মারিয়ার হুজুর বর (শেষ পর্ব)

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
ওইদিনই হলো আমাদের বৌভাত।আমার বাড়ি থেকে মা-বাবা,ভাইয়া,আপুর পাশাপাশি অনেক আত্মীয় এসেছিলেন।
বেশ আনন্দ করেছিলাম সেইদিন।আমাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরলো মা।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল-মেয়েটা কতো বড়ো হয়ে গেছে!অন্য বাড়ির বউ এখন।কতো দ্বায়িত্ব।

হয়তো এখন আমি অন্য বাড়ির বউ তবে,আমি কিন্তু এখনও অনেক ছোট।যাকে বলে পিচ্চি।হেসে মা'কে কথাগুলো বললাম আমি।
হঠাৎ আমি আড়চোখে খেয়াল করলাম আমিন দূর থেকে আমাকে দেখছে।এক নম্বরের নির্লজ্জ ছেলে।😑
😑

-------
সময় কারোর জন্য অপেক্ষা করে না।সময়ে বয়ে যায় নিজের মতো।আমাদের বিয়ের পর কেটে গেছে ১ বছর।৯ মাস আগে আমি জানতে পেরেছি আমি মা হতে চলেছি।আমি আর আমিন তো প্রচুর হ্যাপি । পরিবারের বাকিরাও আমাদের জন্য খুশি।
আজ আমার ডেলিভারি‌।মা-বাবা,ভাইয়া,আপু,আমিন সবাই আছে।
হাসপাতালে বসেই এখন এসব লিখছি।জানিনা আর কখনো লিখতে পারবো কিনা।সবাইকে বাই।কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করবেন।

★★★
কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ডাইরীর পাতার ওপর।‌ডাইরী টা বন্ধ করলো‌ মাহি।

তখনই কারোর কন্ঠস্বর শুনতে পেলো ও।
Prinsses,,where are you?(আমিন)

I am here,baba.(মাহি)

এইতো আমার প্রিন্সেস,কী করছো?বলতে বলতে মাহির হাতে থাকা মারিয়ার ডায়রী টা দেখলো।

তেমন কিছু না বাবা,শুধু মায়ের ডাইরী টা একটু পড়ছিলাম।(মাহি)


মেয়ের হাতে মারিয়ার ডাইরী দেখে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলো আমিন।মনে পরে গিয়েছিলো তার প্রিয়তমা স্ত্রী মারিয়ার কথা।
এই ডায়রী টা ওই দিয়েছে মাহি কে।মা মরা মেয়েটা কখনো তো মাকে দেখেনি,মায়ের স্মৃতিগুলো তাই সে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করে।


বাবা,একটা অনুরোধ করবো রাখবে?(মাহি)

আমি কী তোমার কথা কখনো ফেলি?বলো কী বলতে চাও।(আমিন)

বাবা,এর পরে কি হয়েছিলো?মানে মায়ের এই ডায়রী লেখার পরে।কীভাবে মা মারা গেলো?কী হয়েছিলো তার?(মাহি)

মাহি,এই কথাটা তুমি আমাকে আগেও অনেকবার জিজ্ঞেস করেছো।তবে আমি তখন বলতে চাইনি এই ভেবে যে তুমি কষ্ট পাবে।কিন্তু আজকে বলবো।--

তোমার মায়ের এই ডাইরী টা লেখা শেষ করার পরেই তাকে ডেলিভারি জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
শেষবারের মতো আমাকে বলল,ওর যদি কিছু হয়ে যায় আমি যেনো তোমাকে দেখি।আর তাই সত্যি হলো, অপারেশন করার পর দেখা গেলো তোমার মায়ের জ্ঞান ফিরছে না।ঘন্টা দুয়েক পর জ্ঞান ফিরলো তোমার মায়ের।তবে সেটা কিছু সময়ের জন্য।
তোমার মুখটা দেখেই সে চলে গেলো আমাদের ছেড়ে। তুমি তখন আমার কোলে ছিলে,তোমাকে দেখার জন্যই হয়তো আল্লাহ ওর জ্ঞানটা ফিরিয়েছিলেন।তোমার সে কী কান্না।
মারিয়া তখনো একটা হাত দিয়ে তোমার হাতটা ধরে ছিলো।ওই হাতটা ছাড়াতে আমার প্রচুর কষ্ট হয়েছে।...........


কথাগুলো বলতে বলতে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো আমিনের গাল বেয়ে।হাত দিয়ে সেটা মুছে দিলো মাহি।

বাবা,কান্না করো না।মা না আমার দ্বায়িত্ব তোমাকে দিয়েছে,তুমি যদি এরকম কান্না করো আমার দ্বায়িত্ব কে নিবে।(মাহি)
মাহির কথা শুনে ওকে জড়িয়ে ধরলো আমিন।এই মেয়েটার মধ্যেই খুঁজে পায় মারিয়া কে।ওর চোখগুলো ঠিক যেনো মারিয়ার মতো।

মনে মনে বলল আমিন-দেখেছো মারিয়া তোমার মেয়ে আমার কতো খেয়াল রাখছে!বড়ো হয়ে গেছে যে।
জানো ওর বয়স এখন ১৮।
তুমি যদি ওকে দেখতে পারতে😓!যাই হোক যেখানেই থেকো,ভালো থেকো।আর আমি তোমাকে প্রচুর মিস করছি।



               🌼-🌿সমাপ্ত🌿-🌼

158 Views
4 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: