হরিণের কলজে

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
এক বনে সিংহ রাজা বড়ই অসুস্থ,
গুহা ছেড়ে নড়বার নেইকো সামর্থ্য।
ভেবে পায় না কিভাবে করবে শিকার
প্রাণের আশঙ্কায় শত দুশ্চিন্তা তার।
সে তার অনুচর শেয়ালকে বললে,
"শোন, আমায় বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে
তোমাকে করতেই হবে একটা কাজ।
এই বনের বড় হরিণটাকে আজ,
নানান মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে-ভালিয়ে
আসবে আমার কাছে সঙ্গে তাকে নিয়ে।
সত্যিই যে আমার বড্ড খিদে পেয়েছে,
ওর কলজে পেলে তবে প্রাণটা বাঁচে !"
শেয়াল তাই বেরুলো হরিণের খোঁজে
কিছুক্ষণ পরে তার দেখাও পেল সে।
শেয়াল বলে, "ভাই, এনেছি সুখবর
মোদের রাজা অসুস্থ, দেহে নেই জোর।
আমি তো তার গুহার কাছাকাছি থাকি
বলো, কখনো তোমায় মিথ্যে বলেছি কি?
তার ভাবনা তিনি চোখ বুজলে তবে
বিশাল এই রাজত্বের রাজা কে হবে?
ওই শুকরের মাথায় গোবর পোরা,
মাথামোটা হাতি আবার থুত্থুড়ে বুড়া;
চিতা বদমেজাজি, বাঘটা ভবঘুরে;
নাদুস নুদুস ভাল্লুক আবার কুঁড়ে!
এরা সকলেই রাজা হবার অযোগ্য,
তাই সত্যিই তোমার এসেছে সৌভাগ্য।
কেননা তিনি তোমাকে বানাবেন রাজা
চলো প্রথমে তার কাছেই যাই সোজা।"
হরিণ বলে, "কোন গুণের জন্য তিনি
বানাবেন আমায় রাজা তা আগে শুনি!"
শিয়াল বলে, "তোমার জম কালো চেহারা
মস্ত বড় শিং দেখে ভয় পাবে প্রাণীরা।"
একটু থেমে বলল , "শুনলে তো সব
তোমার দ্বারা রাজা হওয়াও সম্ভব।
তিনি আমার পথ চেয়ে আছেন বসে
তাড়াতাড়ি চলো ফিরতে হবে নিমেষে।"
শিয়ালের মুখে এইসব কথা শুনে
আনন্দ আর গর্ব জাগল ওর মনে
পথ চলতে লাগল সন্দেহ না করে
শেষে হাজির হলো সিংহের দরবারে।
হরিণ নির্ভয়ে গেল সিংহের নিকটে
তৎক্ষণাৎ সিংহ থাবা বসালো বটে
কিন্তু থাবাটা লাগল হরিণের কানে
হরিণটা অমনি ছুটে পালালো বনে।
এত পরিশ্রম সব ব্যর্থ হল দেখে
শেয়াল একেবারে ভেঙ্গে পড়ল দুঃখে।
হরিণটা হাতে পেয়ে খেতে না পারায়
কষ্ট,ক্ষোভ, রাগ আর খিদের জ্বালায়।
সিংহটা করল অদ্ভুত এক গর্জন
বলল সে," দায়িত্ব করলাম অর্পণ
আবারো তোমার নিকটে, হে শেয়াল ।
দেখাও আবার তোমার বুদ্ধির চাল।"
শেয়াল বলল, "এ বড় কঠিন কাজ
তবু আবার চেষ্টা করব মহারাজ।"
রাজার আদেশ পেয়ে বেরুলো তখন
কান ঝরা রক্ত করল অনুসরণ
অবশেষে শিয়াল দেখতে পেল তাকে
হরিণটাও দেখতে পেয়ে শেয়ালকে
করতে লাগলো অশ্রাব্য গালিগালাজ
বলল, "বজ্জাত, বেইমান! তুই আজ
আবারও এসেছিস আমায় ধরতে!
বুঝি লোভে ফেলে চাস আমায় মারতে!
সাবধান এক পাও এগুলে এদিকে
শেষ করে দেব শিং দিয়ে গুঁতিয়ে তোকে!"
শিয়াল বলে, "তোমার হিতার্থী বন্ধুকে
তুমি যে দেখো এমন সন্দেহের চোখে,
সেটা কিন্তু ভাই আমার জানা ছিল না।
সত্যি কখনো জানতেও পারতাম না।
বুঝেছি, তোমার নেই বিন্দুমাত্র হুশ
আর জানলাম তুমি মস্ত কাপুরুষ।
রাজা তবে কান ধরেছিল কেন জানো?
তোমায় তাহলে হক কথা বলি শোনো।
কান ধরেছিল কিছু উপদেশ দিতে
রাজ্য চালনার গুরু দায়িত্ব জানাতে।
অসুস্থ রাজার শুধু নখের আঁচড়
লাগা মাত্রই বোকার মত দিলে দৌড়!
তোমার চেয়ে বেশি রাগ হয়েছে তার
নেকড়েকেই রাজা বানাবেন এবার
একটু থেমে বলল , "বুঝে দেখো ভাই
নেকড়ে রাজা হলে মোদের রক্ষা নাই
ভয় না পেয়ে তুমি এসো মেষের মত
এই বনে গাছে গাছে পাতা আছে যত
আর যত ঝর্ণাধারা আছে আসে পাশে
তাদের নামে শপথ নিচ্ছি পরিশেষে
মহারাজ কোন ক্ষতি করবে না ভাই
এ বনের রাজা হতে এসো নির্দ্বিধায়।"
রসালো কথায় অতীতের কথা ভুলে
বেচারা হরিণের মনটা গেল গলে
শেয়ালের সঙ্গে গেল সিংহের গুহায়
আগে থেকে সিংহ প্রস্তুত ছিল সেথায়
হরিণ যেতেই ঝাঁপিয়ে পড়লো ঘাড়ে
মেরে ফেলে হাড় মাংস খাচ্ছে মজা করে
কলজেটা ছিটকে পড়লো অন্যদিকে
শেয়াল সেটা কুড়িয়ে খেলো এক ফাকে।
তার মনে হল এটা তার বকশিশ
কিন্তু সিংহ পায় না কলজের হদিস!
শেয়াল বলে, "বৃথা খুঁজছেন আপনি,
ওর কোন কলজে ছিল না আমি জানি;
যেই জীব একবার নয় পরপর
আপনার থাবাতেই এসেছে দুবার,
তাহলে আপনিই বলুন যুক্তি করে
তার কি কখনো কলজে থাকতে পারে?"
100 Views
1 Likes
0 Comments
0.0 Rating
Rate this: