মফস্বলের এক কোণায় অবস্থিত এক পুরনো বাড়ি, "চৌধুরী বাড়ি"। লোকমুখে শোনা যায়, বাড়িটিতে অনেক বছর আগে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। সেই থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত। গ্রামে কেউ সাহস করে সেখানে যায় না, বিশেষত রাতের বেলা। তবে এমনও কথা শোনা যায়, যাদের সাহস আছে এবং যারা সেখানে রাত কাটায়, তারা ফিরতে পারে না।
এক সন্ধ্যায়, চার বন্ধু—অমিত, রাহুল, মিতা, আর তমাল—সিদ্ধান্ত নিল, চৌধুরী বাড়িতে রাত কাটাবে। তাদের কাছে এই বাড়ির রহস্যের কথা কেবল গল্পের মতো মনে হয়েছিল। ভুত বা অশরীরী শক্তির অস্তিত্বে তাদের কেউই বিশ্বাস করত না।
রাতে একটা ফ্ল্যাশলাইট আর কিছু খাবার নিয়ে তারা পৌঁছে গেল বাড়ির সামনে। চারপাশে নিস্তব্ধতা। বড় বড় গাছের ছায়ায় বাড়িটা যেন আরো রহস্যময় দেখাচ্ছিল। অমিত প্রথমে গেট খুলল। কড়মড় শব্দে গেটটা খুলতেই চারপাশটা অদ্ভুত ঠান্ডা হয়ে গেল। মিতা কাঁপতে কাঁপতে বলল, "এই জায়গাটা সত্যি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আমরা কি সত্যি ঢুকব?"
রাহুল বলল, "ভয় পাচ্ছিস কেন? এটা তো স্রেফ একটা পুরনো বাড়ি।"
তারা ঢুকল। ভেতরের পরিবেশ আরো ভয়ঙ্কর। দেয়ালগুলো ভাঙা, মেঝেতে ধুলো জমে আছে, আর একটা গন্ধ—যেন পচা কাঠের গন্ধ।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা ঘটতে শুরু করল। প্রথমে তারা একটি ঘড়ির শব্দ শুনল, যা বাড়ির ভেতরে কোথাও বাজছে। অথচ তারা বাড়ি খুঁজেও ঘড়ি পেল না।
তারপর শুরু হল কাঁচের জানালার আওয়াজ। তমাল বলল, "হাওয়ার জন্য এসব হচ্ছে। কিছু নেই।" কিন্তু সবাই লক্ষ করল, তখনো বাতাস ছিল নিস্তরঙ্গ।
এরপর, হঠাৎ একটা ঘরের দরজা আপনাআপনি খুলে গেল। বন্ধুরা একে অপরের দিকে তাকাল। "চলো দেখে আসি," রাহুল বলল। অমিত আর মিতা আপত্তি করলেও তমাল এগিয়ে গেল। ঘরে ঢুকতেই তারা দেখতে পেল একটি পুরনো আয়না, যা ধুলোতে ঢাকা। কিন্তু তমাল ধুলো মুছে যখন আয়নায় তাকাল, সে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেল না।
আয়নাটার সামনে একটি পুরনো ডায়েরি রাখা ছিল। তমাল সেটি খুলে পড়তে শুরু করল। ডায়েরি ছিল চৌধুরী বাড়ির শেষ বাসিন্দা, বিমলা দেবীর। সেখানে লেখা ছিল, "এই বাড়ি আমার নয়। এটি তাদের, যারা আমাকে এখানে ধরে রেখেছে। তারা আমাকে ছাড়বে না। যদি কেউ এখানে আসে, তারাও ছাড় পাবে না।"
ডায়েরি পড়তে পড়তেই হঠাৎ একটা ঠাণ্ডা হাত তমালের কাঁধে স্পর্শ করল। সে চিৎকার করে উঠল। সবাই তাকিয়ে দেখল, পেছনে কেউ নেই। কিন্তু ঘরের তাপমাত্রা আচমকা আরও ঠান্ডা হয়ে গেল।
তারা দ্রুত বাড়ি থেকে বের হতে চাইল। কিন্তু বাড়ির দরজা নিজের থেকে বন্ধ হয়ে গেল। ভয় বাড়তে লাগল। রাহুল চিৎকার করে বলল, "এটা মজা করার সময় নয়! এখানে সত্যিই কিছু আছে।"
তারা উপরের ঘর থেকে এক নারীর কণ্ঠে গুনগুন করার শব্দ শুনতে পেল। তারা চিৎকার করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে ছুটল। কিন্তু হঠাৎ সিঁড়ির নিচে অমিত দেখতে পেল, এক কালো ছায়ামূর্তি তাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
কীভাবে জানি, মিতা তার পকেট থেকে একটি ধূপকাঠি বের করল, যা সে তার ঠাকুমার কাছ থেকে পেয়েছিল। সে বিশ্বাস করত, এটি খারাপ শক্তি দূর করতে পারে। সে সেটি জ্বালাল, আর ধোঁয়া ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তেই বাড়ি কেঁপে উঠল।
ভোর হলে তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারল। কিন্তু কেউই এই ঘটনার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারল না।
গ্রামে ফিরে তারা চৌধুরী বাড়ির ব্যাপারে যা বলল, তাতে গ্রামের মানুষ আবারও সিদ্ধান্তে পৌঁছল—বাড়িটি ভয়ংকর। আর সেই রাতে কী ঘটেছিল, তা আজও তাদের জন্য এক দুঃস্বপ্ন।
তুমি কি সাহসী? তাহলে একবার চৌধুরী বাড়িতে যাও!
চৌধুরী বাড়ির অন্ধকার রহস্য
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
202
Views
5
Likes
0
Comments
5.0
Rating