আত্মর মুক্তি

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
সেই মুহূর্তে, লিমা ঘুম থেকে উঠে বসে পড়ল। তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হচ্ছিল। ঘরের আলোটা টিপে জ্বালিয়ে দিল, কিন্তু ঘরটি আগের মতোই অন্ধকার আর নিরব ছিল। সেই ভয়ার্ত অনুভূতি যেন বাস্তবতার অংশ হয়ে উঠেছে। 

সকালে, লিমা রানা কে ডাকল। রানা তখনও ঘুমিয়ে ছিল, কিন্তু লিমার চিৎকারে সে উঠে এল। “রানা! আমাকে সাহায্য করতে হবে। আমি একটি স্বপ্ন দেখেছি, আর আমি বুঝতে পারছি যে আমাদের এই বাড়ির ভিতরে কিছু ভীষণ বিপদ আছে।”

রানা ঘুম ঘুম চোখে বলল, “লিমা, আবার সেই স্বপ্নের কথা? তুমি কেবল ভাবছ, আর এসব কল্পনার পরিণতি তোমার উপর ভর করেছে। তুমি শান্ত হতে চেষ্টা করো। তুমি যদি এই বাড়ি থেকে দূরে সরে যাও, তাহলে এসব সমস্যা চলে যাবে।”

লিমা বিরক্ত হয়ে বলল, “না, রানা। আমি জানি, এই বাড়ি কিছু গোপন রাখছে। আমাদের এখানে আরো কিছু জানতে হবে। আমি আদুরী ডায়েরি পড়েছি, আর আমি নিশ্চিত যে এখানে কিছু রয়েছে যা আমাদের জানানো উচিত।”

রানা অবশেষে থামল। “তুমি যা বলছ, সেটা আমিও দেখতে চাই। কিন্তু সাবধান হও, লিমা। যদি কিছু না থাকে, তাহলে তুমি আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়বে।”

লিমা দ্রুত ডায়েরির দিকে চলে গেল। ডায়েরির পাতা উল্টাতে উল্টাতে সে এক পৃষ্ঠা দেখতে পেল যেখানে লেখা ছিল: “এখানে কিছু ঘটছে যা মানুষের মনের গভীর অন্ধকার থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। এই বাড়ি এক ধরনের প্রাচীন শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যারা হতাশা ও ভয় থেকে ভুগছে, তাদের ওপর এই শক্তি আরো প্রভাবিত হয়। একমাত্র যারা সত্যিকারের সাহস নিয়ে এই শক্তির মুখোমুখি হয়, তারা বেঁচে যেতে পারে।”

লিমা ডায়েরির লেখাটা পড়তে পড়তে এক গভীর উপলব্ধি পেল। তার সামনে একটি নতুন প্রশ্ন উঠল—এই শক্তি কীভাবে পরাজিত করা যায়? 

রানা তখন লিমার পাশে এসে দাঁড়াল। “আমরা কীভাবে এই শক্তির মুখোমুখি হতে পারি?”

লিমা জানাল, “আমাদের এই বাড়ির গোপন ইতিহাস জানতে হবে। ললিতা যে কষ্ট পেয়েছে, তা আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে। এবং মনে রাখতে হবে, এই শক্তি মানুষের ভয় আর হতাশার ওপর ভর করে।”

লিমা এবং রানা বাড়ির পুরোনো নথি এবং ইতিহাস খুঁজতে শুরু করল। তারা একটি পুরোনো লেবেল করা বাক্স খুঁজে পেল যা ছিল বাড়ির মূল মালিকের ইতিহাস। এই বাক্সের মধ্যে নানা পুরোনো নথি, ছবির অ্যালবাম, এবং একমাত্র কিছু অদ্ভুত নথি ছিল—যেগুলি কোনো অদৃশ্য শক্তির কথা বলছিল।

একটি নথিতে লেখা ছিল: “এই বাড়ি নির্মাণের পর থেকেই এখানে এক অদ্ভুত শক্তির উপস্থিতি ছিল। কেউ কখনো পরিষ্কারভাবে কিছু দেখতে বা বুঝতে পারেনি, তবে এই শক্তি তাদের ভয় আর হতাশা থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। সময়ের সাথে, এই শক্তি বাড়ির মালিকদের ওপর নিজের প্রভাব বিস্তার করে নিয়েছে। তাই, যারা এই বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে, তাদের ভয় এবং দুঃখ বাড়ানোর চেষ্টা করে।”

লিমা এবং রানা আরো গভীরভাবে নথিগুলি পড়তে লাগল। তাদের সামনে একটা অদ্ভুত সত্য উন্মোচিত হচ্ছিল। এই বাড়িটি আসলে এক ধরনের ভূতের নিক্ষেপক ছিল, যা মানুষের মনের অন্ধকার অংশ থেকে শক্তি আহরণ করছিল। 

সন্ধ্যায়, লিমা একটি প্ল্যান তৈরি করল। সে জানত, এই শক্তি প্রতিরোধ করার জন্য তাকে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। তার আগে, সে আদুরী আত্মার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে। 
আদুরী তাকে পুজোর নিয়ম বলে চলে গেল।

লিমা একটা পূজার বা কুণ্ডলী আয়োজন করল, যাতে সে আদুরী আত্মার সঙ্গে এক ধরনের রূপক সংযোগ স্থাপন করতে পারে। পূজা বা কুণ্ডলী নিয়ম হলো। অনেক গুলো মোমবাতি জ্বালিয়ে। মাঝে একটা পুতুল রেখে সেই পুতুলে আদুরী নাম লিখে। হাত কেটে রক্ত দিয়ে আর দোয়া করতে করতে, সে নিজেকে প্রস্তুত করল অশুভ শক্তির মুখোমুখি হওয়ার জন্য। 

পূজার শেষের দিকে, ঘরের অন্ধকারে এক গভীর নিঃশব্দ আছড়ে পড়ল। আদুরীর উপস্থিতি অনুভব করা যাচ্ছিল। 

“লিমা… তোমার সাহস আমাকে আনন্দিত করেছে। কিন্তু এই শক্তি, এটি ভয় ও দুঃখের উপর ভর করে, তোমার সাহসকে পরাজিত করতে চাইবে। তুমি একদম একা নও। আমি তোমার পাশে আছি।”

লিমা বুঝতে পারছিল যে সে সঠিক পথে আছে। তবে সামনে আরও অনেক কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। 

এখন তাকে এই শক্তিকে মোকাবিলা করতে হবে, এবং আদুরীর মুক্তির জন্য লড়াই করতে হবে। 

রাতের ঘন অন্ধকার ধীরে ধীরে বাড়ির উপর নেমে আসছিল। লিমা এবং রানার মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছিল। রানা, যদিও লিমার আশঙ্কাকে প্রথমে তুচ্ছ মনে করেছিল, এখন বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছিল। তার চোখে এখন প্রকৃত ভয় দেখছিল। বাড়ির প্রতিটি কোণায় এক অদৃশ্য শক্তি তাকে ঘিরে ধরেছে, আর সে সেটা অনুভব করছিল।

লিমা টেবিলের উপর রাখা আদুরীর ডায়েরি আবার একবার পড়ছিল। ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলি তার হাতে কম্পন হয়ে উঠেছিল। আদুরীর সেসব কষ্টকর অভিজ্ঞতা, আতঙ্কের গল্প, আর তার মৃত্যু সেদিনের তীব্রতা লিমার মনে এক গভীর ভয় সৃষ্টি করেছিল। রানা এখনও অবিশ্বাসের গন্ডিতে ছিল, কিন্তু তার মনের মধ্যে এক সন্দেহের মেঘ জমছিল।

সকালবেলা, বাড়ির সামনের উঠোনে লিমা আর রানা দাঁড়িয়ে ছিল। রানা তার হাতের মধ্যে এক পুরোনো ছবির অ্যালবাম ধরে ছিল, যা তারা নথি খুঁজতে গিয়ে পেয়েছিল। অ্যালবামের ছবিগুলি বেশ পুরোনো, কিছু ছবি তো এমনকি শোক প্রকাশের মতো।

“লিমা, তুমি সত্যি ভাবো যে এই বাড়ির ভিতরে কিছু ভয়ঙ্কর আছে?” রানা ধীরস্বরে বলল, তার কণ্ঠে এক ধরনের দ্বিধা ছিল।

“আমি জানি, রানা। আমি জানি যে কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা এখানে ঘটছে। আমাদের আদুরীর অতীতের রহস্য উদঘাটন করতে হবে,” লিমা দৃঢ়তার সাথে বলল। “তোমার আসল দৃষ্টি এখানে খুঁজে বের করতে হবে।”

রানা একে একে ছবি ঘুরিয়ে দেখছিল, ছবির মধ্যে বেশ কয়েকটি অন্ধকার ধূসর মুখ ছিল। ছবিগুলির মধ্যে একটি ছবিতে একটি যুবতী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার চোখের অভিব্যক্তি অস্পষ্ট, কিন্তু তাতে এক ধরনের ভয়ের অনুভূতি ছিল। 

“এটি আদুরী হতে পারে,” লিমা বলল, ছবিটি দেখে। “তার চোখের অভিব্যক্তি এক ধরনের অশান্তি দেখাচ্ছে। আমি মনে করি, এই ছবিটি আমাদের কিছু বলতে চায়।”

দুপুরের দিকে, লিমা আর রানা বাড়ির পুরোনো অংশে ঢুকে পড়ল। পুরোনো আসবাবপত্র, আবর্জনা, আর এক ধরনের অতীতের গন্ধ সেখানে ভাসছিল। তারা দেখতে পেল এক ঘর, যা পুরোপুরি অন্ধকারে ঢেকে ছিল। লিমা মনে করেছিল যে এই ঘরটি বিশেষ কিছু।

“এখানে কিছু আছে, রানা। এই ঘরটা আমাদের অতীতের গোপন রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করতে পারে,” লিমা বলল, তার কণ্ঠে উত্তেজনার স্পন্দন ছিল।

রানা এক ধরনের সন্দেহ নিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল। লিমা সঙ্গী হল। ঘরটি বেশ অন্ধকার এবং ধোঁয়াশা ছিল। কিন্তু মঞ্জরী যেন কিছু অনুভব করছিল। সে জানত, এখানে কিছু আছে যা তাদের উত্তেজনাকে পূর্ণ করবে।

হঠাৎ, ঘরের এক কোণ থেকে একটি কাঁপুনি আওয়াজ শোনা গেল। সুমন থমকে দাঁড়াল, আর লিমা আশঙ্কিতভাবে তাকিয়ে থাকল। ঘরের মধ্যে হঠাৎ একটি স্নিগ্ধ হাওয়া শুরু হল, যা লিমাকে আরও বেশি আতঙ্কিত করল।

“এটা কি হচ্ছে?” রানা বিস্মিত হয়ে বলল।

লিমা বলল, “এটি সেই শক্তি। এটি আমাদের ভয় আর হতাশা থেকে শক্তি সংগ্রহ করছে। আমাদের এই ঘরটি পরিষ্কার করতে হবে। আর আদুরী আত্মাকে মুক্ত করতে হবে।”

লিমা পুরোনো দোয়াতে আগুন জ্বালাতে শুরু করল। সে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় জোরে জোরে প্রার্থনা করছিল, আর রানা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু হঠাৎ, ঘরের ভিতর থেকে এক ভয়ঙ্কর চিৎকার শুনা গেল। এটি ছিল এক অদ্ভুত গলার আওয়াজ, যা লিমাকে আরও বেশি ভয় দেখাচ্ছিল।

“আমরা কী করব?” রানা চিৎকার করে বলল। 

“আমাদের শেষ চেষ্টা করতে হবে। আমি জানি, এই শক্তি আমাদের সাহস আর শক্তি পরীক্ষা করছে। আমাদের প্রতিরোধ করতে হবে,” লিমার দৃঢ়তার সাথে বলল।

লিমা ডায়েরির পৃষ্ঠা থেকে পাওয়া একটি প্রাচীন নিয়ম অনুসরণ করতে শুরু করল। সে জানত, এই নিয়মগুলো হয়তো তাদের সাহায্য করবে। রানা কিছু সময়ের জন্য বোঝা শুরু করল যে, আদুরী অতীতের রহস্য উদঘাটন করা খুবই জরুরি।

হঠাৎ, ঘরের এক কোণ থেকে একটি ভয়ঙ্কর আলো উদ্ভাসিত হলো। আলোটি সাদা, কিন্তু তার মধ্যে এক অন্ধকার শক্তির উপস্থিতি ছিল। লিমা আর রানা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে সেই আলোকে মুখোমুখি হল। 

আলো থেকে বেরিয়ে আসা এক প্রাচীন আকারের শক্তি লিমা আর রানা দিকে এগিয়ে আসছিল। তার চোখের মধ্যে এক ধরনের ভয়ংকর প্রতিশোধের প্রতিফলন ছিল। 

“এটাই সেই শক্তি, রানা। এটি আদুরীর আত্মাকে বন্দী করেছে। আর এখন আমাদের সামনে এসেছে,” লিমা কাঁপা কণ্ঠে বলল।

এমন সময়ে,লিমার মনে পড়ল আদুরীর সেই স্বপ্নের কথা—যেখানে আদুরী তাকে সাহায্যের জন্য ডাকছিল। লিমি বুঝতে পারল, এই শক্তিকে পরাস্ত করার জন্য তাকে আদুরীর অতীতের সত্য উদঘাটন করতে হবে।

“আমাদের এখন আদুরীর অতীতের রহস্য উদঘাটন করতে হবে। আর এই শক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। যদি আমরা না পারি, তাহলে আমাদের সবার জীবনেরও শেষ হবে,” লিমা সাহসের সাথে বলল।
লিমা আর রানা অবিশ্বাস্যভাবে ভীত। সেই ঘরের ভেতরের আলোটা এখনো তাদের চারপাশে জ্বলছে, আর অদৃশ্য শক্তির চাপ তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত চাপ তৈরি করছে। সুমনের চোখে আতঙ্কের ছায়া, আর লিমার মনে শুধু একটাই চিন্তা—আদুরীর আত্মাকে মুক্ত করতে হবে, কিন্তু সে জানে যে এই বাড়িটি তাদেরও গিলে ফেলছে।

“এটা শুধু আদুরীর আত্মাকে বন্দী করেনি। এটা আমাদেরও ধীরে ধীরে গ্রাস করতে শুরু করেছে,” মঞ্জরী বলল, কাঁপা কণ্ঠে। “আমাদের দ্রুত কিছু করতে হবে।”

“কিন্তু কিভাবে?” রানা বলল, তার ভয় অদৃশ্য শক্তির মুখোমুখি হয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

লিমা ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলি আবার পড়তে শুরু করল। তার চোখের সামনে আদুরীর অবর্ণনীয় কষ্ট আর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা ফুটে উঠছিল। সে জানত যে, এই শক্তি শুধু ললিতার নয়, এখন তাদেরও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে।

হঠাৎ, ঘরের দেয়াল থেকে এক অদ্ভুত আওয়াজ শুরু হলো। আওয়াজটি যেন একটি অন্ধকার গর্জন, যা তাদের কানের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছিল। লিমা আর রানা সজাগ হয়ে ওঠে, তাদের মনে ভয়াবহ শিহরণ শুরু হয়।

“তোমার আদুরীর আত্মাকে মুক্ত করতে হবে,” এক ভয়ঙ্কর গলার আওয়াজ ঘরজুড়ে বেজে উঠলো। এটি মনে হচ্ছিল যে, বাড়ির নিজস্ব কণ্ঠস্বর।

লিমা বুঝতে পারছিল যে, তাদের লড়াই এখন এক ভয়াবহ স্তরে পৌঁছেছে। রানা পাশে নিয়ে, লিমা পুনরায় আদুরীর ডায়েরি খুলল। সে দ্রুত পৃষ্ঠাগুলি পড়তে শুরু করল। ডায়েরির শেষ পৃষ্ঠায় একটি প্রাচীন নিয়ম লেখা ছিল, যা তাকে একমাত্র উপায় হিসেবে মনে হচ্ছিল।

“এখানে একটি নিয়ম লেখা আছে,” লিমার বলল, তার কণ্ঠে দৃঢ়তা ছিল। “এটা আদুরীর আত্মাকে মুক্ত করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এটা করতে হলে আমাদের এই ঘরের অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে হবে।”

রানা নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে বলল, “আমরা কি করতে পারি? আমাকে বলো।”

লিমা ডায়েরির নির্দেশ অনুসরণ করে একটি প্রাচীন প্রতীক আঁকলো, যা সেই ঘরের এক কোণায় বসিয়ে দিল। এটি একটি ত্রিভুজের মতো প্রতীক, যা মন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল। প্রতীক আঁকার পরে, লিমা একটি প্রাচীন মন্ত্র উচ্চারণ করতে শুরু করল, যা ডায়েরিতে লেখা ছিল।

মন্ত্র উচ্চারণ করার সাথে সাথে ঘরের আলো আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠল, আর সেই অদৃশ্য শক্তি যেন শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। সুমন মন্ত্রের প্রতিক্রিয়া দেখতে থাকল, আর তার চোখে আতঙ্কের ঝলক।

হঠাৎ, সেই অদৃশ্য শক্তি এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে শুরু করল। একটি বিশাল আকারের কালো মেঘের মতো কিছু ঘরের মধ্যে প্রবাহিত হতে লাগলো। লিমা আর রানা ঘন অন্ধকারে নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছিল, আর তাদের চারপাশে এক অদ্ভুত চাপ অনুভূত হচ্ছিল।

“এটা এক ভয়াবহ সত্তা,” লিমা বলল, তার কণ্ঠে চাপ ছিল। “এটি আমাদের ভয়ের শক্তি থেকে শক্তি সংগ্রহ করে।”

রানা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমরা এই সত্তাকে পরাস্ত করতে পারব না তো?”

লিমা বলল, “আমাদের সাহস রাখতে হবে। আর আদুরী আত্মাকে মুক্ত করতে হবে। এই শক্তিকে পরাস্ত করতে হলে আমাদের মনে সাহস রাখতে হবে।”

হঠাৎ, আদুরী আত্মা লিমার সামনে উপস্থিত হলো। তার মুখে এক ধরনের শোক আর কষ্টের ছায়া ছিল। 

“লিমা… আমাকে মুক্তি দাও…” আদুরীর আত্মা বলল, তার কণ্ঠে এক অশান্তি ছিল।

লিমা বলল, “আমি চেষ্টা করছি, কিন্তু এই বাড়ি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারো?”

আদুরীর আত্মা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “তুমি সাহসী হও। এই বাড়ির অন্ধকার শক্তি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। তোমাকে একমাত্র পন্থা হিসেবে প্রাচীন নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। তবে মনে রেখো, এই শক্তি তোমাদেরও গিলে ফেলবে।”

লিমা সাহস নিয়ে মন্ত্র পাঠ করে যেতে থাকল। আর সুমন তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, প্রার্থনা করছিল। মন্ত্রের শক্তি বাড়ির চারপাশে একটি শক্তি তৈরি করতে শুরু করল, যা কালো মেঘের মধ্যে প্রবাহিত হতে লাগলো।

হঠাৎ, সেই অদৃশ্য শক্তি চিৎকার করতে শুরু করল। ঘরের ভিতর থেকে একটি ভয়ঙ্কর আলো উদ্ভাসিত হলো। আলোটি এত উজ্জ্বল ছিল যে, ঘরের অন্ধকারকে দূর করে দিল। 

আদুরীর আত্মা এবার এক শান্তি অনুভব করছিল। “ধন্যবাদ… ধন্যবাদ… তুমি আমাকে মুক্তি দিলে,” সে বলল, তার কণ্ঠে এক ধরনের শান্তি ছিল।

লিমা আর রানা ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। বাড়ির অন্ধকার শক্তি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। লিমা বুঝতে পারল যে, এই বাড়ি আর তাদের ভয়ের পন্থায় থাকতে পারবে না।

তারা ঘর থেকে বের হয়ে এসে, সবার প্রশান্তির অভিব্যক্তি নিয়ে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। লিমা আর সুমন বুঝতে পারছিল যে, তারা এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে। 

“আমরা সফল হলাম,” লিমা বলল, তার কণ্ঠে এক ধরনের শান্তি ছিল। “আদুরী আত্মা মুক্তি পেল। আর এখন আমরা মুক্তি পেলাম।”

রানা লিমার দিকে তাকিয়ে বলল, “এটা এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু আমরা একসঙ্গে সফল হয়েছি।”

তাদের দুইজনের সামনে এখন একটি নতুন সূর্য উঠছে। এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শেষে, তারা বুঝতে পারল যে, তাদের জীবন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। তবে, তাদের মনে এক ধরনের স্মৃতি ছিল—একটি অদ্ভুত শক্তির মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা, যা তাদের জীবনে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
................. সমাপ্ত...............
245 Views
10 Likes
6 Comments
4.3 Rating
Rate this: