অসহায় সময় ( পাট ৪ )

তিনটি দিন কেটে গিয়েছিল, সাঈদ এবং আমি একে অপরের সাথে প্রায় যোগাযোগ করছিলাম, কিন্তু কোথাও একটা অদৃশ্য দেয়াল ছিল। যদিও আমরা কথা বলছিলাম, তবে আমার মনেই ছিল একধরনের অবিশ্বাস। সময়ের সাথে সাথে, সাঈদ যেভাবে বদলাতে চাইছিল, তা কি সত্যিই কার্যকর হবে? নাকি, সে কেবল কিছু সময়ের জন্য কথা বলে, তারপর আবার আগের মতো চলে যাবে?

একদিন, আমি ঠিক করলাম, আমি একা সময় কাটাবো, যাতে নিজের মনের ভেতরে সবকিছু পরিষ্কার করতে পারি। সাঈদ আমাকে বারবার বলছিল যে সে চায়, আমাদের সম্পর্ক আবার নতুন করে শুরু হোক, কিন্তু আমি জানতাম, পুরনো যন্ত্রণা সহজে ভুলে যাওয়ার নয়। মনে হচ্ছিল, কিছু একটা ছিল, যা আমি এখনও জানি না।

এক বিকেলে, সাঈদ আমাকে ফোন করল। “প্রিয়া, আমরা কি একে অপরকে আবার বুঝতে পারবো?” তার কণ্ঠে এক ধরনের উদ্বেগ ছিল, যেন সে জানে, যে সময় আমাদের জীবনকে পাল্টে দেবে, তা চলে এসেছে।

আমি কিছু সময় চুপ ছিলাম। তারপর, ধীরে ধীরে বললাম, “তুমি যদি আমাকে সত্যিই বিশ্বাস করতে চাও, তাহলে আমাকে আরও একবার দেখাও। আমাকে বিশ্বাস করাও, যে তুমি বদলাতে পারবে।”

সাঈদ কিছুক্ষণ চুপ ছিল, তারপর বলল, “প্রিয়া, আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি। তবে, আমি চেষ্টা করছি। আমি জানি, অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি, কিন্তু আমি তোমাকে হারাতে চাই না।”

তার কথাগুলো শুনে, কিছুটা আশা এবং কিছুটা ভয় ছিল। সম্পর্কটা যদি আবার ভেঙে যায়, তবে আমি আর কী করতে পারবো? তবে, আমি জানতাম, এই মুহূর্তে সাঈদ সত্যিই চেষ্টা করছে, তার সর্বোচ্চ দিয়ে আমাদের সম্পর্কটাকে ঠিক করতে। তবে, আমার মনে ছিল সেই ভয়—পুরনো জিনিসগুলোর কারণে, এই সম্পর্ক কি শেষ পর্যন্ত টিকবে?

পরের দিন, সাঈদ আমাকে একটি পার্কে দেখা করতে বলল। সেখানে যাওয়ার আগে, আমার মনে হচ্ছিল যে হয়তো এটি শেষ দেখা হবে, হয়তো আমি ভুল করছি। কিন্তু আমি জানতাম, যদি আমাকে কিছু জানতে হয়, তবে তা এই মুহূর্তেই জানতে হবে।

পार্কে গিয়ে, সাঈদ আমাকে বলল, “প্রিয়া, আমি জানি তোমার কাছে অনেক প্রশ্ন আছে, অনেক কিছু তুমি বুঝতে পারনি। কিন্তু আমি চাই, তুমি আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি, সবকিছুর জন্য।”

তার কথা শুনে, আমি কিছু সময় চুপ করে রইলাম। অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল, এখনো অনেক কিছু পরিষ্কার হয়নি। তাই, আমি বললাম, “সাঈদ, তুমি যদি সত্যিই আমাকে আবার বিশ্বাস করতে চাও, তাহলে তোমাকে আমাকে বুঝতে হবে। তুমি যদি মিথ্যে বলো, কিংবা পুরনো ভুলগুলোই আবার করতে শুরু করো, তবে আমি আর থাকতে পারব না।"

সে মাথা নেড়ে বলল, “প্রিয়া, আমি বুঝতে পারছি। তবে, আমি চাই, একসাথে এক নতুন শুরু করি। তোমাকে আর কখনো কষ্ট দেবো না। আমি তোমার বিশ্বাস অর্জন করতে চাই।”

তার কথা শুনে, আমি কিছুটা আশ্বস্ত হলাম, কিন্তু তখনো কিছুটা সন্দেহ রয়ে গিয়েছিল। তবে, কিছু সময় পর, আমাদের মধ্যে যা ছিল, তা সত্যিই কিছুটা বদলে গেল। সাঈদ আমাকে তার ভেতরের সব কষ্ট, দ্বিধা আর অপরাধবোধগুলো খুলে বলল। আমরা একে অপরকে সত্যি সত্যি বুঝতে শুরু করলাম।

"প্রিয়া, আমি জানি আমাদের সম্পর্ক অনেক কঠিন সময় পার করেছে, কিন্তু আমি জানি, আমরা যদি একসাথে থাকি, তবে কিছুই আমাদের ভাঙতে পারবে না," সাঈদ বলল।

মনে হচ্ছিল, এটা একটি নতুন শুরু। কিন্তু, আমি জানতাম, সত্যি কি সাঈদ তার প্রতিশ্রুতি রাখবে? আমরা কি আবার একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারব?

সাথে একে অপরকে বুঝে, যতটা সম্ভব সঠিক পথে চলার চেষ্টা করলাম। তবে, আমার মনে একটা প্রশ্ন রয়ে গিয়েছিল—কী হবে আমাদের পরিণতি? আমরা কি আবার সেই একই পথ ধরে চলবো, নাকি ভিন্ন পথ খুঁজে পাবো?

এখন, আমি জানতাম, সময়ই সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু, ওই মুহূর্তে, যখন সাঈদ এবং আমি একে অপরকে সত্যি মনের কথা বলছিলাম, আমি অনুভব করছিলাম, কিছু একটা পরিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু শেষ কথা এখনও বলা হয়নি।