ছায়ার ডাক !

রাত তখন ঠিক ৩টা। নিঃস্তব্ধতা চারপাশে, যেন প্রকৃতি নিজেই থেমে গেছে। পুরনো একটি গ্রাম—সোনাঝুরি, যেখানে কেউ সূর্য ডোবার পর বাইরে বের হত না। কারণ? গ্রামের প্রান্তে থাকা সেই পোড়োবাড়ি।

বাড়িটা নিয়ে অনেক গল্প ছিল—লোকেরা বলত, সেখানে রাতে ছায়া মানুষ হাঁটে, দেয়ালের ফাঁক দিয়ে ফিসফিস শব্দ শোনা যায়, আর কেউ যদি ভিতরে ঢোকে, সে আর ফিরে আসে না।


---

গল্পের মূল চরিত্র—রিয়াজ। শহর থেকে গ্রামে এসেছিল গবেষণার কাজে। কিন্তু গ্রামের মানুষদের ভয় তার কাছে কেবল কুসংস্কার মনে হয়েছিল। তাই সে ঠিক করল, সবার ভুল প্রমাণ করতে মধ্যরাতে সেই পোড়োবাড়িতে যাবে।

রাত ২:৫৯—রিয়াজ টর্চ হাতে পোড়োবাড়ির দরজার সামনে দাঁড়াল। দরজাটা অদ্ভুতভাবে খোলা ছিল, যেন কেউ অপেক্ষা করছিল তার জন্য।

ভেতরে ঢোকার সাথে সাথেই হঠাৎ ঠাণ্ডা হাওয়া বইল, টর্চের আলো ক্ষীণ হয়ে এল। দেয়ালের ওপর ছায়া নড়ল। কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।

— "কে আছো?" রিয়াজ জোরে বলল।
কোনো উত্তর নেই।

সে উপরের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করল। প্রতিটি ধাপে কাঠের চিড়চিড় শব্দ যেন অজানা কোনো সতর্কবার্তা দিচ্ছিল।

হঠাৎ—
ঠক... ঠক... ঠক...
ঘরের ভেতর থেকে আসা শব্দ। রিয়াজ সাহস করে দরজা খুলল।

ভেতরে ঢুকেই তার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল। দেয়ালের সামনে আয়না, আর আয়নায় দেখা যাচ্ছে এক ছায়ামূর্তি—কিন্তু আয়নার সামনে কোনো মানুষ নেই!

ছায়াটি ধীরে ধীরে আয়না থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করল। চোখ দুটো লাল, গলার স্বর কর্কশ—
"তুমি ফিরে এসেছো... এবার আর যাওয়া হবে না।"

রিয়াজ দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেল, কিন্তু পা পিছলে পড়ল। অন্ধকারের মধ্যে ছায়াটি তার দিকে এগিয়ে আসছিল।

— "আমাদের অসমাপ্ত গল্প শেষ করতে হবে..." ছায়ার ফিসফিসানি যেন কানে বিষ ঢালছিল।

সেই রাতের পর থেকে রিয়াজকে আর কেউ দেখতে পায়নি।

শুধু রাত ৩টার পর থেকে পোড়োবাড়ির জানালায় দুটি ছায়ামূর্তি দেখা যায়—একটি যেন কারও জন্য অপেক্ষা করছে, আর অন্যটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে।

আর? ঠিক ৩টার সময়, হাওয়ার সাথে মিশে আসে সেই ভয়ঙ্কর ফিসফিসানি—
"তুমি কি এসেছো... গল্পটা শেষ করতে?"

শেষ। 🌑👻💀