বালিগাঁও গ্রামের হাইস্কুলের শিক্ষক নুরুজ্জামান । মলিন পোশাক, ভাঙা সাইকেল আর মলিন মুখ নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসেন। তাঁর জীবনে বড় কিছু চাওয়া নেই। চাই শুধু তাঁর শিক্ষার্থীদের জীবনে আলোর দিশা দেখাতে।
কিন্তু এই গ্রামের মানুষের কাছে পড়াশোনার চেয়ে জীবিকার চিন্তাই বড়। বাবা-মায়েরা সন্তানদের খেতখামারে কাজে লাগাতে চায়। তাই স্কুলের ক্লাসগুলো প্রায়ই খালি থাকে। তবুও নুরুজ্জামান পাঠদান চালিয়ে যান। কেবল একটাই আশ্রয় তাঁর — ছোট্ট রনি।
রনি গরীব ঘরের ছেলে। বাবাকে হারিয়ে মায়ের সাথে কোনোমতে সংসার চালায়। তবুও রনির চোখে স্বপ্ন, সে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে। শিক্ষক তার অনুপ্রেরণা। তিনি রনির মায়ের সাথে কথা বলেন, রনির পড়াশোনার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন।
দিন যায়, মাস যায়। একদিন স্কুলে আসে বড় এক প্রতিনিধি দল। তারা শিক্ষকদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে এসেছে। নুরুজ্জামান নিজের ছোট্ট ক্লাসরুমেই রনিদের জন্য বিশেষ পাঠদান শুরু করেন। সে দিনের পাঠ ছিল — 'আলো আর অন্ধকার।'
"জীবনের যেকোনো পরিস্থিতি হোক, আমরা যদি জ্ঞানের আলো জ্বালাতে পারি, তবে অন্ধকার কখনো আমাদের গ্রাস করতে পারবে না," স্যার চক দিয়ে লিখেন। রনি তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
বছরখানেক পর...
রনি গ্রামের প্রথম ছাত্র, যে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেছে। তার সাফল্যের গল্প ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে। একদিন রনি কলেজে ভর্তি হতে যাওয়ার আগে সয়ারের কাছে আসে। তার চোখে জল। সে বলে, "স্যার, আপনি না থাকলে আমি আজকে এখানে পৌঁছাতে পারতাম না।"
সয়ারের মুখেও চোখের জল। তিনি রনির মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। "তুমি অনেক দূর যাবে রনি। মনে রেখো, জ্ঞানের আলো জ্বালাতে থাকো।"
রনি চলে যায়, কিন্তু শিক্ষকের ক্লাসরুমে সেই আলো থেকে যায় — আগামী দিনের আরও অনেক রনির জন্য।
শিক্ষকের আলো
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
84
Views
1
Likes
0
Comments
0.0
Rating