৬৬.
সকাল হতে না হতেই অফিসে ব্যস্ততার ছায়া পড়ে গেছে। নিত্যদিনের মতো আজও সবাই যে যার কাজে লেগে পড়েছে। কিন্তু আখি, মাহির, দীপ্ত ও দিনার কাজটা একটু বেশিই রয়েছে। মাহির শুধু বসে বসে ফাইলগুলো চেক আউট করছে। মাহিরের কাজটা একটু ভারী হলেও শরীরের ওপর তা কোনো প্রভাব ফেলছে না। কিন্তু ছোটাছুটির ব্যাপারটা আখিকেই করতে হচ্ছে। কাল কাজ করতে করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। আর আজকে সকাল সকাল অফিসে উপস্থিত হতে হয়েছে। ফলে রাতে আখির ভালো করে ঘুম হয়নি। একেই কাজের চাপ, তার ওপর আবার রাতে ভালো ঘুম না হওয়া- সব মিলিয়ে আখির শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সকাল থেকেই তার মাথাটা ঘুরছে আর প্রচন্ড ব্যথা করছে। বেশিক্ষণ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকাও তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আখি সেটা কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না। বুঝতে দিলেও বা কি? তার বস যে, মাথা ব্যথা শুনলে আরও বেশি করে মনে হয় কাজ চাপিয়ে দেবে। সে তো চায়ই আখির ওপর প্রতিশোধ নিতে। তাছাড়াও আজকে একটা বড় প্রেজেন্টেশন আছে। এই ডিলটা ফাইনাল হলেই কোম্পানির একটা বড়সর লাভ হবে। তাই যতই শরীর খারাপ হোক, কোম্পানির জন্য তাকে অসুস্থতা উপেক্ষা করে হলেও প্রেজেন্টেশন দিতে হবে।
- স্যার, এই যে সব ফাইলস। আপনি বরং তাড়াতাড়ি চেকআউট করে নিন। তাহলেই মোটামুটি মিটিংয়ের জন্য সব রেডি হয়ে যাবে। (আখি)
- আমি ফাইল চেকআউট করবো আর তুমি বসে থাকবে? এই নাও, যাও এ কয়েকটা ফাইল চেকআউট করে আনো। (মাহির একগাদা ফাইল এগিয়ে দিয়ে)
- এতগুলো ফাইল আপনার কয়েকটা মনে হচ্ছে? এখানে কম করে হলেও মোট ফাইলের অর্ধেকর বেশি ফাইল আছে। এতগুলো আমাকে চেকআউট করতে হবে! (আখি)
- আমার ফাইল চেকআউট ছাড়াও আরো অনেক কাজ আছে। তাই যা বলছি তা করো। নাহলে আরও বেশি কাজ দিয়ে দেবো। (মাহির)
আখি মনে মনে রাগে ফেটে যাচ্ছিল। কিন্তু রাগ হলেও তার কিছু করার নেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে একগাদা ফাইল হাতে নিয়ে নিজের কেবিনে যেতে হলো।
৬৭.
আখির সামনে এখন রয়েছে একগাদা ফাইলের পাহাড়। সে মাথায় হাত দিয়ে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এতগুলো ফাইল দেখেই তার মাথাব্যথাটা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এগুলো সে চেকআউট করবে কীভাবে কে জানে। কিন্তু এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। মিটিং শুরু হবে ১০ টায়। ইতিমধ্যে ৯:২০ বোজে গেছে। এর মধ্যে সবগুলো ফাইলে তার চোখ বুলাতে হবে আবার যেখানে যেখানে ভুল আছে সেগুলো ঠিক করতে হবে। তাই দেরি না করে সে দ্রুত ফাইলডগুলো নিয়ে বসে পড়ে। তীব্র মাথাব্যথা সত্ত্বেও সে একের পর এক ফাইলের পাতা ওল্টাতে থাকে। ফলশ্রুতি খুব দ্রুতই মাথাব্যথার সাথে চোখব্যথাও শুরু হয়ে যায়।
- কীরে এতগুলো ফাইল নিয়ে বসে আছিস যে, মিটিংয়ের আর দশমিনিট আছে। CEO স্যার ডাকছে তোকে। (দিনা আখির কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে)
- এইতো সব ফাইলস্ চেকআউট করা শেষ। আমি এখনই আসছি। (আখি)
আখি এই বলে শেষ ফাইলটা বন্ধ করে চেয়ার থেকে উঠতে গেলে হঠাৎ তার মাথাটা ঘুরে ওঠে আর সে আবার চেয়ারে বসে পড়ে। দিনা আখির এই অবস্থা দেখে তার দিকে ছুটে আসে আর ব্যস্ত হয়ে বলে-
- কী হলো তোর? শরীর খারাপ লাগছে? (দিনা)
- আরে ও কিছু না। মাথাটা just একটু ঘুরে গেছিলো। আমি ঠিক আছি। (আখি)
- ঠিক আছিস মানে কি, হ্যাঁ? তোর মাথা ঘুরছে মানে তোর ব্রেইনে প্রেসার পড়ছে। আর সেটা হচ্ছে তুই কাল থেকে একটু বেশি কাজের চাপ নিচ্ছিস তাই। এতগুলো ফাইল দেখতে কে বলেছিলো তোকে? (দিনা রেগে)
- আরে বস দিলে আমার দোষ? (আখি)
- তুই ওনাকে বলতিস তোর মাথা ব্যথা করছে। (দিনা)
- বললে আরো বেশি কাজ দিতো। এখন কনফারেন্সে রুমে চল, মিটিং শুরু হয়ে যাবে। (আখি)
- কনফারেন্স রুমে চল মানে? তুই এই অবস্হায় প্রেজেন্টেশন দিবি? (দিনা)
- হুম, তো কে দেবে? (আখি)
- না, না এই অবস্থায় আমি তোকে কনফারেন্স রুমে যেতে দেবো না। অন্য কেউ প্রেজেন্টেশন দিয়ে দেবে। (দিনা)
- এই দশমিনিটের মধ্যে কেউ প্রেজেন্টেশনের জন্য perpared হতে পারবে বলে তোর মনে হয়? (আখি)
- কিন্তু তুই অসুস্হ আখি। (দিনা)
- সকাল থেকে এত কাজ যখন করেছি তখন প্রেজেন্টেশনটাও ঠিকই দিতে পারবো। চিন্তা করিস না। (আখি)
- বড়সর একটা অঘটন ঘটে যাবে কিন্তু। (দিনা)
- কিচ্ছু হবে না। তাড়াতাড়ি আয়। আর কাউকে এই কথাটা বলিস না প্লিজ। The meeting is very important. (আখি)
আখি এই বলে উঠে কনফারেন্স রুমের দিকে চলে গেলো। দিনা আখির মুখের দিকে তাকিয়েই চুপচাপ কনফারেন্স রুমে চলে এলো। কাউকে কিছু বললো না। একটু দেরী করে আসায় মাহির প্রথমে আখিকে বকাবকি করলেও পরে ক্লাইন্ডরা রুমে প্রবেশ করলে সে থেমে যায়। মিটিং শুরু হয়। আখি এবার প্রেজেন্টেশন দেবে। আখি নিজের সব কষ্টকে উপেক্ষা করে উঠে দাঁড়ায়। তাকে দেখে কেউ বিন্দুমাত্র অনুমান করতে পারে নি যে সে অসুস্থ। সে খুব সুন্দর করে প্রেজেন্টেশন দিতে থাকে। মাহির এই প্রথম আখির প্রেজেন্টেশন দেখছিলো। আখি যে এত ভালো প্রেজেন্টেশন দিতে পারে, সেটা তার ধারণাও ছিলো না। কি সুন্দর প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উপস্থাপন করছে। তার কথা বলার ধরন, অঙ্গভঙ্গি, সবকিছু স্মার্ট। মাহির মুগ্ধ হয়ে মনোযোগ সহকারে আখির প্রেজেন্টেশন শুনতে থাকে।
প্রেজেন্টেশন শেষ হলে পুরো রুম হাততালির শব্দে ফেটে পড়ে। ক্লাইন্ডরা যে খুশি হয়েছেন সেটা তাদের হাততালির শব্দই জানান দেয়।
মিটিং শেষ হলে সবাই উঠে পড়ে। ডিলটা সাইন আপ হয়। মাহির আর দীপ্তর খুশি দেখে কে! ক্লাইন্ডরা বিশেষভাবে আখির প্রেজেন্টেশনের প্রশংসা করে। তারা খুব খুশি মনে ডিলটা সাইনড আপ করে চলে যায়।
মিটিং শেষ হলে সবাই একে একে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। সবশেষে রুমে ছিলো শুধু আখি, দিনা, দীপ্ত ও মাহির। আখি পুরো মিটিংটায় অনেক কষ্টে স্বাভাবিক ছিলো। বলা যায় স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু দীর্ঘ একঘন্টা টানা লেকচার শোনা ও নিজে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার পর সে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না। তার মনে হচ্ছে কেউ তার মাথাটা মাঝখান থেকে চিঁড়ে আলাদা করে দিচ্ছে। ক্রমে তার মাথাব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছিলো। শেষ পর্যন্ত আখি আর সহ্য করতে পারলো না। তার আশেপাশের চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছিলে। অবশেষে সে নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিলো।
মাহির আজ আখির প্রেজেন্টেশনে খুবই সন্তুষ্ট হয়েছিলো। তাই সে আখিকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য আখির সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই আখি তার বুকে ঢলে পড়ে। মাহির বিস্মিত হয়ে যায়। দিনার চিৎকার শোনা যায়।
-আখি.............
