শুধু তোমারই জন্য

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
ছেলেটি অরিনের হাত ধরতে গেলে অরিন ঠাসস্ করে তাকে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়।ছেলেটা রেগে বলে -

-এই.... (ছেলেটা)

-এইইইইইইই......(ছেলেটার থেকে জোরে) গলা নামিয়ে। না হলে ঐ গলা কেটে গাছে ঝুলিয়ে রেখে দেব। লোফার কোথাকার! বাড়িতে মা-বোন নেই? মেয়ে দেখলে মনে লাড্ডু ফোটে না? কি যেন বলছিলি, গল্প করবি না? থাম আর কি কি করতে পারি দেখ... (অরিন)


এই বলে অরির একটি লাঠি নিয়ে ছেলেগুলোকে উত্তম-মধ্যম দিতে লাগলো। অনেকে ভিড় করে মারপিট দেখছে। আবার অনেকে অরিনের প্রশংসা করছে।আকাশও দোতলা থেকে এতক্ষণ দেখছিলো এসব। কিন্তু যখন দেখল এরপর না থামালে এরা হসপিটালে যাবে, তখন দ্রুত নিচে এসে -


- Okey, okey এরপর আমার উপর ছেড়ে দিন। (আকাশ)

- নিয়ে যান এদের। নাহলে আজ আমি এদের উপরে পাঠিয়েই ছাড়ব। (অরিন)

আকাশ একবার অরিনের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে ছেলেগুলোকে নিয়ে গেল। তাদের সাথে সাথে টিসি দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হলো। তবে অরিনের এই প্রতিবাদী রূপটা আকাশের খুব ভালো লাগলো। এমনি মেয়েটা শান্তশিষ্ট, কিন্তু যখন গর্জে ওঠার প্রয়োজন হয়, তখন বাঘিনীর থেকে কম গর্জে ওঠে না।


_____________________


রাতে আকাশ পড়তে বসলে বারবার অরিনের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা তার কল্পনায় ভেসে উঠছিলো। পড়া থেকে এই প্রথম তার মনোবিচ্ছেদ হচ্ছে একটি মেয়ের জন্য। শেষে বিরক্ত হয়ে সে বইটা বন্ধ করে ফেললো।

- কেন ভুলতে পারছি না আমি ওর রাগে লাল হয়ে যাওয়া face টা। মনে হচ্ছে যেন আমি ওকে চিনি। মনে হচ্ছে যেন ও আমার c..... না না এ নাম শুধু তারই জন্য। এটা আমি আর কাউকে দিতে পারব না। (আকাশ)


অরিন ঘুমাচ্ছিল।সে হঠাৎ স্বপ্ন দেখে-সে একবার গ্রামের বাড়িতে যেয়ে দেখে তার দাদি আনোয়ারা বেগমের কোলে একটা ছেলে বসে আদর খাচ্ছে।যেটা দেখে সে প্রচণ্ড রেগে যায়। অরিন ছিল পরিবারের বড় মেয়ে তাই তার আদরও বেশি ছিল। সেই আদরে যদি এখন অন্য একজন ভাগ বসায় তাহলে তার তো একটু জেলাসি হবেই।

- এই এই তুমি কে হ্যাঁ?(অরিন)

- ওহ অরিন,তোকে তো বলাই হয়নি,ও হলো তোর আরুষি পিপির ছেলে,আদ্র।পড়াশোনায় ভীষণ ভালো।দেখ না, আমার সাথে কি সুন্দর বসে গল্প করছিল।আর...........(আনোয়ারা বেগম )

- থাক থাক আর প্রশংসা করতে হবে না। (অরিন)


আনোয়ারা বেগমের ডাক পড়াতে তিনি উঠে চলে যান।

- কেন হিংসে হচ্ছে আমার ওপর? (আদ্র)

- মোটেও না, আমার তোমার উপর হিংসে করতে বয়েই গেছে। (অরিন) 

- হিংসুকুটি। (আদ্র)

- এই কি বললে তুমি? (অরিন রেগে)


অরিনের চোখমুখ লাগে লাল হয়ে যায়।

- হিংসুকুটি বলেছি। তবে এই নামটা তোমাকে ঠিক suit করছে না। দেখো তুমি রেগে গেছে বলে তোমার চোখমুখ মরিচের মতো লাল হয়ে গেছে। তাই তোমার নাম হওয়া উচিত Chilly Barbie. My Chilly Barbie (শেষের কথাটা আদ্র অরিনের নাকে নিজের আঙুল টোকা দিয়ে বলল)

অরিনের সেই ছোয়াতে এক অদ্ভুদ অনুভূতি হয়েছিল যার নাম সে জানে না। এমন সময় সে নোয়েলের ডাকে সে ধরফর করে উঠে পড়ে।

- আপু এই, আপু..... ওঠ,কলেজ যাবি না?দেরি হয়ে যাবে তো এরপর। (নোয়েল)

- ক.... ক... কি? (অরিন)

- আরে কলেজে যাবি তো? (নোয়েল)

- হুম। যাব না কেন? (অরিন বিছানা ছেড়ে উঠে)

- কী স্বপ্ন দেখছিলিস এতক্ষণ? দেখলাম মুচকি মুচকি হাসছিস। (নোয়েল)

- তোর হবু বরকে দেখছিলাম। (অরিন)

- আমার হবু বরকে দেখে তুই হাসছিলিস কেন?যাক গে,কেমন দেখতে ওকে? (নোয়েল কিছুটা উৎসাহ নিয়ে বলে)

- পুরো আতালের মতো দেখতে। (অরিন)


নোয়েলের মুখটা চুন হয়ে যায়। আর তা দেখে অরিন হেসে ফেলে।


তিনদিন পর............

নজরুল হাউজের female perfect তৃষ্ণা কোন কারনে সিপিএসসিএস থেকে অন্য কলেজে চলে গিয়েছিল।এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন প্রিফেক্ট নির্বাচন করতে হবে। সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে আকাশ। তাই সে দেরি না করে নজরুল হাউসের হাউস মাস্টার মেহেরুন্নেসা ম্যামকে কল করে।

-আসসালামু আলাইকুম ম্যাম (আকাশ)

-ওয়ালাইকুমুস সালাম। আকাশ তুমি হঠাৎ কল করলে। (ম্যাম)

-আসলে ম্যাম হয়েছে কি, নজরুল হাউসে female perfect তৃষ্ণা কলেজ থেকে চলে গিয়েছে।(আকাশ)

-সে কি! এটা কেমন কথা? প্রিফেক্ট নির্বাচনের তিনদিন পরই চলে গেল? (ম্যাম)

- Yes mam, বিষয়টা আমিও বুঝতে পারছি না। ম্যাম আপনি তো জানেনই,এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব new prefect select  করতে হবে। কারণ সামনে annual sports রয়েছে। (আকাশ)

-হুম, কিন্তু আমি তো এখন ছুটিতে আছি। এক কাজ করো, তুমি প্রিফেক্ট নির্বাচন করো। (ম্যাম)

- ম্যাম আমি!!! (আকাশ)

- হ্যাঁ। দেখো আকাশ, তোমরা স্টুডেন্ট। তোমরা তো তোমাদের ব্যাচের সবাইকে চেনো কে কেমন। তাই তোমরা আমার থেকে ভালো বুঝবে যে কে এ পদের জন্য উপযুক্ত। তাই আমার মনে হয়, as a House Commander,তোমার এই দায়িত্বটা নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে মেইন প্রিফেক্ট লিওনের সাথে কথা বলো। (ম্যাম)

- Okay mam, আমি দেখছি। (আকাশ)

- আচ্ছা (ম্যাম)

ফোনটা কেটে যায়।

আকাশ পড়ল মহা ফ্যাঁসাদে। কেউই ওর কাছে যোগ্য নয়। যারা যোগ্য তারা আগে থেকেই নজরুল হাউসের প্রিফেক্ট। ডিসিপ্লিন এর দিক দিয়ে করা হতে পারবে এমন পাবলিক কলেজে একটাও চোখে পড়ে না আকাশের। তৎক্ষণাৎ একজনের নাম ওর মাথায় আসে। সে কাউকে কল করে এবং কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয়। আকাশের মুখে একটি প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে।

______________________


পরদিন কলেজে আকাশ ব্রেকটাইম সব কলেজ স্টুডেন্টদের অডিটোরিয়ামে ডাকে। কারণ আকাশ আজ নজরুল হাউসের female prefect এর নাম বলবে এবং তাকে তার ব্যাচ প্রদান করা হবে।


ব্রেকটাইম এর কিছুক্ষন আগে..........

- এই অরিন, জানিস আজকে H.C সবাইকে ব্রেকটাইমে ডেকেছে। (লিসা)

- কেন?৷ (অরিন)

- আরে আজকে তো আমাদের হাউজের new female prefect এর নাম বলা হবে। (লিসা)

- ওহ,তুই যাস। (অরিন)

- কেন? তুই যাবি না? (লিসা)

- নাহ। তুই তো প্রিফেক্ট, তোর যাওয়া উচিত। আমি ওখানে যেয়ে কী করব? (অরিন)

- কি করবি মানে? তুই কী নজরুল হাউজের student না? (লিসা)

- Of course আমি নজরুল হাউজের student. (অরিন)

- তাহলে যেতে কেন চাচ্ছিস না?(লিসা)

- আরে বাবা পরে তো এমনিও জানতে পারব। এখন গিয়ে কী লাভ? আর আমি জানি ওই H.C র রুচি কেমন হবে। (অরিন)

- প্লিজ দোস্ত চল না,চল না। (লিসা)

- এই ব্যাপার কী বলতো? তুই আমায় এত যেতে বলছিস যে? (অরিন চোখ ছোট করে)

- (কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে) ব...ব্যাপার ক..কিছুই না। আমি এমনি তোকে যেতে বলছি। (লিসা)

- কিন্তু আমার তো কিছুটা ঘাবলা আছে বলে মনে হচ্ছে।(অরিন)

- তোর যাই মনে হোক না কেন তুই আর যাচ্ছিস অডিটরিআমে। (লিসা)

শেষে লিসার জোড়াজুড়িতে অরিন যেতে রাজি হয়ে যায়।


চলবে.....................



170 Views
2 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: