রাত প্রায় বারোটা বাজে। নিস্তব্ধ শহরের মাঝে হঠাৎ করে দূরে একটা পুরোনো বাসের হর্ন বাজলো, তারপর আবার চারদিক নিঃশব্দ। এই নিঃশব্দ রাতগুলোতেই অর্পার বুকটা সবচেয়ে ভারী হয়ে ওঠে। জানালার পাশে বসে সে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে, কিন্তু চোখ আসলে আকাশ দেখে না—দেখে স্মৃতির ভেতর লুকানো একটা মুখ, আরিয়ানের মুখ।
আজ তার হাতে আছে একটা পুরোনো খাম। ধুলো মুছতে মুছতে হঠাৎ বুকটা কেঁপে উঠলো। এই খামটা বহুদিন ধরে আলমারির এক কোণে ছিলো। স্পর্শ করলেই যেন অতীত ফিরে আসে। কাঁপা হাতে খামটা ছিঁড়ে ভেতরে থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করলো সে। চিঠির উপরে পরিচিত হাতের লেখা—“অর্পা”।
চিঠি খুলতেই চোখে ভেসে উঠলো লাইনগুলো—
“অর্পা,
যদি কখনো এই চিঠি পড়ো, তখন হয়তো আমি তোমার কাছে থাকবো না। হয়তো তোমার অভিমান আমাকে আঘাত করবে, হয়তো তোমার চোখে আমি স্বার্থপর হবো, কিন্তু সত্যি বলছি—তুমি ছিলে আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্প।”
শব্দগুলো যেন ছুরির মতো বিঁধতে লাগলো অর্পার মনে। কত রাত কাটিয়েছে সে শুধু এই ভাবনায় যে, হঠাৎ করে কেনো অদৃশ্য হয়ে গেলো আরিয়ান? কারও কিছু না বলে, কোনো বিদায় না দিয়ে। আজ এত বছর পর সেই প্রশ্নটা আবারো সামনে দাঁড়ালো।
জানালার বাইরে বাতাসে শুকনো পাতার খসখস শব্দ উঠছে। অর্পার চোখে জল জমে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে অক্ষরগুলো। মনে হলো, যেন আরিয়ান ঠিক এই জানালার ওপাশেই দাঁড়িয়ে আছে, নরম কণ্ঠে বলছে—
“অর্পা, আমি আছি, তোমাকে ভুলিনি।”
চিঠির অর্ধেক পড়েই অর্পা থেমে গেলো। বুকের ভেতর অদ্ভুত একটা ভয় কাজ করছে। কেনো আরিয়ান লিখেছিলো—“আমি তোমার কাছে থাকবো না”? এটা কি কেবল দূরত্বের কথা, নাকি কোনো গভীর সত্য লুকানো আছে এর পেছনে?
অর্পা তার ডায়েরি টেনে নিলো। প্রথম পাতায় লিখলো—
“আজ আবার আরিয়ানকে পেলাম, তার শব্দের ভাঁজে। কিন্তু সেই ভাঁজ খুলতেই কেনো বুকটা এত ভারী লাগে?”
রাত আরও গভীর হলো। দূরের রাস্তায় আবার একটা রিকশার ঘন্টা বাজলো, তারপর মিলিয়ে গেলো। জানালার সামনে বসে অর্পা ফিসফিস করে বললো—
“আরিয়ান, তুমি কি কোনোদিন ফিরে আসবে? নাকি এটাই ছিলো তোমার শেষ বিদায়?”
চলবে…
অপেক্ষার জানালা
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
60
Views
4
Likes
1
Comments
3.2
Rating