চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের পশ্চিম কোণে দাঁড়িয়ে আছে সফর আলী মাঝি বাড়ি। একসময় এটি ছিল গ্রামের সবচেয়ে জমজমাট বাড়ি। সফর আলী ছিলেন একজন নৌকাপ্রধান মাঝি। তার নৌকা ছিল মেঘনার বুকে দাপটের প্রতীক। কিন্তু আজ সেই বাড়ি পরিত্যক্ত, গাছ-গাছালিতে ঢাকা পড়ে গেছে। এই বাড়ি নিয়ে গ্রামের মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় এক ভয়ঙ্কর গল্প।
রহস্যের শুরু
সফর আলীর মৃত্যুর পর বাড়ি যেন একেবারে অভিশপ্ত হয়ে ওঠে। রাতে কেউ বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে শুনতে পায় অদ্ভুত শব্দ। কেউ বলে, বাড়ি থেকে মাঝির বাঁশির সুর ভেসে আসে। আবার কেউ দেখে, নদীর ধারে একটি ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে, চোখে জ্বলজ্বলে আগুনের মতো আলো।
একবার গ্রামের যুবক আমিন, রনি, আর খোকন সাহস করে রাত ১২টায় সফর আলী মাঝি বাড়িতে ঢোকে। তারা মশাল নিয়ে বাড়ির পুরনো ঘরগুলো ঘুরতে শুরু করে। হঠাৎই বাতাস যেন ভারি হয়ে যায়। বাড়ির মাঝখানের উঠোনে এসে তারা দেখে, সেখানে একটি পুরনো নৌকার কাঠ পড়ে আছে। সেই কাঠ থেকে অদ্ভুত গন্ধ বেরোচ্ছে।
আত্মা নাকি গল্প?
রনি জানায়, যখন তারা নৌকার কাছে দাঁড়ায়, তখনই হঠাৎ একটি শীতল বাতাস এসে মশাল নিভিয়ে দেয়। অন্ধকারে কেউ যেন তাদের নাম ধরে ডাকছিল, “আমিন... রনি... খোকন...”। ভয়ে তিনজনই দৌড়ে পালায়। পরদিন সকালে তারা দেখতে পায়, সেই কাঠের টুকরোটা আর নেই।
কাছে গিয়ে কেউ ফেরেনি
গ্রামের বয়স্করা বলে, সফর আলী নাকি জীবদ্দশায় একবার মেঘনার মাঝখানে হারিয়ে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পর থেকে তার আচরণ বদলে যায়। তিনি নৌকায় বসে একা একা গান গাইতেন আর মাঝরাতে নদীর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করতেন। মৃত্যুর পর তার আত্মা সেই বাড়ি আর নৌকার সঙ্গে মিশে গেছে।
সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ
আজও সফর আলী মাঝি বাড়ি নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। কেউ সেখানে রাত কাটানোর সাহস পায় না। গ্রামের লোকেরা বলে, “বাড়িটা শান্তি চায়। সেখানে কেউ গেলে সফর আলী ফিরে আসেন।”
আপনি কি একবার সেই বাড়িতে রাত কাটাতে সাহস করবেন? নাকি শুধু গল্প শুনেই কল্পনার জগতে হারিয়ে যাবেন?
“চর জাঙ্গালিয়া, যেখানে রাতের আঁধারে কাহিনিগুলো জেগে ওঠে।”
লেখক: রাকিবুল ইসলাম রাহান