বলো ভালবাসি (শেষ পর্ব)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
রোজার এমন কথা শুনে আবিদ বিরক্ত । মাঝে মধ্যেই এমন ভূত রোজার মাথায় চাপে।
আবিদের ধমকে তা চুপ হয়ে যায় এভাবে চলতে থাকে তাদের সম্পর্কে হাসি খুনসুঁটির মাঝে ।

এভাবে কেটে গিয়েছে বিয়ের ছয়টি বছর। রোজা ও এখন অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে, এতো বছরের ব্যবধানে মেয়েটা এখন আর হ্যাংলামো করে না। যথেষ্ট জ্ঞান বুদ্ধি নিয়ে চলাফেরা করে, কথা বলে। আবিদের কয়েকটি বছরের কষ্টের ফল, অবশেষে একজন কে মানুষের মতো মানুষ করতে পারলো রোজাকে।

শুধু মেয়েটার কথা কমাতে পারেনি এই যা। বিয়ের প্রথম প্রথম যেমন বকবক করতো এখনো সেই আগের মতোই রয়েছে। আর ঝগড়ুটে হয়েছে ভীষণ।' সব সময় রেগে থাকে আবিদ ধমক দিলে তখন শান্ত হয়।

আজ অনেক দিন পর তাদের বাসায় অনুষ্ঠান
'আজ তাদের বিবাহবার্ষিকী। এই জন্য ভিলায় বেশ বড়সড় করে আয়োজন চলছে। সবাই খুব খুশি। আবিদ তাদের প্রত্যেক বিবাহবার্ষিকী তে এমন বড় করে আয়োজন করে। সবাই কাজ করছে যে যার মতো।' ইজনিয়ারও বিয়ে হয়ে গেছে খুব কম আসে কিন্তু রোজা ইজনিয়াকে মিস করে। ইজনিয়াকে কয়েকদিন আগে থেকে বলে রেখেছে আসতে কিন্তু ইজনিয়ার বড় জব করায় ছুটি পায় নি তাই আজই আসবে।

'শুভ্র রঙের পাঞ্জাবী পরিহিত লোকটার দিকে বার বার আড়চোখে তাকাচ্ছে রোজা। সদ্য গোসল করে এসেছে। যার কারণে চুলগুলো থেকে পানি পড়ছে। রোজা এসব কাহিনী আবিদ খেয়াল করেছে। কাছে এসে দেখবে তা না দূর থেকে দেখছে রোজা আবিদকে। মেয়েটা সেই বোকাই রয়ে গেলো।' মনে মনে বলে..

'রোজা দিকে ঝুঁকে আসলো আবিদ। রোজা আধ শোয়া হয়ে শুয়েছিলো। রোজার দু পাশে হাত রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললো-'

"এভাবে দেখছিলে কেনো?"

'ভড়কে গেলো রোজা । সে ভেবেছে আবিদ তাকে নিশ্চয়ই খেয়াল করেনি। কি একটা লজ্জা পেতে হচ্ছে এখন।'

"কোথায় দেখছিলাম?"

"মিথ্যে বলো না তুমি দেখছিলে আমায়। আমি আয়নায় দেখেছি সব। সবার চোখ কে ফাঁকি দিতে পারবে এই আবিদের চোখ কে তুমি কখনো ফাঁকি দিতে পারবে না রোজা।"

রোজা মুখটা ফিরিয়ে নিলো।'
"হুম আমার আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই আপনাকে দেখবো। আর আপনি ঝুঁকে আছেন কেনো? লজ্জা নেই আপনার সরুন তো...

রোজার মুখে তার আঙুল ছুঁয়ে দিলো। মুহুর্তেই চোখ বন্ধ হয়ে গেলো তার।'

"লজ্জা কে খেয়ে ফুরাব নাকি রোজা।

"সরুন তো। এভাবে ঘরে একা বসে থাকলে বাহিরের মানুষরা কি বলবে?"

"একটা চুমু দেই প্লিজ বউ?"

'রোজা চোখ রাঙালো। আর না বলল রেগে..'

"এই না না এখন না।"

আবিদ তো কথা শুনলো না। টুপ করে রোজার ওষ্টে একটা চুমু একে দিলো। রোজা মুখ হাত দিয়ে তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। আবিদ বে'ক্ক'লের মতো শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।'
'ওয়াশরুম থেকে কাশির শব্দ শোনা যাচ্ছে। চিন্তিত হয়ে আবিদ বললো-'

" ঠিক আছো তুমি? দরজা খুলো আমি ঢুকবো।"

রোজা কোনো রকম উত্তর দিলো না। মুখ ধুয়ে বের হলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে আবিদ। চোখ মুখে দুর্বলতার চাপ। চোখ টেনে তুলতে পারছে না এমন অবস্থা। ইজহান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । রোজার পিঠে হালকা করে হাত রাখলো। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোজার এই অবস্থা। আসলে বুঝছে না ঠিক কি হয়েছে।'

আবিদ নরম কন্ঠে বললো-'
"ঠিক আছো তুমি?"

' মাথা নাড়লো। কথা বলার শক্তি নেই। বমি করে সব শক্তি উধাও হয়ে গিয়েছে। পেটে যা ছিলো সব চলে গিয়েছে রোজার।'

'আবিদ আবারও বললো-'
"তোমার আসলে কি হয়েছে? এমন দুর্বল হয়ে গিয়েছো আমি বুঝছি না ঠিক।"

"আমিও জানি না কয়েকদিন ধরে বমি হয়। মাথা ঘুরায়। যা খাই সব বমির সাথে চলে যায়। এইজন্য বোধহয় দুর্বল দুর্বল লাগছে।"

তোমাকে ডক্টর দেখাতে হবে..
এখন সরুন মেহমানরা সব এসে গেছে আমাকে যেতে হবে তাই বলে আবিদ কে ছেড়ে চলে গেল।

কেক কাঁটার মূহুর্তে হঠাৎ রোজা মাথা ঘুরে সবার সামনে পড়ে গেল। ডক্টর ডাকা হলো..
সবাই খুব চিন্তিত মুনিরা শেখের চোখে পানি ছেলের বউয়ের হঠাৎ এমন অসুস্থতা।

ডক্টর বাইরে গেল আবিদের সাথে কথা বলতে...
জ্ঞান ফিরলো অবশেষে...
প্রায় ১ ঘন্টার মতো শুয়ে আছে ভালো লাগছে না রোজার। প্রচন্ড পরিমাণে অস্বস্থি লাগছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। মাথাটা ব্যাথা করছে অনেক। উঠে বসেছে। মাথা চেপে ধরলো রোজা। মন চাচ্ছে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে দিতে। অসহ্যকর বেদনা। কেনো যে শরীরের এমন অবস্থা হয়েছে কিছুই বুঝছে না সে। কয়েকদিন আগেও তো ভালো ছিলো। কেনো যে এমন হচ্ছে তার। মাথা ব্যাথা বাড়তে লাগলো। এক প্রকার ছটফট করছে সে।'

'মুনিরা শেখ আর ইজনিয়া রুমে এসেছে। রুমে ঢুকেই বিচলিত হয়ে গেলেন রোজার ছটফটানি দেখে। তড়িঘড়ি করে রোজাকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।'

"কি হয়েছে? কি হয়েছে? এমন করছো কেনো?"

'রোজ মাথাটা মুনিরা শেখের বুকে হেলিয়ে দিলো।'

"মা জানি না আমার কি হয়েছে। কয়েকদিন ধরে বমি, মাথা ঘুরায়, এখন মাথা ব্যাথা করছে ভিষণ। আমি সহ্য করতে পারছি না।"

ডক্টর রুমে আসল.. সকল কে খুশির সংবাদটা দিল রোজা মা হতে চলেছে এটা শুনে ইজনিয়া খুবই খুশি হয়ে ভাবিকে জড়িয়ে ধরল।

আবিদ খুশি হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে । আর রোজা তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
বাড়িতে খুশির আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠলো।

কিছু মাস পরে তাদের ঘরে আলো করে একটি পুএ সন্তান জন্ম নিলো।
হুবোহুবই আবিদের মতো, কিন্তু পুষ্টি অনেক কম, বাচ্চা পেটে আসার পর রোজা কিছু খেতে পারত না এ জন্য ওজন কম হয়েছে বাচ্চা টার..

৩মাস পর..
এখন রোজা অনেক ব্যস্ত থাকে আগের মতো পাগলো করে না বেবিকে নিয়ে সব সময় খেলে আদর করে আবিদ ও বেবিকে অনেক আদর স্নেহ করে ।

রাতে আবিদ রোজাকে বলছে এই যে বউ চলো..
ছাড়ো তো দেখছো না বেবিকে ঘুম পাড়াচ্ছি, ও ঘুমিয়েই গেছে প্রায়। তুমি চুপ করে থাকো ...
তুমি তো অলটাইম ফ্রি থাকো। চলো না আর একটি বেবি করি... আবিদ মুচকি হেসে বলছে..

কি বললে তুমি রেগে গিয়ে রোজা আবিদ কে কিছু বলতেই যাবে রোজা আবিদ উপর ধপাস করে পা পিচলে পড়ে গেলো আবিদ হো হো করে হেসে দিল...
আর বাবু নিবে তুমি...
গিফট দেয় তোমায়...

"আর বাবু চাই না ডাক্তার সাহেব ।"এভাবে তাদের আদর ভালবাসায় সুখে দিন কাঁটতে লাগল...

সমাপ্ত

[ রোজা ও আবিদের গল্প এখানেই শেষ। গল্পের মাঝে কিছু কিছু ভুল হয়তো হয়েছে কিন্তু আপনারা আমাকে এতো ভালোবাসা দিয়েছেন যে এই গল্পের সমাপ্তি দিতে আমার ভিষণ কষ্ট হয়েছে।গল্পটি ভালো লাগলে লাইক, ফলো করে দিয়েন, কিছুদিন পর আমি আবারও নতুন গল্প লিখবো, আশা করছি পরের গল্পটাও আপনাদের পছন্দ হবে। ভালো থাকবেন সকলেই,আমার জন্য দোয়া করবেন এই ক্ষুদ্র লেখিকার ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আল্লাহ হাফেজ ]
80 Views
2 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: