সকালের মিষ্টি রোদ অরিনকে ছুঁতেই তার ঘুম ভেঙে গেল।প্রথমে একটু বিরক্ত হলেও কিছুক্ষণ পর সে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। তার মনে পড়লো কলেজ যেতে হবে। আজ থেকে এক নতুন উদ্যোগে পথ চলা শুরু তার। সে জানে না সে পথ কতটা দুর্গম বা সহজ হবে,পথচলা শেষ আনন্দ নিয়ে হবে নাকি একরাশ দুঃখ নিয়ে,কিন্তু তাকে পথটা পাড়ি দিতে হবে। এক নতুন রাস্তায় চলার মনোবল নিয়ে সে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
সেদিন কলেজে অরিন সবার সাথে কিছুটা কথা বলেছে।খুব বেশি কথাও বলেনি, আবার খুব কম কথাও না। সে নিজেকে পাল্টে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সবাই প্রথম প্রথম অরিনের এই ব্যবহার দেখে অবাক হচ্ছিল। অবাক হওয়ারই কথা। যে মেয়ে খুব প্রয়োজনেও অনেক কম কথা বলে, সে আজ প্রয়োজন ছাড়া কথা বলছে, হাসছে!! কিছুদিন এভাবে কেটে যায়। অরিন ধীরে ধীরে সবার সাথে স্বাভাবিক হতে থাকে। এখন তার ছেলেদের সাথে কথা বলতে তেমন অস্বস্তি হয় না।
__________________
অরিনদের একটা নোটসের দরকার ছিল যা ওদের কাছে ছিল না। পাশের section মানে আকাশদের S.H section এ-ই সেটা পাওয়া যাবে। অরিন সেখানকার একটি ছেলের কাছ থেকে হাসিমুখে নোটস চাইতে ছেলেটা অবাক হলেও নোটস দেয়। তখন তা ক্লাসে এনে সবাই একসাথে নোটস তুলছিল। সাথে আনন্দ ফূর্তি তো আছেই। অরিনও মাঝেমধ্যে যোগ দিচ্ছিলো তাতে। ওদের একজন ক্লাসমেট শানায়া নোট তুলতে তুলতে দাঁত বের করে হাসছিল দেখে অরিন ঠাট্টা করে বললো-
- কী রে শানায়া, কোলগেটের এ্যাড দিচ্ছিস নাকি? দাঁত বের করে বাদরের মতে হাসছিস কেন? (অরিন)
- আরে জানিস না? আজকে তো ওর ক্রাশ ওকে প্রপোজ করেছে। (লিসা)
- আরে ব্বাস! তোর তো কপাল খুলে গেল ভাই। আমার ক্রাশ যে কবে আমাকে প্রপোজ করবে? (রায়হান)
- হ্যাঁ, তুই ওই আশা নিয়ে বসে থাক আর কষ্ট নিয়ে ম্যানহোলে ডুবে মর। (অরিন)
- তোরা আমায় এভাবে বলতে পারলি.. (রায়হান কাচুমাচু মুখ করে)
- এই তুই চুপ কর তো, শানায়া তাহলে ট্রিট কবে দিচ্ছিস?(অরিন)
- ধূর এখন না। আগে ভালো করে setting টা হোক। (শানায়া)
- তোর setting এর আশায় থাকলে বুড়ো হয়ে যাব। (রায়হান)
- ঠিক বলেছিস। (অরিন)
- এই এত ছেঁচড়া কেন তোরা? (শানায়া)
- ওটা তো আমরা জন্মগতভাবেই। (লিসা)
সবাই হেসে উঠলো।
- আচ্ছা,শানায়ার টা তো হলো। অরিন, এবার আমরা জিজু পাব কবে বলতো। (রিওনা)
- এখন না পরে। আমি এখন এসবের মধ্যে জড়াতে চাই না রে। (অরিন)
- এই তোরা লক্ষ্য করেছিস, কিছুদিন ধরে S.H আর Commerce এর কিছু ছেলে ওর পিছনে ঘুরঘুর করছে।(শানায়া)
- ঘুরবে না কেন? আমাদের অরিন কী কম সুন্দরী নাকি? (লিসা)
- হুম, ঘুরুক। আমি মজাই পাচ্ছি। তবে আফসোস বেচারারা জীবনে yes answer পাবে না। (অরিন)
- তুইও আকাশ ভাইয়ার মতো হোলি। (লিসা মুখ চুন করে)
- ওই খাটাসটার কথা তুলবি না বলে দিলাম। (অরিন)
- কেন রে, কী হলো? (রিওনা)
- আমার সহ্য হয়না ওকে। (অরিন)
