অশরীরীর রাত
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
গভীর রাত। গ্রীষ্মের সময়, গ্রামের বাতাস ভারি আর নিস্তব্ধ। পুরনো বাঁশঝাড়ে বয়ে যাওয়া বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কল্পনা গ্রামের শ্যামল, একজন তরুণ লেখক, যিনি গ্রামের পুরনো কাহিনিগুলো সংগ্রহ করে বই লেখেন। তিনি শুনেছিলেন, তাদের গ্রামের দক্ষিণের পুরনো জমিদার বাড়িটি নাকি অভিশপ্ত। লোকমুখে শোনা যায়, সেই বাড়িতে অনেক বছর আগে জমিদার পরিবারের এক বউকে হত্যা করা হয়েছিল। তারপর থেকে সেই বাড়িতে রাতে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। শ্যামল ঠিক করলো, সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে সেই বাড়িতে এক রাত কাটাবে।
---
শ্যামল যখন বাড়িটির ভেতরে ঢুকলো, রাত তখন ১১টা। ভাঙাচোরা দেয়াল, মাকড়সার জাল, আর পচা কাঠের গন্ধে বাড়িটি যেন জীবন্ত আতঙ্ক। কেরোসিনের লন্ঠন জ্বালিয়ে বাড়ির দোতলায় উঠলো সে। এক কোণায় পুরনো একটা খাটে ব্যাগ রেখে বসলো। হঠাৎ দরজার ফাঁক দিয়ে যেন কারও ছায়া দেখলো সে। মনে হলো কেউ তার দিকে তাকিয়ে ছিল।
"কে?" শ্যামল সাহস সঞ্চয় করে বললো। কিন্তু উত্তর এলো না। ভাবলো, হয়তো বাতাসে পর্দা নড়ে উঠেছে। তবে বুকের ভেতর ধুকপুকানি বাড়ছিল।
দুপুরে গ্রামের বুড়ি ঠাকুরমা তাকে সাবধান করেছিলেন, "বাড়িতে কিছু শুনতে পেলে কখনো পিছু ফিরবি না। আর কখনো আয়নার দিকে বেশি তাকাবি না।" শ্যামল তখন এসব শুনে হেসেছিল। কিন্তু এখন তার মনে পড়তে লাগল সেই কথাগুলো।
---
রাত ১২টা বাজতে তখন কয়েক মিনিট বাকি। শ্যামল ডায়েরি খুলে ঘটনাগুলো লিখতে বসলো। হঠাৎ লন্ঠনের আলো কমে এলো। কাঁচের ওপারে যেন কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে! সে পিছন ফিরে দেখতে গিয়ে হঠাৎ থমকে গেল।
ঠিক তখনই কানে এলো এক নারীকণ্ঠের নরম সুর:
"তোমার নাম শ্যামল, তাই না?"
শ্যামল চমকে উঠে বললো, "কে বলছেন?" কিন্তু কোনো উত্তর এলো না। কণ্ঠটি যেন দূর থেকে আসছে। তিনি ঘরের চারদিকে তাকালেন, কিন্তু কাউকে দেখলেন না। আবার শব্দ হলো, "তোমার সাহস তো বেশ!"
শ্যামল এবার কাঁপতে কাঁপতে বললো, "আপনি কে? সামনে আসুন!"
হঠাৎ করেই বাতাস ঠান্ডা হয়ে গেল। আয়নার দিকে তাকাতেই শ্যামল দেখলো, তার পেছনে এক লাল শাড়ি পরা নারী দাঁড়িয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি শূন্য, ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত হাসি।
---
"তোমার এত সাহস!" সেই নারীর কণ্ঠ।
শ্যামল আতঙ্কিত কণ্ঠে বললো, "আপনি মানুষ না... আপনি ভূত?"
নারীটি উত্তর দিলো, "আমি অশরীরী। এই বাড়ির শেষ স্মৃতি। এখানে যারা আসে, তারা আর ফিরে যায় না।"
শ্যামল বুঝলো, সে বড় ভুল করে ফেলেছে। দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হতে গেলেই দরজা নিজে থেকে বন্ধ হয়ে গেল। "এখন কি করবো?" মনে মনে ভাবতে লাগলো শ্যামল।
---
তারপর শুরু হলো সত্যিকারের আতঙ্ক। ঘরের দেয়াল থেকে গলগল করে রক্ত বেরোতে লাগল। মেঝেতে যেন কারও পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো, আর সেই মুহূর্তে নারীর কণ্ঠ আবার শোনা গেল, "তুমি আমাকে সাহায্য করো, আমি তোমাকে মুক্তি দেবো।"
"কি সাহায্য?" শ্যামল জিজ্ঞেস করলো।
নারী বললো, "আমার হত্যার প্রতিশোধ নাও।"
---
শ্যামল ভয়ে কাঁপছিল, কিন্তু বুঝতে পারলো, এটাই তার একমাত্র পথ। ভোর হতেই গ্রামের লোকদের সঙ্গে মিলে জমিদার বাড়ির মাটির নিচে খোঁড়াখুঁড়ি করলো। সেখানে বের হলো জমিদার পরিবারের সেই বউয়ের দেহাবশেষ। তার মৃত্যুর আসল কারণও জানা গেল।
গ্রামে এক গুজব ছড়ালো যে শ্যামল তার লেখার জন্য নয়, বরং নিজের প্রাণ বাঁচাতে এই সত্য উদঘাটন করেছে। তবে শ্যামল জানে, এই এক রাত তাকে নতুন জীবন দিয়েছে।
কিন্তু সে এখনো জানে না—সেই নারী কি আসলেই মুক্তি পেয়েছে, নাকি অন্য কারো অপেক্ষায় আছে।
শেষ।
166
Views
5
Likes
3
Comments
2.7
Rating