সিউলের এক ছোট শহরের শেষ প্রান্তে, একটা পুরনো ফ্ল্যাটবিল্ড দাঁড়িয়ে ছিল। সবাই সেখানে বাস করতে ভয় পেত। কারণ, রাতে ওই বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি কেউ যেতে সাহস পেত না। বলতেন, ওই ফ্ল্যাটবিল্ডের চার তলা থেকে কোনো আলো জ্বলত না; যেন পুরো ভবনটা মৃতপ্রায়।
হিউনসু, এক তরুণ সাংবাদিক, শহরের এই রহস্য উন্মোচনের জন্য সেই ফ্ল্যাটবিল্ডে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সে বিশ্বাস করত—বড় বড় কাহিনীর ভিতরেই থাকে কোনো না কোনো সত্য।
ফ্ল্যাটবিল্ডে ঢুকতে ঢুকতেই সে অনুভব করল, এখানে অদ্ভুত একটা নীরবতা, যেটা সাধারণ নীরবতার থেকে আলাদা। এ যেন কোনো জীবন্ত ছায়া তার গায়ে হাত বুলাচ্ছে।
বিল্ডিংয়ের লিফট ভাঙা, তাই সে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগল। চার তলা, পাঁচ তলা, এবং পৌঁছল ষষ্ঠ তলায়, যেখানে বলে একবার কিছু ঘটেছিল, কিন্তু কেউ কখনো সঠিক তথ্য জানতো না।
হিউনসু কাঁপতে কাঁপতে দরজা খুলল। ভিতর থেকে একটা গলির মতো ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে এল, যেন অদৃশ্য কেউ তার শরীর ছুঁয়ে দিল। হিউনসু তার ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে ভিতরে ঢুকল।
অন্ধকার ঘরগুলোতে প্রতিটি দেয়ালে অদ্ভুত আঁকার খোঁজ পেল সে। কিছু ছবি, যেন মানুষের চেহারা নয়, বরং বিকৃত ছায়া। হিউনসুর হৃদয় বেড়ে উঠল ভয়ে, কিন্তু কৌতূহল তাকে আটকে দিল।
তখন হঠাৎ সে শুনল দূরের এক ঘর থেকে কাঁদার আওয়াজ। কোনো ছোট মেয়ের কাঁদার শব্দ, যার বুক ভেঙে পড়ছে। সে কাছে গেল।
ঘরটার দরজা ছিল অর্ধেক খোলা। হিউনসু ভিতরে ঢুকতেই দেখল একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে মেঝেতে বসে কান্নাকাটি করছে। তার চোখগুলো এত শূন্য, যেন তার আত্মা বিদীর্ণ হয়ে গেছে।
“তুমি কে?” হিউনসু প্রশ্ন করল।
মেয়েটি শুধুই কাঁদল, আর হঠাৎ ধীরে ধীরে উঠে এসে বলল, “আমাকে ছাড়ো... আমাকে ছাড়ো না... আমি এখান থেকে যেতে চাই না...”
হিউনসুর কপালে ঘাম পড়ল। সে বুঝতে পারল, মেয়েটি মানুষের নয়, বরং কোনো শয়তানের ছায়া।
সে পালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু ফ্ল্যাটবিল্ডের পথ যেন বদলে যাচ্ছে। যেখান থেকে সে এসেছিল, সেখানে আর ফিরতে পারল না। চারপাশ থেকে কাঁদার আওয়াজ, হাহাকার, আর অদ্ভুত গুঞ্জন ভেসে আসতে লাগল।
তার চারপাশে অদৃশ্য কাঁটা-মাছিরা ঘুরতে লাগল, আর মেয়েটির মুখ থেকে ভয়ঙ্কর হাসি ছড়িয়ে পড়ল।
সেই রাত থেকে হিউনসুর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। কেউ জানে না, সে ফ্ল্যাটবিল্ড থেকে বের হতে পেরেছে কিনা।
কিন্তু সেখান থেকে দূরে কেউ যদি তাকায়, ফ্ল্যাটবিল্ডের জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে একটা ছোট মেয়ের ছায়া দেখা যায়, যিনি কাঁদছে আর বলছে—“আমাকে ছাড়ো না... আমাকে ছাড়ো না...”
অন্ধকারের মাঝে
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
22
Views
4
Likes
0
Comments
0.0
Rating