রহস্যময় মেয়েটি

সেদিন শীতের দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর যেই না ভাত ঘুমের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখনই আমার ফোনের রিংটোনটা বেজে উঠলো। ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো এক অতি পরিচিত বন্ধুর কণ্ঠ।
ফোন তুলতেই সে প্রশ্ন করে বসলো -" কিরে জয়, তুই এখন কোথায় আছিস? আমি আজকেই গোপালগঞ্জ থেকে বাড়িতে ফিরলাম।"

এমনটা শোনা মাত্র আমিও বলে উঠলাম -" আরে গতকাল তো আমিও খুলনা থেকে বাড়িতে এসেছি।"

এটা বলতেই বাঁধন বলে উঠলো-"তাহলে তো বন্ধু বিকালেই দেখা হচ্ছে। তুই রেডি থাকিস । অনেকদিন পর আবারও দুই বন্ধু একসাথে ঘুরতে বের হবো আর বেশ জমিয়ে আড্ডা দেবো একসাথে। ঠিক আছে?"

আমিও তৎক্ষণাৎ বাঁধনের প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করলাম। সম্মতি প্রকাশ না করেই বা উপায় কি? বাল্যকালের বন্ধু বলে কথা। সেই ছোটবেলা থেকেই আমি আর বাঁধন খুব ভালো বন্ধু। যেন হরিহর আত্মা। একসাথে সেই কলেজ পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি।

এরপর অবশ্য পড়ালেখার সুবাদে যদিও একজন আরেকজনের থেকে অনেকটাই দূরে থাকি ।
তাই এখন কেবল বাড়িতে আসলেই দুই বন্ধুর সাক্ষাৎ ঘটে। তখনই আবার পুরানো বন্ধুত্বের স্মৃতিগুলোকে চাঙ্গা করে নেই আরকি!

তো যাই হোক সেদিন বিকাল হতে না হতেই বাঁধন আমার বাসার সামনে এসে হাজির। যেহেতু বাঁধন আমাকে আগে থেকেই ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলো ,তাই আমিও ঘুরতে যাওয়ার জন্য  প্রস্তুত হয়েই ছিলাম।

বাঁধন এসে ডাকতেই দুজনে বেরিয়ে পড়লাম ঘোরাঘুরির উদ্দেশ্য। বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম আর দুই বন্ধু মিলে আড্ডাও দিলাম। এদিকে যেহেতু শীতের বেলা তাই তাড়াতাড়িই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো। চারদিকের  সূর্যের আলো কমে যাওয়ায় আমরাও তখন বাসায় ফেরার পথে রওনা দিতে বাধ্য হলাম।

বেশ কিছুক্ষণ পরে চারপাশে অন্ধকার ঘনিয়ে আসলো। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকাডাকিও ক্রমশই স্পষ্ট হতে লাগলো। বাঁধন আর আমি মিলে ততক্ষণে আমার বাসার সামনে থাকা গলির মুখে এসে পড়লাম। গলির মুখে আসতেই আমাকে পিছন থেকে কেউ একজন নাম ধরে ডাকতেই আমি একটু চমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালাম।

পিছনে তাকিয়ে দেখলাম এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ,যদিও সন্ধ্যার অন্ধকারে দূরে দাঁড়িয়ে থাকায় - তার মুখটা আমাদের কারোর কাছেই স্পষ্ট নয়। তবে কিছু সময়ের ব্যবধানে যেই না লোকটা একটা সিগারেট জ্বালাতে যায় তৎক্ষণাৎ সেই রহস্যময় লোকের রহস্যও উন্মোচিত হয়ে যায় আমাদের কাছে।

লাইটারের আলো পড়তেই লোকটার মুখটা আমাদের দুজনের সামনেই স্পষ্ট হয়ে যায়। আর আমরাও বুঝতে পারলাম যে এই অজ্ঞাত রহস্যময় ব্যক্তিটি আর কেউ নয় আমাদেরই আরেক বাল্যবন্ধু অমিত।

চলবে......