দিনের আলো ধীরে ধীরে ঘরটাকে ভরিয়ে তুললো। কিন্তু অর্পার ভেতরে অন্ধকারই থেকে গেলো। সারারাত ভোর পর্যন্ত জেগে থেকেও সে কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না। শুধু সেই শব্দগুলো কানে বাজতে থাকলো—
“আমাকে বাধ্য করা হয়েছিলো…”
অর্পা বারবার ভাবতে লাগলো, কে হতে পারে সেই অদৃশ্য মানুষ? আরিয়ান কেন তাকে সত্যটা বলেনি?
ডায়েরির পাতায় লিখলো সে—
“হয়তো আমি কিছুই জানতাম না, যদি এই চিঠিটা হাতে না পেতাম। কিন্তু এখন প্রতিটি শব্দ আমার কাছে ধাঁধার মতো। যদি তোমাকে সত্যিই কেউ বাধ্য করে থাকে, তবে তুমি কোথায় হারালে, আরিয়ান?”
বাইরে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামছে। রাস্তার মোড়ে একটানা রিকশার ঘন্টা বাজছে। অর্পা জানালার পাশে বসেই মানুষের আসা–যাওয়া দেখতে লাগলো। হঠাৎ মনে হলো, ভিড়ের মাঝে আরিয়ানের মতো কাউকে দেখলো! বুক কেঁপে উঠলো, চোখের পলক ফেলতে পারলো না। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই ভিড়ে মিশে গেলো সেই ছায়া।
এক অজানা ভয়ের সঙ্গে একটা আশাও জেগে উঠলো অর্পার মনে। হয়তো আরিয়ান এখনো কাছেই আছে, হয়তো সে কখনো একেবারে চলে যায়নি।
চিঠিটার শেষ ভাঁজ খুলে দেখলো এবার। তাতে লেখা ছিলো—
“যদি কোনোদিন আমার খোঁজ পেতে চাও, তবে আমাদের পুরোনো জায়গায় একবার যাবে। হয়তো আমাকে পাবে, হয়তো শুধু আমার স্মৃতির ছায়া। তবুও আমি জানি, অপেক্ষার জানালায় দাঁড়িয়ে তুমি আমাকে মনে করবে।”চিঠি পড়ে হাত কাঁপতে লাগলো অর্পার। পুরোনো জায়গা? কোন জায়গার কথা বলেছে আরিয়ান? কলেজের ছাদ? নাকি সেই রেললাইন সংলগ্ন মাঠ যেখানে তারা প্রথমবার হাত ধরেছিলো?
মনে হলো চারপাশের সব শব্দ থেমে গেছে। কেবল বুকের ভেতরের ধকধক শব্দ শোনা যাচ্ছে।
অর্পা নিজের মনে ফিসফিস করে বললো—
“যদি তুমি সত্যিই ফিরে আসতে, তবে আমায় এমন ধাঁধার ভেতর রেখে যেতে না, আরিয়ান…”
তবুও তার ভেতরে একটা টান জেগে উঠলো। হয়তো এই রহস্যের উত্তর সেই পুরোনো জায়গাতেই লুকানো। হয়তো সেখানে গিয়ে সে সত্যি আরিয়ানকে খুঁজে পাবে।
জানালার ওপাশে তখন সন্ধ্যা নামছে। আকাশে অর্ধেক চাঁদ উঠেছে। অর্পা সিদ্ধান্ত নিলো—আগামীকাল সে যাবে সেই পুরোনো জায়গায়, যেখানে হয়তো অপেক্ষা করছে সত্য… অথবা আরেকটা বিদায়।
👉 চলবে…
অপেক্ষার জানালা
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
57
Views
1
Likes
0
Comments
4.3
Rating