ঢাকার ব্যস্ত বিকেলে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে বসে ছিল রিদওয়ান। তার হাতে একটা পুরনো নোটবুক, আর চোখে ক্লান্তির ছাপ। ফাইনাল ইয়ারের শেষ প্রেজেন্টেশন জমা দিয়ে সে এখন খানিকটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। কিন্তু ভেতরের অস্থিরতা কোনোভাবেই কমছে না।
“চা খাবেন?” – পেছন থেকে হঠাৎ প্রশ্ন।
সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় স্কার্ফ, হাতে কাগজের কাপ। পরিচিত মুখ নয়, কিন্তু চোখদুটো যেন কোথায় আগে দেখা।
“ধন্যবাদ, কিন্তু আমার চা পছন্দ না।” — হালকা হেসে বলল রিদওয়ান।
মেয়েটা বসে পড়ল পাশেই। চায়ের কাপটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল, “তবু বললাম। কেউ যদি কখনো না জিজ্ঞেস করে, তাহলে আমরা কখনো জানতেই পারি না কার দরকার কী ছিল।”
রিদওয়ান একটু অবাক হল। এমন কথাবার্তা খুব কম মানুষই বলে।
“আপনার নাম?” — সে বলল।
“নওরীন। আর আপনি?”
“রিদওয়ান। কি কাজ এখানে?”
“আমার ভাইয়ের ছবি তুলতে এসেছি। ওর এসএসসি রেজাল্ট হয়েছে। এখন লেকের পাশে দাঁড়িয়ে 'ফিল্মি' পোজ দিচ্ছে। আমি বোর হয়ে গেছি। আপনাকেই ধরলাম।”
নওরীনের চোখে ছটফট করা প্রাণ। সে অনর্গল বলে যাচ্ছে। রিদওয়ান শুধু শুনছে।
পনেরো মিনিট পর, নওরীন বলল, “আপনার ভাবনা অনেক গভীর মনে হচ্ছে। কেউ আপনাকে ভেঙে দিয়েছে?”
রিদওয়ান এক মুহূর্ত চুপ। তারপর বলল, “না। আসলে আমি কাউকে গড়তে গিয়ে নিজেই ভেঙে গিয়েছিলাম।”
সেদিন বিকেলটা তারা একসঙ্গে কাটায়।
পরদিন ফেসবুকে নওরীনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে।
তারপর ইনবক্স।
তারপর একদিন— নওরীন বলে বসে,
“রিদওয়ান, আমি তো আগে প্রেমে পড়িনি। কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার এখন কিছুই ভালো লাগে না।”
রিদওয়ান উত্তর দেয়নি তখনই।
তবে রাতে একটা গান পাঠায়,
“তোমায় দেখে মনে হল, এটাই বুঝি ঘর ফেরার ঠিকানা।”
---
এরপর যেন সময় থেমে গিয়েছিল।
ঢাকার ট্রাফিক, ক্লাস, কফিশপ, সিনেমা— সবখানেই তারা একে অপরের ছায়া হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু ভালোবাসার গল্পে কখনো কখনো ছায়ারাও পথ হারায়।
নওরীনের পরিবার একসময় জানতে পারে এই সম্পর্কের কথা।
তার বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
তিনি চান মেয়ে প্রবাসে পিএইচডি করুক।
রিদওয়ান? সে শুধু সাধারণ মধ্যবিত্ত ছেলে। বাবার ছোট্ট চাকরি, মায়ের অসুস্থতা, নিজের স্বপ্ন নিয়ে কুঁকড়ে থাকা বাস্তবতা।
একদিন, রিদওয়ান মেসে ফিরে দেখে ইনবক্সে নওরীনের মেসেজ:
"আমাদের দেখা হবে না কিছুদিন। আব্বু জানে গেছে সব। ফোনেও না আসিস ক'দিন। প্লিজ।"
রিদওয়ান শুধু উত্তর দেয়,
"তুই থাকিস ভালো। আমি তোর অপেক্ষায় থাকবো— চুপচাপ।"
আরও পাঁচ দিন যায়।
তারপর একদিন, ডাকপিয়নের ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে একটা খাম।
হাতে লেখা চিঠি—
"রিদওয়ান,
আমি তোর কিছু ছেঁড়া পৃষ্ঠা হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বিশ্বাস কর, প্রতিটা ছেঁড়া পাতায় শুধু তোর নামই থাকবে..."
(চিঠির পুরোটা সে পড়েনি তখন, চোখ ভিজে গিয়েছিল মাঝখানেই।)
চলবে........................
শেষ চিঠি ( পর্ব ০১)
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
153
Views
7
Likes
3
Comments
5.0
Rating