মন, ও মন রে

মিথিলা এবং আরিফ — দুজনেই ছিল শহরের মানুষের মতো, তবুও হৃদয়ের গহীনে এক অন্যরকম একাকীত্ব নিয়ে বেড়ে উঠেছিল। মিথিলা ছিল একজন তরুণী লেখিকা, যার লেখায় সবসময় মিশে থাকত এক ধরনের নরম আবেগ আর ভাবের গভীরতা। আরিফ ছিল একজন সংগীত শিল্পী, যার সুরগুলো মনের ভেতর ছড়িয়ে পড়ত স্নিগ্ধতা।

একদিন একটি সাহিত্য-সঙ্গীত অনুষ্ঠানে তাদের পরিচয় হয়। মিথিলার কথাগুলো আরিফের গীতির মতো ছিল, আর আরিফের সুর মিথিলার ভাবনারই বহিঃপ্রকাশ। তাদের মনের মেলবন্ধন হয় এক অদ্ভুত রূপে — যেন দুটো মন একসাথে কথা বলতে শুরু করল।

তবে, প্রকৃত জীবনে তারা কথা বলত খুব কম। দুজনেরই ছিল নিজস্ব কিছু ভয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব। মিথিলা ভয় পেত তাঁর অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে, আর আরিফ নিজেকে আটকে রাখত পুরোনো ব্যথার স্মৃতিতে।

তাদের হৃদয়ে শুরু হল এক নিঃশব্দ প্রেমের খেলা— মন থেকে মন পর্যন্ত একটা যোগাযোগ, কথা ছাড়া, হাসি ছাড়া, শুধুই অনুভূতির বিনিময়।

একদিন বর্ষার রাতে, মিথিলা আরিফের কাছে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে লেখা ছিল—
"মন ও মন রে,
তুমি যে আমার অন্তরের সুর,
তুমি ছাড়া আমার গান অসম্পূর্ণ।
তোমার সুরে আমি বাঁচি,
আমার কথা তুমি শোনো কি?
একটু কাছে এসো..."

আরিফ সেই চিঠি পড়ে বুকের এক কোণ থেকে সব বাধা নামিয়ে দেয়। সে মিথিলার কাছে গিয়ে বলে,
"মন ও মন রে, আমি তো শুধু তোমার সুর, তোমার কথা শুনতে চাই,
এখন থেকে আমার গান তোমার জন্য।"

তারা দুজন মিলেছিল, তাদের মন মিলেছিল, আর শুরু হয়েছিল জীবনের এক নতুন গান— যেখানে শব্দ ছিল কম, কিন্তু অনুভূতি ছিল অসীম।

তাদের ভালোবাসা হয়েছিল সেই নিঃশব্দ ভাষা, যেখানে মনই ছিল ভাষা, আর হৃদয় ছিল গন্তব্য।