আখির মুখ রীতিমতো হাঁ হয়ে গেছে। সে বিস্ময়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। আরিফ রওশনের কথা এখনও বিশ্বাসই করতে হচ্ছে না তার। আখি পাশে তাকিয়ে দেখল দিনাও তার মতন হাঁ করে স্টেজের দিকে তাকিয়ে আছে। মানে তারও একই অবস্থা।
- দ... দিনা, আ..আচ্ছা এই দুটো CEO কে আটকে রেখে অন্য কাউকে CEO বানিয়ে নিয়ে আসে নি তো? (আখি)
- আরে নাহ্, আমি ওনার ছবি দেখেছি। এটাই CEO sir. (দিনা)
- তাহলে............ (আখি)
আখি আর কিছু ভাবতে পারলো না। এমনি এমনিই তার ডানহাত মাথায় চলে গেলো। ধপ করে বসে পড়লো পাশের চেয়ারে। এখন তার কাছে ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এজন্যই সকালে মাহির বলেছিলো যার যেখানে থাকার কথা সে সেখানে আছে। তারমানে তারা এতদিন আসল বসকেই নকল বস সাজিয়ে অফিসে নিয়ে এসেছে! আর নিজেরা তাদের বসের ওপর হুকুমদাড়ি করেছে! এখন তাদের কি হবে!
মাহির ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকা শত মানুষের মধ্যেও আখিকে খুঁজে পেয়েছিলো অনেক আগেই, যখন সে স্টেজে উঠেছিলো। যখন তার বাবা তার পরিচয় বলছিলো, সে শুধু আখির মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আখির অবস্থা দেখে বেশ মজা লাগছিলো তার। তবে এখন যখন আখি মাহিরের দিকে তাকালো, তখন মাহির তার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব রহস্যময় একটি হাসি দিলো। আখি শুধু একটি শুকনো ঢোক গিললো। আজ যে আর কি হতে চলেছে সেটা ভেবেই আখির মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগলো।
- তো আজকে যার জন্য আপনাদের সবাইকে ডাকা, সেই বিষয়টিতে এখন যাওয়া যাক।
আমার অবশ্যই যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এই বয়সেও আমি আমার ব্যবসা যথাসম্ভব দেখাশোনা করে যাচ্ছি। কিন্তু, আমার মনে হয় না আমি বেশিদিন আর এভাবে কাজ করতে পারবো। আমার এখন অবসরে যাওয়া উচিত। পরবর্তী প্রজন্মকে সুযোগ দেয়া উচিত। তাই আমি ঠিক করেছি আমি আমার কোম্পানির দায়িত্ব আমার ছেলে মাহিরের ওপর দিয়ে আমি ছুটি নেবো। I, the present chief Executive Officer of Raoson Enterprise is declaring-From this moment, The Chief Executive Officer of Raoson Enterprise is my son Mahir Raoson. (মাহিরের বাবা)
মাহিরের বাবার কথা শেষ হওয়ার পর জায়গাটি হাততালির শব্দে ফেটে পড়লো। মাহিরের বাবা এমন একটা ঘোষণা করবেন তা হয়তো কেউই কল্পনা করতে পারেনি, এমনকি মাহির নিজেও না। আরিফ রওশন এ কথাটি অনেকদিন আগেই বলেছিলেন, তবে এ দিনটি যে এত তাড়াতাড়ি আসবে তা সে বুঝতে পারেনি।
- এটা ছিলো আমার প্রথম ঘোষণা। এখন দ্বিতীয় ঘোষণার পালা। আপনারা সবাই জানেন যে আমি আমার ব্যবসাটা একাই শুরু করেছিলাম। কিন্তু তার কিছুদিন পর আমার ছোট ভাই সৌমিক আমার সাথে যুক্ত হয়। সেইসময় সে আমাকে প্রচুর সাপোর্ট দিয়েছে। সে ছাড়া আমি এতদূর কখনোই আসতে পারতাম না। আমি বিদেশে থাকাকালীন সময়েও সে আমার ব্যবসা খুব দক্ষতার সাথে দেখাশোনা করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে পাঁচবছর আগে রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। এখন সে আমাদের কাছে হয়তো নেই। কিন্তু তার ছেলে দীপ্ত রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে তারও অধিকার রয়েছে আমাদের কোম্পানিতে। মাহিরের কোম্পানিতে যত অধিকার আছে, তার সমান অধিকার দীপ্তরও আছে। তাই, আমি আর দেরী করতে চাইছি না, তাকে নিজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চাইছি। আমি আজ থেকে তাকে কোম্পানির Chief Operating Officer (COO) হিসেবে ঘোষণা করলাম। (মাহিরের বাবা)
আবারও হাততালির জোয়ার বয়ে গেলো। অঙ্কীতা রওশনও প্রচন্ড খুশি হলেন আরিফ রওশনের কথায়।
- খুব দ্রুতই আনুষ্ঠানিকভাবে মানে নিয়ম অনুযায়ী কাগজে কলমে এসব সম্পন্ন হবে। And my last declaration is, We have come to Bangladesh permanently. মানে আমরা আর বিদেশে যাচ্ছি না। এখন থেকে এখানে থেকেই আমরা ব্যবসা দেখাশোনা করবো। তো আমি আর লম্বা বক্তব্য দেবোনা, মাহির আর দীপ্ত, আশা করি তোমরা নিজেদের কাজ দায়িত্ব সহকারে পালন করবে এবং রওশন এন্টারপ্রাইজকে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে দেবে। Thank you. (মাহিরের বাবা)
পরপর তিনটি চমক পেয়ে উপস্থিত সবাই হতবাক। কোম্পানির অনেক সিনিয়র স্টাফ ও অনেক বড় বড় সুনামধন্য ব্যবসায়ী আরিফ রওশনের সিদ্ধান্তে খুশিও হয়েছে। তবে উপস্থিত সকলের মধ্যে একজন মনে মনে বলে ওঠে -
- বাহ্, আপনি তো আমাকে খুব ভালো একটা সুযোগ করে দিলেন। এবার খেলা জমবে। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী না হলে খেলায় মজা কোথায়? Don't worry Mahir, I'm coming to destroy Raoson Enterprise and specially you.
৪৩.
- সব, সব হয়েছে তোর জন্য। দেখে দেখে আর কিডন্যাপার পেলি না? ঐ মাহিরকেই তোকে কিডন্যাপ করতে হলো? (দিনা কপট রাগ দেখিয়ে)
- আরে আমি কি জানতাম নাকি ঐ মাতালটাই বস? (আখি কাঁদো কাঁদো গলায়)
- তুই শুধু ভেবে দেখ আখি, আমরা ওদের সাথে কি কি করেছি। ওদের ওপর হুকুম তো করেছিই, সাথে আবার মাতাল এমনকি গাঁজাখোর পর্যন্ত বলেছি। Can you imagine, what is going to happen with us? (দিনা)
- তুই তো তেমন কিছু করিসনি। আমি যে ওনাকে কিডন্যাপ করতে চাচ্ছিলাম, আমার কী হবে? (আখি)
- ঐ বসের চামচাটাও তো COO হয়ে গেলো। দুজনে মিলে আমাদের কচুকাটা করে ছাড়বে। (দিনা কাঁদোকাঁদো মুখে)
- আজকে তো আবার মিটিং ডেকেছে ঐ মাহির। সবার সামনে মনে হয় অপমান করে অফিস থেকে বের করে দেবে আমায়। (আখি)
- কিন্তু আমি না একটা কথা বুঝতে পারছি না, বস যদি জানতোই তুই ওনাকে কিডন্যাপ করবি, তাহলে উনি পুলিশের কাছে না গিয়ে আবার নিজে নকল বস সাজতে গেল কেন? (দিনা)
চিন্তায় চিন্তায় এই বিষয়টা আখির মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু দিনা যখন বললো তখন তার খেয়াল হলো। একটু ভাবনায় পড়ে গেল সে।
- তবে কি ঐ মাতালটার মনে অন্যকিছু চলছে? (আখি)
আখির কপালে ভাঁজ দেখা যায়।
৪৪.
এতক্ষণে নির্দিষ্ট পেপারে সাইন করে মাহির ও দীপ্ত নিজেদের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। কনফারেন্স রুমে ইতিমধ্যে অফিসের বড় বড় পদে যারা রয়েছেন তারা সমবেত হয়েছেন। আখি ও দিনাও রয়েছে তাদের মধ্যে। কিছুক্ষণ পর মাহির, দীপ্ত, আরিফ রওশন, অবন্তী রওশন ও অঙ্কিতা রওশন প্রবেশ করে। তাদের সম্মানার্থে সবাই উঠে দাঁড়ায়। তারা যে যার আসন গ্রহণ করার পর সবাই আবার বসে পড়ে। শুধু মাহির বিরাট প্রশস্ত টেবিলের প্রস্থের দিকে গিয়ে দাঁড়ায়। আখি যথাসম্ভব নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
- Hello everyone, আজকের announcement এ আশা করি সবাই present ছিলেন এবং সবাই already জেনে গেছেন, Raoson Enterprise এর new CEO হলাম আমি। তাই আগে কি কি রুলস ছিলো সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। এখন থেকে আমি যা বলবো সে অনুযায়ী কোম্পানি চলবে, আর সেটাই হবে রুল। আমি সময় নষ্ট করা পছন্দ করি না, তাই আজকেই আপনাদের ডাকলাম। আপনারা সবাই জানেন আমি কতটা strict. যদিও আমি অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম, কিন্তু আমার সম্পর্কে মোটামুটির ওপর একটা ধারণা তো আপনাদের আছে। অফিসে থাকতে হলে কি কি রুলস মানতে হবে তা আমি আপনাদের আজকে বলে দিতে চাই, যাতে আপনাদের পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয়।
(দুহাতে টেবিলের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে) First of all, Everyone should be punctual. আমার অফিসে থাকতে হলে সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে। সকালবেলা অফিসে আসা থেকে শুরু করে রাতের বেলা বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত সব কাজ আমি সময়ে করা চাই।
তারপর, কাজের বিষয়ে অবশ্যই সিরিয়াস থাকতে হবে। কোনো রকম ঢিলেমো করা যাবে না। এই দুদিনে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমি কাজের বিষয়ে কোনো গাফিলতি সহ্য করবো না।
(আখির দিকে তাকিয়ে) আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।
কোম্পানির সাথে কোনো প্রকার বেইমানি করা যাবে না। সবসময় loyal থাকতে হবে।
দু'দিনের বেশি কেউ ছুটি নিতে পারবেন না।
এই রুলসগুলো যে মেনে চলবে সে অফিসে থাকবে। আর যে মানবে না তার জন্য দরজা খোলা রয়েছে। আমার অফিস তার জন্য নয়। Is it clear? (মাহির)
- Yes sir. (উপস্থিত সকলে)
- আর একটা বিষয়, যেটা হয়ত আপনাদের আমার বলা উচিত নয়, তবে আমি তা-ও বলছি- আপনাদের প্রত্যেকের weekly, monthly and yearly ওয়ার্কিং রিপোর্ট এখন থেকে অ্যানালাইসিস করা হবে। কে কতপরিমাণ কাজ করেছেন, আদৌও কাজ করেছেন কি না, সেটা দেখাশোনার জন্য আলাদা একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাই কাজে ফাঁকি দেওয়ার 1% চান্সও নেই। আর যে সেই চান্সটি খোঁজাও চেষ্টা করবেন, তার জন্য পরদিন থেকে অফিসের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে।
আর কোম্পানির টাকায় এতদিন যারা নয়-ছয় করেছেন, তাদের ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে তারা termination letter পেয়ে যাবেন। (মাহির)
এসির মধ্যে থেকেও অনেকে ঘামতে শুরু করেছেন মাহিরের বক্তব্য শুনে।
- এটা গেলো রুলসের বিষয়। এখন আসি কে কোন পোস্টে থাকবে সেই ব্যাপারে। আমি এই দুদিন সবাইকে observe করেছি। মোটামুটি সবারই পোষ্ট চেঞ্জ হতে পারে। (মাহির)
আখির মনে এবার ভয়ের উদয় হয়। দীপ্ত নিজের চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে মাহিরের পাশে দাঁড়ায় আর বলে-
- তবে সবার পোষ্ট আমরা এখন বলবো না। আপনাদের যাদের পোষ্ট চেঞ্জ হবে তাদের ফোনে মেসেজ চলে যাবে। এখন আপাতত আমরা আমাদের P.A কে হবে তােদর নাম বলছি। (দীপ্ত)
- যেহেতু আমি এখন CEO, তাই অবশ্যই আমাকে help করার জন্য একজন P.A থাকতে হবে। আর আমি একজনকে তার জন্য সিলেক্ট করে রেখেছি। আমি আখি ইয়াসমিনকে আমার P.A হিসেবে রাখতে চাইছি। (মাহির)
মাহিরের কথায় আখি হতবাক হয়ে যায়। তবে তার নাম যেহেতু বলা হয়েছে তাই তাকে তো দাঁড়াতেই হবে। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সবার নজর তার দিকে গেলো। অবন্তী রওশন এতক্ষণ কোণায় বসে থাকা আখিকে লক্ষ্য করেননি। কিন্তু এখন যখন সে উঠে দাঁড়ালো তখন তিনি রীতিমতো আকাশ থেকে পড়লেন। সাথে তার রাগও হলো। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো-
-You!!! (অবন্তী রওশন)
অবন্তী রওশনের আচমকা চিৎকারে সবাই অবাক হয়। আরিফ রওশন নিজের ভ্রূ কুঞ্চিত করে বলে-
- Do you know her Abanti? (আরিফ রওশন)
- Yeah, she is the............ (অবন্তী রওশন)
মাহির তার মায়ের মুখের ভাবভঙ্গি দেখেই বুঝে গেছে যে আখির সাথে হয়তো আগে তার মায়ের দেখা হয়েছে এবং সেটার অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো ছিলো না। যার জন্য তিনি আখির উপর রেগে আছেন। এখন যদি তার মাকে থামানো না হয় তাহলে তিনি এখানে অনেক বড় সিনক্রিয়েট করে ফেলবেন। তাই তার মা কিছু বলার আগেই মাহির বলে -
- Mom, It's office. সিনক্রিয়েট করো না। যা বলার মিটিং শেষ হওয়ার পরে বলো। (মাহির)
মাহিরের বলাতে তার মা তখনকার জন্য তো বসে পড়েন। তিনিও বুঝতে পারেন এখানে সিনক্রিয়েট করা ঠিক হবে না। কিন্তু মনে মনে তিনি রাগে ফুসতে থাকেন।
- তো আমি যা বলছিলাম, আখি ইয়াসমিন, I've selected you as my P.A. (মাহির)
আখি মাহিরের মার চিৎকারে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। মাহির তাকে শান্ত করার পর সে একটু চিন্তামুক্ত হয়েছে। মাহির যে কথাটি এখনই বললো তার প্রতিউত্তরে কি বলবে সেটা সে বুঝতে পারে না। তাই আখি কিছু বলে না। কিন্তু মাহিরের মা আবার উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে বলে-
- No Mahir বেটা, I think তোমার অন্য কাউকে সিলেক্ট করা উচিত। I don't like her. (মাহিরের মা)
- Sorry mom, she has already selected. (মাহির)
মাহিরের মার কিছুই বলার থাকে না। কারণ তিনি তার ছেলের জেদ সম্পর্কে জানেন তাই তিনি আর ব্যর্থ চেষ্টার না করে চুপচাপ বসে পড়লেন।
- Now, it's my turn. I've also selected my P.A. I wanna give this post to Dina. (দীপ্ত)
দিনা বিস্ময় নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মাহিরের মা দিনাকে দেখে আরো রেগে গেলেন। কারণ সেদিন দিনাও ছিল আখির সাথে। তাদের বাড়ির দুই ছেলে যে তার অপছন্দের দুজন মেয়েকে পিএ হিসেবে সিলেক্ট করেছে ভেবে তিনি খুবই অসন্তুষ্ট হলেন।
- Sir, বলছি আপনারা তো ওনাদের দুজনকে অন্য পোষ্টে ট্রান্সফার করে দিলেন। তাহলে এখন ম্যানেজিং ডিরেক্টর আর তার পিএ কে হবে? (ম্যানেজার)
- আমি কি একবারও বলেছি আমি ওদের পোস্ট ট্রান্সফার করে দিয়েছি? আমরা শুধু একটা ওনাদের পোস্ট অ্যাড করেছি। আখি আমার পিএ ও হবে, পাশাপাশি ম্যানেজিং ডিরেক্টরও থাকবে। (মাহির)
- What! (আখি বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে)
- মানে একসাথে দুটো পোস্টে থাকবে উনি? (ম্যানেজার)
- শুধু উনি নয়, দিনার ক্ষেত্রেও তাই হবে। (দীপ্ত)
- But how is this possible? (দিনা)
- Sorry, আমরা এটা মানতে পারছি না। (আখি)
- প্রথমের দিকেই বলা হয়েছে এখানে থাকতে গেলে আমার সব order মেনে চলতে হবে। না মানলে আপনি বেরিয়ে যেতে পারেন, দরজা খোলা আছে। (মাহির)
আখিকে তাই অগত্যা বসে যেতে হলো। প্রায় একঘন্টা পর মিটিং শেষ হলো। সবাই নিজের নিজের কাজে চলে গেলো। আরিফ রওশন, অবন্তী রওশন ও অঙ্কিতা রওশনও অফিস থেকে বেরোলেন। তবে বের হওয়ার আগে অবন্তী রওশন আখির কাছে গিয়ে বললেন-
- Stay away from my son. (অবন্তী রওশন)
আর মাহিরকে বললেন-
- আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে। তোমার সাথে কথা আছে। (মাহিরের মা)
সবাই চলে গেলে রুমে শুধু থাকে আখি, দিনা, মাহির আর দীপ্ত। মাহির আখির দিকে তাকিয়ে বলে-
- Come to my cabin right now. (মাহির এই বলে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে যায়)
- (দিনার দিকে তাকিয়ে) And you,,,, also come with me. (দীপ্ত)
মাহির ও দীপ্ত চলে গেলে আখি ও দিনা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একটা শুকনো ঢোক গেলে।
৪৫.
