ভাই-বোনের ভালোবাসা

গ্রামের ছোট্ট এক বাড়িতে বড় ভাই আর ছোট বোনের সম্পর্ক ছিল অন্যরকম। রোহান আর মিমি—দুজনেই খুব ভালো বন্ধু, কিন্তু তাদের ভালোবাসা ছিল এক ধরনের আত্মিক বন্ধন, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

রোহান ছিল পড়াশোনায় খুব ভাল, অন্যদের থেকে একটু বেশি পারফেক্ট হওয়ার চেষ্টা করত। মিমি ছিল ছোট্ট ছেলেমেয়েদের মতো চঞ্চল, খেলাধুলায় মগ্ন, কিন্তু সে জানত, তার বড় ভাই সবসময় তার জন্য আছে।

ছোটবেলায় যখন তাদের মা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, তখন রোহান সারারাত জেগে মাকে দেখাশোনা করত, আর মিমি ছোট্ট হাতে হাত মুছে দিত। মিমির ছোট্ট চোখে বড় ভাইয়ের জন্য ছিল অবিশ্বাস্য ভালোবাসা আর নিরাপত্তার অনুভূতি।

একদিন, গ্রামে খেলা চলাকালীন মিমি হারিয়ে যায়। পুরো গ্রাম খুঁজে বেড়ায় তাকে, কিন্তু কোথাও সে পাওয়া গেল না। রোহান চোখে চোখ রেখে জানাল, সে কাউকে দেবে না তার বোনকে।

রাতভর খুঁজে পেয়ে যায় মিমিকে গ্রামের বাচ্চাদের গোপন লুকানো ছুপড়ির আড়ালে। মিমি খুশিতে লাফালাফি করছিল, আর রোহান তাকে দেখে বেজায় আনন্দ পেয়েছিল। সেই রাতে রোহান তার বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব, মিমি।”

বড় হওয়ার পরও তাদের ভালোবাসা কমেনি। রোহান শহরে পড়তে গিয়েও সবসময় মিমির খবর রাখত। মিমি যখন স্কুলে পড়ে, রোহান তার পড়ার বইগুলো নিয়ে এসে সাহায্য করত, কখনো কষ্ট হলে তাকে সান্ত্বনা দিত।

একবার মিমির পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়ার পর সে খুব হতাশ ছিল। রোহান তাকে বলল, “ফলাফল শুধু একটা সংখ্যা, তুমি আমার ছোট্ট বোন, তোমার ভালোবাসা আর চেষ্টা আমার কাছে সবথেকে মূল্যবান।”

সেই কথাগুলো মিমির হৃদয় ছুঁয়ে গেল। সে বুঝল, জীবনে আসল সমর্থন আর ভালোবাসা কোথায় পাওয়া যায়।

বড় ভাই আর ছোট বোনের সেই সম্পর্ক ছিল নিঃস্বার্থ, নির্দোষ, যার মধ্যে ছিল আবেগের গভীরতা আর জীবনের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সাহস।

একদিন মিমি কলেজে ভর্তি হল, আর রোহান তখন একটা ভালো চাকরি করত। দুজনের জীবন আলাদা হলেও, তারা কখনোই একে অপরকে ভুলতে পারেনি।

মিমির বিয়ের দিন, রোহান তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “তুমি কোথাও যেও না, যেদিনই আমাকে দরকার হবে, জানিও আমি আছি।”

মিমি চোখে জল নিয়ে বলল, “ভাই, তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমি কিছুই না।”

এইভাবেই জীবনটা এগিয়ে চলল। সময়ের সাথে তারা বড় হলো, বড় ভাই ছোট বোনের জন্য সবসময় এক অনন্য আশ্রয়, আর ছোট বোন বড় ভাইয়ের জীবনের অমূল্য সম্পদ।

ভাই-বোনের ভালোবাসা—একটি গল্প যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধু হৃদয় অনুভব করতে পারে।