দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেল। নিরুরা নতুন বাসায় উঠেছে। নিরুও একটু সুস্থ পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।এই অসুস্থ শরীর নিয়েই নিরু কাজে জয়েন করেছে।অসুস্থ বলে বসে থাকলে তো তার চলবে না জমানো টাকাও বেশী নেই। তাই কাজে জয়েন করেছে।ওদের দিনকাল বেশ ভালোই যাচ্ছে রেনু নক্ষত্রের দেখাশুনা করে আর নিরু মন দিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং করে।ও চায় এভাবে পরিশ্রম করতে করতে ভবিষ্যৎ ওদের নিজের একটা দোকান হোক।
এভাবেই আরো প্রায় ৫বছর পার হয়ে গেল।
বি.দ্র."এটা এই গল্পের শেষ পর্ব হতে চলেছে। এখানে আমি পাঠকদেরকে কল্পনায় নিয়ে যেতে চাই আর এটা যেহেতু শেষ পর্ব তাই আমি ভেবেছি এতদিন যেভাবে গল্প টা সাজিয়ে ছিলাম শেষ করতে চাই নিজের বেস্ট টা দিয়ে"
প্রথমের আমরা কল্পনা করি এই গল্প যে সময়টা চলছিলো তার পাঁচ বছর পর।নিরুকে কল্পনা করলে আমরা দেখতে পাই নিরু মন দিয়ে একটা বিয়ের ড্রেস আঁকছে। ওদিকে নক্ষত্রও বড় হয়ে গিয়েছে ওর বয়স হচ্ছে পাঁচ বছর।ও ওখানকার একটা সরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেনিতে পড়ে।নক্ষত্রের স্কুল ছুটি হয়েছে এদিকে আবার বৃষ্টিও হচ্ছে সবাই নিজেদের ছাতা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে।আর নক্ষত্র বরাবরেও মতোই আজকেও ছাতা আনেনি ও মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে।মা এদিকে মহা ব্যাস্ত ওরা ভুলে একটা কাস্টমারের ড্রেস অর্ডারের চেয়ে বড় বানিয়ে দিয়েছে ওদিকে আবার কাস্টমারের আজকেই বিয়ে।এতো ব্যাস্ততার পরেও ও নক্ষত্রের স্কুলে পৌঁছে যায়। নক্ষত্র কে গাড়িতে বসিয়ে ছাতা আনেনি কেন এজন্য বকাবকি শুরু করে।আর নক্ষত্র চুপচাপ শুনছিলো।তারপর তারা ড্রেসটা দেওয়ার জন্য যায়।তারপর বাড়িতে চলে আসে।
তারপর দুজন গোসল করে চলে যায় খাবার খেতে।
এতক্ষণে আপনারা ভাবতিছেন তাহলে রেনু কোথায় গেল তাইনা?
বলছি ওর কথা। ২বছর আগে ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।ওর একটা ছোট ফুটফুটে বাচ্চা হয়েছে বাচ্চাটার বয়স ৬মাস হবে।ওরা বেশ সুখেই আছে।
নক্ষত্র ওর কাজকর্ম বাদে ওর মামির কাছেই বেশী সময় কাটায়। নক্ষত্রকে রেখে নিরু আবার কাজে চলে যায়। ওর স্বপ্নটা পূরন হয়েছে নিরুর বেস্ট ফ্রেন্ড আর নিরু মিলে একটা দোকান দিয়েছে। এই পাঁচ বছরে নিরুর একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটা হচ্ছে গ্রাস্টিক ক্যান্সার তাও আবার লাস্ট পর্যায়। ও এটা কাউকে বুঝতে দেয় না।প্রথমে যে ড্রেসটা আকছে বলছিলাম ওটা নক্ষত্রের জন্য। ওদের দোকানে এক কাস্টমার আসে ড্রেস দেখতে তারা ঘুরে ঘুরে সব ড্রেস দেখছিলো কিন্তু কোন ড্রেসই পচ্ছন্দ হচ্ছিলো না। হঠাৎই তাদের চোখ যায় টেবিলের উপরে ঐ খাতার দিকে যেটাতে নিরু ড্রেসটা একেছিলো।তারা এটা হাতে নিতেই নক্ষত্র দৌড়ে গিয়ে তাদের কাছে মাফ চেয়ে বলে এই ড্রেসটা আরেকজন কিনে ফেলেছে।তারপর তারা মেনে নেয়।নিরুর বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে নিরু হয়তো ওরে না বলে আরেক জায়গায় ড্রেসটা বিক্রি করে টাকা নিবে।তারা চলে যাওয়ার পরে বিষয়টা নিয়ে নিরুর সাথে চিল্লাচিল্লি করে।নিরু কিছুই বলে না।নিরুর হঠাৎ পেটে ব্যাথা শুরু হয় আর ও বাড়িতে যাওয়ার পথে জ্ঞান হারায়। সেটা আবার নিরুর ভাইকে এক লোক ফোন করে জানায়।ভাই দৌড়ে হাসপাতালে যায় তারপর ডাক্তার তাকে সব বলে দেয়।নিজের বোনের এই অবস্থা জেনে কান্নায় ভেঙে পরে।এখন চাইলেও কিছু করতে পারবে না।নিরু না বলার জন্য মাফ চায় আর নক্ষত্রকে কিছু জানাতে না করে।তারপর বাসায় চলে যায়।বাসায় গিয়ে নক্ষত্রের সাথে আরো বেশী করে সময় কাটাতে শুরু করে।
নক্ষত্রকে নিয়ে ঘুরতে যাবে বলে প্ল্যান করে। রাত জেগে নক্ষত্রের সকল পচ্ছন্দের খাবার রান্না করে।কিন্তু সকালে ওদের সব প্ল্যান বৃষ্টি শুরু হওয়ার কারনে ভেঙে যায়।বাচ্চা মেয়েটা মন খারাপ করে বসে থাকে।বাচ্চা মেয়েটার মন ভালো করার জন্য নক্ষত্রের পচ্ছন্দের কার্টুন ডরেমন দেখতে বসে।নক্ষত্র বলে টিভিটা ছোট হয়ে গিয়েছে আর পুরোনোও।তারপর নিরু তাদের জন্য বড় আর নতুন টিভি অর্ডার করে।মায়ের এতো যত্ন দেখে নক্ষত্র অনেক খুশি হয়।আসলে মেয়েটা জন্মের পর থেকেই বাবার আদর পায়নি আর মাকেও ঠিকমতো কাছে পায়নি।বাড়িতে থাকলেও ওদের দিনটা ভালোই কাটে।ঘুমানোর আগে নক্ষত্র মাকে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি আমাকে রেখে কোথাও যাবে না। মা আমি তোমার সাথেই থাকতে চাই সব সময়।
নিরু আর বেশীদিন থাকতে পারবে না বলে কান্নায় ভেঙে পরে।নক্ষত্র ঘুমাচ্ছিলো তখন বাথরুম থেকে বমির শব্দ পাচ্ছিলো মাকে জিজ্ঞেস করলে মা বলে বেশী খেয়ে ফেলেছে।আজকে মামার বাড়িতে যখন খাবার খেতে যায় তখন বড়রা কথা বলছিলো এই থেকে ও বুঝে যায় ওর মা আর বেশীদিন বাঁচবে না।এটা জেনে বাচ্চা মেয়েটা কান্নায় ভেঙে পরে।ঠিকমতো স্কুলে যায় না।খাবার খায় না মাকে কিছু বুঝতেও দেয় না।নিরু দোকানে গিয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে মেয়ের জন্য ড্রেসটা বানাতে থাকে। এগুলা দেখে বেস্ট ফ্রেন্ড আবার রাগারাগি শুরু করে তারপর নিরু সব বলে দেয়।ফ্রেন্ড নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না কান্না করে দেয়।তারপর দুজন মিলে ড্রেসটা বানাতে শুরু করে।কিছুদিনের মধ্যে নিরুর অবস্থা আরো খারাপ হয় এজন্য ওকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।নক্ষত্রও হাসপাতালেই থাকে যতটা পারে মাকে দেখে রাখে।নিজের কাজ গুলা নিজেই করতে শিখে।ছাতা নিয়ে স্কুলে যায়।
কয়েকদিন পরে নিরুর জন্মদিন ছিলো। নক্ষত্র মায়ের জন্য একটা চিঠি লিখে রেডিওতে পাঠায়।
দেখতে দেখতে নিরুর জন্মদিন চলে আসে হাসপাতালেই নিরুর জন্মদিন পালন করা হয়।সবাই মিলে অনেক মজা করে।রাতে মা আর মেয়ে শুয়ে আছে আর রেডিও শুনার জন্য অপেক্ষা করছে।বাচ্চা মেয়েটা মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।নিরু রেডিও শুনছিলো রেডিওতে এমন কিছু কথা বলছিলো যেটা শুনে নিরু কান্না করে ফেলে।
সেখানে নক্ষত্র মাকে নিয়ে বলছিলো তার সাথে যত স্মৃতি তার জীবনে আছে। মাকে অনেকবেশি ভালো বাসে সারাজীবন মায়ের সাথে থাকতে চায়।কিন্তু নক্ষত্র জানে মায়ের হাতে বেশী সময় নেই।ও সব সময় ভালো বাচ্চা হয়ে যাবে নিজের কাজ নিজে করবে এগুলা।শেষ বলছিলো তোমার আদরের নক্ষত্র এটা শুনে নিরু আরো বেশী ইমোশনাল হয়ে পরে।তারপর ঘুমিয়ে পরে।
সকাল হয়,,
নক্ষত্র উঠে মাকে ডাকে কিন্তু মা আর উঠে না। ও বুঝতে পারে মা আর উঠবে না।তারপর নিজেকে বুঝাতে থাকে।মামি আসলে মামিকে ধরে কান্না করে দেয়।এভাবেই এই গল্প টা শেষ হয়।
এখন আমরা কল্পনা করি নক্ষত্র বড় হয়েছে আজ নক্ষত্রের পচ্ছন্দের মানুষের সাথে নক্ষত্রের বিয়ে।মায়ের বানানো ড্রেসটাতে ওরে একটু বেশীই সুন্দর লাগছে।ড্রেসটা পরে মায়ের কথা মনে করে ইমোশনাল হয়ে গিয়েছে।
এভাবেই আমার লেখা ধারাবাহিক গল্প নক্ষত্র শেষ হয়।মেয়েটার জীবনেও ছোট থেকেই কষ্টের হলেও সে তার জীবনের সঠিক মানুষটা পেয়েছে এতেই নক্ষত্র অনেক খুশি।
নক্ষত্র
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
53
Views
2
Likes
1
Comments
5.0
Rating