-কী বলিস, যার পেছনে পুরো কলেজের মেয়েরা পড়ে থাকে তাকে তোর সহ্য হয়না। তুই মানুষ? (শানায়া অবাক হয়ে)
- (কিছুটা বিরক্ত হয়ে) কী শুরু করলি বলতো তোরা? এই নিয়ে আর একটা কথাও বললে না মাথা ছিড়ে হাতে ধরিয়ে দেব। (অরিন)
- আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। (লিসা)
- ওহ, একটা কথা মনে পড়ল। (রিয়া)
- কি কথা? (অরিন ভ্রূ কূচকে)
- ফজলুল হাউসের মেইন প্রিফেক্ট মানে নীলের মনে হয় তোর দিকে নজর পড়েছে। আসলে ও আমার কাছে তোর ফোন নম্বর চাচ্ছিল। (রিয়া)
- সর্বনাশ!!! সাবধানে থাকিস বোন। ও বেটা কিন্তু সুবিধের নয়। (রায়হান)
- হুম, এখন নোট তুল। (অরিন)
________________________
আজ রবিবার। বিকেলে একটা রেস্টুরেন্টে get-together এর আয়োজন করা হয়েছে। সকালবেলা নজরুল হাউসের মেইন প্রিফেক্ট লিওন আকাশকে কল করে।
- কি রে বেঁচে আছিস,নাকি মরে গেছিস। (লিওন)
- না মরিনি,তবে মরার ইচ্ছা আছে। (আকাশ)
-কেন রে ছ্যাকাট্যাকা খেলি নাকি আবার? (লিওন)
- আমি প্রেম করছিলাম কবে যে ছ্যাকা খাব? (আকাশ)
- ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। (লিওন)
- এখন মনে পড়েছে? (আকাশ)
- হ্যাঁ, হ্যাঁ। তা স্যার, এতদিন কোথায় ছিলেন কোন পাত্তাই তো ছিল না আপনার। (আকাশ)
- প্রচুর কাজের চাপ ছিল ভাই। বুঝিসই তো। (আকাশ)
- বুঝি রে ভাই। হাউস কমান্ডার না হলেও মেইন প্রিফেক্ট তো। (লিওন)
- এইতো ভালো ছেলে। সব বুঝো তাহলে জিজ্ঞেস কেন করো? (লিওন)
- এমনি। আচ্ছা শোন, কিছুদিন তো ফ্রি থাকার কথা।(লিওন)
- হ্যাঁ আছি ফ্রি। (আকাশ)
- তাহলে, আড্ডা দেওয়ার অভ্যাসটা বাদ দিলে চলবে নাকি? বিকেলে চলে আয় রেস্টুরেন্টে। (লিওন)
- আমি কেন আবার? তোরা যা না। (আকাশ)
- না, না, কোন কথা শুনবো না। তোকে আসতেই হবে।নাহলে কাল কলেজে গিয়ে আমি, ফিহাম আর অনি তোর খবর করব। (লিওন)
- তোরা আসলেই এক একটা বন্ধু নামের কলঙ্ক। (আকাশ)
- আমরা বন্ধু নামের কলঙ্ক হই আর উজ্জ্বলতা হই, সেটা বড় কথা না। বড় কথা হচ্ছে,আজকে তুই বিকালে আসছিস get-together এ। (লিওন)
- আচ্ছা যাব। না গেলে তো তোরা আমায় ছাড়বি না। (আকাশ)
-The power of best friend (লিওন)
দুজনে হেসে উঠলো। তারপর তাদের মধ্যে আরো নানা আলাপ চলতে থাকলো। আকাশ আর লিওন ছোট থেকে একসঙ্গে পড়ে এবং ওরা একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড। আকাশ ও লিওনের চিন্তাভাবনা, রুচি, পছন্দ, অপছন্দ, সবকিছুর মধ্যে অদ্ভুতভাবে মিল রয়েছে। হয়তো পুরোপুরি নয়, কিন্তু কোনো না কোনো দিক থেকে তাদের মেন্টালিটি মিলে যায়। স্কুল-কলেজের প্রতিটি প্রোগ্রাম তারা একসাথে attend করেছে। এখনও যেকোনো প্রোগ্রামে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা কাজ করে। একে অপরের পরিপূরক বলা যায় তাদের।
To_be_continued......................
অনেকদিন পর ফিরলাম। আপনারা কেউ তেমন উৎসাহও দেন না, তাই তেমন নিয়মিত লিখতে ইচ্ছেও হয় না।
শুধু তোমারই জন্য
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
213
Views
4
Likes
1
Comments
5.0
Rating