আবিদ হসপিটালে ডুকেই একটি ইমারজেন্সি রোগীকে চেকাপ করলো..
তারপর কিছু ঔষধ লিখে দিল...
দুপুরে বাসায় ফিরে রোজার দিকে তাকালো রোজা ঘুমিয়ে আছে।
রোজার মুখের চাহনি কতো কমল আভা যেন ভালবাসায় পরিপূর্ণতা পেয়েছে। তাই আর ঘুম থেকে ডাকল না।
কয়েকদিন পর..
তাদের ভালোবাসার খুনসুটিময় দিন কাটছিল, সুখে দুঃখে তারা একে অন্যকে আপন করে নিয়েছে।
আবিদ মোবাইল টা অন করে কিছু নিউজ দেখছিল... হঠাৎ খেয়াল করল রোজার কলেজ থেকে ইন্টার ফাইনাল ইয়ারের নোটিশ দিয়েছে ২০দিন পরেই পরীক্ষা।
কাল সকালে রোজাকে বাড়িতে নিয়ে যাবে। রোজা রেডি হয়ে থেকো।
আমি বাড়িতে যাবো না ডাক্তার সাহেব প্লিজ প্লিজ আমি আপনার কাছে থাকি।
না যেতেই হবে, পড়াশোনা করো মন দিয়ে পরীক্ষাতে ফেল করলে আমার মান সম্মান একদম থাকবে না বুঝেছো মাই ডেয়ার বউ।
না যাবো না আমি মন খারাপ করে রোজা বলল..
'সকাল ১০টা
'আবিদ রোজাকে নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে। সবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় রোজার খুব কান্না পেয়েছিলো তাও নিজের মনটা কে শক্ত রেখে বাসা থেকে বের হয়েছিলো। গাড়িতে উঠেই মনটা হুহু করে উঠলো। ২০দিন যেন এক বছরের মতো লাগবে তার কাছে।
বিয়ের প্রথম প্রথম গ্রামে যেতে খুব ইচ্ছে করেছিল এখন ঢাকা শহরে থাকতে মন চাচ্ছে। আবিদ নিজেই ড্রাইভ করছে৷ পাশের সিটে রোজা মন খারাপ করে বাহিরে তাকিয়ে আছে। যতোবার মনে পড়ছে আবিদ কে ছাড়া তার থাকতে হবে ততবার যেনো মনটা ভেঙ্গে যাচ্ছে তার।
মাঝে মাঝে আবিদের দিকে তাকাচ্ছে। লোকটা একদম শান্ত ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে।'
'রোজা নিরবতা ভেঙ্গে বলল...'
"আমি যে চলে যাচ্ছি আপনার কষ্ট হচ্ছে না?"
আবিদের দৃষ্টি সামনের দিকে। রোজার দিকে একবারও তাকালো না।'
"না কেন কষ্ট হবে? তুমি তো এক্সাম দিতে যাচ্ছো। শেষ হলেই আবার চলে আসবে।"
রোজা মনটা আবারও ভেঙ্গে গেলো।'
"জানি তো কষ্ট হচ্ছে না। আপনার মনে তো আর আমি নেই যে আমার জন্য কেনো কষ্ট হবে?
কষ্ট তো হবে অন্য মেয়ের জন্য।"
আবিদ গাড়িটা থামালো। অবাক চোখে রোজার দিকে তাকিয়ে। ইদানীং তার ব্যবহারগুলোর সাথে অপরিচিত সে। গ্রামে যাচ্ছে এই শোকে বোধহয় পাগল হয়ে গিয়েছে। আবিদ রোজার দিকে অনেকটা ঝুঁকে এলো। যা দেখে রোজা ঘাবড়ে গিয়েছে।'
"কি বললে তুমি?"
রোজা থতমত খেয়ে গেলো।'
"না না কিছু বলি নি। আপনি গাড়ি চালানো বন্ধ করলেন কেনো?"
আবিদ হেসে দিলো। তাও আবার সেই সুন্দর হাসিটা।
উফ রোজা তুই আজ শেষ হবি এই হাসি দেখে। আবিদ আবার ঠিকঠাক মতো বসলো। রোজা বুকে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। হুটহাট এমন হওয়াতে ঘাবড়ে গেলো অনেকটা।'
আবিদ হেসে বললো-'
"যাকে রেখে আসতে যাচ্ছি তার জন্যই তো কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি কষ্ট পাচ্ছি এটা দেখলে তো আর ম্যাডাম যেতে চাইবে না। পড়াশোনার বিষয়ে এতো ভালোবাসা দেখাই না।"
'রোজা মুখটা বাঁকালো। ভেবেছিলো আবিদ দেখেনি।
কিন্তু আবিদ তো ঠিকই দেখে নিয়েছে। আর জানেও রোজা কেনো এমন করেছে।'
"মুখ বাঁকিয়ে লাভ নেই...
যদি এমন করো তোমাকে আর গ্রাম থেকে আনবো না।"
'রোজা ত্যাড়া ভাবে উত্তর দিলো।'
"আমি নিজেই চলে আসবো। যদি একা না আসতে পারি তাহলে মা আর পুষ্প কে নিয়ে সোজা আপনার বাসায় চলে যাবো।"
আবিদ রাগানোর জন্য বললো-'
"তুমি গ্রাম থেকে এসে দেখবে তোমার সতীন অলরেডি তোমার বরের সাথে সংসার করছে। তুমি কি আসলেই বুঝছো না আমি কেনো তোমাকে ওখানে এতো তাড়াতাড়ি রেখে আসছি? আমি তো আরেকটা বিয়ে করছি। তোমার দাওয়াত রইলো অবশ্যই তোমার বরের বিয়েতে আসবে। আমি আর তোমার সতীন খুবই খুশি হবো।"
রোজা যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। কথাটা খুবই বাজে ছিলো। এক বউ থাকতেও আবার বিয়ে করার কথা বলছে। রোজা কেঁদে ফেললো...
"আপনি খুব খারাপ। আমি আপনার সাথে থাকবো না। এতোদিন তাহলে আপনি আমার সাথে অভিনয় করেছেন? আমি তো জানি আপনার আমাকে ভালো লাগে না। কারণ আমি গ্রামের মেয়ে আপনার চোখে তো শহুরে মেয়েদেরকেই ভালো লাগে। আমাকে কেনো লাগবে। দরকার নেই আমাকে গ্রামে দিয়ে আসার এখানেই নামিয়ে দিন। আমি একাই চলে যেতে পারবো।"
'আবিদ ভেবেছে রোজা রাগ করে কথা শোনাবে কিন্তু তিনি তো একেবারে কেঁদেই দিলো। রোজা টেনে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।'
রোজাকে বলল আমার চোখে তুমিই সব সময় সুন্দর। আমি তোমার সাথে কোনো অভিনয় করিনি। তবে এটা ঠিক বিয়েতে আমার মত ছিলো না আমার মা জোর করেছিলো। এইযে তোমাকে আদর দেই, ভালোবাসি এগুলো আমি মন থেকেই দিই। বিয়ের পরেরদিন থেকে আমি তোমাকে মেনে নিয়েছি। প্রথমে মানতে পারছিলাম না এখন তুমি গ্রামে যাচ্ছো আমি সহ্য করতে পারছি না। আবিদ শেখের জীবনে প্রথম নারী তুমি। যার প্রতি সে এতোটা দূর্বল, যাকে না দেখে তার সকালটা শুরু করতে পারেনা, যার কষ্ট হলে সে নিজেও কষ্ট পায়, যার প্রতি আবিদের বুকভরা ভালোবাসা রয়েছে সে মেয়েটি তুমি রোজা। তুমি নিতান্তই ভাগ্যবতী মেয়ে।
কথা শুনে রোজা কষ্টের মাঝেও হাসলো।
"আপনিও অনেক ভাগ্য করে আমার মতো বউ পেয়েছেন এই কথাও কিন্তু ভুলে যাবেন না।"
'আবিদও এইবার হেসে দিলো।'
"উহুম একটুও ভুলবো না।"
'রোজা আবিদের বুকে একটা সুন্দর করে চুমু এঁকে দিলো। তারপর গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো। আবিদও এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেছে। আর এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে।'
'দেখতে দেখতে তাদের গাড়িটি গ্রামে ঢুকলো। রোজা ঘুমিয়ে আছে। সে যে গ্রামে চলে এসেছে তার কোনো খেয়ালই নেই।
আবিদ বাসার জন্য একগাদা জিনিসপএ কিনেছে। সাথে অনেক বাজার ও করেছে। আসার সময় মুনিরা শেখ বলে দিয়েছিলো ও যেনো বাজার করে নিয়ে যায়, কারণ নতুন বর বিয়ের পর প্রথমবার মেয়ের বাড়িতে গেলে বাজার করতে হয়। আর আবিদ ও তাই করলো। তার মা যা যা বলে দিয়েছে সে সবকিছুই নিয়েছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে রোজা এগুলো কিছুই দেখতে পারলো না। সে তখন ঘুমে ছিলো।'
আবিদ পথটা ভুলে গিয়েছে তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রোজাকে জাগালো।'
"উঠেছো তুমি? আমি কতক্ষণ ধরে ডাকছিলাম তোমায়।"
রোজা চোখ পিটপিট করে তাকালো।'
"কি হয়েছে?"
'আবিদ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রোজার দিকে।'
"তোমার গ্রামে ঢুকেছি কিন্তু পথটা ভুলে গিয়েছি। চিনতে পারছি না ঠিক।"
'রোজার মনে হলো সে ঘুমেই ভালো ছিলো। এখন আবার মনটা খারাপ করে দিলো লোকটা।
"আচ্ছা আপনি গাড়ি চালান আমি বলছি।"
'রোজা বলছে সেই মোতাবেক গাড়ি চালাচ্ছে। মাঝে মাঝে বলতে গিয়ে তার কান্না চলে আসছে। তবুও সে মনটা একদম ঠিক রেখে বলল..
বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা থেমেছে। গ্রামের রাস্তাগুলো একেবারে সরু। রাস্তার চারপাশে গাছ আর ধান ক্ষেত। আবিদ গাড়ি চালানো পাশাপাশি চারপাশ ও একটু দেখে নিয়েছিলো। যখন প্রথমে এসেছিলো তখন এসব কিছুই খেয়াল করে নি।'
'রোজা গাড়ি থেকে নামলো, আর পুষ্প সেটা দেখে দৌড়ে তার আপু কে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।'
"মা আপু এসেছে।"
'রুবিনা খাতুন ও আসলো। তার মেয়েকে একেবারে বুকের সঙ্গে মিশিয়ে রাখলো। রোজার মাথায় কয়েকটা চুমু দিলো রুবিনা খাতুন। রোজা ও একদম তার মা কে জড়িয়ে ধরে আছে পাখির ছানার মতো।'
'জামাইয়ের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো রুবিনা খাতুন। কিন্তু পুষ্প কোনো রকম কথা বললো না। আবিদ একবার ভুলবশত তাকিয়ে ছিলো কিন্তু মেয়ে তাকে দেখে মুখটা ভেঙ্গিয়ে দিলো। আবিদ একেবারে হকচকিয়ে গেলো।বুঝেছে এর রাগ এখনো কমেনি।'
'আবিদ শান্ত কন্ঠে রুবিনা খাতুন কে বললো-'
"তাহলে মা আমি এখন আসি!"
'রুবিনা খাতুন অবাক হয়ে গেলো। আসি মানে কি এখনই চলে যাবে নাকি? নতুন জামাই প্রথম বাড়িতে এসেছে মাএ এখনই যাওয়ার কথা বলছে?'
"কি বলছো বাবা। এখন চলে যাবে মানে?"
'আবিদ সৌজন্যবোধক হাসলো।'
"আসলে মা আজ কিন্তু আমার ডিউটি ছিলো। তাও ছুটি নিয়েছি শুধুমাত্র রোজার জন্য। এখন আবার চলে যেতে হবে কারণ কাল থেকে আমাকে ডিউটি তে ফিরতেই হবে। রোজা জানে সব।"
রোজা বলে বসল আপনি যাবেন না শুনছেন তো কি বলছি আমি....
চোখে পানি টলমল করছে....
রোজার মাও আবিদকে যেতে দিতে রাজি না অন্যন্ত ৩টা দিন থেকে যাও বাবা... এতোদিন পরে এসেছো আর একটি রাত না থেকেই চলে যাবে। যেও না বাবা....
আবিদ বলল তাহলে হসপিটালে কথা বলে দেখি...
রোজা মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে।
নোট : আপনাদের কথায় গল্পটি দ্রুত দিলাম। মতামত জানাবেন কমেন্টের মাধ্যমে...
আজকের পর্ব কেমন লাগলো...?
কে কোন জেলা থেকে আমার গল্পটি পড়ছেন?
বলো ভালবাসি
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
148
Views
6
Likes
1
Comments
4.3
Rating