পল্লী বধূ

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
পল্লীর কাটা রাস্তা ধরে উঠোনের পাশে বসে আছে শিউলি। হাতে বোনা শাড়ির ধারে হালকা মাটির গন্ধ লেগেছে। আজও সে যেন দিনের সূর্য ডুবে যাওয়ার মতো একাকী, নিভৃত চাওয়া নিয়ে বসে আছে। চারপাশে ধানের গাছগুলোর সরস বেলায় বাতাস হাওয়া বইছে, আর দূরে কোথাও মুরগির ডাক।

শিউলির জীবন ধীর গতিতে এগোচ্ছে, ঠিক তেমনি যেন গ্রামের বুকে এক ঝাঁক গানের সুর। সে পল্লীর মায়েরা মতো ভোরবেলায় উঠেছে নদীর জল আনতে, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে, ঘরের কাজ সামলাতে।

তার স্বামী রাহুল দিনের বেলা মাঠে ব্যস্ত। দিন শেষে শরীর ক্লান্ত হলেও, সে কখনো স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের জন্য সময় বের করার চেষ্টা করে।

শিউলির দিন শুরু হয় সকাল ৫টায়। সে জল আনতে নদীর ধারে যায়, ফিরে এসে রান্নাঘরে হাত লাগায়। ছোট্ট ঘরটায় সে একাই সমস্ত সংসার সামলাচ্ছে—রান্না, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, বাচ্চাদের পড়াশোনা।

শিউলি খুব ভালো মেয়ে ছিল গ্রামে। স্কুল থেকে ফিরে বাবার কাছে শেখা নিয়ম মেনে চলত সব সময়। যদিও তার নিজের স্বপ্নগুলো কখনো বড় হয়নি, তার ইচ্ছে ছিল ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হয়ে এই পল্লীর নাম উজ্জ্বল করবে।

একদিন দুপুরে, শিউলি ঘরের সামনে বসে থাকতে দেখে পাশের বাড়ির রিনা বেগম এসে তার হাতে চা ঢালল। “শিউলি, তোমার মুখটা কিছুদিন ধরেই অসুখী লাগে, কি হয়েছে?”

শিউলি একটু হেসে বলল, “কিছু না রিনা, শুধু ভাবছি... আমার জীবনটা কতটা বদলাবে? ছেলে মেয়েরা বড় হলে হয়তো আমরা নতুন কিছু দেখতে পাবো।”

রিনা বলল, “তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে, শিউলি। আমাদের মতো পল্লীর মেয়েরা শক্তিশালী। ঘরবাড়ি, সংসার, আর সন্তানদের ভালোভাবে বড় করতে পারলেই পৃথিবী জয়!”

শিউলির চোখে জল এসে গেল, সে মৃদু কণ্ঠে বলল, “তোমার মতো আশার আলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভরসা।”

দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা আসে। শিউলি তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে মণ্ডপে গেলো। পূজার গান, ঢাকের কাঁপানো তাল আর মায়েদের মিলিত কণ্ঠস্বরের মাঝে সে হারিয়ে যেতে চায়।

সেই রাতে, শিউলি ঘরের কোণে বসে বাচ্চাদের গল্প শুনালো। গল্প ছিল পল্লীর মায়ের সংগ্রামের, নিজের মায়ের সাহসের, আর একটি সুন্দর জীবনের স্বপ্নের।

সে জানে, তার সংগ্রাম কখনো সহজ হবে না। তবুও সে হাল ছাড়বে না। কারণ সে পল্লী বধূ, যিনি সংসার আর স্বপ্ন দুটোই আঁকতে জানেন।

শিউলির চোখে আলো ফুটেছিল — সে জানে, এই ছোট্ট গ্রাম থেকে বড় কিছু শুরু হবে তার ছেলেমেয়েদের হাত ধরে।
59 Views
9 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: