রাতুল একটা বাকা হাসি দিয়ে তৃষাকে জিজ্ঞেস করলো... " কেমন আছো ডার্লিং?"
তৃষা প্রায় তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে চড়া গলায় বলল... " আমি কেমন আছি, সেটা জেনে আপনার কোনো কাজ নেই। আপনি বলুন, আপনি এই সময় হঠাৎ আমার বাড়িতে এসেছেন কেন?
" কেন এসেছি মানে! এখানে আমার বউ আছে, আর আমি আসবো না। এটা কেমন কথা বললে তুমি ডার্লিং!"
" আচ্ছা আমার সাথে কি আপনার বিয়ে হয়েছে? আপনি আমাকে বউ বউ করছেন কোন হিসেবে!"
" মানছি, তুমি এখনো আমার বউ হও নি, কিন্তু হতে আর কতক্ষণ। কাল রাতেই তো তোমার আর আমার বিয়ে!"
" আপনি কি ধরেই নিয়েছেন, যে আমি আপনাকে বিয়ে করবো!"
" ধরে নেওয়ার কি আছে! কাল যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়, সবকিছু ওলট পালট হয়ে যায়, তবুও তোমার আর আমার বিয়ে হবে।"
" আচ্ছা এতটা কনফিডেন্স আপনি পান কোথা থেকে বলুন তো?"
" আমার কোথাও থেকেও কনফিডেন্স পেতে হয় না। আমি,, মানে এই রাতুল রাহমান যা চায়, সেটা ঠিকই আদায় করে নেয়। শুধু ভালোভাবে আদায় করতে না পারলে একটু ছিনিয়ে নেয়। এই আরকি!"
" সবকিছু কি ছিনিয়ে নেওয়া যায় রাতুল রাহমান!"
" অফকোর্স যায়। অন্য কেউ না পারলেও, রাতুল রাহমান সেটা খুব ভালো করেই পারে। যাই হোক, আমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলবো, নাকি ভেতরে গিয়ে বসবো।"
" ভেতরে আপনার কি কাজ! যা বলার আপনি তা এখানেই বলুন।"
রাতুল এমন একটা কথা শোনার পরও মৃদু হেসে অভিমানী স্বরে বলতে লাগল... " আচ্ছা, আচ্ছা,, আজ নাহয় বাইরে দাঁড়িয়েই কথা বলছি। কিন্তু যখন তুমি আমার বউ হবে তখনও তুমি যদি এমন আচরণ করো, তাহলে কিন্তু আমি মনে ভীষণ কষ্ট পাবো। প্লিজ, এখন তুমি আমার সাথে যেমনই বিহেভ করো না কেন,, বিয়ের পর তুমি আর এমন করো না।
যাই হোক, তোমাকে এক পলক দেখার জন্য এসেছিলাম। দেখা হয়ে গেছে, এখন আমি যাই ওকে! বাই ডার্লিং।
এই বলে তৃষার রুমের সামনে থেকে চলে গেল রাতুল। সে চলে যেতেই, তৃষা প্রচন্ড পরিমানে রেগে গিয়ে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দিল। তারপর ভেতর থেকে লক করে দিয়ে, ছুটে গিয়ে ধপাস করে অসহায় ভঙ্গিতে বিছানায় বসে পড়লো। কাঁদতে কাঁদতে মনে মনে বলতে লাগল... " আয়ান, এখনো,, এখনো তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে না। প্লিজ আয়ান প্লিজ, তুমি ফিরে এসো। প্লিজ। আমি যে আর পারছি না, এই যন্ত্রণা থেকে আমি মুক্তি চাই। একমাত্র তুমিই আমায় এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারবে। প্লিজ আয়ান, তুমি তাড়াতাড়ি আমার কাছে ফিরে এসো।"
___________________
" আহ্, আহ্, আহ্, লাগছে, ছেড়ে দিন, ছেড়ে দিন আমাকে... প্লিজ.. প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে.... ছেড়ে দিন! চাবুকের আঘাত গুলো খেতে খেতে আর্তনাদ করতে করতে কথাগুলো বলে ওঠে আয়ান।
" ছাড় পাবি, আমি তোকে নিশ্চয়ই ছেড়ে দেব। কিন্তু তার আগে তোকে চিঠি টা লিখে দিতে হবে। যদি পারিস, তাহলেই তুই আজ আমার হাত থেকে নিস্তার পাবি, নইলে আমি যে আজ তোর কি হাল করবো, আমি আর একমাত্র আল্লাহ মাবুদ ছাড়া আর কেউ জানে না।" আরো জোরে জোরে চাবুক দ্বারা আয়ানের গায়ে আঘাত করতে করতে দাঁত কটমট করে কথাগুলো বললেন সাহিদ সাহেব।"
" নাহ, আমি ওই কাজ... কিছুতেই করতে পারবো না। আমি,, আমার তৃষাকে আমার ব্যতিত অন্য কারো হতে দেবো না! তৃষা শুধু এই আয়ান মির্জা'র। তাছাড়া তাকে আর... আর কেউ পাবে না! কেউ না....! আহ্.... আহ্....!"
মারের মাত্রা ক্রমেই আরো বাড়তে লাগলো। গাঁয়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে আয়ানের শরীরের উপর আঘাত করছেন সাহিদ সাহেব। আয়ান আহ্, আহ্... করে চিৎকার করে চেঁচাচ্ছে বটে... কিন্তু ওই চিঠিটা লিখার জন্য রাজি হচ্ছে না।
আয়ানকে চাবুক দিয়ে মারতে মারতে একসময় বেশ হাঁপিয়ে গেলেন সাহিদ সাহেব। কিন্তু আয়ান তখনো সেই চিঠি লিখতে নারাজ। সাহিদ সাহেব বুঝলেন, তাকে এইভাবে জোর করে ওই চিঠি টা লিখবার জন্য রাজি করানো যাবো না। অন্য কোনো উপায়ে তাকে রাজি করাতে হবে। মনে মনে তিনি ভাবতে লাগলেন.. কি করা যায়?
জব্বর একটা প্ল্যান এসেছে সাহিদ সাহেবের মাথায়। এই প্ল্যান টা কাজে লাগাতে পারলেই কেল্লা ফতে। আয়ান আর ওই চিঠি টা লিখবে না বলতেই পারবে না। মনে মনে একটা অদ্ভুত ধরনের হাসি দিয়ে সাহিদ সাহেব এবার চাপা স্বরে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন... " আয়ান, আমি বুঝতে পেরেছি, আমি তোমাকে যতই মারি না কেন! তুমি এই চিঠি লিখতে কখনোই রাজি হবে না। তাই, আমি ভাবছি, তৃষাকে নিয়েই যখন এত গন্ডগোল, এত সমস্যা। তখন আমি তৃষাকেই রাস্তা থেকে আউট করে দেবো। আজকের পর থেকে এই পৃথিবীতে সাহিদ সরকারের মেয়ে তৃষা সরকার নামে আর কেউ থাকবে না। আমি ওকে কেটে টুকরো টুকরো করে দিয়ে তোমার সামনে এনে হাজির করবো। তুমি তখন কেঁদে মরে যাবে, কিন্তু ওকে আর কোনোদিন ফিরে পাবে না। কি আয়ান তুমি আমার সাথে একমত তো!"
আয়ান ব্যথায় কুকড়াতে কুকড়াতে বেশ জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলো... " না.... প্লিজ.. প্লিজ আপনি আমার তৃষা'র কোনোরকম ক্ষতি করবেন না। আমি রাজি, আমি রাজি ওই চিঠিটা লিখবার জন্য।"
" গুড বয়, এই... কেউ একজন পেপার আর পেন নিয়ে আয়! আয়ান মির্জা রাজি হয়েছে চিঠি লিখার জন্য।
" পাশের রুমে কাগজপত্র আছে স্যার! আমি নিয়ে আসছি।"
কথাটা বলে লোকটা দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে গেল।
আয়ান নিজের মনে মনে বলতে লাগলো... " তৃষা, তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি এই চিঠি টা কখনোই লিখতে চাই নি। তোমার বাবা আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে এই চিঠি টা লিখাচ্ছে। বিশ্বাস করো তৃষা, আমার হৃদয়ে শুধু তুমিই আছো, আর চিরকাল তুমিই থাকবে। আমি তোমায় কোনোদিন ভুলবো না। একবার শুধু এখান থেকে মুক্তি পাই.. আমি তোমাকে ঠিক খুঁজে বের করে, দু'জনে কোনো দূর দেশে পালিয়ে যাবো। যেখানে সবাই থাকবে আমাদের অপরিচিত, কেউ আমাদের চিনবে না আর আমাদের ব্যাপারে নাক গলাবে না।
___________________
আয়ানকে বন্দি করে রাখা ভাঙাচোরা গোডাউন টা থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ির মধ্যে উঠে পড়লেন সাহিদ সাহেব। স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে তিনি ড্রাইভারকে বললেন... " নে হাশেম, গাড়ি স্টার্ট দে। এখান থেকে আমাকে সোজা অফিসে নিয়ে যাবি।"
" জ্বী, আচ্ছা বড় স্যার।"
কথাটা বলে গাড়িটা স্টার্ট দিল হাশেম। গাড়ি এগিয়ে যেতে লাগলো সামনের দিকে।
সাহিদ সাহেব পকেট থেকে ফোন টা বের করে ফোনের লক খুলে নাম্বার লিস্টে চলে গেলেন। পারমিতা সিদ্দিকী'র নাম্বারটা বের করে তাতে ডায়াল করলেন।
সোফায় বসে একটা পাকিস্তানি ড্রামা " তেরি মেরি দুনিয়া" দেখছিলেন পারমিতা সিদ্দিকী। ড্রামা টা এতই হাসির যে তিনি হেসে হেসে একাকার। হঠাৎ পাশ থেকে ওনার ফোনটা বেজে উঠলো। খানিকটা বিরক্ত হয়ে তিনি টিভির স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে ফোনটা হাতে নিলেন। দেখলেন সাহিদ সাহেব ফোন করেছেন। অন্য হাতে টিভির রিমোট টা তুলে টিভির সাউন্ড কিছুটা কমিয়ে দিয়ে তিনি ফোনটা কানের ধারে নিয়ে নরম গলায় বললেন... " হ্যালো!"
" পারমিতা!"
" হুঁ, বলো।"
" পারমিতা, আমি তোমাকে এখন যে কথাগুলো বলছি,, সেগুলো খুব ভালো করে শোনো। আমি কিন্তু একটা কথা একবারই বলবো।
আজ জোহরের আজানের পরপর তুমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে! শপিং করতে যাবে নাকি নিজের কোনো বান্ধবীর বাসায় যাবে, সেটা সম্পূর্ণ তোমার ইচ্ছে। শুধু তুমি বেরিয়ে যাবে ব্যাস। আর হ্যাঁ, বাড়িতে যেন আজ দুপুরের পর কেউ না থাকে একমাত্র তৃষা ছাড়া। দুপুরে বাড়িতে একটা চিঠি যাবে, চিঠিটা যেন তৃষাই পায়। বুঝতে পেরেছো!"
" হুম, পেরেছি কিছুটা। কিন্তু কিসের চিঠি গো? আমায় একটু বলবে প্লিজ!"
" না পারমিতা, সবকিছু খুলে বলার মতো অত সময় এখন আমার হাতে নেই,, সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফিরলে আমি তোমায় সব বলবো। এখন আমি শুধু তোমায় যা বললাম, সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন কোরো।
" আচ্ছা......!"
ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে দিলেন সাহিদ সাহেব। পারমিতা সিদ্দিকী মনে মনে ভাবতে লাগলেন দুপুরের পর আবার কিসের চিঠি আসছে তৃষার জন্যে? কি লিখা থাকবে তাতে? কি এমন চিঠি সেটা! যেটা ওর কাছে যাওয়া খুব ইম্পর্ট্যান্ট!
To Be Continued.........
জীবন সাথী (৩)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
84
Views
10
Likes
1
Comments
5.0
Rating