৬৮.
আখির কেবিনে বুকে দু হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে মাহির। তার দৃষ্টি সোফায় শায়িত আখির দিকে স্থির রয়েছে। শুধু সে ই নয়, কেবিনে উপস্থিত সবার দৃষ্টিই আখির ওপর নিবদ্ধ, যাকে এখন ডাক্তার দেখছে।
- কি হয়েছে ডক্টর ওর? (মাহির)
- মনে হয় কিছুদিন থেকে একটু বেশি চাপ নিচ্ছেন। আর রেস্টও কম করছেন। তাই ওনার মাথাটা একটু ঘুরে গিয়েছিলো। সাথে মাথাব্যথাও আছে দেখছি। তবে চিন্তা নেই, ঘুমের ইনজেকশন দিচ্ছি, এখন ঘুমোচ্ছেন। ঘুম থেকে উঠলেই মাথা ব্যথা সেরে যাবে। আর তাছাড়াও কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি। এগুলো একসপ্তাহ খাবেন। আর হ্যাঁ, জ্ঞান ফেরার পর কিন্তু কিছু খাইয়ে দেবেন। নাহলে আবার শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। আমি তাহলে এখন উঠি Mr. Raoson. (ডক্টর)
- ম্যানেজার সাহেব, ওনাকে এগিয়ে দিয়ে আসুন। (মাহির)
- Yes sir, (ডক্টরের দিকে তাকিয়ে) আসুন স্যার। (ম্যানেজার)
ম্যানেজার ডক্টরকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যান।
- সকাল থেকে তো আখিকে দেখে মনে হচ্ছিলো না যে ওর মাথা যন্ত্রণা করছে। (দীপ্ত)
- ওর মাথা ব্যথাটা হয়তো কনফারেন্স রুমে গিয়ে শুরু হয়েছে। (মাহির)
- না স্যার, আখির কিন্তু সকাল থেকেই মাথা যন্ত্রণা ছিলো। (দিনা)
- তুমি কি করে জানলে? (মাহির ভ্রূ কূচকে)
- কনফারেন্স রুমে যাওয়ার আগে একবার ওর মাথা ঘুরে গিয়েছিলো। (দিনা)
- (বিস্মিত হয়ে) আমাকে বলোনি কেন? (মাহির)
- আখি বলতে নিষেধ করেছিল স্যার। (দিনা)
- কেনো? (মাহির)
দিনা একটু ইতস্তত বোধ করছে দেখে মাহির বললো-
- আমাকে সত্যিটা বলো দিনা। (মাহির)
- আসলে স্যার ওর ধারণা ছিলো আপনাকে বললে আপনি ওকে আরও কাজ দেবেন। আর কাউকে বললে যদি ওকে প্রেজেন্টেশন করতে না দেওয়া হতো, তাহলে আজকের ডিলের একটা ক্ষতি হয়ে যেত। তাই ও নিজেও কাউকে কিছু বলে নি আর আমাকেও বলতে দেয়নি। (দিনা)
মাহির দিনার কথা শুনে বিস্ময়ে চুপ করে রইলো। কোম্পানির প্রতি আখির এত ভালোবাসা তাকে অভিভূত করতে বাধ্য করলো।
আখির যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে নিজেকে সোফায় শায়িত অবস্থায় আবিষ্কার করলো। আস্তে আস্তে আশেপাশে তাকাতেই দেখল দিনা তার পাশে বসে আছে। সে ধীরে ধীরে শোয়া থেকে উঠে বসতে চেষ্টা করলো।
- আরে উঠে বসছিস কেনো? তুই ঠিক আছিস তো? (দিনা)
- আমি তো ঠিক আছি। কিন্তু আমি এখানে কি করছি? আমি তো কনফারেন্স রুমে........ (আখি)
- জ্ঞান হারিয়ে CEO স্যারের কোলে ঢলে পড়েছিলিস। (দিনা)
- (চোখ বড় বড় করে) কি, আমি ওই মাতালটার কোলে পড়ে গিয়েছিলাম? (আখি)
- ওনাকে মাতাল বলিস না আখি। স্যার খুব কেয়ারিং। (দিনা)
- হ্যাঁ, দেখছি তো কত কেয়ারিং। আমি মানুষটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছি, উনি মনে হয় একবার দেখতে পর্যন্ত আসেনি। (আখি)
- কে বলেছে আসেনি? স্যার তোকে কোলে করে এখানে নিয়ে এলো, তারপর ওনার পার্সোনাল ডক্টরকে ডেকে তোর চেকআপ করালেন। আর এতক্ষণ উনি এখানেই ছিলেন। মাত্রই আর্জেন্ট ডাক পড়াতে ওনাকে যেতে হলো। (দিনা)
আখি বিস্মিত চোখে দিনার দিকে তাকিয়ে আছে। ঐ বদরাগী লোকটা এত কেয়ারিং হতে পারে! দিনা না বললে এটা জানতেও পারত না সে।
- আমি কতক্ষণ ধরে এখানে আছি? (আখি)
- তাও প্রায় দু'ঘণ্টা। (দিনা)
আখির চোখ স্বাভাবিকের তুলনায় বড়বড় হয়ে গেলো।
- আমি দু'ঘন্টা ধরে এখানে শুয়ে আছি! কত কাজ জমা পড়ে আছে। আমাকে এক্ষুণি উঠতে হবে। (আখি)
আখি এই বলে সোফা থেকে নামতে গেলে দরজার ওদিক থেকে মাহিরের গলা শোনা গেলো।
- হ্যাঁ, এখন কাজ করতে বসে পড়ো আর আবার চামচিকের মতো মাথা ঘুরে পড়ে থাকো। (মাহির)
- আমি চামচিকে? (আখি)
- তা নয় তো কি? এই... এত কাজের চাপ তোমাকে নিতে কে বলেছিলো, হ্যাঁ? একবার আমাকে নিজের প্রবলেম বলে দেখতে পারতে। তা না করে আগ বাড়িয়ে অসুস্থ শরীরে প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়েছে। আজকে যা করেছো করেছো। পরেরবার থেকে যেন এমন না হয়। আমার কাছে বিজনেস পরে, একটা মানুষের জীবন আগে। (মাহির)
- আপনি তো বলেন আপনার কাজে বিজনেস আগে। (আখি)
মাহির নিজের কাছেই নিজে বিব্রত হলো বলে মনে হচ্ছে। এই প্রথম সে দ্বিধায় পড়লো। সত্যি তো এই কথাটা সে সবসময় বলে। কিন্তু আজকে নিজের মধ্যে অন্য একটা সত্ত্বার অস্তিত্ব পাচ্ছে যেন। কাজের থেকেও হয়ত বড় কেনো কিছু তার কাছে গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তবে কি সে পরিবর্তিত হচ্ছে? কিন্তু নিজের মনের সাথে যে তার দন্দ চলছে, সেটা তো কাউকে বুঝতে দেয়া যাবে না। তাই মাহির মুখের অভিব্যক্তি না পাল্টে বললো-
- আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি, আধঘন্টা পর যেন এসে দেখি যে সব খাওয়া হয়ে গেছে। (মাহির)
মাহির চলে গেলে দিনা বলে-
- দেখলি, স্যার কত কেয়ারিং? তোকে খেতেও বলে গেলো। (দিনা)
- কেয়ারিং না ছাই! এই শোন, কেয়ারেরও না একটা ধরন আছে। এটাকে শাসন বলে। কেয়ার নয়। (আখি)
- ম্যাডাম আসবো? (ম্যানেজার কেবিনের দরজায় তপুর সাথে দাঁড়িয়ে আছে)
- হ্যাঁ,আসুন। (আখি)
ম্যানেজার আর তপু দুজনে কেবিনে ঢুকে পড়লো। তপু টেবিলে খাবারের ট্রেটা রেখে চলে গেলো।
- ম্যাডাম, খাবার কিন্তু গরম আছে। এখনই আনানো হয়েছে। (ম্যানেজার)
- ওহ, রাখুন এখানে। (আখি)
- আপনি কিন্তু অনেক লাকি ম্যাডাম। আপনি স্যারের মতো একজন প্রিয়জন পেয়েছেন। উনি আপনার বিষয়ে কিন্তু যথেষ্ট সিরিয়াস। আপনার কেয়ার তো করছেনই, পাশাপাশি আপনার অসুস্থতা লক্ষ্য না করার জন্য অফিসের সবাইকে বকাবকি করছেন। (ম্যানেজার)
- তাই নাকি? (আখি চোখ বড় বড় করে)
- হ্যাঁ ম্যাডাম, আপনি তাড়াতাড়ি খাবারটা খেয়ে নিন। নাহলে উনি আবার আমার কি করে কে জানে। (ম্যানেজার)
- ঠিকাছে আমি খেয়ে নেবো। আপনি যান। (আখি)
- আচ্ছা ম্যাডাম। (ম্যানেজার)
ম্যানেজার চলে গেলো।
- আখি... (দিনা)
- হু... (আখি)
- স্যার তোর বিষয়ে একটু বেশি সিরিয়াস বলে মনে হচ্ছে না? (দিনা)
- সবকিছু তোরই মনে হয়। আমার কিছু মনে হয় না। (আখি)
- নিশি ন্যাকামো করে আসতে চাইছিলো। ওকে আটকে দিয়েছি। (দিনা)
- ওকে এখানে নয়, CEO sir এর কেবিনে পাঠা। (আখি)
- কেনো? (দিনা)
- দেখছিস না? স্যারের সাথে কত ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করে, ওর মতলব দেখেই বোঝা যায়। গায়েপড়া মেয়ে একটা। (আখি)
- তাতে তোর কি? (দিনা)
- কিছুই না। (আখি)
আখিকে মাহির আর সেদিন কাজ করতে দিলো না। তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো।
৬৯.
রাত্রিবেলা সবাই সবার কাজ শেষ করে সমবেত হয়েছে ডাইনিং স্পেসে। রাতের খাবার খাওয়ার সময় সবার মাঝে টুকিটাকি কথা হয়। তাও আবার বেশিরভাগই ব্যবসা নিয়ে। আজও তাই চলছিলো। অঙ্কিতা রওশন আজকের টপিকটা একটু চেঞ্জ করতে চাইলেন। তিনি বললেন-
- বলছি অনেক বছর থেকে সবাই মিলে পিকনিকে যাওয়া হয়নি। এবার দূরে কোথাও পিকনিকে গেলে কেমন হয়? (অঙ্কিতা রওশন)
সবাই নিশ্চুপ। অঙ্কিতা রওশন একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললেন-
- মানে আগে তো প্রায়ই এসব হৈ-হুল্লোড় হতো তাই বললাম... (অঙ্কিতা রওশন)
- তুমি কি জানো না অঙ্কিতা আগে যা হতো এখন আর সেসব হয় না? এখন আর কিছু আগের মতো নেই। (অবন্তী রওশন কড়া গলায়)
চলবে.....................
আমার পুরাতন পাঠকরা জানেন সময়ে অসময়ে আমার পরীক্ষা লেখায় কতটা বিঘ্ন দেয়। নতুনরাও এতে অভ্যাস করে নিন। কিছু করার নেই। তবুপ দেরি করার জন্য সরি। পরবর্তী পর্ব আগামী সপ্তাহে আসবে।
পরিণীতাসক্তি
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
78
Views
4
Likes
1
Comments
4.3
Rating