গুহার ভেতর, এক অন্ধকারের ছায়া যেন তাদের চারপাশে ঘিরে রেখেছে। রাকিব, রাজু, এবং ইলিয়াস, তিন বন্ধু, একসাথে চলছিলেন, প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠছিল। তাদের শরীর শীতল হয়ে গেছে, মনে হচ্ছিল, তাদের সামনে একটি বিপদ অপেক্ষা করছে, যা তারা পূর্বে কখনও চিনতে পারেনি।
গুহার ভেতরে এক ভীতিকর নিরবতা বিরাজ করছিল। বাতাস ছিল কনকনে ঠান্ডা, আর চারপাশে অস্পষ্ট আওয়াজের মূর্ছনা। পায়ের নিচে পাথরের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছিল না। হঠাৎ, রাকিব থেমে গেল, এবং তার চোখে এক অদ্ভুত আলো পড়ল।
"তোমরা দেখো, এটা কী?" রাকিব ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল। তার সামনে একটি রহস্যময় আলোর দ্যুতি দেখা গেল। সেটি গুহার গভীরে থাকা একটি প্রাচীন পাথরের উপর প্রতিফলিত হচ্ছিল। রাকিবের মন সাড়া দিল—এটাই হতে পারে সেই রহস্যের চাবিকাঠি, যা মায়াবতীকে থামাতে সাহায্য করবে।
তিন বন্ধু একসাথে সেই আলোর দিকে এগিয়ে গেল। তাদের পায়ের নিচে পাথর খসখস শব্দ করতে থাকল। গুহার দেয়ালে আঁকা প্রাচীন প্রতীকগুলি যেন তাদের দিকে এক ভয়ঙ্কর সংকেত পাঠাচ্ছিল। আর ততক্ষণে, গুহার ভেতর এক ভয়াবহ দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। রাকিব, রাজু, এবং ইলিয়াস একে অপরকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যাচ্ছিল, যেন কেউ একজন পিছিয়ে না পড়ে।
আলোর উৎসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই, এক অদ্ভুত দৃশ্য চোখের সামনে ফুটে উঠল। একটি প্রাচীন কবর ছিল, তার চারপাশে চক্রাকারে কিছু অদ্ভুত প্রতীক খোদিত ছিল। সেই কবরের ভিতরে, একটি কালো পাথরের স্তম্ভ দাঁড়িয়ে ছিল, যা থেকে ভেসে আসছিল এক অদ্ভুত শক্তি। এই পাথর থেকে আসছিল একটি তীব্র ঠান্ডা, যা গুহার পুরো বাতাসকে ঠাণ্ডা করে তুলছিল।
"এটা মায়াবতীর শেষ শক্তির উৎস হতে পারে," রাকিব বলল। "এই পাথরটা ছুঁলে, আমরা তার অন্ধকার শক্তিকে মুক্ত করতে পারব।"
কিন্তু রাজু এবং ইলিয়াস ছিল কিছুটা ভয় পাচ্ছে। তারা জানত, এই পাথরের সাথে জড়িত যে শক্তি, তা কোনো সাধারণ শক্তি নয়। এর সাথে সংযুক্ত ছিল ভয়াবহ অন্ধকার, যা সবকিছু ধ্বংস করতে সক্ষম।
"তবে, কীভাবে এটা ভেঙে ফেলব?" ইলিয়াস জিজ্ঞেস করল। "আমরা যদি কিছু ভুল করি, তবে এই জায়গা আমাদের শেষ হবে।"
রাকিব এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল। তার মনোযোগ পুরোপুরি পাথরের দিকে ছিল। সে জানত, এই পাথরের মধ্যে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। সে একেবারে নীরব হয়ে গুহার দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল। পাথরের মধ্যে কিছু একটি ছবি ফুটে উঠল, যা তাদেরকে সে কখনও দেখেনি।
এই দৃশ্য দেখে, রাকিবের মধ্যে একটি ধারণা সৃষ্টি হল। সে জানত, গুহার ভেতরে বসবাসকারী শক্তি শুধু মায়াবতী নয়—তার অতীতের দানবীয় শক্তিও এই পাথরের সাথে যুক্ত ছিল। সেই শক্তি শুধুমাত্র মায়াবতীকে নয়, বরং পুরো পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইছিল।
"আমরা যদি সঠিকভাবে এই পাথরটি স্পর্শ করি, তবে তার অন্ধকার শক্তি থামানো যাবে," রাকিব দৃঢ় কণ্ঠে বলল। "তবে, আমাদের খুব সাবধানে কাজ করতে হবে।"
এখন, তাদের সামনে ছিল এক ভয়ঙ্কর পরীক্ষা। রাকিব, রাজু, এবং ইলিয়াস একে অপরের দিকে তাকিয়ে, অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহস দিল। রাকিব নিজের হাত পাথরের উপর রাখল, আর সাথে সাথে তার শরীর শীতল হয়ে উঠল। গুহার ভেতরে এক বিস্ময়কর দৃশ্য দেখা গেল—কালো ধোঁয়া উঠতে শুরু করল, আর পাথরটি তীব্র আলোর ঝলকানি দিয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠল।
এক মুহূর্তের জন্য, সমস্ত গুহা যেন কম্পিত হয়ে ওঠে। সেই তীব্র আলো, গুহার অন্ধকারকে বিদূরিত করে দিল। আর হঠাৎ, সেই ভয়াবহ বিকট আওয়াজটি আবার শোনা যায়, যেন কোনো অতৃপ্ত আত্মা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে।
রাকিব, রাজু, এবং ইলিয়াস জানত, এখন তাদের জন্য যুদ্ধের মুহূর্ত এসে গেছে। গুহার মধ্যে থেকে আসা শক্তির বিরুদ্ধে তাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তাদের সাহস এবং ঐক্য। তারা একসাথে লড়াই করতে প্রস্তুত ছিল।
শেষ।
(এটি ছিল পঞ্চম খন্ড। পরবর্তী খন্ডে, রাকিব এবং তার বন্ধুরা এই অন্ধকার শক্তি মোকাবিলা করতে আরও গভীরে প্রবেশ করবে, যেখানে তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় লড়াই অপেক্ষা করছে।)
মায়াবতী পঞ্চম খন্ড গুহার অন্তরাল
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
129
Views
0
Likes
1
Comments
0.0
Rating