শেষ বিকেলের স্মৃতি (পার্ট ১)

পলাশের জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল সেই দিনটি, যখন সে প্রথম অনামিকার সঙ্গে কলেজে দেখা হয়েছিল। একটা ছোট্ট শহরের কলেজ ছিল তারা যেখানে দু’জনেই পড়াশোনা করত। পলাশ ছিল স্বপ্নবাজ, কিছু বড় হবার ইচ্ছে তার মধ্যে লুকিয়ে ছিল, কিন্তু সেটা কখনো প্রকাশ করতে পারেনি। অন্যদিকে, অনামিকা ছিল সবার জন্য এক প্রেরণা, সবার পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করতে ভালোবাসত। তাদের বন্ধুত্ব ছিল অসম্ভব শক্তিশালী, আর সময় গড়ানোর সাথে সাথে সেটা প্রেমে রূপ নেয়।

কলেজের ক্যাম্পাসে একদিন পলাশ নিজের লেখা একটি কবিতা অনামিকার হাতে দেয়। তার হাতে কবিতাটি দিয়ে পলাশের হৃদয়ে এক অদ্ভুত আনন্দ জন্ম নেয়। অনামিকা পড়ার পর জানায়,

অনামিকা: "এটা তো অসাধারণ! তুমি তো সত্যিই একদিন বড় লেখক হবে, আমি বিশ্বাস করি।"

পলাশ হাসিমুখে জানায়,

পলাশ: "তুমি যে আমার পাশে থাকবে, এটা জানলে শান্তি পাই।"

এভাবেই তাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। পলাশের স্বপ্ন ছিল বড় লেখক হওয়া, কিন্তু বাস্তবতা কখনও তার পথে সহজ হয়নি। একের পর এক প্রত্যাখ্যানের পর, সে নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যায়, আর অনামিকা তার পাশে থাকে।

একদিন, পলাশ একটি বড় প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে তার প্রথম গল্প প্রকাশ করে, এবং এক রাতেই সে বিখ্যাত হয়ে যায়। কিন্তু এই সাফল্য তার জীবনকে পাল্টে দেয়। একটি বড় শহরে কাজ করার সুযোগ আসে, এবং পলাশ তার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চলে যায়।

অনামিকা: "প্লিজ, আমাকে ছাড়ো না। আমি জানি তুমি বড় কিছু হবে, কিন্তু আমি চাই তোমার পাশে থাকতে।"

পলাশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তার স্বপ্নের কথা বলে,

পলাশ: "অনামিকা, আমি জানি তুমি আমার পাশে থাকতে চাও, কিন্তু এটা আমার স্বপ্ন। আমাকে একটু সময় দাও, আমি আবার ফিরে আসব।"

অনামিকা সেই সময় চুপ হয়ে যায়, কিন্তু তার চোখের গভীরে দুঃখ ছিল।

বছর তিনেক পর, পলাশ ফিরে আসে তার ছোট শহরে। সে আশা করে, অনামিকা তাকে আবার আগের মতোই স্বাগত জানাবে। কিন্তু যা সে দেখে, তা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। অনামিকা আর একসাথে নেই, অন্য একজনকে বিয়ে করে সংসার পেতেছে। পলাশের হৃদয়ে তখন কেবল একটাই প্রশ্ন – কেন অনামিকা তাকে ছেড়ে গেল?

তার এই প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরতে থাকে। শহরের ছোট্ট পার্কে একদিন পলাশ বসে থাকলে, তার চোখে পড়ে পুরনো এক ডায়েরি। ডায়েরিটা তার ছিল না, কিন্তু এক অদ্ভুত আকর্ষণ তাকে তা পড়তে বাধ্য করে। যখন সে ডায়েরি খুলে পড়ে, তখন তার চোখে জল আসে।

ডায়েরির প্রথম পাতা:
প্রিয় পলাশ, আমি জানি তুমি স্বপ্ন দেখতে, আর সেই স্বপ্নেই তুমি হারিয়ে গেছো। আমি তোমার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি জানতাম, তোমার স্বপ্নের সঙ্গে আমি কখনো আসতে পারব না। আমি অপেক্ষা করেছিলাম, কিন্তু তুমি একদিনও ফিরলে না...

পলাশ ডায়েরি পড়তে থাকে, আর তার চোখের সামনে ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে অনামিকার কষ্ট, তার অপেক্ষা, আর সেই গভীর ভালোবাসা যা কখনো পূর্ণ হয়নি।

চলবে...