নাল্লাপাড়ার ভূতের বাড়ি ( পর্ব ৩ )

চার বন্ধু প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটল—বাড়ির দরজাটা হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেল!

— "ধাক্কা দে! বের হতে হবে!" রাহাত চিৎকার করল।
— "দরজা খুলছে না!" মুকুল আতঙ্কে দরজা ধাক্কাচ্ছে।

পলাশ পেছনে তাকাল। সেই ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে, তবে এবার আরও স্পষ্ট। একটা নীলচে আলোয় ভেসে থাকা মেয়ের অবয়ব। চুল এলোমেলো, চোখদুটো অদ্ভুত ফাঁকা, যেন গভীর শূন্যতার প্রতিচ্ছবি।

মেয়েটি ধীরে ধীরে পলাশের দিকে এগিয়ে এল। ঠাণ্ডা বাতাস ঘরের মধ্যে বইতে লাগল। চারপাশের বাতি একটার পর একটা ফ্যাকাশে হয়ে নিভে যাচ্ছে।

— "ফিরিয়ে দাও..." মেয়েটি করুণ গলায় বলল।

তার কণ্ঠে কোনো হিংস্রতা নেই, বরং যেন এক অদ্ভুত বেদনা লুকিয়ে আছে।

— "কে... তুমি? কী ফেরত দিতে হবে?" পলাশ ধীর কণ্ঠে প্রশ্ন করল।

মেয়েটি এক মুহূর্ত চুপ করে থাকল। তারপর হাতটা সামনে বাড়িয়ে দিল। তার আঙুলগুলো কেঁপে কেঁপে উঠে যেন কিছু খুঁজছে।

— "আমার কিছু ছিল... কেউ নিয়ে গেছে... আমাকে ফিরিয়ে দাও..."

বাকিরা ভয়ে জমে গেছে, কিন্তু পলাশ অনুভব করল, মেয়েটির মধ্যে কোনো ক্ষতি করার প্রবণতা নেই। বরং সে যেন কেবল একটা উত্তর খুঁজছে।

— "কী ছিল? কে নিয়ে গেছে?"

মেয়েটি কিছু বলল না, শুধু একপাশে রাখা একটা পুরনো কাঠের আলমারির দিকে আঙুল তুলল।

পলাশ ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে আলমারির দরজা খুলল। ভিতরে একটা পুরনো দিনলিপি পড়ে আছে। তার উপর ধুলো জমে আছে, কিন্তু লাল কালি দিয়ে প্রথম পাতায় একটা নাম লেখা:

"নীলা"

— "নীলা!" পলাশ অবাক হয়ে নামটা পড়ল।

ঠিক তখনই, পুরো ঘর কেঁপে উঠল! বাতাসের এক তীব্র ঝাপটায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল, আর মেয়েটির কান্নার আওয়াজ স্পষ্ট হয়ে উঠল।

— "আমার কথা সবাই ভুলে গেছে... কিন্তু আমি এখনো অপেক্ষা করছি..."

তারপর হঠাৎ করেই, সবকিছু থেমে গেল। বাতাস স্তব্ধ হয়ে গেল, নীল আলো মিলিয়ে গেল, আর দরজাটা আপনাআপনি খুলে গেল!

— "দৌড়!" রাহাত আর কিছু না ভেবে বাইরে ছুটে গেল, বাকিরাও তার পিছু নিল।

তবে পলাশ এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে দিনলিপিটা হাতে নিল।

এই বাড়ির গল্পটা কি আসলে নীলার? কিন্তু সে কী ফিরে পেতে চায়?

আর... নীলার সাথে এমন কী ঘটেছিল যে তাকে এখনো এই বাড়ির ভেতরে আটকে রেখেছে?

(চলবে...)

পরের পর্বে: নীলার অতীতের রহস্য উন্মোচন! পলাশ কি সত্যিই তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারবে?