জীবন সাথী (২)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
পারমিতা সিদ্দিকী বেশ কিছুক্ষণ আগেই তৃষা'র রুম থেকে চলে গিয়েছেন। কিন্তু সে এখনো জানালার রেলিং ধরে কাঁদছে। কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মনে মনে সে আয়ানকে ধিক্কার জানিয়ে বলছে.. " আয়ান, বলো না কোথায় তুমি? আমি তোমার কাছে চলে যেতে চাই! নইলে যে এরা আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেবে। আমি এই বিয়েটা কিছুতেই করতে পারবো না, আমি শুধু তোমাকেই ভালবাসি এবং চিরকাল তোমার হয়েই থাকতে চাই। প্লিজ আয়ান প্লিজ, তুমি যেখানে আছো, আমাকেও সেখানে নিয়ে চলো। আমি তোমাকে ছাড়া বড্ড অসহায়।"



..........Flash Back 01 Year..........



তৃষা'র সেদিন ভার্সিটিতে প্রথম দিন। তার ছোটবেলা থেকেই খুব বড় স্বপ্ন ছিল, সে একদিন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। ইনশাআল্লাহ, নিজের যোগ্যতায় সে সেটা সম্পন্ন করেছে। সে এটা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, যে জিনিসটা মন থেকে চাওয়া যায়.. সেটা অবশ্যই পাওয়া যায়।

প্রহরের বাইক থেকে নেমে মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইউনিভার্সিটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃষা। ইশ্,, কতই না সুন্দর এই ঢাকা ইউনিভার্সিটি। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ স্টুডেন্ট এর স্বপ্ন যেই ভার্সিটিতে পড়ার তৃষা এখন দাঁড়িয়ে আছে সেই ভার্সিটির সামনে। তৃষাকে এভাবে মুগ্ধ দৃষ্টিতে ভার্সিটির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রহর মৃদু হেসে তার তাকে বলল... " কি রে, তুই কি এই ভার্সিটির দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকার জন্যে ভর্তি হয়েছিস, নাকি পড়ালেখা করার জন্য।"

প্রহরের কথায় তৃষা ভার্সিটির দিক থেকে চোখ সরিয়ে তার ভাইয়া অর্থাৎ প্রহরের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল... " এই ভাইয়া, আমি কিন্তু ভার্সিটিতে পড়ালেখা করার জন্য এসেছি, তোর সঙ্গে গলা বাড়িয়ে ঝগড়া করবার জন্য না। সো, প্লিজ এখন এখান থেকে যা! নইলে কিন্তু এই মূহুর্তে এখানে একটা রক্তারক্তি কান্ড ঘটবে।"

" আর আমি কি তোকে ছেড়ে দেব ভেবেছিস?"

" দেখ ভাইয়া, আমাকে এখন প্লিজ রাগাস না কিন্তু! নইলে আমি এক্ষুনি বাবাকে ফোন করে বলবো, বাবা, তোমার ছেলে আমাকে বকা দিয়েছে।‌ তারপর বুঝবি ঠ্যালা।"

বাবার কথাটা শুনে প্রহর খানিকটা ইতস্তত করতে করতে কেমন জানি একটা জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলতে লাগল... আরে পাগলি, এসব কি বলছিস তুই! বাবাকে কেন বলবি! আমি তো তোর সাথে জাস্ট মজা করছিলাম। প্লিজ সোনা বোন আমার, বাবাকে কিছু বলিস না!"

" ঠিক আছে, বলবো না... কিন্তু তার জন্য তোকে আমায় একটা কথা দিতে হবে! যদি কথাটা রাখিস, তাহলে আমি ভেবে দেখবো.. বাবাকে বলবো নাকি বলবো না"

তৃষার কথা শেষ হতে না হতেই প্রহর ম্লান হেসে বলল... কি কথা বল! তোর আর ওই সাহিদ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমি তোর সব কথা শুনতে রাজি!

তৃষা কেন জানি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলো। তারপর বলল... " আজ যেমন তুই আমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে গেলি, তেমনি ভার্সিটি থেকে আজ নিয়েও যেতে হবে! যদি পারিস, তাহলে আমি বাবাকে বলবো না,, যে তুই আমাকে বকেছিস।"

" কি সুবিধাবাদী মেয়ে রে বাবা। মানুষকে ব্ল্যাক মেইল করে এই মেয়ে বোধ হয় খুনের বন্যাও বইয়ে দিতে পারবে!"

প্রহর কথাগুলো এতটাই আস্তে বললো যে একটা শব্দও তার কানে গিয়ে পৌঁছল না। কিন্তু তাকে ওভাবে মুখ নড়াতে দেখে তৃষা বিস্ময় দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল... " কি রে, তুই কি বললি? কিছু্ই তো ঠিক করে শুনতে পেলাম না!"

" বললাম আসবো! তুই শুধু গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকিস"

" আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখন ভেতরে গেলাম। তোর সাথে বকবক করলে তো আমার পড়ালেখা হবে না!"

