১. সূচনা
বরিশালের এক ছোট্ট গ্রামে, কুয়াশায় মোড়ানো সকালের মতোই শান্ত ছিল নীলার জীবন। সে ছিল গ্রামের হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা। আর আরাফ ছিল পাশের শহর থেকে আসা একজন চিত্রশিল্পী, যিনি গ্রামে এসে পাহাড়-নদী-মানুষের জীবনের ছবি আঁকতো। প্রথম দেখা হয়েছিল হাটের পথে, ভাঙা এক কাঠের ব্রিজে—যেখানে নীলা বই হাতে দাঁড়িয়ে ছিল, আর আরাফ তার ক্যানভাসে সেই দৃশ্য এঁকেছিল।
২. ধীরে ধীরে প্রেম
নীলার চোখে ছিল স্বপ্ন, আর আরাফের চোখে ছিল সেই স্বপ্নকে রঙে রাঙানোর আগ্রহ। তারা ধীরে ধীরে কথা বলতে শুরু করলো—প্রথমে বই, তারপরে জীবন। একদিন নদীর ধারে বসে আরাফ বললো, “তোমার চোখে আমি যে পৃথিবী দেখি, তা অন্য কোথাও নেই।” নীলা কিছু না বলে শুধু মুচকি হেসেছিল।
৩. বাধা
কিন্তু প্রেম সহজ পথ চেনে না। নীলার পরিবার চায়নি সে একজন শিল্পীর সাথে সম্পর্কে জড়াক। তাদের মতে, আরাফের জীবন অনিশ্চিত—নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা ব্যাংকার হলে কথা ছিল। পরিবার চাপ সৃষ্টি করতে লাগলো, আর আরাফ শহরে ফিরে যেতে বাধ্য হলো, প্রতিজ্ঞা করে—“যতদিন না নিজের নাম করি, ততদিন তোমাকে পেছনে টানবো না।”
৪. অপেক্ষা
বছর গড়িয়ে গেল। নীলা সেই একই স্কুলে পড়াতে থাকলো, প্রতিদিন চেয়ে থাকতো রেলস্টেশনের দিকে, যদি কোনো ট্রেনে সেই পরিচিত চোখজোড়া ফিরে আসে। আর আরাফ শহরে সংগ্রাম করলো, চিত্রপ্রদর্শনী করলো, খ্যাতি পেলো। তবুও মন পড়ে থাকতো বরিশালের কুয়াশায় ঘেরা সেই নদীর ধারে।
৫. পুনর্মিলন
একদিন গ্রামের স্কুলে অচেনা একজন ভদ্রলোক আসে, হাতে একটি ছবি—নীলার সেই ব্রিজে দাঁড়ানো মুহূর্তের চিত্র। নীলা অবাক হয়ে চায়ের কাপ নামিয়ে তাকায়, আর চিত্রশিল্পী তার পুরোনো গলার স্বরে বলে—“এই ছবিটা বহু প্রদর্শনী ঘুরেছে, কিন্তু এর আসল জায়গা এখানেই।” চোখে জল নিয়ে নীলা বলে, “তুমি ফিরেছো?”
আরাফ উত্তর দেয়, “তুমি অপেক্ষা করেছিলে বলেই ফিরে এসেছি।”
৬. শেষ
গ্রামের ছোট্ট মন্দিরে বিয়ে হয় তাদের। নদীর ধারে এখনো মাঝে মাঝে একজোড়া চেয়ার থাকে—একটা নীলার জন্য, একটা আরাফের। তারা সেখানে বসে জীবনের গল্প বলে, আর কুয়াশা যেনো সব স্মৃতিকে আলতো করে জড়িয়ে রাখে।
চিরন্তন অপেক্ষা
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
73
Views
1
Likes
2
Comments
5.0
Rating