শুধু তোমারই জন্য

অডিও মোড

00:00 00:00
গতি:
ভলিউম:
অরিন্নীয়া শেখ :
ইনি হলেন আমাদের গল্পের নায়িকা অরিন্নীয়া শেখ।বর্তমানে তার বয়স ১৮। পড়াশুনাতে ভীষণ ভালো। ডাক্তার হতে চান ছোটবেলা থেকেই। দুধে আলতা গায়ের রং, হালকা ধূসর চোখ,গোলাপি ঠোঁট, ঘন হালকা বাদামি রঙের চুলের অধিকারিনী এই যুবতী।তবে রূপ নিয়ে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।সারাক্ষণ বইয়ের মুখ গুজে থাকেন কিনা। ইনি খুব শান্ত স্বভাবের। কারো সাথে বিশেষ করে ছেলেদের সাথে বেশি কথা বলেন না।অরিন্নীয়ার ডাকনাম অরিন।


নোয়েল শেখ :
ইনি হলেন অরিনের ছোট বোন এবং বাড়ির ছোট মেয়ে। অরিনের পুরো উল্টো মেরু। মানে ইনি খুব চঞ্চল। সারাক্ষণ বকবক করতে থাকেন।বর্তমানে এনার বয়স ১৬।ফর্সা ত্বক,বাদাম চোখ, গোলাপি ঠোঁট,কোঁকড়ানো চুলের এই যুবতী যে কোন পুরুষের ঘুম কাড়তে সক্ষম। পড়াশোনাতেও খুব ভালো।

আবীর শেখ:
আবীর হলো অরিন - নোয়েলের বড় ভাই।বর্তমানে তার বয়স ২৪।পড়াশোনা শেষ করে Family business এ যোগ দিয়েছেন।বোনেদের সবসময় কড়া শাসনে রাখেন। 

সময় গতিশীল।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলে মানবজীবন। সময় বদলায়,সাথে বদলায় মানুষের জীবন।আবার কারও জীবনের মোড় ঘুরে যায়।সময়ের সাথে অরিনের জীবনও বদলেছে। কলেজে প্রবেশ করার মাধ্যমে একটা নতুন জীবনে প্রবেশ করেছে সে। নতুন অনেক কিছু দেখছে, শিখছে, শিক্ষা নিচ্ছে। নোয়েল সেই আগের মতোই আছে। আবীর বাবার ব্যবসা খুব ভালোভাবেই সামলাচ্ছে। মাস তিনেক হলো সে বিয়ে করেছে সুমি নামের একটি মেয়েকে। যদিও বিয়েতে পরিবারের তেমন মত ছিল না, তবুও তার মা-বাবা আবীরের পছন্দের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছিলেন। সুমি শশুরবাড়ির লোকেদের সাথে তেমন কথা বলে না। সারাক্ষণ দরজা লাগিয়ে ঘরে বসে থাকে। তার এই স্বভাব অরিনের মা-বাবা তেমন পছন্দ করেন না। পাশাপাশি সুমি তার ননদদের সাথে কখনোই ভালো ব্যবহার করে না। ননদেরা যেন তার চোখের বিষ।আবীর তা লক্ষ্য করলেও তাকে কিছুই বলে না বরং তাকে support করে। সুমি আর আবীর অরিন-নোয়েলের পড়শোনার পেছনে তাদের মা-বাবা যে টাকা খরচ করত তা কমানোর অনেক চেষ্ঠা করত। এই তো কিছুদিন আগেই,অরিনের কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছিল বাড়িতে। অরিন SSCতে A+ পাওয়ায় একটা ভালো কলেজে admission নিতে কোনো সমস্যা হয়নি তার। কিন্তু সমস্যা হলো, সে যে কলেজে পড়তে যাচ্ছে তা অনেক ব্যয়বহুল। আবীরের কথা-”এত টাকা অরিনের পড়াশোনার পেছনে খরচ করার কি দরকার?যেকোনো কলেজে পড়লেই হয়।” কিন্তু তাদের মা-বাবা তা মানতে নারাজ। আসলে সেই  কলেজে পড়াটা একটু ব্যয়বহুল হলেও সেখানের পাড়াশোনার মান খুব ভালো। তাই তারা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না। শেষে মা-বাবার জেদের কাছে হার মানতে হয় আবীরকে। সে বুঝতে পারে যতদিন মা-বাবা আছে, ততদিন সে কিছু করতে পারবে না।

শেষমেশ অনেক যুদ্ধের পর অরিন ভর্তি হয় সেই কলেজে,যা তার জীবনটা সম্পূর্ণ বদলে দিতে যাচ্ছিল।



কোনো এক রৌদ্র ঝলমলে দিনে কলেজ ক্যাম্পাসে অরিন, লিসা আর আরো দুজন মেয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিল-

- খুব বোর লাগছে yaar. (লিসা)

- আসলেই রে। দিনগুলো কেমন যেন মরামরা যাচ্ছে। (ইশা)

- চল না কিছু করি। (রিয়া)

- কী করবি? (অরিন)

- এই ট্রুথ-ডেয়ার খেলবি? (লিসা)

- তোর সাথে,স্বপ্নেও না (ইশা)

- Not interested. (অরিন)

- কিছু খেলব না। (রিয়া)

- তাহলে চল ক্যাম্পাস ঘুরে আসি। (ইশা)

- না না,এত টাইম নেই। (লিসা)

- হুম। (রিয়া)

- তাহলে করবিটা কী? (ইশা)

- চল গল্প করি। (লিসা)

- কি নিয়ে? (অরিন)

- কে লাইফে কি হতে চাস বল। (লিসা)

- আমি তো পাইলট হবো। নীল আকাশে পাখির মতো উড়বো। (রিয়া)

- আমি বিজনেস করবো। (ইশা)

- আমি এখনও ঠিক করিনি। তাই আমি কিছু বললাম না। অরি, তুই বল। (লিসা)

- আমি ডাক্তার হবো। (অরিন)

- ডাক্তার কেন? লিসা)

- (মৃদু হেসে) তোদেরকে আমার ছোটবেলার একটা গল্প বলি শোন... তখন আমরা কোন এক কারণে শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি। (অরিন)


Flashback....................

কোনো এক বাড়ির উঠোনে দুজন মহিলা বসে একে অপরের সাথে গল্প করছেন।জায়গাটা দেখে গ্রাম বলে মনে হয়। বাড়িটির সামনের বড়ো উঠোনে যেন ফুটবল খেলা যাবে। গাছপালায় আচ্ছাদিত শান্ত পরিবেশ।সূর্য পশ্চিমে অস্ত যাবে যাবে করছে। উঠোনের সামনের বড়ো দিঘিতে তার প্রতিচ্ছবি পড়ে কি অপরূপ সুন্দর লাগছে!সব মিলিয়ে পরিবেশটা দেখার মতো।

একজন মহিলা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসতে বসতে বললেন -

- তা মণি, তোমার সংসারের কী খবর (মহিলা)

- এই তো ছেলেমেয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভালোই। (মণি)

- তোমার তো মনে হয় এক ছেলে দুই মেয়ে। (মহিলা)

- জ্বী হ্যাঁ। (মণি)

- তা ছেলের পড়াশোনার কী খবর?(মহিলা)

- ও তো মোটামুটি ভালোই।তবে আমার দুই মেয়ে পড়াশোনায় আমার ছেলের থেকেও ভালো। (মণি)

- আরে রাখো তো তোমার মেয়ের কথা। মেয়েরা পড়াশোনায় ভালো হওয়া যা না হওয়াও তা। (মহিলা)

- জ্বী,আপনার কথার অর্থ ঠিক বুঝতে পারলাম না। (মণি ভ্রু-কূচকে)

- আরে মেয়েদের অত টাকা খরচ করে লেখাপড়া করিয়ে কি লাভ? ওই তো দুদিন পর বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। আর যদিও ভালো কিছু হতে পারে, তাও তো তোমাদের খাওয়াবে না,ওর জামাইকে খাওয়াবে। শেষমেশ তো ঔ ছেলের কাছেই আসতে হবে। (মণি)

- হয়ত,কিন্তু তাও আমি আমার মেয়েকে ডাক্তার বানাব।আর আপনাকে কে বলল যে আমি দুদিন পর আমার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবো। ও আগে নিজের পায়ে দাঁড়াবে।তারপর যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে বিয়ে করবে।আর আমি বলি কি (মেকি হেসে) আপনি আমার সংসারের কথা চিন্তা না করে নিজের চরকায় তেল দিন।তাহলে আমার মনে হয় বেশি ভালো হয়। (মণি)

মহিলাটি এহেন কথায় হয়ত একটু অপমানিত বেধ করলেন।তাই তিনি মানে মানে সেখান থেকে কেটে পড়লেন।তবে এ ঘটনার সাক্ষী আরও একজন রয়ে গেল। বয়স তার বারোর বেশি নয়।মহিলাটির কথাগুলো তার মনে দাগ কেটে গেল।

Flashback ends.....................

- গ্রামে গেলে সবসময় এসব কথাই শুনতে হতো আমাকে। তাই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি, ওসব মানুষদের জবাব দেওয়ার জন্য হলেও আমি ডাক্তার হয়ে মা-বাবার পাশে দাঁড়াব। (অরিন)



চলবে..............


এ গল্পটি একটি বাস্তবধর্মী গল্প। আমার মতো যাদের পরিবারে কোনো ছেলে সন্তান নেই,তাদের অরিনের মতো কথা প্রায়ই শুনতে হয়। এক্ষেত্রে আমরা মেয়েরাও যে মা-বাবা আর পরিবারের হাল ধরতে পারি, সেটি সমাজকে বুঝিয়ে দেওয়া এ গল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।
253 Views
7 Likes
0 Comments
3.7 Rating
Rate this: