ভালোবাসা বারন

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
রাহুল ও মেঘনা তাদের সম্পর্ক এবং ভালোবাসার মূল্যকে প্রতিটি পদক্ষেপে উপলব্ধি করছিল। তবে গ্রামের যে যুবকরা এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারছিল না, তাদের ক্রোধ প্রতিদিনই বাড়ছিল। একদিন, এই যুবকদের নেতা, অর্জুন, সিদ্ধান্ত নিলো যে এই ভালোবাসার চর্চা বন্ধ করতে হবে, অন্যথায় শান্তিপুর তার ঐতিহ্য হারাবে।

এক সন্ধ্যায়, অর্জুন কিছু যুবকদের সাথে নিয়ে রাহুল ও মেঘনাকে গ্রামবাসীদের সামনে আনলো। সবাই ভীড় করে জড়ো হলো। বাতাসে যেন এক চাপা উত্তেজনা, এক অদৃশ্য ভয় ঘুরছিল।

অর্জুন তার আঙুল তুলে রাহুলের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, “এই ব্যক্তি আমাদের সমাজের নিয়ম ভেঙেছে। ভালোবাসা এখানে বারন, কিন্তু সে আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট করে দিয়েছে। এই ভালোবাসা সমাজকে বিভ্রান্ত করছে, আমাদের শান্তিপুরে বিশৃঙ্খলা আনছে।”

গ্রামবাসীরা একে অপরের দিকে তাকালো। অনেকেই দ্বিধায় পড়ে গেল, কারণ তারা রাহুল ও মেঘনার মাঝে সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছিল। কিন্তু অনেকেই অর্জুনের কথার প্রভাবে এসে ভাবতে লাগলো, তাদের প্রথা কি আসলেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?

রাহুল শান্তভাবে সামনে এগিয়ে এসে বলল, “তোমাদের সমাজের প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান আছে। তবে ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয়। এটি এমন কিছু নয় যা সমাজের শান্তি নষ্ট করবে, বরং এটি আরও গভীর করে তুলবে। আমরা এখানে একে অপরকে সম্মান করতে এবং ভালোবাসতে এসেছি। শান্তিপুরের মানুষের মনে আমি নতুন আলোর সন্ধান দিতে চাই। ভালোবাসা হলো শক্তি, এটি দুর্বলতা নয়।”

অর্জুন ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, “তাহলে প্রমাণ করো, ভালোবাসা আমাদের সমাজে সত্যিই শক্তি আনবে। তোমাদের ভালোবাসা যদি এতই শক্তিশালী হয়, তবে আমি দেখতে চাই, এটি কেমন করে আমাদের সমাজের ঐক্যকে বাঁচিয়ে রাখে।”

রাহুল কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, কিন্তু তার চোখে দৃঢ় সংকল্পের ছাপ ছিল। সে বলল, “আমাদের ভালোবাসার সত্যিকারের শক্তি যদি দেখতে চাও, তবে সময় দাও। আমরা শান্তিপুরে নতুন জীবনের সূচনা করতে চাই, যেখানে ভালোবাসা প্রকাশ কোনো অপরাধ নয়, বরং এটি জীবনের স্বাভাবিক অংশ। আমাদের ভালোবাসা নিয়ে কোনো বিভাজন চাই না, আমরা চাই সমাজের সবার মঙ্গল।”

গ্রামবাসীরা রাহুলের কথায় নতুন কিছু ভাবতে লাগলো। কিছু প্রবীণ মানুষ এই নতুন ভাবনাকে স্বাগত জানালো। তারা বলল, “আমাদের বহুদিনের পুরোনো নিয়মে হয়তো পরিবর্তন আনতেই হবে। যদি ভালোবাসা সত্যিই আমাদের ঐক্যকে আরও মজবুত করতে পারে, তবে আমরা কেন ভয় পাবো?”

এই কথাগুলোর পর গ্রামে এক নতুন আলোড়ন উঠলো। অর্জুন ও তার অনুসারীরা একধরনের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ অবস্থায় চুপ হয়ে গেল। তারা জানতো, এই পরিবর্তন সহজে থামানো যাবে না।

রাহুল ও মেঘনা ধীরে ধীরে গ্রামে নিজেদের ভাবনা ও ভালোবাসার নতুন ধারণাগুলো ছড়িয়ে দিতে শুরু করলো। তারা বিভিন্ন গ্রামের মানুষের কাছে গিয়ে ভালোবাসার মানে বোঝাতে লাগলো—একটি স্বচ্ছ মন, সহানুভূতি ও সবার মঙ্গলের জন্য একত্রিত হওয়ার শক্তি হিসেবে।


152 Views
3 Likes
0 Comments
5.0 Rating
Rate this: