জমিদার বাড়ির রহস্য

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
জমিদার বাড়ির রহস্য।
পর্ব - ২

জিনিসগুলো আরও জটিল হতে শুরু করল। রাত যতই গভীর হোক, সোহেল আর রিমি ঠিক ততই আতঙ্কিত হচ্ছিল। তারা দেখতে পেল, সেই মহিলা তাদের সামনে দাঁড়িয়ে। তার চোখগুলো ছিল অন্ধকার, তার মুখে ছিল এক অদ্ভুত হাসি।

"তোমরা কেন এসেছো?" মহিলা হঠাৎ গম্ভীরভাবে প্রশ্ন করল।

রিমি পেছনে সরে গিয়ে বলল, "আমরা... আমরা কেবল সত্য খুঁজছি, কিন্তু... আপনি কে?"

মহিলা হাসি দিয়ে বলল, "আমিই সেই মহিলা, যার আত্মা এই বাড়ির মধ্যে বন্দি। তোমাদের জন্য কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তোমরা আর কখনো এখান থেকে বেরোতে পারবে না।"

সোহেল শ্বাস টেনে বলল, "এটা কি তোমার প্রতিশোধ?"

মহিলা শান্তভাবে বলল, "না, এটা তার জন্য, যাদের এখানে ঠকানো হয়েছে। তোমাদের একটি পরীক্ষা নিতে হবে। যদি তোমরা সফল হও, তবে মুক্তি পাবে। কিন্তু যদি না পারো, তাহলে তোমাদের অন্তত দেহ থাকবে না।"

তাদের সামনে অন্ধকার একটা পথ তৈরি হল, এবং তারা বুঝতে পারল—এখন তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।

মহিলার কথাগুলো সোহেল আর রিমির মনে এক গভীর দাগ ফেলেছিল। তারা বুঝতে পারছিল, এবার তাদের সামনে আসল বিপদ। মহিলা তাদের দিকে তাকিয়ে এক শব্দ করল, আর এক মুহূর্তেই পুরো ঘর অন্ধকারে ঢেকে গেল। একের পর এক অদ্ভুত আওয়াজ আসতে শুরু করল, যেন কোনও অসীম শক্তি ঘুরছে চারপাশে।

"আমরা কী করতে পারব?" রিমি অসহায়ভাবে সোহেলের দিকে তাকিয়ে বলল।

"আমাদের ভয় পেতে হবে না," সোহেল দৃঢ়স্বরে বলল। "এটা শুধুই আমাদের সাহস পরীক্ষা।"

তাদের সামনে এখন এক অন্ধকার পথের প্রবেশদ্বার ছিল। মহিলা বলল, "এ পথে তোমাদের যেতে হবে, কিন্তু মনে রেখো, এই পথে কেবল সঠিক পথিকই বাঁচতে পারে।"

তারা সন্দিহান হয়ে পথের দিকে এগিয়ে চলল। পথটি একেবারে শান্ত, কিন্তু অদ্ভুত কিছু ছিল—কিছু পুরানো মূর্তির চোখ তাদের অনুসরণ করছিল। একে একে, তারা অদ্ভুত আলোর মতো কিছু দেখতে পেল, যা পথের শেষে জ্বলছিল।

"এটা কি?" রিমি জিজ্ঞেস করল।

"আমরা যেতে থাকি," সোহেল বলল, "পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা আমাদের আটকাতে পারে।"

তারা পথ চলতে চলতে দেখল, হঠাৎ সামনে থেকে এক ধরনের আওয়াজ আসতে শুরু করল। সোহেল খেয়াল করল, সেই আওয়াজ আসছে সেই মহিলার থেকে, তবে এত দ্রুত তারা সেখানে পৌঁছাতে পারল না।


পথে চলে যেতে যেতে সোহেল আর রিমি একটি অদ্ভুত দরজা দেখতে পেল। দরজাটি খোলামেলা ছিল, কিন্তু ভিতরে যা ছিল, তা দেখে তাদের হৃৎস্পন্দন দ্রুত হতে শুরু করল। দরজার মধ্যে প্রবাহিত হাওয়ায় অদৃশ্য কিছু ছিল—মনের গভীরে এক শীতল অনুভূতি।

রিমি ধীরে ধীরে দরজাটি খুলল। ভিতরে প্রবেশ করতেই তারা দেখল, এক বিশাল ঘর। কিন্তু এই ঘর ছিল ভুতুড়ে—চারপাশে টুকরো টুকরো কাঠের বাক্স পড়ে ছিল। এই ঘরটির এক কোণে এক পুরানো পর্দা ছিল, যেটি অদ্ভুতভাবে নড়ছিল, যেন কোনো আত্মা সেখানে লুকিয়ে আছে।

সোহেল এক পা এগিয়ে বলল, "এটা কি আমরা খুঁজছি?"

তারা পর্দাটি সরাল, আর হঠাৎ পুরো ঘরটা একেবারে বদলে গেল। ঘরের মধ্যে ভয়ংকর একটা শূন্যতা তৈরি হল। এক অন্ধকার যন্ত্রণা অনুভব করতে থাকল তারা—কিছুটা যেন তাদের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।

তখনই তারা শোনে, "আমরা এখানে আছি, আর তোমাদের কাছে কিছুই নেই।"

সোহেল চমকে ওঠে, "এটা কি...?"

মহিলা আবার উপস্থিত হয়ে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, "এখানে তুমি কোনো কিছু হারাবে, অথবা শেষ হয়ে যাবে।"
মহিলার উপস্থিতি তাদের আরও গভীর আতঙ্কে ডুবিয়ে দিল। তার চোখে ছিল এক অদৃশ্য রহস্য, এবং তার মুখে সেই হাসি ছিল যা সোহেল আর রিমির মনে এক অজানা শীতলতা সৃষ্টি করছিল।

"তোমাদের সামনে একটি প্রশ্ন আছে," মহিলা বলল। "জীবনের আসল অর্থ কি? যদি তোমরা এর উত্তর না দিতে পারো, তাহলে তোমাদের শেষ হয়ে যাবে।"

সোহেল কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে বলল, "জীবনের আসল অর্থ? আমরা কি জানি, এ প্রশ্নের উত্তর?"

"এই ঘরেই যদি তুমি হারিয়ে যাও, তাহলে কখনোই মুক্তি পাবে না," মহিলা এক অদ্ভুত গম্ভীরতায় বলল।

রিমি আতঙ্কিত হয়ে সোহেলকে দেখল। "সোহেল, তুমি কি বুঝতে পারছো? আমরা এখানে আছি... কিন্তু আমাদের মুক্তি কোথায়?"

তাদের সামনে একটি অন্ধকার পথে প্রবাহিত আলো দেখা যাচ্ছিল। এটা ছিল একমাত্র রক্ষা পাওয়ার পথ, কিন্তু সোহেল আর রিমি জানত, তাদের সামনে কেবল একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।

তারা অন্ধকার পথটির দিকে হাঁটতে থাকল। প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে তাদের মনে হচ্ছিল, যেন কোনো শক্তি তাদের পিছনে অনুসরণ করছে। রিমি থেমে গিয়ে সোহেলের দিকে তাকাল, "তুমি কি জানো, আমরা কী করতে যাচ্ছি?"

"কিছু জানি না," সোহেল ধীরভাবে বলল। "কিন্তু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।"

তারা শেষ পর্যন্ত সেই আলোতে পৌঁছাল। তবে, সেটি ছিল এক বিশাল দরজা। দরজা খুলতেই তারা এক অদ্ভুত পৃথিবী দেখল—এটি ছিল অন্য একটি বাস্তবতা, যেখানে আকাশ ছিল রক্ত লাল, আর মাটি ছিল অন্ধকার। এখানেও একটি মহিলা দাঁড়িয়ে ছিল, যার চোখ ছিল অগ্নির মতো তীব্র।

"তোমরা এখানে কী চাই?" মহিলা বলল।

"আমরা মুক্তি চাই," সোহেল বলল, "আমরা বেরিয়ে যেতে চাই।"

মহিলা হেসে বলল, "তোমরা একবার এখানে এসেছো, তোমরা কিছু হারাতে যাচ্ছো—এটা একটি অভিশাপ।"

"এটা কি সেই পরীক্ষার অংশ?" রিমি জিজ্ঞেস করল।

মহিলা মাথা নেড়ে বলল, "হ্যাঁ, এই পথ তোমাদের পরীক্ষা নিতে আসবে। যদি তুমি সঠিক পথ বেছে নিতে না পারো, তবে তোমাদের জীবন থাকবে না।"

তারা বুঝতে পারল, তারা এক অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে লড়াই করছে, এবং শেষ পর্যন্ত তারা জীবিত না ফিরতে পারে।

মহিলার কথা শেষ হতেই, পুরো এলাকা অন্ধকারে ঢাকা পড়ল। এক ভয়ংকর শীতল বাতাস তাদের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল। সোহেল আর রিমি একে অপরকে শক্ত করে ধরে ছিল, কিন্তু তারা জানত—এটা ছিল শেষ রাত। তাদের সামনে দুটো রাস্তা ছিল—একটি অন্ধকার, আর একটি আলোকিত।

রিমি বলল, "এখন কী করব?"

সোহেল গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, "একটা পথ বেছে নিতে হবে, কিন্তু আমরা জানি না কোনটা সঠিক।"

তারা আলোকিত পথে হাঁটতে শুরু করল, কিন্তু এমন মনে হচ্ছিল, তাদের জীবনের শেষ মুহূর্তে তারা পৌঁছে যাচ্ছে। অবশেষে, সেই মহিলার হাসি তাদের কান পেরিয়ে শোনাল, "তোমরা শেষ করেছো, এখন তোমাদের প্রমাণ দিতে হবে।"

এই পথে কোন মুক্তি ছিল না, কেবল অন্ধকারই তাদের ভবিতব্য ছিল।
চলবে......
279 Views
5 Likes
1 Comments
5.0 Rating
Rate this: