তুই সুখী হ আমি কাঁদি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
চারটা বছর কোনো বইয়ের অধ্যায় ছিল না, ছিল এক জীবন্ত কবিতা—জীবন নামের ছেলেটা প্রতিটি শব্দে শুধু একটাই নাম লিখেছিল—রিয়া।
রিয়া তার কাছে প্রেম ছিল না, ছিল পবিত্রতা।
রিয়া ছিল তার প্রতিটি নিশ্বাসের ব্যাকরণ, প্রতিটি স্বপ্নের আকাশ।

জীবন কখনো রিয়াকে ‘চাওয়া’ বলে দেখেনি, সে তাকে ‘পাওয়া’র চাইতেও বড় কিছু ভাবত।
ভালোবাসা ছিল নিঃস্বার্থ—রিয়ার মুখের এক ফোঁটা হাসির জন্য জীবন নিজের শত কান্নাও উৎসর্গ করত।

কিন্তু সময় বদলায়। মানুষ বদলায়।
রিয়াও বদলে গিয়েছিল।
প্রথমে কথাগুলোর ওজন কমে গিয়েছিল,
তারপর চোখে চোখ রাখার সময় কমে আসে।
শেষমেশ জীবনের অস্তিত্বই যেন বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে রিয়ার কাছে।

তবুও জীবন ছাড়েনি।
রিয়া তাকে ‘বোঝা’ ভাবলেও, সে তাকে ‘ভালোবাসা’ ভেবেই ধরে রেখেছিল।
প্রতিদিন প্রার্থনা করত—
“হে আল্লাহ, যদি রিয়া আমার না-ও হয়, তাহলে অন্তত তার সুখ যেন কারো জন্য না থামে।”

তবুও রিয়া চলে গেল।
নতুন কাউকে বেছে নিল।
কারো সঙ্গে হাত ধরে নতুন জীবনের শুরু করল,
আর জীবন?
সে শুধু দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখল...
এক বুক কান্না নিয়ে।

সেদিনটা ছিল রিয়ার বিয়ে।
জীবন সবাইকে এড়িয়ে নিঃশব্দে এক কোণে দাঁড়িয়ে দেখল—
রিয়া লাল শাড়িতে, সিঁথিতে সিঁদুর, ঠোঁটে অলংকারের মতো হাসি...
আর জীবনের বুকের ভেতর চিরস্থায়ী মৃত্যু।

হাজারো মানুষ হাসছিল, গাইছিল, ছবি তুলছিল।
কিন্তু একজন—একজন মানুষ চুপচাপ কাঁদছিল।
তার চোখের জল কারো নজরে ছিল না, তার ভালোবাসার কবর আজ মানুষ ‘শুভকামনা’ বলে আড়াল করে দিচ্ছিল।

রিয়া তাকায়নি।
একবারও না।
জীবনের উপস্থিতি হয়তো তার পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছিল বহু আগেই।

আর জীবন?
সে শুধু একটাই কথা মনে মনে বলছিল বারবার—
"তুই সুখী হ, আমি কাঁদি..."

সেই রাতে জীবন নিজের ডায়েরিতে লিখল—

"আজ আমার ভালোবাসার কবর দেওয়া হলো।"
"রিয়া, আমি তোর কোনো অভিযোগ রাখি না। তুই ভালো থাকিস।"
"তুই যার হাত ধরেছিস, সে যেন তোর কাঁধে মাথা রাখার মানুষ হয়।"
"আমি আর চিঠি লিখব না, তোর নামের অক্ষরগুলো আর আমার কবিতায় আসবে না—তুই ভালো থাকলেই আমি হার মানব সুখে।"
"তুই সুখী হ, আমি কাঁদি—এটাই হোক আমার শেষ প্রার্থনা।"


---

শেষ লাইন:
ভালোবাসা সবসময় পাওয়া যায় না,
কখনো কখনো ভালোবাসা মানে হয়—
চুপচাপ ভালো থাকার দোয়া করে কাঁদা।
73 Views
1 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: