রাত প্রায় সাড়ে দশটা।
বৃষ্টি থেমে গেছে, কিন্তু বাতাসে কেমন এক ভেজা নীরবতা। আমি ঘরের অন্ধকারে বসে আছি—হাতে নদীর নাম্বার, কিন্তু কল করার সাহস নেই।
হঠাৎ ফোনে একটি মেসেজ ভেসে উঠল—
"পলাশ, চিঠিটা খুলে দেখো।"
আমি অবাক হলাম—কোন চিঠি?
তারপর মনে পড়ল, আমার ব্যাগে অনেকদিন আগে নদী যে লাল খামের ভেতরে কিছু দিয়েছিল, সেটি আমি কখনো খুলি নাই।
কাঁপা হাতে খাম ছিঁড়লাম।
ভেতরে নীল কাগজে নদীর হাতের লেখা—কালি কিছুটা মুছে গেছে, তবুও শব্দগুলো যেন বুক ভেদ করছে।
"পলাশ, যদি কোনোদিন এই চিঠি পড়ো, বুঝে নিও আমি তোমাকে ছেড়ে যাইনি… আমি কেবল হারিয়ে গেছি। তোমার হাত ছেড়ে দেওয়া আমার ইচ্ছা ছিল না। আমার বাবা ক্যান্সারের শেষ পর্যায়ে… তার ইচ্ছাই আমার বিয়ে। আমি ভাঙতে পারিনি। কিন্তু জানো, এই বিয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকলেও আমার হৃদয় শুধু তোমার জন্যই ধুকপুক করবে। তুমি যদি আমাকে খুঁজতে আসো… আমি একবার হলেও তোমার দিকে তাকাব। আর যদি না আসো… আমি চিরদিন ভাবব, তুমি আমার এই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি দিতে চাওনি।"
আমার বুকের ভেতর হাহাকার উঠল।
ঘড়িতে তখন ১১:১০।
নদীর বিয়ের সময় রাত ১১:৩০।
আমি ছুটলাম—ভেজা রাস্তায়, অন্ধকার গলিতে, শ্বাস কাঁপতে কাঁপতে। আমার মনে হচ্ছিল, আমি সময়ের সাথে দৌড়াচ্ছি, আর প্রতিটা সেকেন্ড আমার ভালোবাসাকে আরও দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
বিয়ের বাড়ির সামনে পৌঁছালাম, কিন্তু তখনই ভেতর থেকে শোরগোল—হলঘরে সিঁদুর পরানো শেষ মুহূর্ত চলছে। আমি ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকলাম, চোখে শুধু নদী।
সে বসে আছে লাল শাড়িতে, চোখ নামানো, ঠোঁটে কোনো হাসি নেই।
আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম, আর তখনই সে ধীরে ধীরে মাথা তুলল।
আমাদের চোখ মিলল—মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
তার ঠোঁট নড়ল নিঃশব্দে—
"তুমি দেরি করে ফেলেছো।"
আমার বুকের ভেতর ভেঙে পড়ল পুরো পৃথিবী।
আমি স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, চারপাশের আওয়াজ মিলিয়ে গেল, আর মনে শুধু একটাই কথা বাজছিল—
আমি তোমাকে হারাইনি, নদী… আমি শুধু সময়কে জিততে পারিনি।
— চলবে
ভুলে যাওয়া ভালোবাসা
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
61
Views
0
Likes
0
Comments
1.0
Rating