প্রতিশোধ

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
মায়াকে প্রথম দেখে শামীম তার চেম্বারে। চাচাকে নিয়ে এসেছিলো ডাক্তার দেখাতে। মায়ার মা বাবা মারা যান অনেক আগেই, চাচার কাছে মানুষ। চাচারও একটা করুণ অতীত আছে…. স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে চাঁদপুরে আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলো, ফেরার পথে লঞ্চ ডুবিতে বহু যাত্রীর সাথে তারা মারা যায়। এই অসহনীয় যন্ত্রণা তিনি ভুলতে চেয়েছেন মায়াকে নিয়ে… এতিম মেয়েটিকে  পিতৃস্নেহে লালন পালন করেন। 

অপূর্ব সুন্দরী মেয়েটিকে দেখে শামীমের মাথা ঘুরে যায় এবং সুদর্শন শামীমও বুঝতে পেরেছিলো মায়াও তার প্রতি র্দুবল। অসুস্থ চাচাকে ডাক্তার দেখাবার সূত্র ধরেই দুজনে পরস্পরের খুব কাছে চলে আসে। চাচার কাছে শামীম তার সহকর্মীর মারফত মায়াকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়… শামীমের মত এত উপযুক্ত পাত্রকে অপছন্দ করার প্রশ্নই নেই… আদরের ভাইজির সুব‍্যবস্থা হওয়ায় তিনি অত্যন্ত খুশী মনেই সম্মতি দেন। 

বেশ ধুমধাম করেই বিয়েটা হয়ে যায়, উভয় পক্ষের কম নিমন্ত্রিত অতিথি হয়নি…. সানন্দেই সবাই নব দম্পতিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দাওয়াত খেয়ে গেলো। শামীমের শূণ্য ঘর মিষ্টি বৌয়ের আগমনে পরিপূর্ণ হলো। উভয়ে মনের মত জীবন সাথী পেয়ে  খুশীর জোয়ারে ভেসে গেলো। 

চাচা আগেই অসুস্থ ছিলেন, শামীম আন্তরিক চেষ্টা করেও ওনাকে ধরে রাখতে পারলো না…. স্ট্রোক করে মারা গেলেন… দ্বিতীয় বার পিতৃহারা হয়ে মায়া খুবই কষ্ট পেলো কিন্তু স্বামীর প্রাণ ঢালা ভালোবাসা ও সপ্রেম সাহচর্যে মায়া শামীমকে অবলম্বন করে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা পেয়ে সুখ স্বপ্নে বিভোর হয়ে রইলো। 

 মায়া নিজেকে সামলে সংসারে মন দিলো, চাচাকে মনে পড়ে আর বুকের মধ্যে কষ্ট অনুভব করে, চাচা না থাকলে কোথায় ভেসে যেতো, শামীমের মত স্বামী পেয়েছিলো তাই সহজেই শোক ভুলতে পারছে। 

যাইহোক, মায়াকে খুশী রাখার জন্য শামীম সিদ্ধান্ত  নেয়… হানিমুনে যাবে। একটু দোনোমনো করে অবশেষে মায়া রাজী হয়ে গেলো। 

হানিমুনে শামীম দেশের বাইরে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু মায়া রাজী হয়নি, প্লেনে চড়তে তার ভয় লাগে সুতরাং কাপ্তাই – রাঙামাটি – কক্সবাজার – হিমছড়ি ইত্যাদি প্রায় সব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গাগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছে। 

কি যে খুশী হয়েছে মায়া, ছেলেমানুষের মত উচ্ছ্বসিত আনন্দে স্বামীর হাত ধরে সারাদিন ঘুরেছে… যা মন চায় খেয়েছে, প্রাণ ভরে শপিং করেছে। রাতে হোটেলের নিভৃত কক্ষে রোমান্টিক পরিবেশে স্বামীর উষ্ণ আলিঙ্গনে নিজেকে সঁপে দিয়ে আবেশ মাখা তৃপ্তির স্বরে বলেছে…. ওগো, এত সুখ আমার সইবে তো…. 

শামীম কোনো জবাব দিতে পারেনি শুধু মায়ার পেলব কোমল দেহকে আপন শরীরের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। 

না, মায়ার কপালে সত্যিই অত সুখ সহ‍্য হয়নি — কোন নিষ্ঠুর পাষাণ র্নিমম ভাবে শান্ত সুন্দর মিষ্টি মেয়েটির সব স্বপ্ন ভেঙে তছনছ করে দিলো… মাত্র বিকশিত পদ্মের মত পাঁপড়ি মেলছিলো। 

………… 
শুক্রবার চেম্বার বন্ধ থাকে। বাড়িতে থাকতে শামীমের মোটেও ভালো লাগে না, কারো কাছে যেতেও মন চায় না, হাসপাতালেও আজকে যেতে হয় না, কাজের মধ্যে ব‍্যস্ত থাকলে তবু ভুলে থাকা যায়, এতদিন হয়ে গেলো তারপরও হতভাগিনীর স্মৃতি মন থেকে মুছে গেলো না…. বিশেষ করে অত‍্যাচারিত মায়ার মুখের কষ্টের ছাপ তাকে তাড়া করে ফেরে, স্বামী হয়েও স্ত্রীকে নিরাপত্তা দিতে সে অক্ষম হয়েছে, এই মানসিক যন্ত্রণা তাকে শান্তি দেয় না। 

অনেকের বলা সত্ত্বেও দ্বিতীয় বার বিয়ে করেনি, মায়ার জায়গায় কাউকেই সে কল্পনাও করতে পারে না। 

মনে পড়ে… মায়া প্লেনে চড়তে ভয় পেতো, বলতো… মাগো, কত উঁচুতে ভেসে থাকে ঐ ভারী জিনিসটা, কোনো ভাবে পড়লে আর রক্ষা নেই, বেঁচে থাকা যাবে না…. অথচ নিজের বাড়িতে নিরাপদে থেকেও সে বাঁচতে পারলো না। 

চলবে….


73 Views
1 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: