাজু:- সত্যি যাইবা তুমি?
লামি:- হুম।
রাজু:- আমি কিভাবে থাকবো?
লামি:- আগে কিভাবে থাকতেন?
রাজু:- যখন তুমি ছিলে না, তখন একটু শূন্যতা ছিল। কিন্তু এখন তুমি আমার সমস্ত অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছো। তুমি ছাড়া এক মূহূর্ত মনে হয় একটা বছর।
লামি:- প্রতি দিন ফোন করবো ।
রাজু:- আমার খুব ভয় হয়?
লামি:- কেন?
রাজু:-যদি তুমি ভুলে যাও ?
লামি:- আমি কখনো তোমাকে ভুলে যাবো না। কিন্তু তুমি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবা না।
রাজু:- ঠিক আছে।
লামিয়ার যাওয়ার কথা ভেবে রাজুর বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। মনে হয় তার কাছ থেকে সুখ গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিঃস্ব মনে হচ্ছে। তাকে এক মূহূর্ত না দেখে থাকা কতটা কষ্টের বিধাতা ছাড়া কেউ জানেনা।
লামিয়া বলল চলেন..., তারাতাড়ি যেতে হবে।
দুপুরে প্রচন্ড গরম রাফি আর রাজু কলা পাতা, দরজার কাঁচা মাটির উপরে বিছিয়ে শুয়ে আছে। রাজুর মনে শান্তি নেই। আজকে দুই দিন হলো লামিয়া একটা কল দিল না। কষ্টের আগুনে কলিজা পুড়ে যাচ্ছে। হয়তো মাঠির শীতল তাপে যদি একটু কমতো। রাজুর কষ্ট তাই রাফিরো কিছু ভালো লাগে না। ভাই কষ্ট পাচ্ছে এটা ভেবে সেও কষ্ট পায়।রাজু বলল-
ভাই আর ভালো লাগে না। আজকে ফোন না করলে,বাড়িতে না হয় ইস্কুলে যাবো।
রাফি:- এতো ব্যাস্ত হও কেন?
রাজু:-ভাই রে ওরে না দেখে থাকতে খুব কষ্ট হয়।
রাফি:- ঠিক আছে,আজকের দিনটা যাক।
রাজু:- কালকে আমার সাথে যাবি?
রাফি:- আচ্ছা যাবো নে।আর রাতে শুইতে আসিস দারুণ একটা খবর আছে।
রাজু:- কি খবর?
রাফি:- না, রাতে বলবো।
রাজু:- একটুখানি বল?
রাফি:- না,তা হবে না।
বিকেলে রাজু মিম কে অংক করিয়ে দেয়, তখন রাজুর ফোনে একটা মিস কল আসলো।
রাজু বলল- আপু তোকে একটু পড়ে পড়াবো।
মিম:- ফোনে কথা বলতে হবে বুঝি।
রাজু:- একটুখানি।
মিম:- মানুষ টা কে?
রাজু:- নাম্বার চিনি না।
আবার ফোনে রিং হলো ,রাজু ধরতেই বলল-
কেমন আছেন?
রাজু:- কে?
ওপাশ থেকে - আমি লামিয়া!
বলার সাথে সাথে রাজু বলল- তোমাকে এক, এক মিনিট পর ফোন দিচ্ছি। বলে লাইন কেটে এক দৌড়ে পুকুর পাড়ে গেল। কল দিল...
লামিয়া:- হ্যালো!
রাজু:- তুমি কেমন আছো?
লামি:-ভালো। আপনি কেমন আছেন?
রাজু:-ভালো নেই আমি, ভালো নেই আমার মন। জানতে চাই তুমি আছো কেমন?
লামি:-কেন ভালো নেই?
রাজু:- তুমি ছাড়া আর কখনো মনে হয় ভালো থাকা হবে না।
লামি:-কেন?
রাজু:- আমার ভালো থাকা তোমার সাথে মিশে গেছে। তাই তুমি কথা না বললে আমি চাইলেও ভালো থাকতে পারিনা।
লামি:- ভালো
রাজু:- ওই তুমি এতো নিষ্ঠুর! এতো পাষাণ! কেন? তোমার কি হৃদয় নাই নাকি পাথরে গড়া?
লামি:- আমি কি করলাম?
রাজু:-আজ কে দুই দিন হলো একটা মিস কলও দিলা না। তোমার চিন্তায় আমি পাগল হয়ে গেছি।
লামি:- সরি! আর এমন করবো না। এখন রাখি?
রাজু:- কেন?
লামি:- এটা ঘরের ফোন মা দেখলে সমস্যা আছে।
রাজু:-ওই শোন না লামু! আর একটু কথা বল না প্লিজ
লামি:-কালকে ইস্কুলে আসেন কথা হবে। এখন রাখি।
ফোনটি কেটে দিল রাজুর রাগে ফোনে একটা আছাড় দিতে ইচ্ছে করছে। দূর ভালো লাগে না, কেন মেয়েটা এমন করে? এর একটু কথা বললে কি হতো?যাক তার কষ্ট শুনে কিছুটা তো শান্তি পেলাম।
রাতে খুব গরম ঘুম আসে না,দু'জন ভাগাভাগি করে পাতা পাখা চালায়।কারেন্ট আছে কিন্তু ওদের রুমে ফ্যান নষ্ট।রাজু বলল-
কি যেন বলার কথা ছিল?
রাফি:-একটা মেয়ে পছন্দ হয়েছে
রাজু:-ইয়া আল্লাহ! আগে বলবি না? কোথায়? নাম কি?
রাফি:- আমাদের এই কদমতলী শহরে ইন্টারে পরে। নাম এনি।
রাজু:- লামিয়া তো কদমতলী হাই স্কুলে পড়ে
রাফি :- ওর ইস্কুল থেকে হেঁটে গেলে পাঁচ মিনিট লাগে।
রাজু:-কেমন দেখতে অনেক সুন্দরী বুঝি?
রাফি:- তোর লামিয়ার মতো অতো সুন্দরী না। তবে খারাপ না।
রাজু:- সুন্দরী মেয়েদের প্রতি আমার টান নেই। লামিয়া তো হঠাৎ করে ভাগ্যে সাথে মিশে গেছে।
রাফি:-লাথি দিয়ে দাঁত ফেলে দিব বদমাইশ! টান নাই। তাহলে লামিয়া কে দেখে পাগল হইছো কেন?
রাজু:- আসলে আমার পছন্দ মিলে গেছে।দেখ ভাই ওর প্রধান আকর্ষণ হলো হাসি! হাসলেই গালে টোল পড়ে এটাই আমাকে পাগল করে দেয়। তারপর চোখ আমার পছন্দ বড় বড় ভাসা ভাসা মনোমুগ্ধকর চোখ।তাকালে হরিণীর মতো লাগবে। তারপর খুবই সিম্পল সাধারণ ভাবে চলে এমন একটি মেয়ে। সব কিছুই আমি ওর মাঝে পেয়ে গেছি।
রাফি:- শয়তান কে বিশ্বাস হয় কিন্তু তো না।
রাজু:- বিশ্বাস না করো তোর করতে হবে না। এগুলো যদি কোন স্যামলা মেয়ের মাঝে থাকতো তাহলে তাকেই পছন্দ করতাম।
রাফি:- একটু হাসি দিয়ে বলল - এমন একটি কালো মেয়ে খুঁজে দিলে প্রেম করবি?
রাজু:- এখন সেই অপশন নাই রে।
রাফি:- তুই একটা ভন্ড
রাজু:- তোর থেকে বেশি না কিন্তু।
রাফি বলল ঘুম আসবে না উঠ?
রাজু:- কোথায়? বিলে না পুকুর পাড়ে?
রাফি:-উঠানে ঘুমাতে হবে, ওই খানে বাতাস আছে, ঘরে গরম বেশি।
দু'জনে শীতল পাটি দিয়ে বিছানায় করে চারটি খুঁটি/চিকন গাছের ডালে মশারী টাঙিয়ে শুয়ে পড়লো।
রাজু:- সত্যি ভাই অনেক শান্তি লাগে?
রাফি:- বুদ্ধি থাকলে উপায় হয়
রাজু:- আমার বুদ্ধি লাগবো না, বুদ্ধিতে পেট ভরে না হুম।
রাফি:- আজকের রাতটা অনেক সুন্দর তাই না? জোৎস্না রাত।
রাজু:- ভাই এমন একটি রাত যদি আমার জীবনে আসতো। এভাবে জোৎস্না প্লাবিত রাতে, খোলা আকাশের নিচে আমি আর লামিয়া থাকবে। দখিনা বাতাসে হাসনে হেনা ফুলের ঘ্রাণে ধরণী মাতাল হয়ে যাবে। আমি তার কোলে মাথা রেখে আকাশের তারা গুনবো,সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে আর গল্প করবে।
রাফি:- ভাই এখন থাম, এখন সব বললে পড়ে কি শুনবো।
রাজু:- দূর কি ফিলিংসটা ছিল সব নষ্ট করে দিলি
রাফি:-লামিয়া কি বলছে?
রাজু:- কালকে ইস্কুলে যেতে বলছে।
রাফি:- আমি কিন্তু যেতে পারবো না,আগেই বলে রাখি।
রাজু:- কেন যাবি না? তুই তো ভালো তোর গাড় যাইবে।
রাফি:- যেতে পারি ভিইপি নাস্তা করতে হবে?
রাজু:- তুই একটা বদমাইশ। দিন আমারো আসবে?
রাফি:-আচ্ছা তখন দেখে নিব।
দু'জনে অনেক গল্প করে শেষ রাতে ঘুমিয়ে পড়েছে। একটু পড়ে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দু'জনে উঠে এক দৌড়ে রুমে গেল। অনেক বৃষ্টির রাফি বলল-হায় হায় রে
রাজু:- আবার কি হলো
রাফি:- আরে গাধা বিছানায় তো নিয়ে আসিনি।
রাজু:- খাইছে তারাতাড়ি চল?
দু'জনে বিছানায় গুছিয়ে নিয়ে আসতে আসতে সব কিছুই বিজে গেছে। দু'জনে দুটো লুঙ্গি, রাজু একটা গেঞ্জি পড়ল। জানালার পাশে দু'জনে বসে আছে। রাফি বলল-ভাই এই না শুকালে কালকে আমার খবর আছে?
রাজু:- আরে কালকে রোদ উঠবে চিন্তা করিস না।
রাফি:-ঘুমিয়ে পড়?
রাজু:- না, ইচ্ছা করছে না। তুই ঘুমা।
রাফি:- ঘুমিয়ে পড়েছে।
রাজু জানালার পাশে বসে টিনের চালায় বৃষ্টির শব্দ শুনছে। প্রচন্ড বাতাসে শন-শন শব্দ হচ্ছে।
হঠাৎ বিজলীর আলোয় দেখা যায়, গাছ গুলো বাতাসে তালে তালে দুলছে। হালকা শীত শীত অনুভব হচ্ছে।কারো শরীরে গরম উম নিতে খুব বেশি ইচ্ছা করছে।যদি এখন লামিয়া আসতো।তার খুব বেশি প্রয়োজন ছিল,যদি আলাদিনের মতো কোন জ্বীন থাকতো। এখন লামিয়া কে নিয়ে আসতে। দু'জনে বৃষ্টিতে হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে ভিজতাম। বিজলীর আলোয় তার চাঁদ মুখটা দেখে নিতাম। বাতাসের সাথে বৃষ্টির কনা এসে রাজু ভিজে যায়। কিন্তু জানালা বন্ধ করতে ইচ্ছা করছে না।থাক না না হয় একটুখানি ভিজলাম। আজকে মন বড় অস্থির, মন চায় তার প্রিয়তমা কে। বৃষ্টি ভেজা শরীরে কাজল কালো চোখ, মেঘের মতো ভেজা চুল নিয়ে যদি সে ছুটে আসতো। চুল থেকে চুয়ে চুয়ে পানি পড়তো।শীতে কাঁপতে কাঁপতে যদি বলতো,আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো না। তোমার বুকের হার্টবিট শুনতে খুব ইচ্ছে করছে। তাকে এক ঝটকায় বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে,কাপালে ঠোঁটের চিহ্ন এঁকে দিতাম।
হঠাৎ বজ্রপাতে রাজুর ভাবনা থেমে যায়। তাকিয়ে দেখে শরীরের অর্ধেক ভিজা। কিন্তু মন উঠতে সায় দেয় না। ভাবতে ভালো লাগে লামিয়ার কথা। এতেই একটু শান্তি লাগে।আজান দিল রাজু উঠে পোশাক পাল্টে নামাজে গেল।
ভোরে রাজ রাফি দু'জনে চলে গেল লামিয়ার ইস্কুলে। সেখান থেকে এনির কলেজে যাবে। লামিয়া কে খুঁজে না পেয়ে একটা মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করল। টেনের ক্লাস কোনটি?
মেয়েটি দেখিয়ে দিল। লামিয়া রাজু কে দেখেই চলে আসলো।রাজু বলল - বেয়াইন কেমন আছেন?
লামিয়া:-ভালো আছি। ক্লাসে বেয়াইন না ডাকলে হয় না।
রাজু:- তাই বুঝি কেন লজ্জা লাগে?
লামিয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। দুইটা মেয়ে বলল-কেরে লামি? সুন্দর আছে কিন্তু
লামিয়া:- এই দু'টো আমার বেয়াই।
লামিয়া বলল-চলেন ওদিকে গিয়ে কথা বলি
রাজু:- ঠিক আছে, বলে সবাই কে বললো- তোমরা শোন লামিয়া কে দেখিয়ে বললো এটা আমার সুন্দরী বেয়াইন! কেউ আবার মাইন্ড করো না।
একটা ছেলে বলল-আমাদের কাপালে জোটে না।কেউ বলে বেয়াইন তো মনের মতো। অনেকে অনেক কিছু মন্তব্য করলো। লামিয়া চিৎকার দিয়ে বললো - শয়তান না করছি না। বলে রাজু কে টেনে নিয়ে আসলো।
রাজু:-আচ্ছা আর বলবো না। এখন রাস্তায় চলো..
রাফি:- লামিয়া কিন্তু অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে?
রাজু:- তোর মনে রং লাগছে তাই সব কিছুই সুন্দর দেখছো।
লামিয়া:- রং লাগছে মানে?
রাজু:- একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে।
লামিয়া:- কাকে নাম কি? বলে রাজুর দিকে তাকিয়ে দেখে রাজুর চোখ লাল হয়ে গেছে।
বলল-তোমার চোখ লাল কেন?
রাজু:- পড়ে বলছি রাস্তায় চলো।
তিন জনে রাস্তায় গেল, রাফি বলে -ওর নাম এনি বকুল নেছা কলেজে ইন্টারে পড়ে।
লামিয়া:- ভালো, ছুটির পর দেখতে যাবো।
রাজু:- তুমি এতো সেজে গুজে ইস্কুলে আসলে কেন?
লামিয়া:- প্রতি দিন তো এভাবেই আসি। আগে বললো চোখে কি হয়েছে?
রাজু :-কিছু না, আসলে ঘুম আসে নি তাই। কিন্তু তুমি এভাবে সেজে কখনো আসবে না।
লামিয়া:- কেন ঘুম আসে নি?
রাজু:- যখন ঘুম আসে তখন তুমি আসো। তুমি আসলে ঘুম আর আসে না তাই।
রাফি:- কি যাদু করলে যে ঘুম চলে গেছে?
লামি:- এই যাদু বুঝতে হলে প্রেমে পড়তে হবে।
তারপর রাজু কে বললো আমি সাজলে সমস্যা কি?
রাজু লামিয়ার কপালে টিপ হাত দিয়ে তুলে ফেলে দিয়ে বলল। ঠোঁটে লিপস্টিক মুছো?
লামিয়া:-কেন?
রাজু:- আমি চাই না আমি ছাড়া অন্য কেউ তোমাকে দেখুক। তোমাকে পছন্দ করুক, কারণ তুমি শুধুই আমার।
লামিয়া:- দেখলো রাজু কিছুটা রেগে আছে,আচ্ছা ঠিক আছে।
রাফি:- কিছু খাবি নাকি শুধু কথা বলবি?
লামিয়া:- না,খাব না ক্লাসে যেতে হবে।
রাজু:- না খেয়ে কোথায় যেতে পারবা না।
তিন জনে ফুচকা খেয়ে লামিয়া কে কিছু চকলেট কিনে দিল। তারপর এনির কলেজে গিয়ে তার সাথে দেখা করে আসলো।
মিম রাজু ঘরে না পেয়ে টেবিলে লিখে আসলো তুমি একটা শয়তান,একটা খাটাশ।রাজু টেবিলে দেখে বললো মা ঘরে কেউ আসছিল?
মা:- মিম আসছিল অংক করতে।
খাবার খেয়ে রাজু ঘুমিয়ে পড়েছে,মিম এর ডাকাডাকি শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। রাজু বলল-
তোর সমস্যা কি?
মিম:- তুমি নাক ডেকে ঘুমাও আর আমি তোমার জন্য মাইর খাই
রাজু:-কেন আমি কি করলাম?
মিম:- একটা অংক করে দিলে কি হয় বলো?
রাজু:- টেবিলে কি লেখছো
মিম:- কৈ কিছু না তো
রাজু:-আচ্ছা অংক বই দে
রাজু মিম কে অংক করাছে মিম বলল-
ভাইয়া কোথায় গেছিলাম?
রাজু:- লামিয়ার ইস্কুলে গেছিলাম।
মিম:- কথা হয়েছে?
রাজু:- তোর এত জানতে হবে না অংক কর।
হঠাৎ রাজুর ফোন ভেজে উঠলো রাজু-
হ্যালো লামিয়া! কেমন আছো তুমি?
লামি:- ভালো। কি করেন?
রাজু:- বসে বসে তোমার কথা ভাবছি।
লামি:-কি ভাবছেন?
রাজু:- ভাবছি বেয়াইনে এতো মিষ্টি কেন?
লামি:- দুপুরে খাইছেন?
রাজু:-হুম, তোমাকে খাচ্ছি।
মিম আমার পড়া-লেখায় সমস্যা হয়।তুমি কি ফোন বন্দ করবে না চাচী কে ডাক দিবো।
রাজু:- এক মিনিট পর ফোন দিতেছি।
রাজু তাকিয়ে দেখলো,মিম এর চোখের কোনে জল জমে আছে। সে লুকিয়ে চোখ মুছে ফেললো। রাজু বলল- তুই অংক গুলো কর, আমি একটু কথা বলে আসি। রাজু পুকুর পাড়ে গিয়ে ফোন করলো।
হ্যালো লামিয়া..
লামি:- কেমন আছেন
রাজু:-তুমি কথা বললে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি।
লামি:- ভালো।
রাজু:-তুমি কেমন আছো
লামি:- তুমি ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকি।
রাজু:-সুন্দরী! তুমি আমার জীবন।তোমার হাসি আমার জান্নাত! তোমার হৃদয় আমার বাসস্থান।তোমার সুখ-দুঃখ গুলো আমার জীবনের বসন্ত। তোমার শেষ নিঃশ্বাস আমার মরণ।
লামি:-রাজু আমি তোমাকে আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। তুমি আমার জীবন-মরণ।
রাজু:- আমি তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি! I love you so much
লামি:- I love you too এখন রাখি?
রাজু:-কেন
লামি:- পড়ে কথা হবে,আর শোন "জিপি অফার" দিয়ে তোমার নাম্বার সেইভ করা। কখনো কল দিবা না শুধু একটা ম্যাসেজ দিবা।
রাজু:- ঠিক আছে। লাইন কেটে দাও?
লামি:-তুমি কেটে দাও?
রাজু:- তুমি কি জানো না ফোনের ওই প্রান্তে সুন্দরী মেয়ে থাকলে। কখনো ছেলেরা ফোন রাখতে পারে না।
লামি:- ওহ জানা ছিল না তো। আল্লাহ হাফেজ।
রাজু ভাবছে কি হলো মিম এমন করলো কেন?।ওর চোখে পানি কেন? তাহলে কি মিম আমাকে ভালবাসে? আবার বলছে ছিঃ আমি এসব কি চিন্তা করছি।ও তো আমার চাচাতো বোন,এক সাথে সবসময় থাকলেও, ওকে আপন বোনের চোখে দেখে আসছি। কিন্তু যদি এমন টা হয়ে যায় তখন কি হবে? ইয়া আল্লাহ! যাই হোক মিম কে এরিয়ে চলতে হবে। না হলে সর্বনাশ হতে পারে।
রাজু:- সব অংক করছো?
মিম:- হুম করছি, বলেই ঘরে গেল রাজু দেখলো একটা অংক ছাড়া আর কিছুই করেনি।
রাজু:- মিম তুই অংক করনি কেন?
মিম:-আমার মাথা ব্যথা করছে। ঘরে গিয়ে করবো বলে চলে গেল।
রাজুর প্রতি মিমের অন্য রকম একটা টান থাকলেও.মিম কখনো বুঝতে পারেনি যে, রাজুকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। আজকে লামিয়ার সাথে রাজুর কথা বলতে দেখে। অনেক কষ্ট অনুভব করে। হৃদয়টা ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু কি করবে? মিম ভাবছে আমি ভুল করেছি,রাজু জানতে পারলে কি বলবে? ছিঃ আমি এভাবে ভুল জায়গায়, ভুল মানুষ কে ভালোবেসে ফেলেছি।ও আমাকে বোনের চোখে দেখে কিন্তু এমনটা হলো কেন? এখন আমি কি করবো? তাকে ভুলতে তো হবেই যতো কষ্ট হোক। আজকে আর কিছু ভালো লাগে না। রাতে না খেয়ে শুয়ে আছে। ঘুম আসে না, রাজুর সাথে লেগে থাকা স্মৃতিগুলো আজ ভিড় করে আছে দু'চোখের পাতায়। মিম সেই স্মৃতির সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে আর চোখের জল ফেলে রাত কাটিয়ে দিল।
রাতে রাফি রাজুকে বলল- এনি কে কেমন দেখলি? আমার সাথে মানাবে?
রাজু:- খারাপ না, অনেক সুন্দর, লম্বা ফর্সা হুম মানাবে। তবে?
রাফি:- তবে কি?
রাজু:- তুই ইমার সাথে সম্পর্ক কর আমার একটু লাভ হবে?
রাফি:-ওটা তো বোনাস, আবার প্রেম কেন?
রাজু:- ইমা কে নিয়ে ভয় হয়,যদি লামিয়ার বিষয়ে সবাই কে বলে দেয়।যদি কোন ঝামেলা করে এই জন্য।
রাফি:-ওহ আমার মাথায় লবণ রেখে বরই খাইবা? শোন তুই মিছে মিছে ভয় পাও এমনটা করবে না।
রাতে দু'জনে অনেক গল্প করল , ভোরে রাজুর মা রাজুকে বলল অনামিকা কে আনতে যেতে। রাজু অনেক খুশি হলো, কিন্তু বলল-
অনু কে ভাইয়া নিয়ে আসুক?
মা:- তোর ভাইয়া ঢাকা গেছে কাজে।
রাজু:- ঠিক আছে।
রাজু লামিয়ার ফোনে একটা ম্যাসেজ দিল। "তোমার জন্য একটা অফার আছে এখনি কল করো"
লামিয়া একটু পড়ে কল দিলো হ্যলো..
রাজু:- লামু:
লামিয়া:- হুম।
রাজু:-সুন্দরী তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে?
লামি:-কালকে না দেখা হলো?
রাজু:- হ্যা দেখছি, আবার দেখবো তাতে তোমার কি? আমরা যখন ইচ্ছা তখন দেখবো,এক বার না হাজার বার দেখবো কোন সমস্যা?
লামি:- আমি তো তোমার কাছে থাকি না যে যখন তখন চলে আসবো।আর বেশি দেখতে চাইলে বিয়ে করে নাও?
রাজু:- তাই করবো ,মাত্র দুই বছর অপেক্ষা করো।
লামি:- আচ্ছা কিছু বলবা এখন ইস্কুলে যাবো?
রাজু:- বিকেলে অনু আপুকে আনতে যাবো। তুমি ওই বাড়িতে যাও আমি যেন তোমাকে পাই?
লামি:-মা মনে হয় যাইতে দিবে না।
রাজু:-ওই শোন না ময়না পাখি! প্লিজ একটু ম্যানেজ কর না? তোমাকে ছাড়া একটা মুহূর্ত আমার ভালো লাগে না।
লামি:- বুঝছি কিন্তু.. আমি চেষ্টা করবো?
রাজু:-ওই লক্ষ্মী!প্লিজ তোমাকে না দেখলে অনেক কষ্ট পাবো তো
লামি:- ঠিক আছে
রাজু:- ময়না! তুমি এতো ভালো কেন?
লামি:- কচু! তোমার মনে সব ঘুন্ডামী
রাজু:- ঘুন্ডামি বলো আর যাই বলো, তুমি এক মূহূর্ত দূরে গেলে,মনে হয় আমার শূন্য দেহটা পড়ে আছে প্রাণ টা কোথায় চলে গেছে।
লামি:-ভালো
রাজু:- ময়না! ময়না রে! তুই আমার রক্তের সাথে মিইশা গেছো। তুই ছাড়া একটা সেকেন্ড মনে হয় একটা যুগ। সারা জীবনটাই তোর নামে লিখে দিলাম। কখনো আমায় কষ্ট দিস না সইতে পারবো না।
লামি:- কথা দিলাম আমি কখনো তোমায় কষ্ট দিব না। তোমার সমস্ত কষ্টগুলো আমার, তোমার সমস্ত সুখ গুলো আমার।
হঠাৎ কে যেন বার বার কল দিচ্ছে। রাজু বলল- ফোনটা একটু কেটে দিবা?কে যেন বার বার কল দেয়।
লামি:-ঠিক আছে। তুমি সবসময় ভালো থেকো।বায়।
রাজু:-তুমি ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি।বায়।
হ্যালো..
ওপাশ থেকে:- কি অবস্থা, আপনি কি মানুষ?
রাজু:- মানুষ না তো কি?
ওপাশ থেকে:- আপনি একটা থাক বললাম না। কার সাথে এতো কথা বললেন?
রাজু:- আপনি কেমন মানুষ? দেখছেন কথা বলছি তার ভিতরে শুধু কল দিয়েই যাচ্ছেন। দিলেন তো মাথা গরম করে।
ওপাশ থেকে:-ইচ্ছা করেই দিচ্ছি।আর গরম বেশি হলে মাথায় পানি দিন।
রাজু:-কে আপনি চিনতে পারলাম না?
ওপাশ:- না চিনেই এতো কথা?
রাজু:- পরিচয় দিবা না লাইন কাটাবো?
ওপাশ থেকে:-ইয়া আল্লাহ! রাগ তো আছে। এই যে মশাই এতো রাগ ভালো। তাহলে কপালে বউ জুটবে না।
রাজু:- বউ না জুটলে তোমাকে তুলে নিয়ে আসবো।
ওপাশ থেকে:-ইস সখ কত? আমর ওজন জানো তুমি?
রাজু দূর বলে ফোনটা কেটে দিলো, আবার রিং হলো.. রাজু এই বার গালি দিবে ভাবছে।হ্যালো..
বার বার কল দেন কেন?
ওপাশ থেকে:- বেয়াই! আপনি রেগে আছেন বুঝি?
রাজু:-কে আপনি?
ওপাশ থেকে:- ইমা! আপনার বেয়াইন।
রাজু:- ওরে আমার রসের হাড়ি! আমাকে এতো দিন পরে মনে পড়লো বুঝি?
ইমা:-মনে পড়লেও কি? ফোন নাম্বার তো দিলেন না।
রাজু:-ইস হায় হায় রে,আমার না একটুও খেয়াল ছিল না। তুমি বলতা? তো নাম্বার পাইছো কোথায়?
ইমা:-আপনার লামু দিছে।
রাজু:-ভালো।
ইমা:-তো আপনি কেমন আছেন?
রাজু:- আর বইলো না বেয়াইন! খুব অসুস্থ আছি
ইমা:- কি হয়েছে? ভাবী তো কিছুই বলেনি?
রাজু:- ডাক্তার বলছে প্রেম রোগ হইছে। তুমি ছাড়া আর কখনো ভালো হইবে না।
ইমা:-আহারে বেচারা! একটা কাজ করুন বেয়াই
রাজু: কি কাজ?
ইম:- আমার নামটা লিখে পানিতে ভিজিয়ে, সাকাল বিকেলে খাইবেন তাহলে রোগ থাকবে না।
রাজু:- হায় কপাল আমার! যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।
ইমা:-ভোরে নাস্তা করছেন?
রাজু:-পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু নাস্তা হলে তুমি! তোমার সাথে কথা বললে আমার ক্ষুধা লাগে না।
ইমা:- বদমাইশ একটা! শুধু তাফালিং
রাজু:- কিছু বললা সুন্দরী বেয়াইন?
ইমা:- হে আপনি কি কখনো ভালো হইবেন না? সেই কখন থেকে আজাইরা কথা বলেন?
রাজু:- ইয়া আল্লাহ! আমি আবার খারাপ ছিলাম কখন?
ইমা:- তাই না? আপনি আবার ভালো ছিলেন কবে?
রাজু:-আজকে আসতে আছি তোমাকে একবার হাতের কাছে পাইলে বুঝাবো খারাপ কাকে বলে।
ইমা:- আমি ইমা তোমার বোকা লামিয়া না?
রাজু:- একবার আপনি একবার তুমি,এভাবে না বলে তুমি করে বললেই তো হয়।
ইমা:- ইস সখ কত! আমার যা ইচ্ছা তাই বলবো।
রাজু:- আজকে ফোনে টাকা রিচার্জ করছো নাকি।
ইমা:- হুম, বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে। কিন্তু ওই সালার ফোন বন্দ।
রাজু:-ওহ এই জন্যই তো বলি হঠাৎ করে চাঁদের দেখা কেন?
ইমা:- ওর থেকে তোমার সাথে কথা বলা ভালো।
আমরা কপাল টাই খারাপ ।
রাজু:- তাইলে আমার সাথে করো?
ইমা:- তুমি না,আর একটু স্টাইলিশ ছেলে চাই। রাফি হলে ভালো হতো।
রাজু:-ভাই আমি এতো স্টাইল পছন্দ করি না। স্বাভাবিক নরমাল জীবন চাই। আমি যেমন আমার লামু তেমন।
ইমা:- হুম,মিলে গেছে। কিন্তু লামি তোমার থেকে বোকা বেশি
রাজু:-তুমি জানো বোকা মেয়েরা ভালো মা এবং ভালো বউ হয়।
ইমা:- জানি না।
রাজু:- ইস তুমি যদি আগে বলতে রাফি একটা মেয়েকে পছন্দ করছে।
ইমা:-রাফি কে খুব পছন্দ হয় কিন্তু আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যেতে চাই না। সম্পর্ক নষ্ট হলে আত্মীয়তা নষ্ট হয়ে যায়।
রাজু:- আধুনিক স্টাইলিশ না হলে বুঝি মেয়েরা পছন্দ করে না। তারা খুব বোকা হয়ে?
ইমা:- না তেমন কিছু না, আসলে সুন্দর জিনিস আমাদের নজর কারে। তাই স্টাইলিশ ছেলেদের প্রতি আসক্ত বেশি হয়। কিন্তু মনের সৌন্দর্য হৃদয় কারে?
রাজু:- তাহলে আমি আদি যুগের, এবং মনের সৌন্দর্য নেই।
ইমা:-আমি তেমন বলতে চাই নি,আর আপনার মন কেমন জানি না। আপনি অনেক রসিক মানুষ
রাজু:-আচ্ছা রাখি?
ইমা:-রাগ করছেন বুঝি?
রাজু:- না, তোমার সাথে রাগ করলে মজার মানুষ পাবো কোথায়?
ইমা:- কেন মনের মানুষ আছে তো
রাজু:- একটুখানি কাজ আছে পড়ে কথা বলি
ইমা:-ঠিক আছে।
রাজু বিকেলে তালই বাড়ি গেল অনু কে আনতে। লামিয়া ও কিছুক্ষণ আগে এসেছে।অনু লামিয়া কে বলল- কি রে রাজু আসলো তুমি যোগাযোগ আছে নাকি?
লামিয়া:- না ভাবী, তোমার ভাইয়ের খবর আমি পাবো কোথায়? বলে চোখের আড়ালে গেল। রাজু বাড়ান্দায় বসে আছে,লামিয়ার কথা শোনা যাচ্ছে কিন্তু একটু দেখা করলো না। একটু পড়ে ইম, লামিয়া, কিছু কাঁচা আম সাথে লবণ, মরিচ,তেল নিয়ে হাজির। তিন জনে আম খায় আর গল্প করে। রাজু বলল-
লামিঃ কতদূর থেকে আসলাম একটুখানি কথা বলতে,চলো পুকুরে পড়ে বা কোথাও।
ইমা বলল- কেউ দেখলে সমস্যা আছে?
লামি:- ভাবী আমাকে সন্দেহ করে। পড়ে কথা বলবো। রাজু আর কথা বাড়ালো না।
রাতে হঠাৎ জানালা দিয়ে কে যেন ডিল ছুঁড়ল। রাজু তখন ঘুমায় নি, বলল- কে?
জানালা দিয়ে কেউ ইশারা করলো। রাজু কিছুটা ভয়ে ভয়ে জানালা খুলে তাকালো। দেখলো দুটি পেত্নী তাকে ডাকছে। কিছুটা ভয় হলেও কাছে গেল। তাকিয়ে দেখল ইমা,লামু কি তোরা এতো রাতে?
ইমা চুপ কর বলে মুখ চেপে ধরলো, বলল-আমার সাথে আসো। লামিয়ার রাগ হলেও কিছু করার নেই। পুকুর পাড়ে ইমা একটুখানি দূরে দাঁড়িয়ে বললো, যা বলার তারাতাড়ি বলো।
লামি:-তুমি জানো এখানে আসতে মা কে অনেক মিথ্যা কথা বলছি?
রাজু:-তোমার জানের জন্য এই টুকু করবা না তো কার জন্য করবা?
লামি:- ইস আইছে আমার নাগর।
রাজু:- খোলা চুলে চাঁদের আলোয় তোমায় দেখতে এতো সুন্দর লাগে জানা ছিল না। চাঁদকে বলতে ইচ্ছা বলতে করে
"তোমার চেয়েও সুন্দর বেশি আমার প্রিয়তমা"
কেন এতো সুন্দর তুমি?
লামি:- শুধু তোমার জন্য।
রাজু:- ধন্যবাদ তাকে যিনি তোমাকে আমার মনের মত করে বানিয়েছেন।
লামি:- হইছে আমি অতো সুন্দর না।
রাজু:- সুন্দরী অনেক বেশি চিন্তা হয় তোমাকে নিয়ে। তুমি চোখের আড়াল হলে আমি পাগল হয়ে যাই
লামি:- কেন?
রাজু:- অনেক সুন্দর তুমি! তোমাকে হাজারো ছেলে পছন্দ করে। সবাই তোমাকে নিজের করে পেতে চায়। আমর ভয় হয় যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও।
লামি:- কেন তুমি এমন ভাবছো? আমি তোমাকে ভালোবাসি। কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না।
রাজু:-তুমি কারো দিকে তাকালে, কারো সাথে কথা বললে.আমার হৃদয়ে আতংকে থর থর কাঁপে, পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যায়।গলা শুকিয়ে যায়। তোমাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পরি ন।
রাজুর চোখ দিয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
লামি:- হাত দুটো রাজু গালে দিয়ে বলল -শোন আমার দিকে তাকাও আমার দেহের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে ভাল বাসবো।
সমস্ত পৃথিবী এক দিকে তুমি অন্য দিকে। তুমিই আমার পৃথিবী।
লামিয়ার হাতের কোমল স্পর্শ পেয়ে, রাতের নিরব ইশারা রাজুকে মাতাল করে দিল। লামিয়ার চোখে তাকাতেই নেশা আরো ঘনীভূত হয়ে যায়। হঠাৎ লামিয়া কে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশে একটা কিস করলো।সব কিছু নিরব স্তব্দ এমন ভাবে জড়িয়ে আছে, মনে হয় কোন মুর্তি যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দু'জনে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।শুধু হালকা কম্পন আর হৃদপিন্ডের স্পন্দন ধুপ-ধুপ করে বাজতে রইল।
ইমা লামিয়া কে একটি ধাক্কা দিয়ে বলল - কি হচ্ছে এসব অসভ্যতা করার জায়গা পাও না। রাজু ছেড়ে দিয়ে বলল-
একটা কাজ করলা? দিলা তো সব কিছুই নষ্ট করে। লামিয়া মাথা নিচু করে ইমা কে বলল-
আমি কিছু করি নি ওই শয়তানের কাজ।
ইমা:-ঠিক আছে ঘরে চল।
ভোরে রাজু ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ ইমা এক জগ পানি দিয়ে দৌড়ে গেল। রাজু তাকিয়ে দেখলো সব কিছুই ভিজে গেছে। রাজু গোসল করে আসলো দেখে লামিয়া বসে টিভি দেখছে। লামিয়ার কান ধরে বললো- পানি দিসো কেন?
লামিঃ- আমি দিই নাই ইমা দিদি।
ইমা দূরে দূরে পালিয়ে বেড়ায়,রাজু উঠানে বসে আছে। মাচার জানালা দিয়ে ইমা একটা চিরকুট লিখে রাজুর দিকে ফেললো। রাজু দেখে লিখা আছে, তোমাকে লামিয়ার সাথে একটা কথা বলার সুযোগ করে দিব। কিন্তু আমাকে এখন কিছু করবা না। তুমি কি রাজি না হলে লামিয়া কে একা ছাড়বো না। রাজু বলল-
আমি রাজি। ইমা নিচে এসে জানালা দিয়ে রাজু কে ইশারায় ডাকলো..
রাজু কাছে গিয়ে বলল - কখন কোথায়?
ইমা:-নাস্তা শেষ করে,নদীর পাড়ে যাবো।
রাজু:- ঠিক আছে। ইমা চলে যাবে তখনই বলল-শোন বেয়াইন!
ইমা:- কি বলবে তারাতাড়ি?
রাজু ইমার চুল গুলো ধরে ঠোঁটে একটা কিস করলো। ইমা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললো - লামিয়া এদিকে আয় তো?
রাজু:- সরি বেয়াইন ভুল হয়ে গেছে।আর এমন ভুল কখনো হবে প্লিজ! কান ধরছি বলে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
লামিয়া এসে দেখলো রাজু কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ইমা অনেক রেগে আগুন হয়ে আছে। লামিয়া:- কি হয়েছে?
রাজু:- কান ছেড়ে কিছু হয়নি, তুমি ঘরে যাও।
ইমা:-কান ছাড়া যাবে না ধরো?
রাজু:- পড়ে ধরি?
ইমা:- এখনি ধরো বলে ঝাটি দিল।
রাজু কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে, ইমা চলে গেল। লামিয়া বলে কি করছো তুমি এতো রেগে গেল কেন?
রাজু:- আরে পাগলী তেমন কিছু না বলে কান ছেড়ে দিল।
ভোরে নাস্তা সেরে তিন জনে নদীর পাড়ে গেল।
একটা গাছের টুকরো উপর বসে আছে।রাজি তাকিয়ে দেখলো, খোলা চুলে লামিয়া কে অনেক সুন্দর লাগছে। নজর ফেরাতে পারছে না, কি সুন্দর মায়াবী, অনেক বেশি মিষ্টি লাগছে। বাতাসের তালে তালে চুলগুলো এলোমেলো দুলছে। লামিয়া নদীর ঢেউগুলো দেখছে, অনেক সুন্দর একটা পড় একটা ডেউ এসে তীরে হারিয়ে যায়। ইমা রাজু দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।
রাজু:- কি বেয়াইন কি দেখছেন?
ইমা:- শয়তান দেখছি, আপনি কেমন আল্লাহই জানে।
রাজু:-বেশি দেখো না প্রেমে পড়ে যাবা।
ইমা:-আমি তোমাকে?জীবনেও না।
লামি:- দিদি এই নদীতে কি কুমির আছে?
ইমা:- কুমির দূরে খোঁজা লাগবে না। তোর পাশেই আছে।
লামিয়া রাজুর দিকে তাকিয়ে বললো আমার কুমির মানুষ খায় না।
ইমা:-যখন ধরবে তখন বুঝবি?
রাজু:-কেন কুমিরে তোমাকে ধরছিল নাকি?
ইমা:-ইস সে সাহস কি আছে?
রাজু:- হ ঠিকই , তোমার গায়ে যে শক্তি হিজড়া থেকেও বেশি।
ইমা:- অনেক রেগে কি বললা তুমি?
রাজু:- না, বলছি তোমার হাসিটা খুবই মিষ্টি।
ইমা:- উল্টাপাল্টা কিছু বললে তোমার খবর আছে কিন্তু?
রাজু:- তুমি একটুখানি বসো আমি লামিয়ার সাথে দুই মিনিট কথা বলতে চাই
ইমা:- না, আমার বোনকে কোথাও যেতে দিব না।
লামি:- দিদি দুই মিনিট তো যাই প্লিজ!
ইমা:- বলছি না, না।
লামিঃ- না গেলে কষ্ট পাবে তো।
ইমা:-ঠিক আছে দুই মিনিট কিন্তু এক সেকেন্ড বেশিও না।
লামি:- ঠিক আছে?
দু'জনে একটু সামনে হাঁটছে রাজু বলল- আমার খুব ইচ্ছা করে, তোমার সাথে নৌকায় ঘুরতে যেতে। তুমি সুন্দর করে সেজে বসে থাকবে। চোখে কাজল,কপালে টিপ, ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক,লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বসে থাকবে। আমি তোমার কোলে মাথা রেখে তোমাকে দেখবো। তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে।আর মিষ্টি সুরে গান গাইবে। লামিয়া:-
আমি তো গান জানি না?
রাজু:- দূর দিলে তো সব নষ্ট করে। কথা বল না তো। তারপর বললো -যদি সন্ধ্যা হয়ে যায়. তখন অনেক গুলো মোমবাতি জ্বালিয়ে তোমাকে দেখবো। সারা রাত জেগে তাকিয়ে তাকিয়ে তোমাকে দেখবো। তোমার রুপের আগুনে হৃদয় কে পুড়ে অঙ্গার বানাবো। তোমার রুপের কালিমা হৃদয় মেখে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিব।আর যদি চাঁদ উঠে, চাঁদের আলোয় তোমায় দেখবো।
লামিয়া:- আমি তো রাতে নদী ভয় পাই?
রাজু:- আবারো হইবে না, তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না।
লামিয়া:- কি হবে না?
রাজু:- আমার কপাল। সামনে চলো তো
ইমা ভাবছে রাজু যে বদমাইশ! লামিয়া কে একা ছাড়া উচিত হয়নি। রাতে যেভাবে জড়িয়ে ধরলো, আমাকে ধরে কিস করলো।ওর মাথা হয়তো ঠিক নাই।এই লুচ্চার সাথে বোনকে ছাড়লাম কেন?এখনো আসছে না কেন? বলে সামনে দিকে চললো হঠাৎ তাকিয়ে দেখে, লামিয়া কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রাজু একটা লাঠি নিয়ে মিনিট গুনছে। ইমা কে দেখে রাজু লাঠি ফেলে বলল ঠিক আছে।
ইমা:- রাজুকে বললো তোমার কতবড় সাহস আমার বোনকে কান ধরাছো
রাজু:- আমার দোষ কি ওই তো ধরছে।
লামিয়া:- ভোরে পানি দিছো তাই এখন আমি কান না ধরলে ভিজিয়ে দিবে তাই।
ইমা:-বললেই কান ধরবি আমাকে ডাক দিতি।
রাজু ইমার কাছে এসে বললো - কি ক্রিম যে দেও সব গালে লেগে আছে। বলে দুই হাত দিয়ে মুছে দিল।
ইমা:- তোমার উদ্দেশ্যে তো ভালো না বলে হাত সরিয়ে দিল।
লামিয়া ইমা কে দেখে হাসি দিল, রাজু তাকাতেই থেমে গেল।
ইমা:- ও হাসলো কেন?
রাজু:- এমনি, হাসি পেলে করবে কি।
লামিঃ- হ,এমনি।
ইমা:- না কিছু তো আছেই? বলে গালে হাত দিল। হাতে ধূলাবালি তে সাদা হয়ে গেছে। ইমা শয়তান
বলে চিৎকার দিয়ে, লাঠি দিয়ে পিটান দিল। তখনি রাজু বলল-কি করছো থামো একটু।
ইমা:- নদীতে নামো না হলে খবর আছে।
রাজু:-আচ্ছা নামছি থামো।
রাজু একটুখানি পানিতে নেমে বলল-ঠিক আছে?
ইমা:- ভোরের কথা মনে আছে তো,হাটু সময় পানি নেমে কান ধরো
রাজু:- কান ধরতেই হবে?
ইমা:- তোমার ইচ্ছা, না হলে ভোরের কথা বলে দিব।
রাজু নিরুপায় হয়ে হাঁটু সমান পানিতে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দু'জনে দেখে খুব হাসাহাসি করছে। রাজু কান ছেড়ে লামিয়া কে বললো- তোমাকে তো পাবো তখন খবর আছে।
ইমা -ঠিক আছে দেখা যাবে।
**00**00**
আজকে লামিয়ার পরিক্ষা শুরু। রাজু ভোরে সেজে গুজে রাফির সাইকেল নিয়ে রওনা দিল।
হলের সামনে যেতেই লামিয়া আর তিনটা মেয়ে চলে আসলো। রাজু:-
কেমন আছেন বেয়াইন?
লামিঃ-ভালো, আপনি কেমন আছেন?
রাজু:- ভালো তো থাকতে চাই কিন্তু পারিনা।
লামিঃ- কেন নিষেধ করে কেউ?
রাজু:- এতো সুন্দর বেয়াইন রেখে ভালো থাকি কেমনে?
ওর বান্ধবীর হেসে বলল -এতো সুন্দরী বেয়াইন রেখে রাতে ঘুম আসে না বুঝি?
লামি:- একটু জোরে বলল- শয়তান ফাজলামি করলে কিন্তু কথাই বলবো না।
রাজু:- আচ্ছা ঠিক আছে সরি। তোমার পরিক্ষা কখন শুরু হবে।
লামিঃ- এক ঘন্টা পরে।
রাজু:- চাল না কিছুক্ষণ ঘুরে আসি?
লামিঃ- না সময় নাই।
রাজু:- ঠিক আছে।
তুমি এখানে একটুখানি দাঁড়াও আমি আসছি। বলে চলে গেল,লামিয়া তারাতাড়ি আসবেন কিন্তু বলে দাঁড়িয়ে আছে ।ওর বান্ধবীরা বললো শুধু কি বেয়াই না আরো কিছু আছে। লামিয়া থাকলেও বলবো না।তোরা যে শয়তান আমার বারোটা বাজিয়ে দিবি। রাজু একটা দুটো কলম একটি ডাইরি দিয়ে বলল -
আমি চাই প্রথম পরিক্ষা এই কলম দিয়ে দিবা।
লামিয়া:- ঠিক আছে, এখন আপনি যান বিকেলে ফোন করবো।
রাজু:- জান টু আচ্ছা পড়ে কথা হবে।
লামিঃ-জান বলি নাই যাইতে বলছি।
রাজু:- আমিও তাই বলছি।
লামিয়া তার বান্ধবীর পরিক্ষার হলে গেল। রাজু চিন্তা করলো পরিক্ষা শেষ হলে, লামিয়ার সাথে কথা বলে বাড়ি যাবে।তাই সাইকেল নিয়ে একটু ঘুরে আসি। একটার সময় পরিক্ষা শেষ হলো, লামিয়া হল থেকে বের হয়ে দেখলো রাজু দাঁড়িয়ে আছে।লামিঃ- আপনি বাড়িতে যান নাই?
রাজু:- না, তোমার পরিক্ষা কেমন হলো না জেনে যেতে ইচ্ছা করছে না।
লামিঃ- ফোনে বলতাম তো
রাজু:-তোমার প্রথম পরিক্ষা কি করে দূরে থাকি বলো? তা ছাড়া ওই মিষ্টি মুখটা না দেখলে আমার দিন ভালো যায় না।
লামিঃ- ঠিক আছে চলুন।
হঠাৎ একটা ছেলে বলল-
লামিয়া তুমি কেমন আছো?
লামিয়া:- আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
ছেলেটি:- তোমাকে অনেক মিস করছি। তোমার পরিক্ষা শুনে সাথে সাথে ছুটে আসছি। পরিক্ষা কেমন হলো?
লামিয়া:- খুব ভালো হয়েছে। লামিয়া তাকিয়ে দেখলো রাজু ছেলেটার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। চোখে রক্ত উঠে গেছে, লামিয়া ওর সাথে কথা বলা হয়তো রাজু ভালো ভাবে নিতে পারছে না। লামিয়া বলল-ভাই অন্য সময় কথা হবে এখন আসি?
ছেলেটি:- না, তুমি এখান খুব ক্লান্ত কিছু না খেয়ে যেতে পারবে না। তাহলে আমি অনেক কষ্ট পাবো।
লামিয়া:- এখন না অন্য একদিন খাবো।
ছেলেটি:- না তুমি বললেই হলো বলে হাত ধরে টেনে দোকানে নিয়ে যাচ্ছে। তোমার সাথে ছেলেটা কে?
লামিয়া:- ও আমার বেয়াই?
লামিয়ার খুব ভয় হচ্ছে রাজু যদি কিছু করে বা বলে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে এবারের মতো উদ্ধার করো। রাজু লামিয়ার হাত ধরাটা মেনে নিতে পারছে না। কষ্ট বুকটা ফেটে যাচ্ছে ছেলেটি কে খুন করতে ইচ্ছা করছে। না হয় চিৎকার দিয়ে কান্না পাচ্ছে। লামিয়া শুধুই আমার, তাকেই স্পর্শ করলে পৃথিবী ধ্বংস করে দিব। কিন্তু লামিয়া কিছু না বলায় তাকে কিছু বলার সাহস পেলো না। যদি লামিয়া তার হাত ধরে থাকতে চায়, আমি কি করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবো। তা কখনোই পারবো না। রাজু বলল-
আমার কাজ আছে, আমি যাই।
ছেলেটি:- না, বেয়াই কিছু খেয়ে তার পর যাবেন।
লামিয়া:- না, কোথায় যাবেন না। আপনার সাথে অনেক কথা আছে।
তিন জনে সিঙ্গারা পুড়ি খেল,রাজু অনেক কষ্টে এক পিস খেল। তার গলা দিয়ে খাবার যায় না।
ছেলেটি চলে গেল রাজু বলল -
লামিয়া আমি যাই আমার একটু কাজ আছে।
লামিয়া:- আমার একটা অনুরোধ রাখবে?
রাজু:- কি তারাতাড়ি বলো?
লামিয়া:- আমাকে একটু এগিয়ে দাও তোমার সাথে একটু হাঁটতে ইচ্ছা করছে।
রাজু:- আজকে আমার শরীর ভালো না। অন্য একদিন?
লামিঃ-না,আজ এবং এখনি আমার সাথে যাইতে হবে।
রাজু:- ঠিক আছে চলো।
লামিয়া বলল- ওর নাম রকি, আমার মামাতো ভাই। জোর করে যদি কিছু খাইয়ে দেয় বলো আমি কি করবো?
রাজু:- আমি ওর বিষয়ে কথা শুনতে চাই না।
লামিঃ- আমি বলতে চাই?
রাজু:- ও তোমার হাত ধরবে কেন?
লামিঃ- আমি বুঝতে পারি নাই যে হাত ধরে ফেলবে।তা ছাড়া ওতো অপরিচিত কেউ নয়?
রাজু:- ওর তাকানো ধরা কথা বলাতে শুধু ভাই ছিলনা।ও তোমাকে নিজের করে পেতে চায়।
লামিঃ- আমি জানি ও আমাকে ভালবাসে। কিন্তু আমি তো না।
রাজু:- সাইকেল টা রাস্তার উপরে ফেলে দিয়ে বলল- তুই শুধুই আমার! কেউ তোর দিকে তাকালে আমি তার চোখ তুলে নিবো।কেউ হাত ধরলে তার হাত কেটে দিব। কেউ তোর দিকে এগিয়ে আসলে পা ভেঙ্গে দিব। আমার দেহের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তুই শুধু আমার।কেউ তোকে স্পর্শ করতে পারবে না।
লামিঃ- তুমি যখন ইমার কাছে যাও, তার সাথে মজা করো, তাকে ধরো কৈ আমি তো তোমার মতো জেলাস ফিল করি না। হ্যা আমারো খারাপ লাগে কিন্তু আমি তো পাগলী করি না।
রাজু:- হ্যা আমি দুষ্টুমি করি কিন্তু আমি তো তাকে ভালোবাসি না। তাকে আপন করতে চাই না।
আমি এতো কিছু বুঝি না, তোমাকে কেউ ছোঁবে না। লামিঃ- দেখো ও আমার মামাতো ভাই।আর নিজেকে একটু সহজ করো। এভাবে হলে তুমিই কষ্ট পাবে।
রাজু:- হাঁটু গেড়ে রাস্তায় বসে পড়ল আমি সহজ হতে পারছি না। তুমি জানো যখন তোমার হাত ধরছে আমার কতটা কষ্ট হয়েছে। তুমি কি করে বুঝবে তোমার দিকে কেউ তাকালেও আমি মেনে নিতে পারছি না। মনে হচ্ছিল কি জানো হাজার বোল্ট বিদ্যুৎ এর সক আমার হৃদয়ে লেগেছে। কেন তুমি বুঝতে পারছো না আমার খুব কষ্ট হয়?
লামিয়া দুই হাতে রাজু চোখ মুছে দিয়ে রাজুর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো-
তুমি কি চাও আমাকে কষ্ট দিতে?
রাজু:- একটুখানি হাসি দিয়ে বললো -এটা কি বললা তোমার একটু হাসির বিনিময়ে আমি আমরা জীবনটা বিলিয়ে দিতে পারি।
লামিঃ- তাহলে চুপচাপ উঠে দাঁড়াও, তুমি কষ্ট পেলে তাতে আমি আরো বেশি কষ্ট পাই।
একটা কথাও বলবে না তুমি।উঠো বলছি কেউ দেখলে সমস্যা হবে। রাজু উঠে সাইকেল হাতে নিয়ে লামিয়ার সাথে হাঁটছে।
লামিয়া - একটা রিকশা পাইতাম।
রাজু:- সাইকেলে উঠো তোমাকে দিয়ে আসি।
লামিঃ- না, তুমি সেই সকাল থেকে খাওয়া, গোসল কিছু হয়নি। এখন বাড়িতে যাও, আমি দেখি রিকশা না পাইলে পায়ে হেঁটে যাবো।
রাজু:- তোমার এতো সুন্দর পায়ে হেঁটে যায় কষ্ট হবে তো। আমি তা মেনে নিতে পারবো না।
লামিয়া কোন উপায় না দেখে রাজুর সাইকেলে চড়ে গেল।দেড় কিলো গিয়েই একটা বাড়ি, লম্বা দরজা রাজু দরজায় নামিয়ে দিল। লামিয়া বলল-
বাড়িতে আসো ?
রাজু:- অন্য একদিন জামাই সেজে আসবো। বলেই দুই দিয়ে শিকলের মতো লামিয়া কোমরের উপরে জড়িয়ে ধরলো।
লামিঃ- দূর তুমি অসভ্যর মতো সবসময় শুধু কাছে আসতে চাও। ছাড়ো কেউ দেখলে সমস্যা হবে।
রাজু:- কি করবো বলো?তুমি কাছে থাকলে সভ্যতা ভুলে যাই। ইচ্ছা করছে চরম অসভ্য হতে।
লামিঃ- অসভ্য বলে কোটফাইল দিয়ে দুটো পিটান দিল। ছাড়ো বলছি?
রাজু:- ছাড়তে পারি একটা কিস করো
লামিঃ- রাস্তায় বসে করছি না?
রাজু:-অন্য ইমোশন কাজ করছে। তোমার ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করতে পারিনি।
লামিঃ- ঠিক আছে তোমার হাতে করবো ছাড়ো?
রাজু:- আমার ঠোঁটে করো বুঝতে হবে তো মিঠা না তিতা
লামিঃ- বদমাইশ! আমি কিন্তু চিৎকার দিবো,বাবা কিন্তু খুব বেশি রাগি ?
রাজু:- ঠিক আছে গালে দাও?
লামিঃ- দুই হাতে গাল ধরে কাপালে আস্তে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে হালকা একটা কিস করলো। রাজু বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে একটা দির্ঘ্য কিস দিয়ে দৌড় দিল।বায় সুন্দরী!
ঠিক আছে সাবধানে যাইবেন কিন্তু। বাসায় গিয়ে ফোন করবেন।
লামিয়ার বাবা মস্তফা কামাল বাড়ান্দাড় জানালা দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের প্রেমে লীলা দেখলো। রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। আসুক লেখাপড়ার নামে নষ্টামি করে বেড়েচ্ছে। তিনি ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি আগে ব্যংকে জব করতেন ঘুষের অপরাধে চাকরি চলে গেছে। কিন্তু কাউকে তা বলেনি।
লামিয়া ঘরে আসতেই ঠাস করে একটা চড় দিয়ে বলল- ছেলেটি কে?
লামিঃ- আমি তাকে ভালোবাসি বাবা
বাবা:- ছিঃ ছিঃ এটা আবার ভালোবাসা?
একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়া ভালোবাসা? লেখাপড়ার নামে নষ্টামি করে বেড়াও? লামিয়ার মা দৌড়ে এসে লামিয়া কে জড়িয়ে ধরে বলল- কি হয়েছে? আমার মেয়ে কি করেছে?
মস্তফা কাঃ- তোর মেয়ে লেখাপড়া ছেড়ে প্রেম করে বেড়ায়। সারা এলাকায় আমার মান-সম্মন কিছু আছে?
স্ত্রী:- চোরের আবার মান সম্মান?
মস্তফা:- কি এতো বড় সাহস আমাকে চোর বললি? তোর জন্য তো মাইয়া খারাপ হইছে? তোর বংশের ধারা পাইছে
স্ত্রী:- তোমার মাইয়া রে আমি বলছি খারাপ হইতে
মস্তফা:- মুখে মুখে তর্ক করো এতো সাহস তোর বলেই মারতে শুরু করলো। লামিয়া ছাড়াতে পারলো না। অনেক মেরে রাস্তায় দোকানে চলে গেল।
হার্টবিট (পর্ব ৩)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
459
Views
8
Likes
2
Comments
5.0
Rating