...

কালো ছায়া

...
মোঃ সাকিব
...
21-Nov-2024, 08:36 AM
...

6

...

1

...

(0)

ক্যাটাগরি : ভুতের গল্প



গল্প: “কালো ছায়া”

অধ্যায় ১: গ্রামের পুরোনো বাড়ি

রাত তখন সাড়ে দশটা। শীতল হাওয়ায় পুরো গ্রাম নিস্তব্ধ। হাসান শহর থেকে গ্রামের এই পুরোনো বাড়িতে এসেছে তার প্রয়াত দাদার সম্পত্তি দেখাশোনা করার জন্য। দাদার মৃত্যুর পর কেউ আর এই বাড়িতে থাকেনি। বাড়িটা বড়, তবে ভাঙাচোরা। ভেতরে ঢুকে হাসান দেখল ঘরের কোণায় মাকড়সার জাল ঝুলে আছে। বাতাসে একটা গন্ধ—পুরোনো কাঠ আর স্যাঁতসেঁতে মাটির মিশ্রণ।

রাত কাটানোর জন্য হাসান তার ব্যাগ খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম আসছিল না। বারবার মনে হচ্ছিল, কেউ যেন ঘরের বাইরে ধীরপায়ে হাঁটছে। সে উঠে দরজার ফাঁক দিয়ে তাকাল। কিচ্ছু নেই।

ফের বিছানায় শুতে গেল। কিন্তু এবারও সেই আওয়াজ—ধীরে ধীরে জুতো পরা পায়ের শব্দ। শব্দটা যেন আরো কাছে আসছে।


---

অধ্যায় ২: রহস্যময় চিঠি

সকাল হতে না হতেই হাসান বাড়ির চারপাশ পরিস্কার করতে শুরু করল। হঠাৎই সে মেঝেতে একটা পুরোনো চিঠি পেল। চিঠিটা অদ্ভুত। হাতে লেখা, তবে লেখাগুলো ছিল কাটা কাটা, যেন কেউ তাড়াহুড়ো করে লিখেছে। তাতে লেখা ছিল:

"যে বাড়িটা তুমি কিনেছো, ওটা তোমার নয়। এখানে ওরা বাস করে। তুমি যদি চলে না যাও, ওরা তোমাকে ছাড়বে না।"

হাসানের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। কিন্তু সে এটাকে হয়তো কোনো মজার ব্যাপার ভেবে এড়িয়ে গেল।


---

অধ্যায় ৩: ছায়ার আবির্ভাব

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটা যেন আরো ভয়ানক হয়ে উঠল। বাতাস ভারী আর চাপা। লাইট জ্বালিয়ে হাসান ডাইনিং রুমে বসল। বাইরে থেকে হঠাৎ একটা আওয়াজ এল, যেন কেউ মাটি আঁচড়ে চলেছে। সে জানালার কাছে গিয়ে তাকাল। কিন্তু কিছুই দেখতে পেল না।

হঠাৎ তার চোখ পড়ল করিডোরের অন্যপ্রান্তে। একটা কালো ছায়া দেখা গেল। ছায়াটা বড়, অস্বাভাবিক লম্বা। সেটি একদম স্থির দাঁড়িয়ে ছিল। হাসান ভয় পেয়ে লাইট জ্বালাল। কিন্তু লাইট জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে ছায়াটা অদৃশ্য হয়ে গেল।


---

অধ্যায় ৪: দরজা খোলার শব্দ

রাত তখন দুইটা। ঘরের সব দরজা বন্ধ ছিল। কিন্তু হঠাৎ হাসানের মনে হলো কোনো একটা দরজা ধীরে ধীরে খোলা হচ্ছে। ভেতরের অন্ধকারে কিছু একটা নড়ছে।

সে ভয় পেয়ে দরজার দিকে তাকাল। হঠাৎ দরজার ফাঁক দিয়ে একটা হাত বের হলো। সেই হাতের আঙুলগুলো অস্বাভাবিক লম্বা আর কালো। হাসান আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল। কিন্তু কেউ তাকে শুনতে পেল না।


---

অধ্যায় ৫: ভোরের আগে শেষ মুহূর্ত

ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত হাসান পুরো রাতটা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কাটাল। তবে সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনাটা ঘটল ভোর পাঁচটার দিকে। সে শুনল তার পাশের ঘর থেকে এক নারীর হাসির আওয়াজ। হাসান ঘরের দরজা বন্ধ করেছিল। কিন্তু দরজার নিচ দিয়ে আবার সেই কালো ছায়া আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকছে।

সে পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল। সেই কালো ছায়াটা এবার তার সামনে দাঁড়িয়ে। ভয়াবহ এক মুখ, যেখানে চোখ নেই—শুধু শূন্য কালো গহ্বর।

হাসান চিৎকার করল, কিন্তু তার গলা থেকে কোনো শব্দ বের হলো না। ছায়াটা ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এল এবং পুরো ঘর অন্ধকারে ঢেকে গেল।


---

শেষ অধ্যায়: নিস্তব্ধ সকাল

সকালে স্থানীয় লোকেরা বাড়িটার দরজা খুলে হাসানকে খুঁজে পেল না। তারা শুধু দেখল মেঝেতে সেই পুরোনো চিঠিটা পড়ে আছে। চিঠির নতুন করে একটা লাইন যোগ করা হয়েছিল:

"এবার ওর পালা শেষ। তোমারও অপেক্ষা করো।"

সেই বাড়িটা আজও খালি পড়ে আছে। যারা কাছাকাছি যায়, তারা রাতের বেলায় হাসানকে ছায়ার ভেতর ঘুরে বেড়াতে দেখে।


---

শেষ।

এই গল্প পড়ে নিশ্চয়ই ঠান্ডা একটা ভয় অনুভব করেছেন?


মন্তব্য

রেটিং দিন