লাহোর শহরের আকাশ আজ যেন একটু বেশি মেঘলা। সারা শহরজুড়ে একটা অজানা চাপা উত্তেজনা। বাতাসে ভেসে আসছে বর্ষার গন্ধ, কিন্তু সেই ঘ্রাণের মাঝে কোথাও যেন জমে আছে একটা অনিশ্চিত কুয়াশা। পাখি ফারহানা সকালে ঘুম থেকে উঠে জানালার পাশে দাঁড়িয়েই অনুভব করলো—আজ কিছু একটা হবে। ভেতরটা যেন বলছে, আজ একটা মোড় নেবে তার জীবন।
সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছিল, কিন্তু চোখে যেন ঘোর লেগে আছে। কাল রাতের আকাশ চৌধুরীর কথা এখনো কানে বাজছে—
“তুমি আমাকে অনেক কিছু শিখাচ্ছো।”
নিজের অজান্তেই পাখি হাসল। কিন্তু সেই হাসির আড়ালে লুকানো একরাশ দ্বিধা। আকাশ চৌধুরীর মতো মানুষ তার জীবনে যদি আসে—সে কি মানিয়ে নিতে পারবে? এই ছেলেটি যেন একদমই তার জগতের নয়, অথচ অদ্ভুতভাবে সেই জগতেই বারবার টানছে পাখিকে।
ফ্ল্যাটে থাকা মায়ের কোরআনের আয়াত লেখা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে সে আবার নিজের মনে বলল,
“আমি হারব না। কোনো ভালোবাসা যদি আসে, সেটা আমি দুর্বল হয়ে নয়, সম্মানের জায়গা থেকেই গ্রহণ করবো।”
---
আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট লেকচার সিরিজের শেষ দিন। পাখি জানতো, আকাশ আবার থাকবে। সেই ছেলেটা, যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তার ভেতরের শক্তিটাকে বারবার জাগিয়ে তোলে। পাখির দৃষ্টি আজ যেন আরও দৃঢ়। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, হাতে প্রিন্ট করা রিসার্চের শেষ পাতা, আর মন জুড়ে এক অনির্বচনীয় অনুভব।
সেদিনের সেমিনারের রেশ এখনো ক্যাম্পাসে তাজা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখন পাখিকে আলাদা চোখে দেখতে শুরু করেছে। অনেকে প্রশংসা করছে, কেউ কেউ কটাক্ষও করছে, কিন্তু পাখির ভেতরটায় এখন এসব গায়ে লাগে না। সে জানে সে কাদের হয়ে কথা বলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রিন রুমে বসে পাখি যখন স্লাইড রিভিউ করছিল, তখন দরজার কাঁচে আবার সেই ছায়া।
আকাশ চৌধুরী।
আজ অন্যরকম লাগছে তাকে—নীল রঙের শার্ট, হাতা গুটানো, চোখে একধরনের স্থিরতা। সে দরজায় দাঁড়িয়ে পাখিকে একটু দেখেই বলল,
“আজকের আলোচনায় কি আমাকেও প্রশ্ন করার সুযোগ থাকবে?”
পাখি একটু চমকে তাকাল। তারপর বলল,
“শর্ত একটাই—ব্যক্তিগত প্রশ্ন নয়।”
আকাশ হাসলো।
“তোমার উত্তরগুলো এত ব্যক্তিগত, আমি চাই না ভুলে বসি।”
পাখি কিছু বললো না, শুধু তাকিয়ে থাকলো। সে জানতো, এই ছেলেটার মুখের হাসির আড়ালে কতটা শূন্যতা। একটা সময় ছিল, পাখি শুধু বইয়ে পড়ত—‘সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষরাই হাসে বেশি’। আজ চোখের সামনে সেই বাস্তবতা।
---
লেকচার শুরু হলো। পাখি আজ আলোচনা করছিলো—
“নারীর আত্মপরিচয় ও সামাজিক বৈষম্য”
তার কণ্ঠে ছিল আগুন, চিন্তায় ছিল গভীরতা।
আকাশ চুপচাপ বসে ছিল পিছনের সারিতে, কিন্তু চোখ সরছিল না পাখির মুখ থেকে। প্রতিটা বাক্য তার মনে বিদ্যুৎ খেলে দিচ্ছিল।
হঠাৎ প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সিনিয়র শিক্ষক বললেন,
“তোমার কথাগুলো প্রগতিশীল, কিন্তু সমাজে জায়গা করে নিতে হলে তো কখনো কখনো আপস করতেই হয়, তাই না?”
পাখি একটু থেমে বললো,
“আপস তখনই হয় যখন মানুষ নিজের স্বপ্নকে অন্যের হাত দিয়ে পরিচালনা করতে দেয়। আমি আপস করতে পারবো না। আমি চাই, একজন নারী নিজের মতো করে বাঁচুক, সিদ্ধান্ত নিক—ভয় বা দ্বিধার বাইরে দাঁড়িয়ে।”
পুরো হলে করতালি।
আকাশ একটু ঝুঁকে সামনে বসে, চোখে জ্বলজ্বলে এক অভিব্যক্তি।
তারপর সে হাত তোলে।
সবাই একটু চমকে যায়—শহরের সবচেয়ে প্রভাবশালী তরুণের প্রশ্ন।
“তুমি যদি এমন একটা মানুষকে ভালোবাসো, যে সমাজের কাঠামোতে বন্দী, যাকে ভালোবাসা মানেই নিজের অনেক কিছু ছাড়তে হবে—তবে তুমি কি করবে?”
সবাই নীরব।
পাখি এবার ধীরে ধীরে বলল,
“ভালোবাসা মানেই তো শুধু পাওয়া না, কখনো কখনো সেটা নিজেকে না হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। যদি সেই ভালোবাসা আমার আত্মপরিচয়ের জন্য হুমকি হয়, তবে আমি ভালোবাসার জন্য নিজেকে হারাবো না।”
আকাশ তাকিয়ে থাকে। কিছু বলে না।
---
লেকচার শেষে সবাই যখন বিদায় নিচ্ছে, আকাশ একা দাঁড়িয়ে থাকে করিডোরে। পাখি আসছিলো তার দিকেই, মুখে চেনা আত্মবিশ্বাস।
“আজকের প্রশ্নটা কি তোমার নিজের জন্য ছিল?”
আকাশ জবাব দিলো না। বরং বললো,
“তোমাকে নিয়ে ভাবলে ভয় পাই।”
“ভয়?”
“তুমি যদি একসময় বুঝো, আমি তোমার স্বাধীনতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছি—তাহলে তুমি কি আমাকে ছাড়তে পারবে?”
পাখি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর বললো,
“প্রশ্নটা ভুল। আমি কাউকে ছাড়ার জন্য ভালোবাসবো না। কিন্তু যদি তোমার হাত ধরে হাঁটতে গিয়ে নিজেকে হারাই, তাহলে সেটা ভালোবাসা না, দুর্বলতা। আর আমি দুর্বল হতে পারবো না।”
আকাশ মাথা নিচু করলো। তারপর চোখ তুলে ধীরে বললো,
“তুমি তো একরকম বিদ্রোহী তারা। মেঘের আড়াল থেকে আলো ফোটাও, অথচ ধরাও দাও না।”
পাখি একটু হেসে বললো,
“কারণ আমি জানি, নিজেকে আলো না বানাতে পারলে কারো অন্ধকার দূর করা যায় না।”
আকাশ ধীরে ধীরে হাত বাড়ালো।
“তাহলে, আমাকে কি একটু ধরা দেবে? সময়ের মতো, ধীরে?”
পাখি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। তারপর বললো,
“আমার স্বাধীনতা কখনো তোমার হাতের বাইরে যাবে না—এই বিশ্বাস যদি থাকে, তাহলে আমি হাঁটবো তোমার পাশে।”
আকাশের চোখে তখন সত্যিকারের শান্তি।
---
ছয় মাস পর
লাহোর শহরের এক নতুন সন্ধ্যায়, একটি ওয়ার্কশপে পাখি ফারহানা আজ নিজের প্রথম বই প্রকাশ করছে—
“মেঘে ঢাকা তারা: নারীর সাহসের গল্প”
প্রথম সারিতে বসে আছে আকাশ চৌধুরী, সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে, কোনো পরিচয়ের ব্যানার ছাড়াই।
পাখি মাইক্রোফোনে বলে,
“আজ আমি যাদের কথা বলছি, তারা হয়তো আমার মতোই একদিন নতুন শহরে এসেছিল, ভীত ছিল, একা ছিল। আমি শুধু বলছি—চুপ থেকো না। কথা বলো। স্বপ্ন দেখো। আর ভালোবাসো, নিজেকে।”
বুকস্টলে দাঁড়িয়ে আকাশ হাতে এক কপি বই নিয়ে পাখিকে বলল,
“তুমি নিজে একটা গল্প, পাখি। আমি সৌভাগ্যবান যে তাতে জায়গা পেয়েছি।”
পাখি হেসে বলল,
“গল্পটা তো এখনো শেষ হয়নি। শুরুটাই হলো মাত্র।”
আকাশ বলল,
“তবে চল, আমরা দুজনে লিখি একসাথে, বাকিটা।”
মেঘে ঢাকা তারা (পর্ব ৪ — শেষ পর্ব)
লেখক: আরজু আফরান
শব্দসংখ্যা: ২১৫৭
পাখি যখন বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের শেষে করিডোর ধরে হাঁটছিল, চারপাশের কোলাহল তাকে স্পর্শ করছিল না। বুকের ভেতরে কেমন এক নিঃশব্দ আবেগ গুমরে উঠছিল। তার চোখে আজকের দিনটা ছিলো এক পূর্ণতার ছবি—যেখানে তার কণ্ঠ, কলম আর কাঁধের ওপরে সজাগ সাহস একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।
আর তখনই আকাশ এসে পাশে দাঁড়ালো।
তার মুখে ছিল সেই চিরচেনা নীরব হাসি। চোখে আজ একটু বেশি স্থিরতা। পাখি বুঝতে পারলো—এই মানুষটা আর আগের মতো নেই। সে বদলেছে, শিখেছে, একধরনের পরিণতি এসেছে তার ভেতরে।
আকাশ বলল,
“তুমি বলেছিলে—ভালোবাসা মানে নিজেকে না হারানো। আমি ভাবতাম, ভালোবাসা মানেই তো একসাথে থাকা। আজ বুঝলাম, আসলে একসাথে থাকা মানে—একটা স্বপ্নকে একসাথে আগলে রাখা।”
পাখি এক চিলতে হাসি দিলো, তারপর বলল,
“ভালোবাসা তখনই টেকে, যখন তা স্বাধীনতার দেয়ালের ভেতরে আশ্রয় খুঁজে নেয়, শৃঙ্খলের মধ্যে নয়।”
আকাশের চোখ ভিজে উঠলো। খুব শান্ত গলায় সে বললো,
“তুমি পাশে থাকলে আমি আর নিজের ছায়াকেও ভয় পাবো না।”
পাখি একটু চুপ করে থেকে বলল,
“আমি তোমার পাশে থাকতে চাই, কিন্তু শর্ত একটাই—আমাদের ভালোবাসা যেন আমাদের আলাদা আলাদা আলো নিভিয়ে না দেয়।”
আকাশ মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানালো।
সেই মুহূর্তটা যেন লাহোর শহরের সবচেয়ে নিঃশব্দ, অথচ সবচাইতে জ্বলজ্বলে মুহূর্ত হয়ে রইলো।
---
তিন মাস পর
লাহোর শহরে বসন্ত এসেছে। রাস্তার পাশে গুলমোহর গাছে লাল ফুল ফুটেছে। পাখির জীবনে যেন সত্যিকার বসন্ত নেমে এসেছে। তার বই সাড়া ফেলেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে রিসোর্স পারসন হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।
আর আকাশ?
সে যেন এখন আর আগের সেই ক্লান্ত, বিষণ্ন তরুণ নয়। সে এখন পাখির ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিজের আলো খুঁজে নিচ্ছে।
চৌধুরী এন্টারপ্রাইজে নতুন এক সংস্কারের ছোঁয়া লেগেছে। শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাড়ানো হয়েছে, নারী কর্মীদের জন্য আলাদা ফ্লোর, ডে-কেয়ার আর শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছে। এসব পেছনে থেকে চালাচ্ছে আকাশ চৌধুরী, আর উৎসাহ জোগাচ্ছে পাখির চিন্তাধারা।
একদিন সকালে আকাশ চৌধুরীর অফিসে হঠাৎ পাখি হাজির।
হাতে ছোট্ট একটা ব্রাউন প্যাকেট।
আকাশ অবাক হয়ে বলল,
“এই সকালবেলায়? কোনো খবর আছে?”
পাখি বসে বলল,
“তোমার নতুন প্রজেক্ট লঞ্চের আগেই এটা চাইছিলাম দিতেই।”
আকাশ প্যাকেট খুলে দেখলো, ভেতরে একটা ছোট্ট কাঠের ফ্রেম। তাতে লেখা:
> "ভালোবাসা মানে নিজের ভেতরের আলোকে জাগিয়ে তোলা—না যে কেউ আমাদের অন্ধকারে হারিয়ে যাক, বরং যাতে আমরা দুজনই আলো হই একে অপরের জন্য।"
আকাশ চুপচাপ বসে রইলো। তারপর ধীরে ফ্রেমটা টেবিলে রেখে বলল,
“তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে দামি ইনভেস্টমেন্ট।”
পাখি হেসে বলল,
“আর আমি বুঝলাম, মনের ব্যাংকে সবচেয়ে সেরা লাভ হয়—ভালোবাসা জমা রাখলে।”
---
আরো তিন মাস পর
পাখি এখন পুরোপুরি এক নতুন পরিচয় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার লেখা বই এখন সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নারীদের স্বনির্ভরতা নিয়ে তৈরি করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, “তারা”—তারই হাত ধরে গড়ে উঠেছে।
আর আজ এক নতুন দিন। পাখি আর আকাশ একসাথে বসে আছে এক শান্ত ছোট্ট রেস্টুরেন্টে। মোমবাতির আলো, চারপাশে সুরেলা স্যাক্সোফোনের সুর, আর মনের মধ্যে জমে থাকা প্রশ্ন।
আকাশ বলল,
“তুমি কি জানো, আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল যেদিন, আমি বুঝতেই পারিনি আমার ভিতরে এত প্রশ্ন লুকানো ছিল?”
পাখি তাকিয়ে বলল,
“আর আমি বুঝিনি, এক অচেনা ছেলেকে দেখে কেন আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল।”
আকাশ বলল,
“তুমি কি এখনও ভয় পাও আমাকে হারাতে?”
পাখি উত্তর দিলো,
“না, বরং এখন ভয় পাই—তোমাকে পেয়ে যদি নিজেকে হারিয়ে ফেলি কিনা।”
আকাশ হাত বাড়িয়ে বলল,
“তুমি যদি এক পা এগিয়ে চলো, আমি বাকিটা হেঁটে আসবো। শুধু বলো, তুমি কি চাও?”
পাখি একটু চুপ করে থেকে বলল,
“আমি চাই না তুমি আমার জীবন হও। আমি চাই তুমি এমন একটা জায়গা হও, যেখান থেকে আমি নিজের জীবনকে আরও শক্ত করে দেখতে পারি।”
আকাশ ধীরে বলল,
“তাহলে আমি হবো তোমার জানালা, যেখান থেকে তুমি তোমার আকাশ দেখবে।”
পাখি হেসে ফেলল।
“তুমি ঠিক বলেছো, তুমি আমার জানালার আকাশ। সবসময় কাছেই থেকো, কিন্তু নিজের সীমারেখা রেখেই।”
আকাশের চোখে তখন সত্যিকারের শান্তি।
---
আরও ছয় মাস পর
লাহোর শহরের এক ঐতিহাসিক মিলনায়তনে আজ একটি বড় সম্মেলন চলছে। “নারী নেতৃত্ব ও সামাজিক পরিবর্তন” নিয়ে দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে নারী প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ।
প্রধান বক্তা—পাখি ফারহানা।
সে যখন মঞ্চে উঠলো, মিলনায়তন করতালিতে ফেটে পড়লো। আকাশ পিছনের সারিতে বসে, মাথা নিচু করে তার সাদা নোটবুকে লিখছে—"আজ পাখির ডানায় আলো লাগলো। আমি শুধু বাতাস হতে চেয়েছিলাম। সে আজ উড়ছে, আমি সুখী।"
পাখি বলতে শুরু করল,
“এই পথ সহজ ছিল না। কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি, কারণ আমি বুঝেছি—একটা মেয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি তার চিন্তা। সেই চিন্তা যদি ভয়হীন হয়, তাহলে সে যেকোনো রোল মডেল হতে পারে।”
সমাপ্তি বক্তৃতার পর পাখি যখন মিলনায়তন থেকে বের হচ্ছিল, আকাশ এগিয়ে এসে বলল,
“তুমি উড়ছো আজ। আমি কি একটুখানি ছায়া হতে পারি তোমার আকাশের নিচে?”
পাখি থেমে বলল,
“তুমি তো বরাবরই ছিলে। আমি শুধু নিজেকে প্রস্তুত করছিলাম, যেন সেই ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিজের আলোকে না হারাই।”
আকাশ বলল,
“তাহলে চলো। আমাদের গল্পের নাম বদলে দেই। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ নয়, বরং ‘আলো জাগানো তারা’ হোক।”
পাখি মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে চল, একসাথে লিখি আমাদের গল্প। শুরু নতুন, শেষ নেই।”
---
দুই বছর পর
ঢাকার একটি ছোট্ট পাঠাগারে, একসাথে বসে বই পড়ছে আকাশ ও পাখি। দেয়ালে টাঙানো পাখির ছবি—আজ সে একজন জাতীয় পর্যায়ে সম্মানিত গবেষক, লেখক ও নারী অধিকার কর্মী।
ছোট্ট এক মেয়ে এসে পাখিকে জিজ্ঞেস করলো,
“আপু, আপনি কি সত্যিই সেই ‘মেঘে ঢাকা তারা’র লেখিকা?”
পাখি মৃদু হেসে বলল,
“না, আমি সেই তারাটা, যে মেঘ কেটে আলো দেখিয়েছিল। আর পাশে ছিল একজন—যে আমাকে আকাশ দিয়েছিল।”
ছোট মেয়েটা হেসে চলে গেলো।
আকাশ বলল,
“তুমি এখন অনেকের তারকা। আমি কি এখনো সেই জানালায় আকাশ হয়ে আছি?”
পাখি চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি এখন আমার আকাশই না, আমার গল্পের প্রতিটা লাইন, শব্দ আর নিঃশ্বাস।”
তারা দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। বাইরের আকাশে তখন সূর্য ডুবে যাচ্ছে, কিন্তু সে আলোয় ঝলমল করে উঠেছে পাখির চোখ।
আর ঠিক তখনই আকাশ ফিসফিস করে বলল,
“তোমাকে পেয়ে আমি নিজের আলো খুঁজে পেয়েছি।”
চলবে............................
মেঘে ঢাকা তারা (৩)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
28
Views
4
Likes
0
Comments
0.0
Rating