আখি ভয়ে ভয়ে মাহিরের কেবিনের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করে সে কাঁচের দরজায় দু বার টোকা দিয়ে বলে-
- May I come in sir? (আখি)
- Come in. (ভেতর থেকে গম্ভীর আওয়াজ এলো)
আখি অনুমতি পেয়ে কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করলো। সে দেখলো মাহির চেয়ারটা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে বসে আছে। আখির উপস্থিতি টের পেয়ে মাহির নিজে চেয়ারটি সামনের দিকে ঘোরালো। আর আখির চোখের দিকে তাকালো। মাহিরের এই চাহনিতে আখির বুকের ভেতরের পানি শুকিয়ে গেলো। এতদিন মাহিরের চাহনিতে গাম্ভীর্য থাকলেও কোথাও একটা ছিলো আনুগত্য। কিন্তু আজ সেখানে প্রভুত্ব, রাগ, প্রতিশোধ সব মিলিয়ে এক মিশ্র দৃষ্টির সৃষ্টি হয়েছে। দৃষ্টিটি কিন্তু খুব শান্ত। কিন্তু মাহিরের এই শান্ত দৃষ্টিতে যে কেনো আখি এত ভয় পাচ্ছে, তা সে নিজেও জানে না।
- তো, মিস আখি, I have to really admire your brave. তুমি মাহির রওশনকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছো। বয়স কত তোমার? (তাচ্ছিল্যের স্বরে) এইটুকু একটা পুচকে মেয়ে নাকি আমাকে কিডন্যাপ করবে। How funny!! (মাহির)
- S...sorry sir, আমি আসলে বুঝতে পারিনি আপনিই....... (আখি)
- মাহির রওশন। তাই তো? (মাহির)
- প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি আসলে... মানে থেকে যে কি হয়ে গেল..... (আখি ভীত স্বরে)
- আর অফিসের সবাইকে কি বলেছ তুমি? You are my girlfriend-তাই না? (মাহির)
- না... মানে... (আখি)
- তোমার ধারণা আছে? কেউ যদি আমার পার্টনার হয়, তাহলে তাকে কি কি সহ্য করতে হবে। পুঁচকে একটা মেয়ে তুমি। সেসব সহ্য করার ক্ষমতা আছে? (মাহির)
- আমি ত..তো ওটা ইচ্ছে করে করিনি স্যার। (আখি)
- এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্যেও কি কি শাস্তি হতে পারে সেটা কল্পনা করলেও তোমার বুকের জল শুকিয়ে যাবে মিস। (মাহির)
মাহির ডেভিল স্মাইল দিয়ে নিজের চেয়ার থেকে উঠে আস্তে আস্তে আখির কাছে আসতে লাগলো। মাহিরের এগিয়ে আসা দেখে আখি পিছাতে লাগলো। একসময় তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলো। আখি সামনে তাকিয়ে দেখলো মাহির তার খুব কাছে চলে এসেছে। মাহির দুহাত দেয়ালের দুপাশে রেখে আখিকে আবদ্ধ করে তার দিকে তাকিয়ে বললো-
- তুমি কি ভেবেছো, তোমাকে নিজের পিএ করেছি ক্ষমা করার জন্য, নাকি আমি তোমাকে অফিস থেকে বের করে দিইনি বলে তুমি ভেবে নিয়েছো তুমি পার পেয়ে গেছো। এটা যদি ভেবে থাকো তাহলে তুমি সম্পূর্ণ ভুল। তোমাকে যদি অফিস থেকে বের করে দিতাম,অথবা পুলিশের হাতে তুলে দিতাম, তাহলে তো খেলা একেবারেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু না, I won't do that. তোমাকে আমার পিএ করার লক্ষ্য হলো আমি যাতে তোমাকে সবসময় একটা প্যারার মধ্যে রাখতে পারি। আমাকে অন্যদের মতো ভেবো না। কিভাবে সবচেয়ে best উপায়ে নিজের প্রতিশোধ নিতে হয় তা আমার ভালো করে জানা আছে। (মাহির)
মাহির এই বলে আখির থেকে সরে এলো। আর গম্ভীর হয়ে বললো-
- Miss Akhi, Go and take the file of the recent agreements of our office. (মাহির)
আখি মাহিরের ব্যবহারে পুরো স্তম্ভিত হয়ে গেছে। তার হৃদস্পন্দনটা এখনও খুব দ্রুত ওঠানামা করছে। এত সুদর্শন একজন যুবক তার এতটা কাছে ছিলো!! তার শরীরের পারফিউমের পুরুষালী গন্ধ আখির নাকে এসে হানা দিচ্ছিলো। ভয় আর উত্তেজনায় নিঃশ্বাস আটকে আসছিলো তার। তবে খুব দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলে উঠলো-
- Y....yes sir. (আখি)
চলবে..................................
দেরির জন্য দুঃখিত।
পরিণীতাসক্তি
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
125
Views
2
Likes
3
Comments
5.0
Rating