পর্ব ১: আগমন
ঢাকার ব্যস্ততা থেকে দূরে, গ্রামের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো এক জমিদার বাড়ি—রায়চৌধুরী ভবন। কেউ আর ওটাকে “বাড়ি” বলে না। সবাই বলে, “ওই ভূতের বাড়ি”।
বছরের পর বছর ধরে বাড়িটা খালি পড়ে আছে। অন্ধকারে ঢাকা বারান্দা, ছাদে ভাঙা টিন, জানালায় পোকা-মাকড়ের বাসা আর এক রাশ ইতিহাস জমে থাকা দরজা-জানালা—যেখানে বাতাসের দোলা যেন কারো নিঃশ্বাসের মতো শোনায়।
এই বাড়িতেই পোস্টিং হয়েছে শহর থেকে আসা রাহুল সাহা ও তার বাবার।
রাহুলের বাবা সরকারি দপ্তরে চাকরি করেন। এক সরকারি প্রকল্পের কারণে তাদের অস্থায়ীভাবে এ বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।
বাড়িতে ঢুকেই রাহুলের মনে হল—এ বাড়ির প্রতিটা দেয়াল যেন কথা বলতে চায়।
মেঝেতে হেঁটে গেলে কোথাও যেন চাপা শব্দ হয়, কোথাও শব্দহীন।
ঘরের বাতাস কেমন যেন ভারী, যেন চোখে দেখা না গেলেও কেউ পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
রাহুলের মা বারান্দা ঝাড়তে ঝাড়তে বললেন,
“বাড়িটা এত বড় অথচ এত নীরব কেন? কোন পাখিও ডাকছে না!”
রাহুল মাথা ঘুরিয়ে দেখল—বসন্তকাল, অথচ আশেপাশে কোনো পাখি নেই। পুকুরে নেই কুমিরের ছায়া, গাছে নেই কোনো পেঁচার ডাক।
রাতে ঘুমানোর আগে রাহুল নিজের রুমে বই নিয়ে বসে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল।
ঘরের অন্ধকারে সে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে জানালার দিকে তাকাল।
পর্দা ধীরে ধীরে নড়ছে... অথচ ঘরে কোনো বাতাস নেই।
সে পর্দা সরাতে যাবে, এমন সময় কাঁচে চোখ পড়ে—
একটি হাতের ছাপ জানালার কাচে! ভেতর থেকে না, বাইরের দিক থেকে।
রাহুল কাঁচের বাইরে তাকিয়ে কিছু দেখতে পায় না। কিন্তু জানালার নিচে মেঝেতে পাওয়া যায় একটি ছেঁড়া ও ভেজা ওড়না।
সে তাড়াতাড়ি দৌড়ে মায়ের রুমে চলে যায়। ঘর অন্ধকার, কিন্তু মা তখনো জেগে বসে।
“কি হয়েছে রাহুল?”
“মা… জানালার কাঁচে একটা ছাপ... মনে হলো কেউ দাঁড়িয়েছিল।”
মা হেসে বললেন,
“বাড়িটা পুরনো, ভয় পাস না... আমরা তো মানুষ, ভূত না।”
রাহুল হাসার চেষ্টা করল, কিন্তু কাঁধের ওপর হঠাৎ হিমেল স্পর্শ অনুভব করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল—কেউ নেই।
তবুও তার মনে হল, জানালার ওপাশে কেউ তাকিয়ে আছে… একজোড়া পোড়া চোখ নিয়ে।
---
🔚 (চলবে…)
📌 পরবর্তী পর্বে:
"পুরনো রেজিস্টার বইতে লেখা এক নাম — শান্তা রায়চৌধুরী। সে আজও বাড়ি ছাড়েনি।"
অশরীরী ছায়া (episode 1)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
102
Views
2
Likes
1
Comments
5.0
Rating