এই বলে তৃষা বড় বড় পা ফেলে ভার্সিটির গেইট দিয়ে ভেতরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার চলে যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রহর। মনে মনে মৃদু হেসে সে বলল... পাগলি বোন আমার।"

খানিকক্ষণ ওভাবে থেকে প্রহর তার বাইক নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লো এবং এগিয়ে যেতে সামনের দিকে। এখান থেকে তাকে এখন অফিসে যেতে হবে।



ফোনে কথা বলতে বলতে তাড়াহুড়ো করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট আয়ান মির্জা। সে এতটাই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যে, কোনোকিছু ঠিক করে দেখেও চলছে না সে।
তৃষা মাথা নিচু করে হাঁটছিল। তার সামনে থেকে যে কেউ আসছে সেটা ঠিক করে লক্ষ্যই করছে না সে।

ধাক্কা খেয়ে তৃষা আর আয়ান দু'জন দু'দিকে ছিটকে পড়লো। তৃষা'র সাথে তার বই এবং কিছু কাগজপত্র চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। যেটা দেখে প্রচন্ড রকম রেগে গেল সে। মূহুর্তের মধ্যেই সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো তৃষা। তার সাথে সাথে আয়ানও উঠে দাঁড়ালো। তারপর কোমল স্বরে তৃষাকে উদ্দেশ্য করে বলল... " সরি, সরি, আসলে আমি দেখতে পাই নি। আপনার কোথাও লাগে নি তো!"

তৃষা ছেলেটার কোমল স্বর উপেক্ষা করে রুক্ষ স্বরে বলল... " ইচ্ছে করে ধাক্কা দিয়ে আবার বলছেন সরি। আচ্ছা আপনার সমস্যা কি বলুন তো, মেয়ে মানুষ দেখলে কি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন না নাকি! জিভ লতলতিয়ে ওঠে,, অসভ্য, লম্পট, ইডিয়ট কোথাকার।"

" বিশ্বাস করুন, আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ধাক্কা দিই নি। আমি অমন ছেলে না। আমি নারীদের যথেষ্ট সম্মান করি, আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।"

" কেমন সম্মান করেন তা তো স্বচক্ষে দেখতেই পেলাম। যাই হোক, নাম কী আপনার?"

আয়ান এমন প্রশ্ন শোনার জন্য তখনো প্রস্তুত ছিল না। তাই সে খানিকটা ইতস্তত করতে লাগলো। বিস্ময় স্বরে বলল... " সরি"

" নাম বলতে বলেছি, সরি বলতে বলিনি‌।"

" আমার নাম জেনে আপনি কি করবেন?"

" কি করবো সেইটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি শুধু নাম বলতে বলেছি, বলুন।"

" আয়ান, আয়ান মির্জা।"

" ওহ্ আচ্ছা,, এখন আপনি যেতে পারেন।"

একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আয়ান আবার দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। তৃষা তার বই পত্র গুলো ওঠাতে ওঠাতে দাঁত কটমট করতে করতে বলতে লাগল... " আয়ান মির্জা, এইবার তুমি দেখো আমি তোমার কি হাল করি! মেয়ে মানুষ দেখলেই তোমার জিভ লতলতিয়ে ওঠে না, বের করছি আমি তোমার জিভ লতলতানো। আয়ান মির্জা, জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।"

__________________________


তৃষা সেদিন কিছুতেই বুঝতে পারে নি আয়ান মির্জা মানুষটার জীবনে এত দুঃখ। তার এই দুনিয়ায় কেউ নেই। কত কষ্ট করে তাকে পড়ালেখা করতে হয়! নিজের জন্য কত হিসেব করে দুটো টাকা খরচ করতে হয়।
সেদিন শুধু সে জ্বলছিল প্রতিশোধের আগুনে। কি করে তাকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া যায়। কিন্তু ওই উচিৎ শিক্ষা দিতে গিয়েই তৃষা আয়ানের প্রেমে পড়ে যায়। তাকে মন, প্রাণ, দিল থেকে ভালোবেসে ফেলে।

হঠাৎ দরজায় নক করার আওয়াজ। চমকে ওঠে তৃষা। পারমিতা সিদ্দিকী তার রুম থেকে চলে যাওয়ার পরপরই তৃষা ভেতর থেকে রুমের দরজাটা লক করে দিয়েছিল, যাতে দুম করে কেউ তার রুমে এসে তাকে বিরক্ত করতে না পারে।
তৃষার রুমের দরজা খুলতে একদম ইচ্ছে করছে না। দরজা খুললেই তো আবার একটা ক্যাসেটই বাজা শুরু হবে।
কিন্তু আগন্তুক একের পর এক দরজায় নক করে যাচ্ছে। তৃষা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো.. " কে?"

কিন্তু বাইরে থেকে কারো কোনো আওয়াজ এলো না। আগন্তুক এবার অধৈর্যের মতো দরজায় নক করতে লাগলো। তাতে প্রচন্ড রকম বিরক্ত হলো তৃষা। দরজায় নক করার আওয়াজে একপর্যায়ে আর থাকতে না পেরে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল সে। দরজার কাছে পৌঁছে দরজা টা খুলতেই তৃষা দেখতে পেলো তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে.......

_________________________


দরজায় কড়া নেড়ে সাহিদ সরকার কড়া গলায় বললেন... " এই দরজা খোল!"

ওনার গলার আওয়াজ শুনে আয়ানকে বন্দি করে রাখা লোকগুলোর মধ্যেকার লিডার একটা লোককে বলল... " এই কবীর, যা গিয়ে দরজা টা খুলে দে! সাহিদ স্যার চলে এসেছেন।"

" জী ভাই!"

কথাটা বলে লোকটা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজা টা খুলে দিতেই হনহন করে ভেতরে ঢুকে পড়লেন সাহিদ সাহেব। সাথে সাথে বাকি লোকগুলোও বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো এবং একসাথে বলল... " আসসালামু আলাইকুম বড় স্যার,, কেমন আছেন?"

সাহিদ সাহেব কারো সালাম এবং প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই আয়ানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে তাকালেন। ওনার মুখটা দেখে মনে হচ্ছে তিনি এই বুঝি তাকে গিলে খেয়ে ফেলবেন।





To be continued....................
105 Views
12 Likes
2 Comments
4.7 Rating
Rate this: