বর্তমান প্রজন্ম
বর্তমান প্রজন্মের উদীয়মান ছেলেমেয়েদের কাছে বেশিরভাগ ভালো ও শিক্ষণীয় জিনিসগুলো বিরক্তিকর লাগে। অথচ তাঁরা খারাপ যে কোনো কিছুর প্রতি মুহুর্তেই গতিশীল হয়ে যায়। এই প্রজন্মের অনেক ছেলে মেয়েরা পারিবারিক জীবনে অনাবিল সুখ কিংবা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিছু ভোগ করতে পারে বলে তাঁদের জীবনকে সুনির্দিষ্ট মাধ্যমে আদর্শিক ও উন্নত করার উদ্দেশ্যে তেমন কোনো প্রয়োজনীয় লক্ষণ দেখা যায় না। জীবন-জীবিকা নিয়ে অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা গম্ভীর হতে সচেষ্ট নন। অল্পসংখ্যক কিছু ছেলে মেয়েরা নিজের জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতন হলেও তাঁদের জীবনেও বেশিরভাগ সময়ে পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে যথাযথ সমর্থন মিলে না। ফলে জীবনে উন্নত কিছু ভেবে ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে জীবনযুদ্ধে নেমে কতদূর যেতে না যেতেই অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়ে হার মেনে থেমে যায়।
এই প্রজন্মের ৯০% ছেলে মেয়েরা হচ্ছে একধরনের প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিবন্ধীর মতো। এরা বুঝতে চাই কম। বলতে চাই বেশি। আর এদিকে যৌবনে পা রাখতে না রাখতেই নিজেকে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ভাবে। বাহু একটু মোটা হলেই প্রায় ছেলেরা মুখে সিগারেট রেখে পাতি নেতার ভাব নিয়ে বুক টানটান করে বড়দের সামনে বেপরোয়া হয়ে ঘুরাঘুরি করে। আর অধিকাংশ মেয়েরা স্তন একটু বড় হলেই কিংবা বয়স ১৩/১৪ পার হলেই নিজেকে বিবাহিত মহিলাদের মতো বা ৩/৪ বাচ্চার মায়ের মতো মনে করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতকরা ৮০% ছাত্রছাত্রীরাই সময় পার করতে, বন্ধুবান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিতে, প্রেমপ্রীতি করতে এবং ভণ্ডামি আর গুণ্ডামি করতে যায়। শিক্ষক কোনো ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করলে কিংবা শাসন করার চেষ্টা করলে বেয়াদবি করার উপক্রম দেখা যায়।
অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা কারো সাথে সামান্য কিছু বিষয়ে কিংবা কোনো কারণবশত কথা কাটাকাটি হলে তর্কাতর্কি তীব্র হতে তীব্রতর প্রভাব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেও দ্বিধা বোধ করে না। একটু চলতে পারলে, বলতে পারলে, শিখতে পারলে, জানতে পারলে ও পথঘাট চিনতে পারলেই বাবামায়ের সাথেও তর্কাতর্কি করতে অভ্যস্ত হয়। কেউ কেউ আবার মনের চাহিদা মিটাতে না পারলে কিংবা বাবা-মায়ের কাছ থেকে কোনো কিছু আবদার করে না পেলে তৎক্ষনাৎ রাগ আর অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
এই প্রজন্মের অনেক নবযৌবনপ্রাপ্ত মেয়েরা প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাসী। কোনো বখাটে পোলাপান এসে মিথ্যা সুখের লোভ দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে বন্দী করলে বর্তমান প্রজন্মের বহু মেয়েরা নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করে। পরে সময়মতো বাঁশ খেয়ে মানসম্মান বিনষ্ট করে নিজের সতীত্ব হারিয়ে আপসোস করতে করতে ধর্মীয় লেবাসধারণ করে পর্দাবতী হয়ে যায়। কেউ কেউ আবার পরিবারের মানসম্মানের কথা ভেবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো নির্মম জঘন্য পথে পা বাড়ায়।
এই প্রজন্মের উদীয়মান ছেলেদের অনেকেই মেয়েদেরকে ভোগের জিনিস মনে করে। ফলে বড়দের দেখাদেখি আর বন্ধুদের কাছ থেকে দেখে এক বা একাধিক মেয়ের সাথে পবিত্র প্রেম-ভালোবাসার অভিনয়ের মাধ্যমে শারীরিক সম্পর্কের পাশাপাশি নানা ধরনের অন্যায় করে যায়। এদের অধিকাংশ ছেলেরাই বয়স ১৫ পার হতেই টাকার নেশায় পড়ে যা তা করে বসে। ভাইরাল হওয়ার জন্য নীতিনৈতিকতাও উপেক্ষা করে হরেক রকমের অসামাজিক কার্যকলাপ করার পাশাপাশি অনৈতিক কাজে উৎসাহিত হয়।
এই প্রজন্মের অনেকেই ঘরে বাহিরে বেশি বেশি খাওয়াদাওয়া করে দেহের আকার-আকৃতি দানব দানবীর মতো বানিয়ে ফেলে এবং দেহের বর্ণ কিছুটা সৌন্দর্য হলেই নিজেকে নায়ক নায়িকাদের মতো অনুভব করে অন্যরকম চিন্তাচেতনায় বিভোর থাকে। রাস্তা ঘাটে, দোকানপাটে কিংবা বাজারে গেলে ছোট-বড় মান্য না করে নবাবের মতো চলাফেরা করতে চাই। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অনিহা প্রকাশ করে। কেউ কেউ আবার যৌবনের তাড়নায় কিংবা অন্যের অনুকরণে যাঁর তাঁর সাথে প্রেম-ভালোবাসায় জড়িয়ে অল্পদিনেই বিয়ের আসরে বসে এবং বিয়ের কয়েক মাস পরে গিয়ে বিয়ে করা নিয়ে অনুশোচনায় ভোগেন।
বিঃদ্রঃ কথাগুলো কিছুটা লজ্জাজনক হলেও একেবারে সত্য বটে। এই ধরনের প্রজন্মের কাছ থেকে কেমন ভবিষ্যৎ আশা করা যায় তা বলা বড় দায়। তবে উপলব্ধি করলে দেখা যায় যে, যে কোনো প্রজন্ম নষ্টের বা ধ্বংসের মূল ভূমিকা হিসেবে সবার আগেই বাবা-মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি, বন্ধুবান্ধব ও জনপ্রতিনিধিরাই কমবেশি দোষী। কারণ প্রজন্মকে জন্মের পর থেকে সুপথে বেগবান করা না গেলে, বড় হয়ে তো এমনই হবে। সর্বোপরি সুমহান স্রষ্টার প্রতি আকুল আবেদন যে, তিনি যেনো আমাদের সকলকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন এই প্রত্যাশা রেখে বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে কথা হবে ভিন্ন কোনো সামাজিক সমস্যা নিয়ে। ধন্যবাদ!
বর্তমান প্রজন্ম
অডিও মোড
00:00
00:00
গতি:
ভলিউম:
108
Views
4
Likes
1
Comments
5.0
Rating